Ajker Patrika

শখের বসে ধূমপায়ী থেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে প্রজন্মের শিশু-কিশোরেরা

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
শখের বসে ধূমপায়ী থেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে প্রজন্মের শিশু-কিশোরেরা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ধূমপায়ীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আসক্ত এসব ধূমপায়ীর অধিকাংশই শিশু-কিশোর। স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষার্থী সিগারেট খাওয়াকে স্মার্টনেস মনে করে ধূমপানে জড়িয়ে পড়ছে। এভাবে একপর্যায়ে তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষার্থী ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ছে। টিফিনের টাকায় বন্ধুরা মিলে দোকানে গিয়ে সিগারেট কেনে। এরপর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নির্জন স্থানে গিয়ে ধূমপান করে। কৌতূহল থেকে অনেকে আবার গাঁজা, ইয়াবা ও হেরোইনের মতো মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। শিশু-কিশোরদের অনেকে প্রকাশ্যে ধূমপান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের দোকান বা গ্রামগঞ্জের অলিগলিতে। বিকেলের আড্ডা বা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক ও দর্শনীয় স্থানগুলোতেও তাদের দেখা মেলে। 

শিশুদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি আইনত নিষিদ্ধ হলেও সে আইন মানেন না ব্যবসায়ীরা। সহজেই তারা হাতের নাগালে পায় এসব তামাকজাত পণ্য। ধূমপানে আসক্তি বাড়তে থাকে এসব শিশু-কিশোরের। 

ধূমপানে আসক্ত কয়েকজন কিশোরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকে প্রতিনিয়ত ধূমপান করে। কেউ শখের বসে খাচ্ছে সিগারেট। অনেকে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঘুরে আসক্ত হয়ে পড়েছে বলে জানায়। তাদের অধিকাংশ শিশু-কিশোরের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের নিচে। 

আসক্ত অনেক শিশু-কিশোর মনে করে, সিগারেট খাওয়া স্মার্টনেস বা ফ্যাশনের অংশ। ধূমপান না করলে ‘হাফ লেডিস’ বলে টিপ্পনী কাটে আসক্ত বন্ধু-সহপাঠী। তাই অনেকে এসব টিপ্পনী থেকে বাঁচতে এবং স্মার্ট হওয়ার আশায় ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে বাজারে ৫ টাকা থেকে ১৬ টাকার মধ্যে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়। স্বল্পমূল্য ও সহজলভ্য হওয়ায় এসব তামাক পণ্যের ক্রেতা হচ্ছে শিশু-কিশোরেরা। 

এ বিষয়ে ধানুয়া-গাজীপুর ব্রিজ এলাকার সাইফুল নামের এক সিগারেট বিক্রেতার কাছে শিশু-কিশোরদের কাছে তামাকজাত পণ্য বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘কেউ সিগারেট চাইলে আমরা দিতে বাধ্য হই। আমি বিক্রি না করলে আরেক দোকান থেকে তারা কিনবে। তা ছাড়া সিগারেট খেতে বারণ করলে তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, ধমক দেয়।’ 

ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, গল্লাক কলেজ, গৃদকালিন্দিয়া কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আইনে তো প্রকাশ্যে ধূমপান করা নিষেধ। কয়জন সে আইন মানে? আর এত আইন দেখলে তো আর ব্যবসা করা যাবে না।’ 

এ ব্যাপারে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এমদাদুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘সন্তানের সামনেই অনেক বাবা ধূমপান করেন। এতে ওই সন্তানও ধূমপানে আগ্রহী হয়ে ওঠে। বর্তমানে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধূমপান সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময় ধূমপান থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ধূমপানের কুফল সম্পর্কে ধারণা দিই।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আশরাফ আহমেদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিশু বয়স থেকে ধূমপান ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এতে প্রথমেই শিশুর মানসিক ও দৈহিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ফুসফুস ক্যানসারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ জন্য সবাইকে তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত