Ajker Patrika

ঝুপড়ি দোকানে সৈকত দখল

  • সমিতির নাম দিয়ে দখল যুবদল নেতাদের
  • দৈনিক ও মাসিক ভিত্তিতে নেওয়া হয় চাঁদা
  • বেলাভূমির শুরুতেই ঝিনুক, শুঁটকিসহ নানা দোকান
  • সৈকতে হাঁটতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন পর্যটকেরা
মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ৩৬
Thumbnail image
ঝিনুক, শুঁটকি, ফুচকা, চটপটির দোকানে দখল হয়েছে সৈকতের বেলাভূমি। হাইকোর্টের নির্দেশের পর উচ্ছেদ অভিযানও চালানো হয়েছিল। আবার বসেছে দোকান। সম্প্রতি কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার শহরের কলাতলী প্রধান সড়ক থেকে সুগন্ধা সমুদ্রসৈকতে নামতে চার লেনের ৩০০ মিটার সড়ক। এই সড়ক থেকে দৃষ্টিসীমায় থাকার কথা ছিল জলরাশি আর সৈকতের বেলাভূমি। তবে এর কিছু চোখে পড়ে না। কারণ, সৈকতে যাওয়ার সড়ক ও সৈকতের বেলাভূমি দখল করে রেখেছে ঝুপড়ি দোকানগুলো। হকারে ঠাসা এই সৈকতে চলাফেরায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় পর্যটকদের।

পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে কলাতলী প্রধান সড়ক থেকে সুগন্ধা সমুদ্রসৈকতে নামতে সড়কের মাঝখানে ডিভাইডারে ফুলের বাগান ও লাইটিং করা হয়। তবে এই সড়কের এক লেনও এখন অক্ষত নেই। অবৈধ গাড়ি পার্কিং, হকার ও ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের দখলদারত্ব চলছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব দখলদারির পেছনে রয়েছেন যুবদলসহ বিএনপির নেতারা।

তিন মাস ধরে পর্যটন জোন কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট সৈকতের বেলাভূমি এবং সড়ক দখল করে বসানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ দোকান ও হকার। স্থানীয় যুবদল ও বিএনপির কয়েকজন বিভিন্ন হকার সমিতির নাম দিয়ে দখল অব্যাহত রেখেছেন। সম্প্রতি সৈকতের বেলাভূমিতে বসানো সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্ট আদেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ও ৮ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন সৈকতের এই তিন পয়েন্ট থেকে বেলাভূমিতে বসানো ৫০০ ঝুপড়ি দোকান উচ্ছেদ করে। এ ছাড়া সড়ক দখল করে বসানো অন্তত দুই হাজার হকার বসতেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

তবে দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই আবারও বসেছে সেসব ঝুপড়ি দোকান ও হকার। এবার ঝুপড়িগুলো তেরপলের বদলে চালায় রংবেরঙের ছাতা মুড়িয়ে বসানো হয়েছে। এরপরও সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে এখন দৈনিক ৫০ থেকে ৭০ হাজার পর্যটক সমুদ্রদর্শনে নামছে। তবে সড়ক ও সৈকতের বেলাভূমিতে হকার ও দোকানের কারণে অতিষ্ঠ পর্যটকদের বড় অংশ। ঢাকার পল্লবী থেকে আসা পর্যটক সৈয়দ এহেসান বলেন, ঝুপড়ি দোকান ও হকারের কারণে সৈকত নোংরা হচ্ছে। কারণ, এসব দোকান থেকে পলিথিন ও প্লাস্টিকপণ্য সৈকতে ফেলা হচ্ছে।

স্থানীয় যুবদল নেতা জয়নাল আবেদীন, লাল মিয়া, জাকির হোসেন, গুরা মিয়া, জালাল, আসাদ, হাবিবসহ ৮-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট হকার ও ঝিনুক ব্যবসায়ী সমিতির নাম দিয়ে এই দখল তৎপরতায় জড়িত। তাঁরা মাসিক ও দৈনিক ভিত্তিতে হকার এবং দোকানিদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত শনিবার ও রোববার সন্ধ্যায় সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, উচ্ছেদ হওয়া সেই দোকানগুলো সেখানে নতুন করে বসানো হয়েছে। এই পয়েন্টের জেলা প্রশাসনের তথ্যকেন্দ্রের পেছনে একটি ঝিনুক মার্কেটে অন্তত ২০০ দোকান বসেছে। এই মার্কেটের উল্টো পাশে বসেছে ঝিনুক, ভাজা মাছ, চটপটিসহ আরও প্রায় ২০০টি বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট। এই দুই মার্কেটের মাঝখানেও বসেছে হকার। কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামনে যাতে ঝামেলা না হয়, এ জন্য প্রশাসনসহ সবকিছু ম্যানেজ করতে ঝিনুক সমিতির নেতাদের ৫ হাজার টাকা করে এককালীন দেওয়া হয়েছে।

সুগন্ধা ঝিনুক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও যুবদল নেতা জয়নাল আবেদীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সৈকতে দালান উঠলেও উচ্ছেদ হয় না। উচ্ছেদ হয় গরিব হকারদের ঝুপড়িগুলো। কাউকে ম্যানেজ করার জন্য টাকা তোলার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা সমিতির সদস্যরা ৩ হাজার টাকা করে তুলে দোকান মেরামত করেছি।’

সৈকত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের দুজন বিচ কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও পুলিশ নিষ্ক্রিয় রয়েছে। এই সুযোগে কিছু দখলদার প্রতিদিন সৈকতের কোথাও না কোথাও দখল করছে। বাধা দিলে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে অপবাদ দেয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সৈকতের বালিয়াড়িতে স্থায়ী দোকান বসানোর সুযোগ নেই। হকারদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাময়িক সময়ের জন্য বিকেলে নেমে রাতে চলে আসার জন্য ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের অনুমতি রয়েছে। কেউ প্রশাসনের নামে টাকা তুলছে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত