Ajker Patrika

সীমান্তে ফের উত্তেজনা: গুলি পড়ল বাংলাদেশে, ২০ পরিবারকে স্থানান্তর

বান্দরবান ও নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২২, ০০: ৫৬
সীমান্তে ফের উত্তেজনা: গুলি পড়ল বাংলাদেশে, ২০ পরিবারকে স্থানান্তর

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও দোছড়ি ইউনিয়নের পরিস্থিতি গত কয়েকদিন স্বাভাবিক থাকলেও আজ শনিবার নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে মর্টার ও ভারী গোলা বর্ষণের পাশাপাশি প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে দুটি ভারী অস্ত্রের গুলি এসে পড়েছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে দুই ইউনিয়নের ২০ পরিবারকে নিরাপদস্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নুরুল আবছার ইমন ও মোহাম্মদ ইমরান। 

নাইক্ষ‍্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরুল আবছার ইমন আজ রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুপুরের পর থেকে তার ইউনিয়ন এলাকার পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার সীমান্তের অভ‍্যন্তরের ব্যাপক গোলাগুলির শব্দে এপার কেঁপে ওঠে। লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।’

নুরুল আবছার বলেন, ‘গোলাগুলি বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে তার ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের চেরারমাঠ এলাকার ১৫ পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২ পরিবারকে ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বারের বাড়িতে ও অন্যত্র রাখা হয়েছে।’

নুরুল আবছার আরও বলেন, ‘সরিয়ে নেওয়া পরিবারের নারী ও শিশুদের সরানো হলেও পুরুষেরা এখনো নিজ বাড়িতে রয়েছেন। তবে সমস্যা হলে যেকোনো সময় আরও পরিবারকে নিরাপদস্থানে সরানো হবে। এ জন্য দুজন ইউপি মেম্বার ও গ্রাম পুলিশকে (ভিডিপি) সার্বক্ষণিক দায়িত্বে রাখা হয়েছে। সরিয়ে নেওয়া পরিবারগুলোর খাওয়ার ব্যবস্থা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করা হবে।’

দোছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইমরান আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁর ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন বাহিরমাঠ এলিকায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে রাতে পাঁচ পরিবারকে নিরাপত্তার স্বার্থে সরিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় রাখা হয়েছে। তাদের খাবারের ব‍্যবস্থা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করা হবে। 

চেয়ারম্যান ইমরান বলেন, ‘যদি গোলাগুলি বেড়ে যায় তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে আরও লোকজনকে নিরাপদস্থানে সরানোর প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।’

এর আগে সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন জানান, তাঁরা নাইক্ষ‍্যংছড়ির কয়েকজন সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে চেরারমাঠ এলাকায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন‍্য শনিবার বিকেলে যান, তখন সীমান্তের ওপার থেকে গুলি তাদের মাথার ওপর দিয়ে যায়। অল্পের জন‍্য তারা রক্ষা পেয়েছেন। আজ শনিবার দুপুর ১টা থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৪,৬, ৮ এব ৯ নং ওয়ার্ডের চেরারমাঠ সীমান্তের ৪৪,৪৫, ৪৬ ও দোছড়ি ইউনিয়নের ৪৭,৪৮ এবং ৪৯ পিলার পুরান মাইজ্জা ক্যাম্প, অংচাফ্রী ক্যাম্প এবং সালি ডং ক্যাম্পের তাদের চৌকি থেকে অগণিত মর্টার ও আর্টিলারি বোমা বিস্ফোরণের আওয়াজে মনে হয় এপারে যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দুপুর একটা থেকে ওপার থেকে গোলাগুলি ও আর্টিলারি মর্টারশেল বিস্ফোরণের আওয়াজে এপারের বেশ কয়েকটা গ্রাম কেঁপে উঠেছে।’

এলাকাবাসী ছোটাছুটি করছেন এবং সীমান্তে অবস্থানরত সবাই আতঙ্কিত। কারণ এত দিন নাইক্ষ‍্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন ও সোনাইছড়ির কিছু এলাকায় সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলাগুলি হতো। আজ দুপুর থেকে দোছড়ি ও সদর ইউনিয়নের সীমান্তের ওপারে ব্যাপক মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দে এপারে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দু শুক্কুর বলেন, ‘ভারী অস্ত্রের দুটি গুলি আমাদের ভূখণ্ডে পড়েছে।’ 

আব্দু শুক্কুর জানান, সকালে ধান খেতে কাজ করার সময় হঠাৎ মিয়ানমারে ভূখণ্ডে প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পান তিনি। তখন গোলাগুলির আওয়াজ শুনে ধান খেত থেকে সরে আসার পর পরই দুটি ভারী অস্ত্রের গুলি লেমুছড়ি বিজিবি ক্যাম্পের প্রায় তিন শত গজ দূরত্বে এসে পড়ে। 

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দুই মাসের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওয়ালিডং এবং খ্য মং সেক পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির তুমুল লড়াই শুরু হয়। দেড় মাস পর এ যুদ্ধের ব্যাপ্তি ছড়িয়েছে দক্ষিণ দিকের জেলা শহর মংডু এবং তার আশপাশের এলাকায়। বর্তমানে দক্ষিণ মংডুর বুচিডং, রাচিডং এলাকায় উভয় পক্ষের তুমুল লড়াই চলছে। ১২ থেকে ১৪ দিন আগে দোছড়ি ইউনিয়নে দক্ষিণ বাহির মাঠ সীমান্তের বিপরীতে রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ে স্থাপিত বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একাধিক চৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি। এখন চৌকিগুলো পুনরুদ্ধার করার জন্য দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। গুলিবর্ষণের পাশাপাশি মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

এদিকে জামছড়ি জামে মসজিদে যোহর নামাজ পড়তে আসা মুসল্লি, মোয়াজ্জেম ও ইমাম জানান, ‘ওপারে বিস্ফোরণের আওয়াজে যোহরের নামাজের সময় অনেকটা ভয় কাজ করেছিল। কারণ কখন জানি মর্টারশেল আমাদের মসজিদে এসে পড়ে।’

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌসের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সদর ইউনিয়ন ও দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে মর্টারশেলের আওয়াজের কথা শুনেছেন। আতংকিত  কিছু লোক সীমান্ত থেকে পালিয়ে আসার খবর পেয়ে তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে ব্যবস্থা করা হয়েছে। অস্থায়ী আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে লোকজনকে শিবিরে নিয়ে আনার ব্যবস্থা করছেন তারা। চেয়ারম্যান,মেম্বার,গ্রাম পুলিশ ও চৌকিদার-দফাদারদের নিবিড়ভাবে এসব দেখার জন্যে বলা হয়েছে। তিনি নিজেও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন। সীমান্তে বসবাসরত সকলকে নিরাপদে চলাফেরা করার জন্য চেয়ারম্যানকে বলে দিয়েছেন।

এদিকে নাইক্ষ‍্যংছড়ি ১১ বিজিবির একটি সূত্র জানায়, তাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তাদের সদস্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। টহল জেরদার করা হয়েছে। কোনো নতুন রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে এ দেশে প্রবেশ করতে না পারে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

নাইক্ষ‍্যংছড়ি থানার ওসি টানটু সাহার সঙ্গে শনিবার রাত ৮টার দিকে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্তমানে তিনি জেলা সদরে রয়েছেন। এলাকায় যাওয়া ছাড়া বিস্তারিত বলতে পারবেন না।’

এদিকে রাতে যোগাযোগ করা হলে নাইক্ষ‍্যংছড়ি প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক আবদুল হামিদ ও সাংবাদিক আবদুর রশিদ বলেন, ‘সন্ধ্যার পর গোলাগুলির আওয়াজ কমেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত