Ajker Patrika

দেড় কিমিতে দুই চ্যালেঞ্জ

নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম
দেড় কিমিতে দুই চ্যালেঞ্জ

দেওয়ানহাট থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত এক দশমিক ৬ কিলোমিটার জায়গায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে দুটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (চউক)।

এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য দেওয়ানহাট এলাকায় খান টাওয়ার, দেওয়ান স্কয়ার, ইস্পাত শিল্প প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ও ইয়েলো বিল্ডার্সের স্থাপনা ভাঙতে হবে।

৬ তলার খান টাওয়ারে ২০০ ব্যবসায়ী রয়েছেন। এখানে ১ টি পোশাক কারখানাও আছে। ৬ তলার দেওয়ান স্কয়ারে দোকান ও অফিস মিলে আছে ৫৫ প্রতিষ্ঠান।

চউকের সামনে দ্বিতীয় বড় চ্যালেঞ্জ টাইগারপাস থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত এলিভেটেড নির্মাণ। এই আধা কিলোমিটার জায়গায় এলিভেটেড তৈরির বিপক্ষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। পাহাড় কেটে কিংবা পাহাড়ের সৌন্দর্য নষ্ট করে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার জন্য আন্দোলন অব্যাহত আছে। ২১ জুন টাইগারপাসে এলিভেটেড নির্মাণ না করতে চউককে লিখিত চিঠিও দেয় চসিক।

চউক সূত্রে জানা গেছে, দেওয়ানহাট ব্রিজের পশ্চিম পাশ দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যাবে। এর নিচে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের রেল চলাচলের ৬ লেন রেল সড়ক রয়েছে। তাই চউক এখানে আধুনিক ‘প্রগ্রেসিভ ব্যালান্সড ক্যান্টিলিভার’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পিলার ছাড়াই এলিভেটেড নির্মাণ করবে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম এর সহসভাপতি আলহাজ এইচ এম মুজিবুল হক শুক্কুর বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ে যদি বিমানবন্দর থেকে শুরু করে দেওয়ানহাটে নামিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে প্রস্তাবিত দেওয়ানহাট সেতুর পশ্চিম পাশের জায়গার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থেরও সাশ্রয় হবে। এ পর্যন্ত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেস নির্মাণ করতে গিয়ে কোথাও দোকান, ভবন বা মার্কেট সম্পূর্ণভাবে ভাঙতে হয়নি। দেওয়ানহাটের ওপর দিয়ে এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে গেলে কয়েকটি মার্কেট ও ভবন ভাঙা পড়বে। ফলে প্রায় ২৫০ জন ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তা–কর্মচারী মিলে প্রায় ১ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, আগামী ৫০ বছরের চিন্তা ভাবনা মাথায় রেখে এগোচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হলো আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মিলিয়ে দিতে হবে। সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সঙ্গে মিলে গেলে ১৬ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে যাবে সাড়ে ২২ কিলোমিটার। এতে যানজট কমবে এবং নগরবাসী সুফল পাবে। ট্রাফিক বিভাগও চায় নকশা অনুযায়ী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হোক। এমনভাবে ডিজাইন করেছি যেন পাহাড়ের সৌন্দর্য অক্ষুন্ন থাকে এবং কোনো পাহাড় না কাটতে হয়। বিভ্রান্তি কাটাতে একটি অ্যানিমেশন তৈরির কথা ভাবছে চউক।’

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। তারা প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী কাজ করবে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা প্রয়োজন মনে করলে কারও পরামর্শ নিতে পারেন।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, টাইগারপাসের সবুজ বেষ্টিত পাহাড়ি এলাকাকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কংক্রিটের জঞ্জাল পেঁচিয়ে ফেললে নগরের চিরচেনা চিত্র চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের  ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল বলেন, ‘নতুন যেকোনো উন্নয়ন বাস্তবায়নে আর যেন পাহাড়ের ক্ষতি করা না হয়’।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আলহাজ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামে অতীতে যা হয়েছে সেটা নিয়ে কথা বলব না। নতুন করে প্রকৃতি ধ্বংসের মাধ্যমে কোনো স্থাপনা করতে দেব না। আমরা চউককে চিঠি ও পরামর্শও দিয়েছি।’

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘এই ফ্লাইওভার প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মাত্র ১৫-২০ মিনিটেই কোনো যানজট ছাড়া শহরে পৌঁছানো যাবে। লালখান বাজার থেকে টাইগার পাস পর্যন্ত পাহাড়ের সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে বিশেষজ্ঞ সংস্থার সুপারিশের ভিত্তিতে কাজ করা হচ্ছে। এতে এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে দাঁড়িয়ে পর্যটকেরা আশপাশের পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে নকশা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ শেষ হবে।’

চউক চেয়ারম্যান আরও বলেন, দেওয়ানহাটে দুটি ভবন ও কয়েকটি জায়গার মালিকের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। আমরা তাদের ভবন ও জায়গার আলাদাভাবে ন্যায্য মূল্য পরিশোধ করব।’

উল্লেখ্য, নগরীর লালখান বাজার থেকে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজের ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ৩৭৯ টি পিলারের মধ্যে ২৫০ টির কাজ শেষ। প্রকল্পের কাজ দেওয়ানহাট পর্যন্ত এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত