Ajker Patrika

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে যুবককে তুলে নিয়ে পেটানোর অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩, ২২: ২৯
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে যুবককে তুলে নিয়ে পেটানোর অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে এক যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে  নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনে গুরুতর আহত হওয়ায় আটকের ২৪ ঘণ্টা পরও আদালতে তোলা হয়নি ভুক্তভোগীকে। তুলে নিয়ে যাওয়ার দুই দিন পর একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই যুবককে আদালতে তোলা হয়। আদালত তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখে কোর্ট পুলিশের পরামর্শে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে বলেন।

এসব অভিযোগে গত রোববার নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা। 

পরদিন সোমবার বিচারক শারমিন নিগার মামলাটি খারিজ করে দেন এবং এ বিষয়ে পুলিশ সুপারকে জানানোর সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে কিছু নির্দেশনা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর মা আমেনা বেগম। 

নির্যাতনের শিকার যুবকের নাম আবদুল আহম্মদ ওরফে রুবেল (২৬)। তিনি উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চরশিবপুর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে। তিনি বর্তমানে ৪২০ ধারায় প্রতারণা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। 

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন—বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) তরুণ কান্তি দে, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আল-আমিন মানিক ও উপজেলার দুর্গাপুরের মধ্যপাড়ার বাসিন্দা রবি উল্লাহ। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চরশিবপুর গ্রামের স্থানীয় রবি উল্লাহর সঙ্গে ভুক্তভোগী রুবেলের পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে রবি উল্লাহর বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করে রুবেলের পরিবার। সেই মামলাটি চলমান। এরই জেরে রবি উল্লাহর সঙ্গে রুবেলের বিরোধ আরও প্রকট হয়। এর পর থেকে রবি উল্লাহ ক্ষিপ্ত হয়ে আহম্মদ ও তাঁর পরিবারের লোকজনের ক্ষতি করার চেষ্টা করছিলেন। 

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ মার্চ বিকেলে রবি উল্লাহর প্ররোচনায় ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার এএসআই আল আমিনসহ চারজন পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে এসে রুবেলকে বাড়ি থেকে আটক করেন। থানায় নিয়ে রবি উল্লাহর কথামতো পরিদর্শক তরুণ কান্তি দে ও এএসআই আল-আমিন দফায় দফায় লাঠি দিয়ে রুবেলকে মারধর করেন। মারধরের কারণে রুবেলের পুরো শরীর রক্তাক্ত হয়। 

এদিকে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রুবেলকে আদালতে না পাঠিয়ে থানায় শারীরিকভাবে নির্যাতন অব্যাহত রাখার খবর পেয়ে তাঁর মা সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেন। বিষয়টি জানতে পেরে তড়িঘড়ি করে আটকের দুদিন পর (১৬ মার্চ) দুপুরের দিকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সেখানে রুবেলের শরীরের জখম দেখে আদালতের পুলিশ সদস্যরা তাঁকে গ্রহণ না করে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। 

সে সময় আদালত থেকে রুবেলকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার আদালতে নেওয়া হয়। পরে আদালত তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

ভুক্তভোগী আবদুল আহম্মদ রুবেলের স্ত্রী মায়া মনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার স্বামীকে আটকের পর পুলিশ হেফাজতে রেখে নির্যাতন করে। ১৪ মার্চ তাঁকে আটক করলেও ১৬ মার্চ তাঁকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ।’ 

মায়া মনি আরও বলেন, ‘রুবেলকে প্রচুর নির্যাতন করে আদালতে পাঠালে কোর্ট পুলিশ আহতাবস্থায় তাঁকে গ্রহণ করেনি। আদালত থেকে চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়ার প্রমাণ সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে মিলবে। পুলিশের ভয়ে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের পুলিশ পরিদর্শক কাজী দিদারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই নারীর (ভুক্তভোগীর মায়ের) মামলাটি আদালত খারিজ করে দিয়েছে।’ আহত অবস্থায় রুবেলকে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে সে বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি দিদারুল। নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

ভুক্তভোগী রুবেলের মা আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে রুবেলকে পুলিশ পাশবিক নির্যাতন করেছে। আমি আমার সন্তানের নির্যাতনের বিচার চাই।’ 

অভিযোগের বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) তরুণ কান্তি দে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তাঁরা প্রথমে আদালতে মামলা ও অভিযোগ করেছে বিষয়টি আমি জেনেছি। তাঁদের দেওয়া এসব অভিযোগ মিথ্যা।’ 

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগটি আমি পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত