Ajker Patrika

১৫০০ কিলোমিটার হেঁটে দার্জিলিংয়ে পথে কুমিল্লার শান্ত

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
১৫০০ কিলোমিটার হেঁটে দার্জিলিংয়ে পথে কুমিল্লার শান্ত

বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে বৃক্ষরোপণ ও অকাল পঙ্গুত্ব প্রতিরোধে বাংলাদেশ থেকে ভারতে হাইকিং অভিযান পরিচালনাকারী বাংলাদেশি হাইকার সাইফুল ইসলাম শান্ত বর্তমানে ভারতের মালদহ জেলায় অবস্থান করছেন। প্রায় ১৫০০ কিলোমিটারের গন্তব্যের পথ শেষ হবে দার্জিলিংয়ে। জাতীয় সংসদ ভবন থেকে গত ৭ অক্টোবর এই হাইকিং অভিযান শুরু করেন শান্ত। এই অভিযানে ৩৮ দিনে প্রায় ৮৮০ কিলোমিটারের বেশি হাইকিং করেছেন তিনি।

শান্ত কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌর এলাকার মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে। ভ্রমণকালে শান্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মাঝে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ ও পঙ্গুত্ব রোধে প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে পায়ে হাঁটার গুরুত্ব তুলে ধরেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শান্তই প্রথম বাংলাদেশি যে বাংলাদেশ থেকে পায়ে হেঁটে ভারতে হাইকিং অভিযান করছে। এর আগে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এন্ড ট্রেকিং ক্লাব (বিএমটিসি) সদস্য পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল কলকাতা থেকে ১১ দিনে হাইকিং করে ঢাকা পৌঁছায়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে হেঁটে শাহজাদা আরেফীন জয় শিলিগুড়ি গিয়েছিল।

তবে সেটি কোনো অভিযানের অংশ ছিল না। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাইফুল ইসলাম শান্তই একমাত্র বাংলাদেশ থেকে হাইকিং অভিযান করছে এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে এই অভিযান এখনো চলমান রয়েছে। শান্ত এর আগে ‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার’-এর সহায়তায় এবং ‘হাইকার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ’-এর তত্ত্বাবধানে টানা ৭৫ দিন হেঁটে হেঁটে ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছেন। ওই ৭৫ দিনের মধ্যে শান্ত বিশ্রাম নেন মাত্র ৪ দিন।

রোববার (১৩ নভেম্বর) রাতে ভারতের মালদা থেকে মোবাইলে আজকের পত্রিকা শান্ত বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব, অকালে পঙ্গুত্ব রোধে প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটার ওপর গুরুত্বারোপসহ পরিবেশ সুরক্ষায় প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা তৈরি ও জীবন বাঁচাতে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে এসবের গুরুত্ব ছড়িয়ে দিতেই ভারতে আমার এ অভিযান। ৩৮ দিনে ৮৮০ কিলোমিটার পথ হেঁটেছি। এ ৩৮ দিনের মধ্যে ২৫ দিন হেঁটেছি, ৪ দিন বিশ্রাম ও ৯ দিন লেগেছে ভারতে হাঁটার অনুমতি সংগ্রহ করতে। আমি বর্তমানে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মালদহ জেলায় অবস্থান করছি। দার্জিলিং গিয়ে আমার পথ শেষ হবে।’
 
শান্ত আরও বলেন, ‘এর আগে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে যাত্রা শুরু করে টানা ৭৫ দিন ৬৪ জেলায় প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে শেষ করেছি। আমাকে আজকের ভারত ভ্রমণে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
 
শান্তের বাবা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন ও বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের কারণে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বার্তা পৌঁছে দিতে আমার ছেলে শান্ত ভারতে অভিযান শুরু করেছে। আমি তাঁর স্বপ্ন পূরণ ও সফলতা কামনা করছি।’ 

‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার’-এর প্রধান নির্বাহী অফিসার লিপটন সরকার বলেন, ‘আমি নিজেও ১৮ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছি। শান্ত আমাদের ছোট ভাইয়ের মতো। অ্যাথলেট হিসেবে তাকে যতটুকু সহযোগিতা করা প্রয়োজন সবটুকু দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, আগামী দিনেও ভালো কিছু করবে শান্ত। লিপটন সরকার আরও বলেন, মানুষের কিছু ভালো নেশা রয়েছে আবার কিছু খারাপ নেশাও আছে। এর মধ্যে এ ধরনের কার্যক্রম মানুষকে মাদক বা খারাপ নেশা থেকে দুরে রাখে। তাই দেশব্যাপী এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা মানুষের ভালো নেশাগুলো ছড়িয়ে দিতে চাই।’

বর্তমানে ভারতের মালদহ জেলায় অবস্থান করছেন সাইফুল ইসলাম শান্তঅ্যাথলেট সাইফুল ইসলাম শান্ত দেশের বৃহৎ রানিং গ্রুপগুলোর সক্রিয় সদস্য এবং কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় ‘দেবিদ্বার রানার্স’ নামে ২ হাজার সদস্যের একটি রানিং গ্রুপ পরিচালনা করে আসছেন। একজন নিয়মিত অ্যাথলেট হিসেবে তিনি ভ্রমণ, হাঁটাহাঁটি ও ট্রেকিং করে আসছেন।’

এ ছাড়াও আগামী দিনে শুধু বাংলাদেশ থেকে ভারতই নয় হেঁটে পুরো বিশ্ব ভ্রমণ করে এমন সচেতনতামূলক কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। হাইকার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাইফুল ইসলাম শান্তর হাইকিং অভিযানের সাফল্য কামনা করছেন অনেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত