Ajker Patrika

মিয়ানমারে গণহত্যা: আর্জেন্টিনার আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছেন ৭ রোহিঙ্গা 

ইফতিয়াজ নুর নিশান, উখিয়া (কক্সবাজার)
Thumbnail image

বন্দুকের ভয় দেখিয়ে আটকে রেখে চলেছে যৌন নির্যাতন, দল বেধে করা হয়েছে ধর্ষণ। মিয়ানমারের সেনা সদস্যদের হাতে স্বামী কিংবা স্বজনকে হত্যার দৃশ্য অথবা লাগিয়ে দেওয়া আগুনে চোখের সামনে নিজের গ্রামকে ধ্বংস হতে দেখা এবং ভয়াবহ সব ঘটনার সাক্ষী দিতে আর্জেন্টিনার আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছেন ৭ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। 

বাংলাদেশের ক্যাম্পে আশ্রিত ৭ রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ আর্জেন্টিনার একটি আদালতে সশরীরে এমন নির্মম অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য দিতে দেশটির রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে যাচ্ছেন। তারা সকলেই উখিয়া ১৩ নম্বর ক্যাম্পের আশ্রিত রোহিঙ্গা। 

আজ রোববার বিকেলে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ছেড়েছেন। একইদিন রাতে বিমানযোগে তাদের আর্জেন্টিনার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপসচিব) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা। 

তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭ রোহিঙ্গা বিশেষ অনুমতি নিয়ে আর্জেন্টিনায় যাচ্ছে, তারা সেখানকার একটি আদালতে মিয়ানমারের গণহত্যা নিয়ে চলমান একটি মামলার বিচারিক কার্যক্রমে সাক্ষ্য দেবেন বলে জেনেছি।’ 

রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর চরম নির্যাতনের ঘটনায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিসহ দেশটির কয়েকজর শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের নভেম্বরে আর্জেন্টিনার আদালতে মামলা করে রোহিঙ্গা ও লাতিন আমেরিকার মানবাধিকার গোষ্ঠী। মামলায় দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াংসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর মামলার তদন্ত শুরু করে আর্জেন্টিনার বিচার বিভাগ। 

মামলাটির পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় ভার্চ্যুয়ালি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বাস করা ৭ রোহিঙ্গা, যাদের চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বুয়েন্স আয়ার্সের আদালতে সাক্ষী হিসেবে বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। 

এই মামলা ছাড়াও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিজে) এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিসি) বিচার চলছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক রোহিঙ্গাদের সংগঠন বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন ইউকে (ব্রুক), ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আর্জেন্টিনায় মামলাটি শুরুর আবেদন করেছিল। 

আইসিসির তৎকালীন তদন্তের কারণে দেশটির নিম্ন আদালত ২০২১ সালের ১২ জুলাই মামলাটি খারিজ করে। পরে আগস্টে ব্রুকের করা আপিলের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের সেই সিদ্ধান্তকে বাতিল করার রায় দিয়ে ওই বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় আর্জেন্টিনার ফেডারেল ক্রিমিনাল কোর্টের (ফৌজদারি আদালত) সেকেন্ড চেম্বার। 

মামলার প্রক্রিয়াকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ উল্লেখ করে ব্রুকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বার্তায় বলা হয়, আর্জেন্টিনার মামলাটি বিশ্বের কোথাও রোহিঙ্গা গণহত্যা সংক্রান্ত প্রথম সর্বজনীন বিচারব্যবস্থার মামলা। 

বার্তায় ব্রুকের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী তুন খিন জানান, গণহত্যা সংঘটনকারীরা কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারবে না। ঘৃণ্য এসব অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্তদের জন্য সারা বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ। 

তাঁর দাবি, আর্জেন্টিনার আপিল বিভাগের দ্বিতীয় চেম্বার আদালত নিশ্চিত যে মিয়ানমারে সংঘটিত অপরাধের মাত্রা ভয়াবহ এবং সেগুলো অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে। 

ব্রুক ও ৭ রোহিঙ্গার পক্ষে মামলাটির আইনি লড়াইয়ে আছেন বিশ্ব খ্যাত আইনজীবী টমাস ওজেয়া কুইন্টানা। আরাকানের পরিস্থিতি ভালোভাবে জানা এই আইনজ্ঞ ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মানবাধিকারের জন্য জাতিসংঘের প্রাক্তন বিশেষ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করাকালীন রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বকে জানিয়েছিলেন। 

আন্তর্জাতিক আইনে গুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসেবে ‘ইউনিভার্সেল জুরিসডিকশন’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই স্বীকৃত। 

 ১৯৪৯ এর জেনেভা কনভেনশনে স্বীকৃতি লাভের পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে এটি নির্যাতনবিরোধী সনদের (১৯৮৪) মতো আন্তর্জাতিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ সনদে স্থান পেয়েছে। এই নীতির আওতায় আর্জেন্টিনার আদালত অতীতে স্পেনে প্রাক্তন স্বৈরশাসক ফ্রান্সেসকো ফ্রাঙ্কোর শাসন এবং চীনে ফালুন গং আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য মামলাগুলি গ্রহণ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত