Ajker Patrika

প্রতিদিনই পুড়ছে ঘর

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

সূর্যের আলো তখনো ফোটেনি। শীতের এই সময়ে মাদারবাড়ি এলাকার পানির ট্যাংক রেলস্টেশনের পাশের বস্তির বাসিন্দা ঝর্ণা আক্তারের পরিবারের সবাই ছিলেন গভীর ঘুমে। আচমকা ‘আগুন, আগুন’ চিৎকারে জেগে ওঠেন তাঁরা। কোনোমতে ঘর থেকে বেরিয়ে নিরাপদে যেতে পারলেও আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যায় পরিবারটির সর্বস্ব। এ ঘটনা ১১ ডিসেম্বরের।

পরদিন সকালে ধ্বংসস্তূপের ভেতর হাঁড়ি-পাতিলের ভগ্নাংশ খুঁজতে খুঁজতে এই মধ্যবয়সী নারী বিলাপ করছিলেন, ‘এক ঘণ্টার আগুনে আমার ১৫ বছরের সাজানো সংসার তছনছ হয়ে গেল রে।’ ঝর্ণার মতো কেউ না কেউ প্রতিদিন চট্টগ্রাম নগরীতে অগ্নিকাণ্ডে সব হারিয়ে পথে বসছেন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আগুনের ঝুঁকি’—শীর্ষক গবেষণাতেও উঠে এসেছে এমন চিত্র।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম নগরীতে ২ হাজার ৫১৪টি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। অর্থাৎ দিনে ১ দশমিক ৩৮টি অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। এসব অগ্নিদুর্ঘটনায় ক্ষতি হয়েছে ১৭ কোটি ৯০ লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকার সম্পদের। শুধু সম্পদহানিই নয়, ঘটছে প্রাণহানিও। এই পাঁচ বছরে আগুনে পুড়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৮৩ জন।

চুয়েটের নিজস্ব অর্থায়নে চট্টগ্রাম নগরীর আওতাভুক্ত ৯টি ফায়ার স্টেশন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই গবেষণা কার্যক্রম চালানো হয়। চুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ড. মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান ও মো. রাকিবুল হাসান কাউসার গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তাঁদের সহকারী ছিলেন জিহান ইব্রাহিম। গত আগস্টে ২২ পৃষ্ঠার এই গবেষণাপত্র জার্মানিভিত্তিক একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়।

বেশির ভাগ অগ্নিদুর্ঘটনায় হয়েছে আবাসিক এলাকায়। পাঁচ বছরে ৪৬ শতাংশ অগ্নিকাণ্ডের শিকার আবাসিক এলাকা। বাণিজ্যিক এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও কম নয়, ২৭ শতাংশ। এ ছাড়া মিশ্র এলাকায় ১৩ শতাংশ, শিল্প এলাকায় ১১ শতাংশ, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ২ শতাংশ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আগুনে পোড়া স্থাপনার মধ্যে ৩৭ শতাংশ ছিল পাকা বাড়ি। আর ৩৩ শতাংশ সেমিপাকা ও ৩০ শতাংশ ছিল কাঁচাঘর।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ: সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো, বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডের কারণ বৈদ্যুতিক ত্রুটি। এই ত্রুটিতেই ৬৬ শতাংশ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার ও সরঞ্জাম ব্যবহার, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে অপরিকল্পিত উপায়ে সংযোগ নেওয়ার কারণে শর্টসার্কিট হয়ে দ্রুতই আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া রান্নাঘরের চুলা থেকে ১১ শতাংশ, রাসায়নিক পদার্থ থেকে ১৩ শতাংশ, সিগারেটের আগুন থেকে ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে ১ শতাংশ আগুনের ঘটনা ঘটছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান সামিনা বানু বলেন, ঘরবাড়িতে দেখা যায় একসঙ্গে ডিশ, ইন্টারনেট, টেলিফোন সংযোগের সঙ্গে বৈদ্যুতিক তারও পাশাপাশি রাখা হয়। সবগুলো তার একসঙ্গে সঞ্চালনের সময় গরম হয়ে ওঠে। এ কারণে গলে গিয়ে অনেক সময় আগুন ধরে যায়।

অগ্নিদুর্ঘটনা কমাতে: সিটি করপোরেশনের ১৫৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় কাজ করছে মাত্র নয়টি ফায়ার স্টেশন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার ও সরঞ্জাম ব্যবহার এবং অবৈধ সংযোগ নেওয়া বন্ধ করলেও দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করেন তাঁরা। তবে গবেষকেরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, পাড়া-মহল্লায় স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপ তৈরির দিকে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত