Ajker Patrika

চট্টগ্রামে বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষে গোলাগুলি, নিহত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক ,চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৬: ৪৪
চট্টগ্রামে গুলিতে নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামে গুলিতে নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারে কর্ণফুলী সেতুকেন্দ্রিক ব্যবসা ও বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। এতে দুজন নিহত এবং আরও দুজন আহত হয়েছেন।

গতকাল শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে চন্দনপুরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন মো. আব্দুল্লাহ ও মানিক। আহত দুজন হলে রবিন ও হৃদয়। তাঁরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, কারাগারে থাকা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ওরফে সাজ্জাদ হোসেন ও সন্ত্রাসী সরওয়ার বাবলা গ্রুপের মধ্যে এ গুলির ঘটনা ঘটে। সরওয়ার গ্রুপের সদস্যরা প্রাইভেট কার নিয়ে যাওয়ার পথে ছোট সাজ্জাদ গ্রুপের সদস্যরা তাঁদের ওপর হামলা করলে গুলিবিনিময় শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরীর বাকলিয়ায় কর্ণফুলী নতুন সেতুর ওপর থেকে প্রাইভেট কারটিকে ধাওয়া করে চার-পাঁচটি মোটরসাইকেল। একাধিকবার গাড়িটি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। গাড়িটি থেকেও গুলি করা হয়। একপর্যায়ে চকবাজার থানার বাকলিয়া এক্সেস রোডের চন্দনপুরায় এসে প্রাইভেট কারে থাকা সরওয়ার গ্রুপের চার আরোহীকে গুলি করা হয়। পরে তাঁদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

আহত হৃদয় জানান, তাঁরা ছয়জন একটি প্রাইভেট কার নিয়ে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে বালুমহাল দেখতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাত সোয়া ২টার দিকে বের হয়ে তুলাতলী এলাকায় এলে পেছন থেকে চার-পাঁচটি মোটরসাইকেল তাঁদের ধাওয়া দেয়। পেছন থেকে তাঁদের লক্ষ্য করে একাধিক স্থানে একাধিকবার গুলি করে।

হৃদয় বলেন, ‘চন্দনপুরা এলাকায় এলে ছোট সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড হাসান ও খোরশেদরা গুলি করলে সামনে চালকের সিটে থাকা একজন (মানিক) ও পাশের সিটের জন (আব্দুল্লাহ) গুলিবিদ্ধ হয়। আমি পেছনের সিটে শুয়ে কোনো রকমে বেঁচে গেছি এবং হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছি। এ ছাড়া গাড়িতে থাকা রবিনও গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আর ইমন ও সরওয়ার গাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে।’

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশ জায়গাটি ঘিরে রেখেছে। পুলিশের বিশেষ দল ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছে। প্রাইভেট কারটির (চট্টগ্রাম মেট্রো-গ ১২-৯০৬৮) পেছনের গ্লাসে তিনটি ও পেছনে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে। চালক ও পাশের আসনে রক্ত লেগে আছে। গাড়ির একাধিক কাগজপত্র রক্তের মধ্যে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে আছে।

এ বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির বলেন, ‘বাকলিয়ার রাজাখালী থেকে প্রাইভেট কারটিকে ধাওয়া করে মোটরসাইকেল আরোহীদের একটি গ্রুপ। চন্দনপুরায় গুলির ঘটনা ঘটে। গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, মরদেহ দুটি জরুরি বিভাগের লাশঘরে রয়েছে। বিভাগের প্রবেশপথে স্বজনেরা আহাজারি করছেন।

যোগাযোগ করা হলে নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপকমিশনার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘বালুমহালকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী সরওয়ার বাবলার সঙ্গে সন্ত্রাসী খোরশেদ, রায়হান ও হাসান গ্রুপের দ্বন্দ্ব ছিল। শনিবার দিনগত রাতে বাবলা গ্রুপের ছয়জন একটি প্রাইভেট কারে ছিল। চার-পাঁচটি মোটরসাইকেল নিয়ে খোরশেদ গ্রুপ তাদের রাজাখালী ব্রিজ থেকে ধাওয়া করে। তাদের মধ্যে পারস্পরিক গোলাগুলি হয়েছে। তাদের কাছে ভারী অস্ত্র ছিল।’

অভিযুক্তদের আটক করার প্রসঙ্গে উপকমিশনার বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, খোরশেদ গ্রুপ রাউজান-রাঙ্গুনিয়ার দিকে মুভ করেছে। আমরা চট্টগ্রামের সব স্থানে চেকপোস্ট বসানোর নির্দেশ দিয়েছি। বিশেষ করে হাটহাজারী ও রাউজান-রাঙ্গুনিয়া লাইনে। তাদের আটক বা অস্ত্র উদ্ধার করা এখনো সম্ভব হয়নি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি জড়িতদের গ্রেপ্তারে।’

উল্লেখ, চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আট খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলী খানের একসময়ের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ ছিলেন সরওয়ার বাবলা। তিনি নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার খোন্দকারপাড়ার কালা মুন্সির বাড়ির আব্দুল কাদেরের ছেলে। তিনি সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হয়ে আবার অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়েছেন।

অন্যদিকে সাজ্জাদ আলী খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছোট সাজ্জাদ। বিদেশে থাকা সাজ্জাদ আলী চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের জন্য ছোট সাজ্জাদকে ব্যবহার করেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা ছোট সাজ্জাদ হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১০টিরও বেশি মামলার আসামি।

অভিযোগ রয়েছে, ছোট সাজ্জাদ ২০২৩ সালে বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার ও মোহাম্মদ আনিসকে হত্যা, চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়ায় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে গুলি করে হত্যা, দুই বাসায় গুলি ও অক্সিজেন মোড়ে পুলিশের ওপর গুলির ঘটনায় নেতৃত্ব দেন।

ছোট সাজ্জাদ ২০২৪ সালে ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমানকে ‘পেটানোর’ হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে মহানগর পুলিশ কমিশনার পুরস্কার ঘোষণা করেন। সম্প্রতি ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত