Ajker Patrika

কঠোর সংগ্রামে সফলতা পেয়ে জয়িতা হলেন ৩ জন

প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
কঠোর সংগ্রামে সফলতা পেয়ে জয়িতা হলেন ৩ জন

স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই চরম দুঃসময় নেমে আসে গৃহবধূ মরিয়ম বেগমের জীবনে। এর মাত্র চার দিন পর চার সন্তানসহ অসহায় স্বামীহারা এই গৃহবধূকে ঘর থেকে বের করে দেন শাশুড়ি। এতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম শুরু করেন তিনি। 

স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ায় আর বাপের বাড়ির মুখাপেক্ষী হতে চাননি এই গৃহবধূ। সীতাকুণ্ড পৌর সদরে এসে কাজ নেন উন্নয়ন সংস্থা এনজিও ইপসাতে। মাত্র ৬০০ টাকায় চাকরি করে নিজেও চার সন্তানের ভরণ পোষণ কঠিন হলেও চলতে থাকেন তিনি। নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করায় খুশি হন ইপসার কর্মকর্তারাও। এতে তাঁর প্রতি বাড়তি আন্তরিকতা দেখায় ইপসাও। ফলে ইপসার সার্বিক সহযোগিতা ও নিজের প্রচেষ্টায় বদলাতে থাকে দিন। 

টানা ২০ বছর এমন সংগ্রামে তিনি অর্থনৈতিক সাফল্য লাভের পাশাপাশি চার সন্তানকেই সুশিক্ষিত করে তোলেন। আর এই কঠোর জীবনসংগ্রামের স্বীকৃতি স্বরূপ সীতাকুণ্ড উপজেলায় অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হন মরিয়ম। তিনি সীতাকুণ্ড পৌর সদরের মধ্যম মহাদেবপুর গ্রামের আয়েশা ভিলার বাসিন্দা মৃত মুছা মিয়ার স্ত্রী। 

শুধু মরিয়ম নন, এবার এমনই সংগ্রামী জীবনে সাফল্য পেয়ে এ উপজেলায় আরও দুই নারী জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন সীতাকুণ্ড পৌর সদরের সোবাহানবাগ এলাকার মো. জসীম উদ্দিনের স্ত্রী আছমা আক্তার ও বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের বাড়বকুণ্ড বড়ুয়া পাড়ার বুলবুল বড়ুয়ার স্ত্রী শিখা বড়ুয়া। আছমা আক্তার জয়িতা হয়েছেন শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে এবং শিখা বড়ুয়া জয়িতা হন সমাজ উন্নয়নে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে। 

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আছমা উপজেলার বাড়বকুণ্ড সিসিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োজিত আছেন। ২০১৬ সালের শিক্ষা সপ্তাহে বিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে পুরস্কৃত হন তিনি। এর আগে তিনি এনজিও সংস্থা ইপসা ও ভার্কে চাকরি করে সেখানেও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করে হয়েছেন প্রশংসিত। পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে এম. এ ও বি. এড ডিগ্রি অর্জনকারী এই নারী তাঁর পরিশ্রম ও একাগ্রতার স্বীকৃতি স্বরূপ হয়েছেন জয়িতা।

অন্যদিকে নিজে স্কুল খুলে সমাজের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া ও এলাকায় নারী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে ভূমিকা রেখে জয়িতা হন শিখা বড়ুয়া। কঠোর সংগ্রামী এই নারী কখনো প্রতিকূলতার কাছে হার মানেননি। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, শিখা সব সময় গ্রামের শিক্ষা ও আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে এককভাবে চেষ্টা করে গেছেন। তিনি নিজেই খুলেছিলেন একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়ে অনেক অনেক ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে শিক্ষিত হয়েছে। পাশাপাশি নৈতিকতা শেখানোর জন্য খোলেন একটি ধর্মীয় স্কুলও। এ ছাড়া তিনি মহিলা ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে টানা ৫ বছর এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। গ্রামের মানুষের জন্য তৈরি করেন রাস্তা, স্থাপন করেন টিউবওয়েল। এ ছাড়া সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তিনি ছিলেন এগিয়ে। সব বিবেচনায় তিনি হয়েছেন জয়িতা। 

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন নাহার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদান রেখে সমাজ ও নিজের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন করেছেন মরিয়ম, আছমা ও শিখা। তাঁদের এসব কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ শেষে আমরা তাঁদের ২০২০-২১ সালের শ্রেষ্ঠ জয়িতা ঘোষণা করেছি। তাঁদের সংগ্রামী জীবন অন্য অনেক নারীর জন্য প্রেরণা হয়ে উঠবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

সিঙ্গাপুরে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, আবেদন ফি মাত্র ৭ হাজার টাকা

যুবককে আটক করা নিয়ে বিজিবি ও এলাকাবাসীর পাল্টাপাল্টি দাবি

বরিশাল-৩ আসনে বিএনপির দুই হেভিওয়েট নেতার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

বরখাস্ত সৈনিককে অস্ত্র দিয়েছেন বিএনপি নেতা, অডিও নিয়ে তোলপাড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত