Ajker Patrika

চট্টগ্রাম বন্দরে লাইটার জাহাজ ধর্মঘটে দিনভর অচলাবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২২, ১১: ৩৮
চট্টগ্রাম বন্দরে লাইটার জাহাজ ধর্মঘটে দিনভর অচলাবস্থা

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান ও পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার এবং একটি ঘাটের ইজারা বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে গতকাল শুক্রবার কর্মবিরতি পালন করেছেন লাইটার জাহাজের শ্রমিকেরা। ভোর ৬টা থেকে কর্ণফুলীর ১৬টি ঘাট ও বহির্নোঙরে অবস্থানরত লাইটার জাহাজের শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রেখে ধর্মঘট শুরু করেন। এতে করে দিনভর বন্দরে সব ধরনের পণ্য জাহাজে ওঠানো-নামানো ও পরিবহন বন্ধ ছিল।

ধর্মঘট নিয়ে গতকাল সন্ধ্যার পর শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রহিম আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বন্দরের চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক হয়েছে। তিনি ঘাট ইজারা দেওয়া স্থগিতের আশ্বাস দেন। এরপরই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

এর আগে লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মোহাম্মদ নবী আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে প্রত্যাহার, লাইটার জাহাজের শ্রমিকদের ওঠানামায় ব্যবহৃত চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল, পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অপসারণ, সাঙ্গু নদীর মুখ খনন করে লাইটার জাহাজের নিরাপদ পোতাশ্রয় করার দাবি নিয়ে আমরা কর্মবিরতি শুরু করেছি।’

নবী আলম জানান, সি বিচের (পতেঙ্গা) উত্তর পাশে চরপাড়া ঘাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে লাইটার জাহাজের শ্রমিকেরা আনোয়ারা পারকির চর এলাকায় চলে যান। সেই ঘাটে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, বাজার নিয়ে জাহাজে ফিরতে পারেননি অনেক শ্রমিক। বাধ্য হয়ে উল্লিখিত পাঁচ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন লাইটার জাহাজের শ্রমিকেরা।

বিদেশ থেকে গম, চাল, ডাল, ছোলা, চিনি, তেল, ক্লিংকার ইত্যাদি খোলা পণ্য বড় জাহাজে বহির্নোঙরে (সাগরে) আনা হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন গুদাম, ঘাট, ডিপো, শিল্পকারখানায় এসব পণ্য নিয়ে যায় লাইটার জাহাজ। ‘সর্বস্তরের নৌযান শ্রমিকবৃন্দের’ ব্যানারে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের বাংলাবাজার এলাকায় এক সমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় থাকা লাইটার জাহাজগুলো আগে রাখা হতো কর্ণফুলী নদীর উজানে। কর্ণফুলী নদীতে নৌযান চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব জাহাজ পতেঙ্গা সৈকতের সামনে বহির্নোঙরে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপর দেড় বছর ধরে এসব জাহাজ পতেঙ্গা সৈকতের পাশে সাগরে নোঙর করে রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে জাহাজ থেকে শ্রমিকদের তীরে আসা-যাওয়ার জন্য গত বছর বন্দর কর্তৃপক্ষ চরপাড়া এলাকায় ঘাট নির্মাণ করে দেয়। পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ এই ঘাট ইজারা দেয়। ইজারা দেওয়ার পরই শ্রমিকদের সঙ্গে ইজারাদারের লোকজনের বাগ্বিতণ্ডা চলে আসছে।

সম্প্রতি শ্রমিককে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।

এ বিষয়ে লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জানান, ৩ নভেম্বর ইজারাদারের লোকজন আট-নয়জন শ্রমিককে মারধর করেন। পুলিশ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বন্দরের কাছে এ ঘাটের ইজারা বাতিলের দাবি জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা ছাড়াও পারকির চর এলাকায় অবস্থানরত নৌযান থেকে শ্রমিকেরা বিমানবন্দর সড়কের শেষ মাথায় চায়নিজ ঘাট ব্যবহার করে ওঠানামা করতে শুরু করে। সেই ঘাটটিও গত বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ করে দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপরই ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে গিয়ে লাইটার জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানো ও পরিবহন বন্ধের ডাক দেন। তারই ধারাবাহিকতা কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, শ্রমিকেরা যাতে ঘাট দিয়ে নিরাপদে নৌযানে উঠতে পারেন এবং অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে কোনো নৌযান যাতে চলতে না পারেন, সে জন্য কারও দায়িত্ব পালন করা দরকার। এই দায়িত্ব পালনের জন্যই দরপত্রের মাধ্যমে চরপাড়া ঘাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। মাশুলও জনপ্রতি ১০ টাকা রাখা হয়েছে। এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত