Ajker Patrika

শতবর্ষী বটগাছটি কাটতে দেবে না এলাকাবাসী, ৪ বার ফিরে গেল প্রশাসন 

রাঙামাটি প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ৪৯
শতবর্ষী বটগাছটি কাটতে দেবে না এলাকাবাসী, ৪ বার ফিরে গেল প্রশাসন 

রাঙামাটি শহরের পূর্ব ট্রাইবেল আদামে বটগাছ কাটা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে এলাকাবাসী ও প্রশাসন। এর আগেও তথ্য ভবন নির্মাণের জন্য ৩ বার গাছটি কাটার চেষ্টা করেছে প্রশাসন। গাছ কাটার খবর পেলেই দলবদ্ধভাবে এসে বাধা দেন গ্রামের মানুষ। আজ মঙ্গলবার সকালে চতুর্থবারের মতো গাছটি কাটতে গেলে আবারও এলাকাবাসীর বাধার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ।

এলাকাবাসীর দাবি, বটগাছটি তাঁদের আবেগ। বটগাছের ছায়ায় প্রতিদিন শত শত মানুষ জড়ো হন, আড্ডা ও গল্প করেন। এ বটগাছটি পুরো এলাকায় অক্সিজেন সরবরাহ করে বলে দাবি তাঁদের।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ট্রাইবেল আদামের নবরূপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কৃষি বিভাগ অতিরিক্ত পরিচালক কার্যালয়ের পূর্ব পাশে বটতলা এলাকায় ৫০ শতাংশ জমি তথ্য ভবনের জন্য প্রশাসন অধিগ্রহণ করে। সম্প্রতি তথ্য ভবন নির্মাণে শতবর্ষী বটগাছটি কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু গাছ কাটতে গেলে এলাকাবাসী বাধা দেন।

ওই এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের ধারণা—বটগাছটি দেড় শ থেকে আড়াই শ বছর পুরোনো। তবে সঠিক বয়সটি কেউ বলতে পারেনি।

তাঁরা জানান, তথ্য ভবন নির্মাণ করতে চাইলে বটগাছটি না কেটে করা যায়। অধিগৃহীত জমির বাইরে বটগাছটি। শুধু কিছু ডাল ওই জমিতে পড়েছে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ গাছ কাটতে গেলে এলাকাবাসী বাধা দেন। এ সময় শত শত মানুষ জড়ো হন। পরে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহিদুর ইসলাম ও জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার বিজয় কুমার জোয়ার্দার ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে ফিরে আসেন।

পূর্ব ট্রাইবেল আদামের বাসিন্দা রাসেল দেওয়ান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রশাসন বটগাছটি কাটতে চারবার এসেছে। গ্রামের শত শত লোকজনের বাধার মুখে কাটতে পারেনি।’

জমির মালিকের পক্ষে আসা প্রিয় জ্যোতি চাকমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও তাঁর দুই বোনের নামের ৫০ শতক জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। নিজেদের জমিতে ভবন নির্মাণে জন্য গাছ কাটবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এলাকাবাসী অযথা ঝামেলা করছেন। জমি পরিমাপ করে ২ শতক কম পাওয়া যায়, বটগাছটি কাটলে সেই ২ শতক জমি বের হয়ে আসবে।’

অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক গঙ্গা প্রসাদ চাকমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যারা গাছটি কাটতে চাচ্ছে, তারা বন বিভাগের কাছে কোনো আবেদন করেনি। খবর পেয়ে বন বিভাগের লোক ট্রাইবেল আদামে গেছেন। গাছটি শত বছরের পুরোনো গাছ। বন বিভাগ গাছটি কাটার অনুমতি দেবে না। কেউ কাটলে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে।’

রাঙামাটি জেলা তথ্য অফিসের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ গাছ কাটা বিষয়ে আমি জানি না। আমি জানি সারা দেশে ২৬টি জেলায় তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের অনুমোদন হয়েছে। তার মধ্যে রাঙামাটি জেলাও আছে। এ জন্য জমি অধিগ্রহণ, ভবন নির্মাণ এসব বিষয় জেলা প্রশাসক দেখছেন, সেটা জানি। এর বাইরে আমার কোনো কিছু জানা নেই।’

এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘এ বটগাছ কাটা বিষয়টি প্রশাসনের অনুমোদন নেওয়ার বিষয় নয়। গাছটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন গেছে, পরিস্থিতি যেন অবনতি না হয় তা দেখতে। গাছ কাটতে নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত