Ajker Patrika

খাস জমিতে চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনের ঘর, দিঘি দখলে তৎপর ব্যবসায়ী

মাহবুব আলম আরিফ, মুরাদনগর (কুমিল্লা)
খাস জমিতে চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনের ঘর, দিঘি দখলে তৎপর ব্যবসায়ী

একদিকে খাস জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন। আরেকদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ৩ শ বছরের পুরোনো একটি দিঘি ভরাট করে দখলে নিচ্ছেন ব্যবসায়ী। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের নগরপাড় এলাকায় এমন ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। 

সরেজমিনে দেখা, এ এলাকায় ৩০০ বছরের পুরোনো একটি দিঘি রয়েছে। ১৫ একরের অধিক জায়গায় নাম রায় দিঘি। এই দিঘির একপাশ থেকে নিয়মিত ভরাট করে যাচ্ছেন এম এস সি ব্রিকসের মালিক গোলাম মোস্তফা। দু-এক দিন পরপরই নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রাকে করে ইট, ভাঙা ইট ও ইটের গুঁড়া এনে দিঘির এক পাশে ফেলছেন। সহসাই মানুষের চোখে না পড়ে সে জন্য কৌশলে সামনে টিনের বেড়া সাঁটিয়ে নিয়েছেন। মোস্তফা ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দা নিতাইসহ বেশ কয়েকজন দিঘির পাশ ভরাট করে দখলে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

জানতে চাইলে নিতাই নিজের ভরাটের কথা স্বীকার না করলেও গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েকজন ওই দিঘিটি ভরাট করছে বলে নিশ্চিত করেছেন। 

এর আগেও একবার এই দিঘি ভরাট করে দখলের তৎপরতা দেখা যায়। এ তৎপরতা রোধে ও দিঘির পরিবেশ রক্ষার্থে ২০১২ সালে স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী আদালতে মামলা করেন। সেই মামলার জেরে ওই বছরই হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যে, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দিঘিতে কোন প্রকার ভরাটের কাজ করা যাবে না। সেই নির্দেশনা অমান্য করে গত কয়েক বছরে ওই দিঘিটির প্রায় ৬ একরের বেশি জায়গা কৌশলে ভরাট করেছে এলাকার কয়েকজন। 

গোলাম মোস্তফা বলেন, এই দিঘিতে আমার প্রায় দেড় একর জায়গা রয়েছে। আদালতে মামলা চলার কারণে কেউ আর ভরাট করছে না। তাই আমিও করছি না। নতুন করে ইট ফেলে ভরাটের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, এই জায়গা আগে থেকেই ভরাট ছিল। 

ইউএনও বলেছেন, খাস জমি দখল বা দিঘি ভরাট করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবেনিতাই আরও বলেন, ওই দিঘিটির উত্তর পাশে একটি বড় সরকারি হালট ছিল, যা ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই সরকারি হালট (খাস জমি) দখল করে ঘর বানিয়েছেন নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের, সিদ্দিক মিয়া চৌধুরী, ইকবাল মিয়া, কাজী সুলতান ও মোহন মিয়া। হালটের পাশে নিজেদের কিছু জমি থাকায় তাঁরা ধীরে ধীরে এ হালট দখলে নিয়েছেন। 

খাস জমি দখল করে বাড়ি বানানো প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের বলেন, আনিসুর রহমান এই উপজেলায় এসিল্যান্ড থাকাকালে সার্ভেয়ার এনে জমি মাপিয়েছিলেন। ওই মাপে দেখা যায়, রাস্তার উত্তরপাশের কয়েকটি পরিবার ১১ ফুট খাস জমি দখলে নিয়েছে। তাঁদের নামে ভূমি আত্মসাতের মামলা হয়েছে। কিন্তু আমার নামে কোন মামলা নেই। তাঁর নিজের বাড়ি খাস জমিতে পড়েছে কিনা প্রশ্নে হ্যাঁ বা না উত্তরের বদলে চেয়ারম্যান বলেন, মাপে যদি দেখা যায় আমার বাড়ি খাস জমিতে পড়েছে, সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ভেঙে সরিয়ে নেব। আমি চেয়ারম্যান, আমার একটা দায়িত্বশীলতা আছে। এই খাস জমিটি আবার মাপা প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

রায় দিঘি পাশ থেকে ভরাট ও খাস জমিতে বাড়ি নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুরাদনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন বলেন, 'আমি নতুন এসেছি। এ এলাকার অনেক বিষয় এখনো আমার অজানা। আমি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নিচ্ছি'। 

আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশ বলেন, পুকুর বা দিঘি ভরাটের বিষয়ে কেউ জানালে আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। রায় দিঘি ভরাটের বিষয়ে আমাকে কেউ লিখিত ভাবে জানায়নি। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কেউ দিঘি ভরাটের চেষ্টা করলে অবশ্যই ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।' 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত