জাহাঙ্গীর আলম
যারা এখন আমাদের লাইভে যোগ দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের গত কয়েক ঘণ্টার ঘটনাপ্রবাহের সারাংশ নিচে তুলে ধরা হলো:
এই সংঘাতের পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, তাৎক্ষণিক ও সর্বশেষ খবর জানতে সঙ্গেই থাকুন।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার জবাবে ইরানের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বানকে ‘অন্যায্য’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি। শুক্রবার এক টেলিগ্রাম বার্তায় তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান।
বার্তায় আরাকচি উল্লেখ করেন, তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। সেই বৈঠকে তিনি স্পষ্টভাবে জানান, ইসরায়েল ইরানের জাতীয় সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর ইসরায়েলপন্থী অবস্থানেরও সমালোচনা করেন।
আরাকচি আরও বলেন, “ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিক্রিয়া হবে কঠোর ও নির্ধারিত। আমরা আমাদের ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করি।”
এদিকে, ইউরোপীয় ও পশ্চিমা নেতারা ইরান-ইসরায়েল চলমান উত্তেজনায় শান্ত থাকার আহ্বান জানালেও, ইরান বলছে এটি তার আত্মরক্ষার অধিকার। ইরান দাবি করছে, ইসরায়েলই প্রথমে তাদের ওপর আগ্রাসন চালিয়েছে এবং তেহরানের জবাব ছিল প্রতিরক্ষামূলক ও ন্যায়সঙ্গত।
মার্কিন নাগরিক, ঘাঁটি কিংবা অবকাঠামোর ওপর হামলা হলে ইরানের জন্য ‘ভয়াবহ পরিণতি’ অপেক্ষা করছে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মার্কিন কর্মকর্তা ম্যাককয় পিট। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তিনি বলেন, ‘আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে—এই অঞ্চলে মার্কিন নাগরিক ও বাহিনীগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে, তবে পরিণতি হবে চরম।’
তিনি জানান, ইসরায়েল তাদের অভিযানের আগে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছিল। তবে এ অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে জড়িত ছিল না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পিট বলেন, ‘ইসরায়েল আমাদের জানায় যে এটি তাদের আত্মরক্ষার জন্য জরুরি।’
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র আবারও ইরানকে কূটনৈতিক সমাধানে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে। ম্যাককয় পিট বলেন, ‘এই মুহূর্তে ইরানের নেতৃত্বের জন্য সবচেয়ে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত হবে আলোচনায় ফেরার।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বেশ কিছুদিন ধরেই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে আনতে চুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সমঝোতা চূড়ান্ত হয়নি। ট্রাম্প এরই মধ্যে আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের প্রশাসন একদিকে যেমন ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে, অন্যদিকে কূটনৈতিক সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়ে ইরানকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত ও পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কণ্ঠে উত্তেজনা প্রশমনের ডাক জোরালো হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) পোস্ট করে ইসরায়েল ও ইরান উভয় পক্ষকেই সংঘর্ষ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘ইরানির পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ। তেল আবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। যথেষ্ট হয়েছে। এবার থামার সময়। শান্তি ও কূটনীতি জয়ী হোক।’
এছাড়া ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজকের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার এবং জনগণের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেছি। একইসঙ্গে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, সব পক্ষ যেন ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখায় এবং উত্তেজনা হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা নেয় — এই আহ্বান জানিয়েছি।
এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি অত্যন্ত টালমাটাল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংঘাত নিয়ন্ত্রণে তৎপর।
ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি বিমানবন্দরে আগুন লাগার ও ঘন ধোঁয়া উঠার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
AFP জানিয়েছে, তাদের এক সাংবাদিকের বরাতে তেহরানের মেহরাবাদ (Mehrabad) বিমানবন্দরে আগুন ও ঘন কালো ধোঁয়া দেখা গেছে।
ইরানের আধা-সরকারি মেহর নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, বিমানবন্দর এলাকা সংলগ্ন স্থানে “একটি বিস্ফোরণ” হয়েছে। সংস্থাটি একটি ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে ঘন ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে।
পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে তা জানানো হবে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জনগণকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সুরক্ষিত আশ্রয়স্থলে অবস্থান করতে বলেছে।
এক বিবৃতিতে IDF জানায়, ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কিছুক্ষণ আগেই IDF ইরান থেকে ইসরায়েল অভিমুখে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে।’
IDF আরও জানায়: ‘স্পষ্টভাবে নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কেউ যেন আশ্রয়স্থল ত্যাগ না করে।’
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মানুষ জনসাধারণের আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছেন, যা এই মুহূর্তে নিরাপদে থাকার একমাত্র উপায় হিসেবে বিবেচিত।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য রেখেছেন জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। তিনি ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
ড্যানন বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো ‘নিজেদের ধ্বংস ঠেকানো’, আর তা সম্ভব ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের মাধ্যমেই।
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের শত্রুদের চিনি। তাদের আদর্শ চিনি। যখন একটি শাসনব্যবস্থা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে, ইউরেনিয়াম প্রায় অস্ত্রমান পর্যন্ত সমৃদ্ধ করে এবং খোলাখুলিভাবে আমাদের ধ্বংসের ঘোষণা দেয় — তখন আমরা তাদের বিশ্বাস করি।”
তিনি আরও বলেন, ইরান যেভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিয়োগ দিচ্ছে — তাতে ইসরায়েলের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না।
“আমরা কাজ করেছি যাতে আমাদের জনগণ বেঁচে থাকতে পারে। আমরা কাজ করেছি যাতে জেরুজালেমের ইহুদি শিশুদের আর পারমাণবিক হামলার সতর্ক সাইরেন শুনে ঘুম ভাঙতে না হয়,” — বলেন ড্যানন।
এর আগে ইরানের রাষ্ট্রদূত জাতিসংঘে ইসরায়েলের হামলাকে “বর্বর ও অপরাধমূলক” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
ইরানের পাল্টা হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ একটি বাঙ্কারের মধ্যে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকেই তারা চলমান পরিস্থিতির মূল্যায়ন করছেন — এমন তথ্য সিএনএনকে জানিয়েছেন এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, আলোচনায় একাধিক ইসরায়েলি মন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারাও অংশ নিচ্ছেন। পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত ও দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে।
এই ছবিগুলো কিছুক্ষণ আগে আমাদের নিউজরুমে পৌঁছেছে — ইসরায়েলের সর্বশেষ পাল্টা হামলার আগেই এগুলো তোলা হয়েছে।
ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ইরানের রাজধানী তেহরানের রাস্তায় বহু মানুষ জড়ো হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার জবাবে ইরানের প্রতিক্রিয়া উদযাপন করছেন।
মানুষের হাতে ইরানি পতাকা, পোস্টার ও ব্যানার, অনেকে শ্লোগান দিচ্ছেন এবং আকাশে আতশবাজিও ছোঁড়া হয়েছে।
উল্লাস প্রকাশ করা এই মুহূর্তগুলো ইরানে প্রচলিত সরকারি বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ — যেখানে দেশটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকে জাতীয় গর্বের অংশ হিসেবে তুলে ধরে।
তবে এই চিত্রগুলো ছিল ইসরায়েলের সর্বশেষ পাল্টা আক্রমণের আগের মুহূর্তের। বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, আমরা আরও তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছি।
আমরা তেহরান থেকে আসা সর্বশেষ খবরের দিকে নজর রাখছি, তবে এর মধ্যে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের খবর দিতে পারি। ইসরায়েলের হামলার পরপরই এই বৈঠক ডেকেছিল ইরান।
জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি আমির-সাঈদ ইরাভানি বলেন, ইসরায়েলের “বর্বর ও অপরাধমূলক” হামলাগুলো ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, বেসামরিক অবকাঠামো এবং আবাসিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করেছে।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন এবং ৩২০ জনের বেশি আহত, যাদের “বড় অংশই বেসামরিক নাগরিক”।
ইরাভানি বলেন, এই “ইচ্ছাকৃত ও সংগঠিত হত্যাকাণ্ড” এক ভয়ঙ্কর ও পরিকল্পিত আগ্রাসনের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি আরও দাবি করেন, এই অপরাধে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িত, কারণ তারা ইসরায়েলকে “সাহায্য ও সমর্থন” দিয়েছে।
“আমরা ভুলে যাব না যে, আমাদের জনগণ ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে, আর সেই হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল মার্কিন অস্ত্র,” বলেন তিনি।
ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায় এবং এর জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করে।
আমরা খবর পাচ্ছি যে, ইরানের রাজধানী তেহরানে আরও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে, ইসরায়েলি হামলা প্রতিহত করতে তেহরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে।
কিছু ইরানি গণমাধ্যমে এক ইসরায়েলি পাইলটকে বন্দী করার দাবি প্রকাশ পেলেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তা সরাসরি অস্বীকার করেছে।
ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী দুটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে এবং “সেই দুটি যুদ্ধবিমানের মধ্যে একটি নারী পাইলট আটক হয়েছেন”।
তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) আরবিভাষী মুখপাত্র আভিখাই আদ্রায়ি এক বিবৃতিতে বলেন: ‘ইরানি ভুয়া মিডিয়া। ইরানি সংবাদমাধ্যমে যেসব খবর ছড়ানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
বিবিসি স্বাধীনভাবে উভয় পক্ষের কোনো দাবিই এখনো যাচাই করতে পারেনি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ইরান শুক্রবার যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তাতে বেসামরিক এলাকাগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে — যা ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করার শামিল।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের বেসামরিক জনপদে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ইরান লাল রেখা পার হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের নাগরিকদের সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং নিশ্চিত করব বর্বর কর্মকাণ্ডের জন্য যেন আয়াতুল্লাহর সরকারকে চরম মূল্য দিতে হয়। এখানে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোলাহ আলি খামেনির কথা উল্লেখ করেন।
এর আগে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের “ডজন খানেক লক্ষ্যবস্তু, সামরিক ঘাঁটি এবং বিমান ঘাঁটি” লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ফরদো ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে তিনি বলেন, এই তথ্য ইরানি কর্তৃপক্ষ তাদের (IAEA) জানিয়েছে, তবে সংস্থাটির কাছে এর চেয়ে বেশি কোনো তথ্য বর্তমানে নেই।
গ্রোসি আরও জানান, নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনাটির কিছু অংশ — বিশেষ করে স্থলভাগের ওপর থাকা কেন্দ্রটি — শুক্রবার ভোরের দিকে চালানো হামলায় “ধ্বংস” হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ওইসব স্থাপনায় তেজস্ক্রিয় ও রাসায়নিক দূষণ ঘটেছে, তবে তা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণযোগ্য অবস্থায় রয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) মুখপাত্র আভিখাই আদ্রায়ি জানিয়েছেন, ইরান দুই দফায় ইসরায়েলের দিকে ১০০টিরও কম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি লিখেছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর অধিকাংশই মাঝপথে প্রতিহত করা হয়েছে অথবা লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, “সীমিত সংখ্যক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার কিছু আবার বাধাগ্রস্ত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ কার্যক্রম থেকে ছিটকে পড়া শার্পনেলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
উপরে থাকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কিছু ভবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে ইরান ‘ট্রু প্রমিস ৩’ (True Promise 3) নামে যে অপারেশন চালিয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে তারা এখনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি — সে তথ্যের অপেক্ষায় আছি আমরা।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৩৪ জনের চিকিৎসা চলছে — এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তেল আবিবের ইচিলোভ হাসপাতাল ১৮ জন রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছে। পেতাহ টিকভার বেইলিনসন হাসপাতাল ৭ জনকে চিকিৎসা দিচ্ছে, যার মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা রোগীও রয়েছেন। রামাত গানের শেবা হাসপাতালে ৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন।
আহতদের মধ্যে কেউ কেউ শরীরে শার্পনেল আঘাত, ধোঁয়া ও শ্বাসজনিত সমস্যা এবং মানসিক ধাক্কার (শক) মতো ভিন্নধর্মী জখম নিয়ে ভর্তি হয়েছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, অন্তত দুটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইরানের আকাশসীমায় ভূপাতিত হয়েছে। তবে এ তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। পরিস্থিতি দ্রুত গতিতে উত্তেজনাকর রূপ নিচ্ছে।
ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেতজ জানিয়েছে, রাজধানী তেল আবিবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। জরুরি পরিষেবার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা মাঝারি মাত্রার বলে জানা গেছে।
এদিকে, রয়টার্স সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, জেরুজালেমে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশ হয়নি।
ভোর থেকে শুক্রবার দিনভর ইসরায়েলি হামলার এবার পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইরান। দেশটির ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) জানিয়েছে, পাল্টা হামলায় ডজনেরও বেশি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি এবং বিমানঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেতজ জানিয়েছে, রাজধানী তেল আবিবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। জরুরি পরিষেবার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা মাঝারি মাত্রার বলে জানা গেছে।
এদিকে, রয়টার্স সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, জেরুজালেমে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশ হয়নি।
পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া মাত্রই জানানো হবে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাতে সিএনএন-এর একটি লাইভ প্রতিবেদনে এই খবর জানানো হয়েছে।
ড্রোনটি ইরানের ফরদো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট–এর আশপাশে শনাক্ত হয়। এটি একটি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা, যা কোম শহর থেকে প্রায় ২০ মাইল উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।
একই সময়ে প্রেস টিভি আরও জানায়, ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের হামেদান বিমানঘাঁটিতে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়া উত্তর-মধ্য ইরানের শহর ফার্দিজেও ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিএনএন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে মন্তব্য জানতে চাইলেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তেহরানের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। পশ্চিম তেহরানে আল-জাজিরার ব্যুরো অফিস থেকে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন।
সেই সঙ্গে রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চলেও আরেকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
ইরানের নূর নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, তেহরানের পশ্চিমে অবস্থিত আলবোর্জ প্রদেশ থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং সেখানে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।
তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরণের উৎস ও ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, এটি ইসরায়েলের নতুন হামলার অংশ হতে পারে। বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে তা দ্রুত জানানো হবে।
ইসরায়েলের আজ সকালের হামলার পর ইরানের নাতানজ পরমাণু কেন্দ্রে রাসায়নিক বা তেজস্ক্রিয় দূষণ শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থা। তবে এই দূষণ শুধু কেন্দ্রটির অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ এবং বাইরের পরিবেশে এর প্রভাব পড়েনি বলে আশ্বস্ত করেছে সংস্থাটি।
পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি বলেছেন, ‘আমাদের যত দূর জানা, ক্ষয়ক্ষতি শুধু পৃষ্ঠতলের কিছু এলাকায় সীমিত। কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।’
তিনি জানান, কেন্দ্রের অভ্যন্তরে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে এবং বাইরে তেমন কোনো উদ্বেগের কারণ নেই।
ইসলামি জোর দিয়ে বলেন, ‘বহু বছর ধরে এই (ইসরায়েলি) শাসকগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সহায়তায় বেপরোয়াভাবে বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছে।’ ইসরায়েলের হামলাকে তিনি আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তার পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
নাতানজ ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। ইসরায়েলের সামরিক হামলায় এটির ওপর আঘাত হানার পর বৈশ্বিকভাবে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে, পরমাণু নিরাপত্তা ও মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নিয়ে। এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থল ঘিরে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উত্তর ইসরায়েলের গ্যালিলি অঞ্চলে শুক্রবার বিকেলে বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বাজতে শুরু করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রেডিও এই তথ্য জানিয়েছে। পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক নজর রাখছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-এর বরাতে জানা গেছে, ইরান থেকে পাঠানো দুটি ড্রোন ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’-এর মাধ্যমে ভূপাতিত করা হয়েছে। এসব ড্রোন উত্তর ইসরায়েলের দখলীকৃত গোলান মালভূমির দিকে এগোচ্ছিল।
ড্রোনগুলোর টুকরো পড়ে একটি উন্মুক্ত এলাকায় আগুন ধরে যায় বলে চ্যানেল ১২ জানিয়েছে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
তবে ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ এবং সেনাবাহিনীর রেডিও দাবি করছে, একটিমাত্র ড্রোন ভূপাতিত হয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইরানের বিভিন্ন পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পক্ষ থেকে পাল্টা হামলার আশঙ্কা আগেই করা হয়েছিল। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে এই ড্রোন হানার ঘটনা আঞ্চলিক নিরাপত্তা উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ইসরায়েলের আজকের (শুক্রবার) হামলায় পশ্চিম ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশের একটি ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণাগারেও বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আল জাজিরার যাচাইকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ইরাক সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত এই এলাকায় ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই গোপন স্থাপনায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মজুত রাখা ছিল। হামলার পর পরই সেখান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায় এবং আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে।
এটি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে শুক্রবার ভোরে ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় চালানো একাধিক হামলার অংশ। এই হামলাগুলোকে ইরানের সামরিক সক্ষমতা ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকেরা।
কেরমানশাহর এই হামলার বিষয়ে এখনো ইরান সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বিস্ফোরণের পরপরই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে।
এই হামলার পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে চরমে পৌঁছেছে, এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ আরও বাড়ছে।
শুক্রবার ভোরে ইরানের ৮টি শহরে একযোগে হামলার পর দুপুরে নতুন আরেক দফা হামলা চালিয়েছে ইরান। নতুন হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা হয় ইরানের শিরাজ ও তাবরিজ শহর। পাশাপাশি নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায়ও নতুন করে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানি সংবাদমাধ্যম।
এর আগেই আজ দিনের শুরুতে ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসরায়েলের বিস্তৃত হামলার খবর পাওয়া যায়। এরপর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজে নতুন করে হামলার খবর আসে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই হামলার পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে—যার মধ্যে আছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রও।
তবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল নতুন হামলা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং নতুন তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা হালনাগাদ করা হবে।
ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজে ইসরায়েল আবারও হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় ও আধা সরকারি সংবাদমাধ্যম।
তাসনিম নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, তাবরিজ শহরের বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলছে, ‘কয়েক মিনিট আগে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে নতুন বিস্ফোরণ ঘটেছে।’
তাসনিম আরও জানায়, আগের হামলার ঢেউয়ে প্রদেশটির অন্তত ১০টি স্থানে আঘাত হানা হয় এবং এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল কর্তৃক হামলার নতুন এই তরঙ্গ ইরানজুড়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতির আরও আপডেট পাওয়ামাত্র জানানো হবে।
তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, হোসেইন সালামি নিহত হওয়ার পর আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ পাকপুরকে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) নতুন কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।
ইসরায়েলি হামলায় ইরানের সামরিক শাখার সাবেক প্রধানসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান শিগগির জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে জানানো হয়েছে তাঁর অফিশিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জিয়োনিস্ট শাসকগোষ্ঠী আজকের কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা করবে।’
পশ্চিম ইরানে ইরানি শাসকগোষ্ঠীর আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের হামলা চালানোর দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এক্স মাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তারা এ তথ্য জানায়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই হামলার অংশ হিসেবে ডজনখানেক রাডার ও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই হামলাগুলো ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর আকাশে অভিযান পরিচালনার স্বাধীনতা আরও বাড়িয়ে দেবে।’
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বৃদ্ধিতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ নিন্দা জানিয়েছেন। রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থা অনুসারে, ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে একটি অভিযানের শুরুতে তারা পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং সামরিক কমান্ডারদের লক্ষ্যবস্তু করেছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, তারা ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ইস্পাহান শহরের পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ফোরদো-তে অবস্থিত একটি পরমাণু জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ প্ল্যান্টও এখন পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান আজ শুক্রবার ভোরে হামলায় নাতানজ শহরের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করলেও আইএইএ বলেছে, বর্তমানে ওই স্থানে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ মাত্রার কোনো বৃদ্ধি হয়নি।
সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে, বুশেহরের একটি পারমাণবিক কেন্দ্রও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
ইরান জানিয়েছে, আজ শুক্রবার ইসরায়েল ছয়জন পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে এবং নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে। এই হামলা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করেছে।
ইসরায়েলকে ইঙ্গিত করে ইরান সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এমন শিকারি রাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতার ভাষা ছাড়া কথা বলা উচিত নয়।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, পারমাণবিক প্রযুক্তি এবং ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা অর্জনের ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টি এখন বিশ্ব আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছে।’
ইরান স্পষ্ট করে বলছে, ইসরায়েলি হামলা তাদের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিকাশের ন্যায্যতা তৈরি করেছে বলে তারা মনে করে।
ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ছয়জন পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। দেশটির বার্তা সংস্থা তাসনিমের বরাত নিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। নিহত ছয় বিজ্ঞানী হলেন আব্দুল্লাহ মিনৌচেহর, আহমাদ রেজা জলফাঘারি, সায়েদ আমির হোসেন ফাকহি, মোতলাবিজাদেহ, ফেরেদুন আব্বাসি এবং মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলকে ‘প্রতিহত করতে’ এবং ‘এর অপরাধ বন্ধ করতে’ বিশ্বের প্রতি ‘একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ (ইসরায়েলের) আগ্রাসন একটি বিপজ্জনক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে, যা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার হুমকি দিচ্ছে। এটি চরমপন্থী নেতানিয়াহু সরকারের অঞ্চলকে উন্মুক্ত সংঘাতের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার জেদের প্রতিফলন।’
হামাস এই হামলাকে ‘একটি নৃশংস আগ্রাসন যা আন্তর্জাতিক নিয়ম ও প্রথার চরম লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, এই হামলা আবারও নিশ্চিত করল যে ইসরায়েল ‘সমগ্র অঞ্চলের জন্য একটি অস্তিত্বের হুমকি’।
হামাস ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতি পূর্ণ সংহতি’ প্রকাশ করেছে এবং সিনিয়র কমান্ডার ও পরমাণুবিজ্ঞানীদের মৃত্যুর জন্য ইরানি নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি ‘গভীর সমবেদনা’ জানিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের নতুন সংকটে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইরানে ইসরায়েলের হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
স্টারমার ইসরায়েলের হামলাকে উদ্বেগজনক অভিহিত করে ‘সব পক্ষকে দ্রুত উত্তেজনা কমাতে ও পিছু হটতে’ আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এখন সংযম, শান্ত থাকা এবং কূটনীতিতে ফিরে আসার সময়।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, হামলায় ইরানের তিনজন সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করা হয়েছে।
এক্সে একটি পোস্টে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের গুপ্তহত্যার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি; ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের কমান্ডার হোসেইন সালামি; এবং খাতাম আল-আম্বিয়া সেন্ট্রাল সদর দপ্তরের কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলী রশিদের নাম উল্লেখ করেছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ২০০টির বেশি যুদ্ধবিমান ইরানের ১০০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ‘ইরানের সিনিয়র সামরিক নেতাদের গোপন আস্তানাও’ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পোস্টটিতে বলা হয়েছে, এই হামলাগুলো ইসরায়েলের গোয়েন্দা বিভাগের ‘নির্ভুল গোয়েন্দা নির্দেশনার’ ভিত্তিতে চালানো হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে, ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি ইসরায়েলের হাতে নিহত হওয়ার খবর অস্বীকার করেছিল। কিন্তু এখন বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে, তিনি ইসরায়েলি গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানে ইসরায়েলি হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, সৌদি সরকার এই জঘন্য হামলার নিন্দা জানাচ্ছে এবং একই সঙ্গে এটি নিশ্চিত করছে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও নিরাপত্তা পরিষদের এই আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ করার বিশাল দায়িত্ব রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি আগে থেকেই জানতেন। তবে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন সামরিক বাহিনী এই অভিযানে কোনো ভূমিকা রাখেনি। তিনি আশা করেন, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে।
ফক্স নিউজকে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান পারমাণবিক বোমা রাখতে পারে না এবং আমরা আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আশা করছি। আমরা দেখব।’
ট্রাম্প উল্লেখ করেন, হামলায় একাধিক ইরানি নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘নেতৃত্বে থাকা বেশ কয়েকজন আর ফিরে আসবেন না।’
তিনি জানান, তাঁর প্রশাসন হামলার আগে মধ্যপ্রাচ্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরও অবহিত করেছিল। তবে তিনি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী ইসরায়েলের এই হামলার জবাব দেওয়ার ‘আইনি ও বৈধ’ অধিকার তেহরানের রয়েছে।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ইরানের বিরুদ্ধে জায়নবাদী শাসনের আগ্রাসনের বিপজ্জনক এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব ও পরিণতির জন্য এই শাসন এবং এর সমর্থকেরা দায়ী থাকবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ইরানের বিরুদ্ধে জায়নবাদী শাসনের আগ্রাসী পদক্ষেপগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয় ও অনুমোদন ছাড়া চালানো সম্ভব নয়। অতএব, এই শাসনের প্রধান সমর্থক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারও জায়নবাদী শাসনের এই দুঃসাহসিকতার বিপজ্জনক প্রভাব ও পরিণতির জন্য দায়ী থাকবে।’
ইসরায়েলের এই হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছে না ইরান, বরং এর পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে বলে মনে করছে তেহরান। এটি মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
চীন ইসরায়েল ও ইরানে অবস্থানরত তার নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা পরিস্থিতিসংক্রান্ত পরামর্শ জারি করেছে। ইসরায়েলে অবস্থানরতদের সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে সতর্ক করা হয়েছে।
ইসরায়েলে অবস্থিত চীনা দূতাবাস আজ শুক্রবার সেখানে থাকা নাগরিকদের তাদের নিরাপত্তা সতর্কতা জোরদার করতে, অপ্রয়োজনে বাইরে না যেতে বা সামরিক ইউনিট এবং সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশের এলাকায় যেতে নিষেধ করেছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল এবং গুরুতর।
একটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে ইরানে অবস্থিত চীনা দূতাবাসও সেখানে থাকা নাগরিক ও সংস্থাগুলোকে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে এবং তাদের নিরাপত্তা সচেতনতা ও সতর্কতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।
ইসরায়েলের পরিবহন মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, তারা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে।
ইসরায়েলের একজন সামরিক কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েলকে জানিয়েছেন, তাঁরা ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে পাঁচ দফায় হামলা চালিয়েছেন।
শত শত অস্ত্রের মাধ্যমে হামলা চালানো হয়েছে। অন্তত আটটি অবস্থানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েল তেহরানে প্রথম দফা হামলা শুরু করার প্রায় ৩০ মিনিট আগে, ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এক্সে লিখেছেন: ‘জেরুজালেমে আমাদের দূতাবাসে এবং পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছি। আমরা সারা রাত এখানেই থাকব। জেরুজালেমের শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন!’
এই মন্তব্য কয়েক ঘণ্টা আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক পোস্ট করা একটি বার্তায় বলা হয়, এই অঞ্চলের আমেরিকান দূতাবাসগুলোকে উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।