Ajker Patrika

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলার জন্য প্রস্তুত লালদীঘি প্রাঙ্গণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৩, ১৯: ২৬
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলার জন্য প্রস্তুত লালদীঘি প্রাঙ্গণ

বৈশাখী মেলা ও আব্দুল জব্বারের বলীখেলার ১১৪তম আসরের জন্য চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি মাঠ প্রস্তুত। মাঠের সবুজ ঘাসের আস্তরণের অংশবিশেষ সরিয়ে বালু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে লড়াই মঞ্চ। বাঁশ দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে মঞ্চস্থল। আগামীকাল মঙ্গলবার সেখানেই হবে বলীখেলার আয়োজন।

বলীখেলার আয়োজনকে ঘিরে এ বছর গান রচিত হয়েছে বলেও জানা গেছে। ‘জব্বার মিয়ার বলীখেলা’ শিরোনামে এই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন চট্টগ্রামের খ্যাতিমান শিল্পী আলাউদ্দিন তাহের।

বলীখেলা ও মেলার বিষয়ে আয়োজক কমিটির সভাপতি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী আজকের পত্রিকাকে জানান, প্রতিবছর চট্টগ্রামের মানুষ ও সারা দেশ থেকে আসা পণ্য বিক্রেতারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন বলীখেলা ও মেলা আয়োজনে যোগ দিতে। প্রতিবছরের মতো এবারও ১২ বৈশাখ (২৫ এপ্রিল) বলীখেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর মেলার সময়কাল ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিন।

মেলা আয়োজক কমিটি জানায়, করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে জব্বারের বলীখেলা ও মেলা বন্ধ ছিল। পরের বছর লালদীঘি মাঠ সংস্কারের কারণে বলীখেলা হয়েছিল রাস্তার ওপর মঞ্চ তৈরি করে। ১৯০৯ সালে নগরীর বক্সিরহাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার সওদাগর লালদীঘি মাঠে আয়োজন করেন এই কুস্তি প্রতিযোগিতা বা বলীখেলা। যা এখন জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিত। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজকে সংগঠিত করতে ও শরীর গঠনে উৎসাহিত করতে এই আয়োজন করা হয়েছিল বলে জানান আবদুল জব্বারের নাতি ও মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল। এই বলীখেলা ও মেলায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, তিন পার্বত্য জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে নানা বয়সী বলীরা অংশ নিচ্ছেন।

বৈশাখী মেলা ও আব্দুল জব্বারের বলীখেলার ১১৪ তম আসরের আয়োজন ঘিরে চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি মাঠে হরেক রকম দোকান বসেছে। ছবি: আজকের পত্রিকাআজ সোমবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, লালদীঘি মাঠকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় মেলা বসেছে। মেলা উপলক্ষে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, খুলনা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছেন তাঁদের পণ্য নিয়ে।

কার্পেট, বেতের আসবাব, বিভিন্ন ধরনের কাঠের শিল্পকর্ম, মাটির তৈজসপত্র, ঝাড়ু, হাতপাখা, শীতলপাটি, দা-খুন্তি, প্লাস্টিকের সামগ্রী-ফুল, মণ্ডা-মিঠাই, গৃহসজ্জার সামগ্রী, গাছের চারা, তামা-কাঁসা-পিতলের সামগ্রী, কাঠের আসবাব, বেতের আসবাব, বাদ্যযন্ত্র, দোলনা, মাছ ধরার জাল, মোড়া, পিঁড়ি, জলচৌকিসহ সবই পাওয়া যাচ্ছে এই মেলায়। নগরের অধিবাসীরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন এই মেলার জন্য। কারণ, এখানেই মিলে গৃহস্থালির সব জিনিসপত্র। 

এদিকে ঈদের ছুটি শেষে আজ থেকে নগরীতে ফিরতে শুরু করা মানুষ। কাল মঙ্গলবার বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠবে মেলা প্রাঙ্গণ—এমনটাই আশা করছেন আয়োজকেরা। 

বৈশাখী মেলা ও আব্দুল জব্বারের বলীখেলার ১১৪তম আসরের আয়োজন ঘিরে চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি মাঠে হরেক রকম দোকান বসেছে। ছবি: আজকের পত্রিকামেলায় ঝাড়ু বিক্রি করতে খাগড়াছড়ি থেকে আসা সাদেকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৩০০ জোড়া ঝাড়ু নিয়ে এসেছি। সঙ্গে হাতপাখাও এনেছি। গৃহস্থালির জিনিসের মধ্যে মেলায় ঝাড়ু বেশি বিক্রি হয়।’ 

চন্দনাইশ থেকে বেত ও তালপাতার পাখা নিয়ে মেলায় যোগ দেওয়া মোহাম্মদ কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গরমের এই সময়ে হাতপাখার কদর বেশি হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই এখানে এসেছি।’ 

মেলা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, বৈশাখে এ মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এরই মধ্যে বলীখেলার ট্রফি, জার্সি ও থিম সংগীতের মোড়ক উন্মোচন করেছেন তিনি। 

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি চসিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগামীকাল (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠেয় বলীখেলা ও পরদিন চাটগাঁইয়া উৎসবে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। এবার মেলা আয়োজনের মোক্ষম সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মেলার সময়কাল এক দিন বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের অনুরোধ থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত