Ajker Patrika

রাউজানে একের পর এক হত্যা, আতঙ্কে বাসিন্দারা

মো. আরফাত হোসাইন, রাউজান (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রামের রাউজানে নিহতদের মধ্যে কয়েকজন। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের রাউজানে নিহতদের মধ্যে কয়েকজন। ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অস্থির হয়ে রয়েছে চট্টগ্রামের রাউজান। একের পর এক ঘটছে হত্যাকাণ্ড। চাঁদাবাজি, দখল, আধিপত্য বিস্তার, জমি নিয়ে দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে গত ২৮ আগস্ট থেকে সর্বশেষ ২২ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ১২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। হত্যাগুলো হয়েছে গুলি চালিয়ে, ছুরিকাঘাত করে, কিংবা পিটিয়ে। অধিকাংশ ঘটনায় যুক্ত ছিল রাজনৈতিক বিরোধ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্যমতে, ৫ আগস্টের পর কিছু বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ও মারামারি হলেও হত্যাকাণ্ড শুরু হয় ২৮ আগস্ট। ওই দিন বিকেলে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী মার্কেট এলাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের নেতা আব্দুল মান্নানকে। সর্বশেষ ২২ এপ্রিল রাউজান সদর ইউনিয়নের গাজীপাড়ায় মো. ইব্রাহিম (৩০) নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

এ ছাড়া ১ সেপ্টেম্বর রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিমের বাগানবাড়ি থেকে মো. ইউসুফ মিয়া নামের একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজের চার দিন পর ২৯ অক্টোবর উরকিরচর ইউনিয়নের মইশকরম এলাকায় পাওয়া যায় আজম খান নামের একজনের লাশ। নিখোঁজের তিন দিনের মাথায় ১১ নভেম্বর মেলে ওলামা লীগের সদস্য আবু তাহেরের লাশ। ২৪ জানুয়ারি সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। ১৯ ফেব্রুয়ারি যুবলীগ কর্মী মুহাম্মদ হাসানকে পিটিয়ে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত।

সেই সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে ১৫ মার্চ পিটুনি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন কমরউদ্দিন জিতু। ২১ মার্চ পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের বৃহত্তর হোয়ারাপাড়ায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় মো. রুবেলকে। ৪ এপ্রিল হলদিয়া ইউনিয়নের ইয়াসিননগরে দুই ভাইয়ের হাতে খুন হন মো. নূর আলম বকুল। ১৭ এপ্রিল পাহাড়তলী ইউনিয়নের মাহামুনি দীঘি থেকে মো. জাফরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৯ এপ্রিল রাতে গুলি করে এবং চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আবদুল্লাহ মানিককে।

এসব ঘটনার মধ্যে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হত্যা মামলায় পাঁচ ও যুবলীগ কর্মী হাসান হত্যা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকি ঘটনাগুলোর রহস্য উদ্ঘাটন এবং আসামি শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। স্বজনদের অভিযোগ, অনেক হত্যায় জড়িত ব্যক্তিরা এলাকায় ঘুরলেও পুলিশ ধরছে না। কমর উদ্দিনের স্ত্রী ডেইজি আকতার বলেন, ‘আমার স্বামীকে বাজারে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। আমি নাম উল্লেখ করে মামলা করলেও পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করছে না।’

এ বিষয়ে কথা হলে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, রাউজানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও হত্যাকাণ্ড ঠেকানো যাচ্ছে না। কারণ অনেক হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। এ ছাড়া পারিবারিক সমস্যায় হত্যাগুলো তাৎক্ষণিক হচ্ছে। অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধ করা যতটা সহজ, হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ ততটা সহজ নয়। তারপরও প্রতিটি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত