Ajker Patrika

দুবলার চরে দৈনিক ভেসে আসছে মৃত কাছিম

মিনহাজ তুহিন, দুবলার চর থেকে ফিরে
দুবলার চরে দৈনিক ভেসে আসছে মৃত কাছিম

পশ্চিমের আকাশে সূর্য সবে ডুবেছে মাত্র। সাগরের পার ধরে একটু হাঁটতেই হঠাৎ দেখা গেল ঢাল সদৃশ কিছু একটা। কাছে গিয়ে ভালো করে দেখতেই বোঝার বাকি রইল না এটা মৃত কাছিমের পিঠ। আরও কয়েক কদম পা এগোতেই এ রকম আরও ৮–১০টি মৃত কাছিমের দেখা পাওয়া গেল। কোনোটি জোয়ারের পানিতে সদ্য ভেসে এসেছে, আবার কোনোটি বালুর সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। 

গত বুধবার সন্ধ্যায় সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোর কোলের কানার মাথা এলাকায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ল। সাগরপাড়ে সারি সারি কাছিম মরে পড়ে থাকলেও তা জেলেদের কাছে অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনাই মনে হয়। প্রতিদিন অন্তত ৫–১০টি কাছিম মৃত ভেসে আসে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। 

স্থানীয় কয়েকজন জেলে বলেন, সাগরে মাছ ধরার জালের সঙ্গে আটকে এদের মৃত্যু হয়। পরে জোয়ারের পানিতে কূলে ভেসে আসে। আবার অনেক সময় জালের সঙ্গেও চলে আসে এসব কাছিম। 

স্থানীয় জেলে মো. শাহাবুদ্দিন জানান, প্রতিদিন অন্তত ৫–১০টা মৃত কাছিম উপকূলে ভেসে আসে। সাগরে মাছ ধরার জালে এসব আটকা পড়ে। পরবর্তীতে জেলেরা কাছিমগুলোকে সাগরে ফেলে দেয়। যা একপর্যায়ে জোয়ারের পানিতে কূলে ভেসে আসে। 

কাছিম গবেষকেরা জানান, শীতকাল হলো গভীর সাগরের প্রাণী কাছিমের প্রজননের সময়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাছিম সৈকতের বালুচরে ডিম পাড়তে আসে। আর তখনই জেলেদের অসতর্কতায় তাদের মৃত্যুর মুখে পড়তে হয়। 

দুবলার চর বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। এই চরের মোট আয়তন ৮১ বর্গমাইল। এই চরটি মূলত জেলে গ্রাম। এখানে মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। বর্ষা মৌসুমের ইলিশ শিকারের পর বহু জেলে চার থেকে ছয় মাসের জন্য সুদূর কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে ডেরা বেঁধে সাময়িক বসতি গড়েন। এ সময় তাঁরা মাছকে শুঁটকি বানাতে ব্যস্ত থাকেন। 

দুবলার চরে ঘুরতে গিয়ে মৃত কাছিমের সারি দেখেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির অর্থ সম্পাদক রোকনুজ্জামানও। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, সারি সারি কাছিমের মৃতদেহ দেখাটা দুঃখজনক। এতে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতিসাধন হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের উচিত জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি, জালে যেন কচ্ছপ ধরা না পড়ে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। ধরা পড়লেও যেন জীবিত ছেড়ে দেওয়া যায় সেদিকেও নজর রাখা। 

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুবলার চরের এই কাছিমগুলো অলিভ রিভলী কাছিম। এগুলো মারা যাওয়ার পেছনে সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সৈকতে কাছিমের আবাসস্থল ধ্বংস করা, নিষিদ্ধ কারেন্ট ও টানা জালের ব্যবহার, জেলেদের জালে আটকে পড়া, সমুদ্রে পরিত্যক্ত জাল ফেলে দেওয়া, ট্রলার বা জেলেদের নৌকায় আঘাত পাওয়া এসব কাছিমের মৃত্যুর কারণ বলে মনে হচ্ছে। 

মো. তরিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গত বছর ঠিক এই দিনে দুবলার চরে আমিও কাছিম মরে থাকতে দেখেছি। ওই এলাকায় আমাদের নেটওয়ার্ক এখনো গড়ে ওঠেনি। আমরা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কাজ করছি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, কাছিমগুলোকে বাঁচাতে হলে কাছিম যেসব অঞ্চলে বিচরণ করে এবং ডিম পাড়তে আসে, সেসব এলাকা চিহ্নিত করে নজরদারির আওতায় আনতে হবে। এসব অঞ্চল জেলেদের এড়িয়ে চলতে হবে। এ ছাড়া জেলেদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে করে তাদের জালে কাছিম ধরা পড়লে দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন সেগুলোকে অবমুক্ত করতে পারে। পাশাপাশি আহত হলে যেন দ্রুত উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারে। 

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে কিছু জানায়নি। আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার নারীরা সব ক্ষেত্রে সরাসরি মামলা করতে পারবেন না

চাচাকে বিয়ে করতে না পেরে ৪৫ দিনের মাথায় স্বামীকে খুন করলেন নববধূ

ফরিদগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার

ভারত যে পারমাণবিক বোমা ফেলেনি, পাকিস্তানের বুঝতে সময় লেগেছে ৩০-৪৫ সেকেন্ড

‘ভিআইপি রুম না পেয়ে’ হোটেল বারে ভাঙচুর, যুবদলের পদ হারালেন মনির হোসেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত