Ajker Patrika

কুবির ছাত্রী হলে ‘অচেনা’ সংগঠনের কাওয়াল সন্ধ্যা, স্থগিতের আবেদন শিক্ষার্থীদের

কুবি প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯: ৪০
Thumbnail image

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শেখ হাসিনা হলে ‘সিরাত সেমিনার ও কাওয়াল সন্ধ্যা অনুষ্ঠান’ আয়োজন করতে যাচ্ছে ‘সোসাইটি অব চেঞ্জ মেকার ক্লাব’ নামে একটি সংগঠন। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই সংগঠনের নাম কখনো তাঁরা শোনেননি। তাঁদের এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের ফলে বহিরাগতরা হলে প্রবেশ করতে পারে। এ নিয়ে তাঁরা আতঙ্কিত। অনুষ্ঠানটি স্থগিত চেয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছেন। 

গতকাল বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৮৫ জন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষরসহ ওই আবেদন করা হয় বলে জানা গেছে। 

আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর ‘সিরাত সেমিনার ও কাওয়াল সন্ধ্যা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে ‘সোসাইটি অব চেঞ্জ মেকার ক্লাব’। তদারকিতে রয়েছেন শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নাসরিন (১২তম), সাদিয়া (১৩তম), তাওহীদা (১১তম), তানজিদা (১২তম), রুমা (১৩ তম), সুহাইল (১৫তম), ফাতেমী (১৬তম), সাদিয়া (১৪তম), ফারজানা (১৫তম) ও ঊর্মি (১৬তম)। আবাসিক শিক্ষার্থীরা এ ধরনের কোনো সংগঠন চেনেন না। তাঁদের কার্যক্রম কিংবা উদ্দেশ্য, নেতৃত্ব সম্পর্কেও জানেন না। এ ছাড়া এই আয়োজনে বহিরাগতরা হলে প্রবেশ করতে পারে বলে তাঁরা শঙ্কিত। সেই সঙ্গে হলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা চলছে। এ ধরনের আয়োজন পড়াশোনার ব্যাঘাতও ঘটাবে। হলে বর্তমানে প্রাধ্যক্ষ নেই। এমন পরিস্থিতিতে অপরিচিত একটি সংগঠনের আয়োজনে বহিরাগতদের অংশগ্রহণে এ আয়োজন তাঁদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। 

হলের শিক্ষার্থী মিথিলা মিনহা বলেন, ‘সিরাত অনুষ্ঠান নিয়ে আমার কোনো দ্বিমত নেই বা ধর্মীয় কোনো অনুষ্ঠান নিয়ে হলের কারোরই দ্বিমত থাকার কারণ নেই। আমরা দ্বিমত করছি সিকিউরিটি পারপাস নিয়ে। হলে এখন প্রশাসন নেই, এর মধ্যে অচেনা একটি সংগঠনের উদ্যোগে এমন একটি অনুষ্ঠান। তাই আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে স্থগিতের আবেদন করেছি।’ 

আরেক শিক্ষার্থী শাম্মি আক্তার বলেন, ‘এখানে অচেনা একটি সংগঠনের উদ্যোগে এমন একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে এবং বাইরে থেকেও নাকি লোক নিয়ে আসা হবে। এখন হলে প্রশাসন নেই। নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করেই আসলে স্থগিতের আবেদনটি করা হয়েছে।’ 

আয়োজকদের মধ্যে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাদিয়ার নাম রয়েছে। তাঁর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, ‘সংগঠন বা ক্লাবটি এস্টাবলিশড কিছু না। আমরা কয়েকজন আলোচনা করে এটি ঠিক করেছি, এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে।’ 

বহিরাগতদের আসার বিষয়ে বলেন, ‘এখানে বহিরাগত বলতে আমাদের পরিচিতিদের আত্মীয়স্বজন, বোনেরা আসবেন। এ ছাড়া আর কেউ না।’ 

অনুমতির বিষয়ে বলেন, ‘আমরা হাউস টিউটর ও রেজিস্ট্রার স্যারের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়েছি।’

স্থগিতের আবেদনের বিষয়ে সাদিয়া বলেন, ‘আমরা যখন আলোচনা করেছি, তখন স্থগিতের বিষয়টি আসেনি। আবেদনের বিষয়টি জানি না। এখানে অনিরাপত্তার কিছু নাই। এ ছাড়া, আমাদের সাউন্ড সিস্টেম থাকবে না, এখানে পড়াশোনায় সমস্যা হওয়ার কথা না।’ 

আরেক আয়োজক নাসরিন আক্তার বলেন, ‘আজকে (শুক্রবার) অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথমে আমি আমাদের মেসেঞ্জার গ্রুপে বিষয়টি উত্থাপন করি। অনেকের সম্মতিতে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।’ 

সংগঠনের বিষয়ে বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই আসলে কয়েকজন মিলে এই ক্লাব বা সংগঠনটির নামকরণ করা হয়েছে। এটি আসলে তেমন কিছু না।’ 

আয়োজনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না ,জানতে চাইলে নাসরিন বলেন, ‘আমাদের সঙ্গের কয়েকজন বলেছেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হয়েছে।’ তবে, কোন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে সেটি তিনি বলতে পারেননি। 

স্থগিতের আবেদনের বিষয়ে বলেন, ‘যেহেতু অনেক সংখ্যক শিক্ষার্থী চাচ্ছেন না, সে ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানটি করা তো সম্ভব না।’ 

হলের হাউস টিউটর মো. আল আমিন বলেন, ‘আমাকে আসলে রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জানানো হয়েছে এই অনুষ্ঠানটি হবে। তখন অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন যেহেতু রেজিস্ট্রার বরাবর স্থগিতের আবেদন করা হয়েছে। রেজিস্ট্রার অফিস থেকে যদি আমাকে স্থগিতের বিষয়ে জানান তাহলে আমি তা–ই করব। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সমাধান হয়ে আমাকে যা নির্দেশনা দেওয়া হবে আমি তা–ই করব।’

রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘হ্যাঁ, শেখ হাসিনা হলে সিরাত অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’

স্থগিতের আবেদনের বিষয়ে বলেন, ‘আমি বিষয়টা জানি না। যদি নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করে আবেদনটি করা হয়, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। খোঁজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত