Ajker Patrika

মা হারা সেই ছোট্ট সাথির হাতে এখন ভিক্ষার থালা

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

তিন বছর আগে শিশুটির বেঁচে যাওয়াকে সবাই অলৌকিক ঘটনা বলেছিলেন। ধীর গতিতে চলা ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান সাথির মা রোকসানা বেগম। কোলে তখন দুই মাসের শিশু সাথি। বিপদ আঁচ করতে পেরে শিশুকে অদূরে ছুড়ে ফেলেন। ট্রেন চলে যাওয়ার পর সবাই দেখল, রেললাইনে পড়ে রয়েছে রোকসানার দ্বিখণ্ডিত মরদেহ। পাশেই হাঁটু পর্যন্ত ডান হারিয়ে কাতরাচ্ছে ছোট্ট সাথি। 

দিনটি ছিল ২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, রাত ১১ টা। মৃত মায়ের পাশে আহত শিশুকে দেখে এগিয়ে আসেন তৃতীয় লিঙ্গের এক ব্যক্তি। আরেক নারীর সহায়তায় শিশুটিকে উদ্ধার করেন। তখনকার রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (জিআরপি) মোস্তাফিজ ভূঁইয়া সাথিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগে ভর্তি করান। বেশ কিছু দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠে সাথি। 

ভয়ংকর দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরলেও নিয়তি তাকে একটা স্বাভাবিক জীবন দেয়নি। একদিন যে হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা সাথি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিল, সেই হাসপাতালেই এখন ভিক্ষার থালা নিয়ে ঘুরছে। সাথির এখন একটাই রুটিন—সকালে চমেক হাসপাতালে আসা, গভীর রাত পর্যন্ত কাটিয়ে বাড়ি ফেরা। অনেক সময় হাসপাতালের মেঝেতেই কাটে রাত। হাতে ভিক্ষার থালা! 

মা হারানোর পর সাথির পাশে দাঁড়ায় সৎমা নাজমা আক্তার। এই নাজমার ঘরে চার সন্তান রেখে সাথির মা রোকসানাকে বিয়ে করেছিলেন মোহাম্মদ রাসেল। শিশুটির দুর্দিনে বাবা না এলেও সৎমা নাজমা তাকে ফেলে দেননি। 

আজ রোববার দুপুর। ভিড়ে ঠাসা হাসপাতাল। এর মধ্যেই ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সামনের সিঁড়িতে পাওয়া গেল সাথিকে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সিঁড়ি মাড়িয়ে ভিক্ষার থালা নিয়ে জনে জনে ঘুরছে সাথি। 

বয়স সাড়ে তিন বছর পার হলেও বুলি ফোটেনি। আধো বুলিতে সাথি ডান পায়ের দিকে দেখিয়ে বলে, পা না থাকায় হাঁটতে পারি না। কষ্ট করে সিঁড়িতে উঠতে হয়। খুব ব্যথা করে। হামাগুড়ি দিয়ে সিঁড়ি বাইতে বাইতে দুই পায়ের হাঁটুতে কালচে দাগ পড়ে গেছে। 

সাথির অদূরেই বসে ছিলেন নাজমা। ভিক্ষার কারণ জানতে চাইলে নাজমা বলেন, ‘সাথি ও তার মা দুর্ঘটনায় পড়েছে শুনেই স্বামী রাসেল পালিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার হদিস পাইনি। আগে মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করতাম। সাথি পঙ্গু হওয়ায় তাকে একা বাসায় রেখে কোথাও যেতে পারি না। বাধ্য হয়ে তাই দুজনে ভিক্ষা করি।’ 

নাজমা আরও বলেন, ‘অনেকেই সাথির জন্য কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করার কথা বলেছে। তবে এখনো সে খুব ছোট হওয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। আরও কয়েক বছর পর কৃত্রিম পা লাগানো যাবে। এখন মেয়েটার খুব কষ্ট হয়।’ বলতে বলতে চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে নাজমার। ‘মায়ের’ চোখের পানি মুছে দিয়ে সাথি আবারও দৌড়ে যায় মানুষের কাছে। ছোট্ট সাথিও বুঝে গেছে, ভিক্ষা না করলে তার খাবার জুটবে না!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত