Ajker Patrika

চবিতে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত বেশ কয়েকজন  

চবি সংবাদদাতা ও নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যাওয়া শাটল ট্রেন আটকে কোটা সংস্কারবিরোধী আন্দোলনকারীর এক সমন্বয়কারীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে উভয়ের উভয়ের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। 

এতে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সবার নাম পরিচয় জানা যায়নি। এর মধ্যে মাহবুবুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া হামলায় কয়েকজন ছাত্রীও আহত রয়েছেন। এ ঘটনায় চবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। 

গতকাল রাতে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে আজ সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাটলে শহরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। এ সময় ট্রেন আটকে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যা এখনো ছাড়েনি। 

সরেজমিন দেখা যায়, ছাত্রলীগের অন্তত ২০-৩০ জন নেতাকর্মী আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক রাফিকে ট্রেন স্টেশন থেকে প্রক্টর অফিসে নেওয়ার সময় শাসাতে থাকেন। তাঁকে মারধরের হুমকি দেয়। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার হুমকি দেওয়া হয়। দেড় ঘণ্টা যাবৎ কথা-কাটাকাটি চলে। 

এর আগে চট্টগ্রাম নগরীতে আসতে যাওয়া রাফিকে জোরপূর্বক ট্রেন থেকে নামিয়ে দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে নিয়ে শোডাউন দিতে থাকে। পরে রাফিকে নিয়ে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস যায়। প্রক্টরের উপস্থিতিতে বারবার রাফির ওপর চড়াও হয় তাঁরা। তবে ছাত্রলীগের নেতারা ও প্রক্টরিয়াল বডি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। 

এ অবস্থায় হল থেকে ছাত্রীরা এসে প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান নেয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কয়েকজন ছাত্রীর ওপর চড়াও এবং বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বলেন জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা। 

এদিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দাবি, খান তালাত রাফি মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। তাই তার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অধিকার নেই। আর সে গতকাল রাতে ক্যাম্পাসে নিজেকে রাজাকার বলে দাবি করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অস্তিত্ব থাকতে কোনো রাজাকারের ঠাঁই নাই। 

এ বিষয়ে রাফি বলেন, ‘গণতন্ত্রের দেশের একজন নাগরিককে কেউ জোর করে তুলে আনতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. অহিদুল আলম বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। আদালত একটি রায় দিয়েছে। এটার ওপর আমাদের আস্থা রাখতে হবে।’ 

এদিকে কোটা আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বেলা আড়াইটার দিকে শাটল ট্রেনে করে শিক্ষার্থীরা ষোলোশহর স্টেশনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় চবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. ইলিয়াসের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী তাঁদের লাঠি ও বাঁশ নিয়ে ধাওয়া দেন। অনেকেই ছাত্রলীগের নেতাদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। 

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. ইলিয়াস বলেন, ‘কোটা সংস্কারের পক্ষে যারা আন্দোলন করছে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলতে গিয়েছিলাম। তারা আন্দোলন করুক সেটাতে আমরা একাত্মতা পোষণ করেছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কেউ কটূক্তি করবে সেটা আমরা মেনে নেব না।’ 

ইলিয়াস বলেন, ‘রাফিকে দেখে আমাদের মনে হয়েছে সে নেশাগ্রস্ত। তাই আমরা তাকে নিয়ে প্রক্টর স্যারের কাছে নিয়ে ডোপ টেস্ট করার অনুরোধ করেছি। কোনো রাজাকার ক্যাম্পাসে থাকতে পারে না।’ 

আন্দোলনের সমন্বয়ক চবি দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাসেল জানান, ‘ষোলশহরে আমাদের আজ অবস্থান কর্মসূচি ছিল। কিন্তু আমাদের সহযোদ্ধাদের ওপর হামলা করে তাদের আটকে দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছে। শাটল ট্রেন আসতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা বাসে করে ষোলোশহর যাচ্ছি। যতই হামলা হোক আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উত্তর জোনের উপ-কমিশনার মোখলেছুর রহমান বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ষোলোশহর এলাকায় বিক্ষোভ করছিল। এ সময় ছাত্রলীগের একটি মিছিল সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ উভয় পক্ষকে শান্ত করে। পুরো ঘটনার বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত