Ajker Patrika

অগ্নিদগ্ধদের রক্ত দিতে মধ্যরাতে হাসপাতালে ছুটলেন চবির শত শত শিক্ষার্থী

মিনহাজ তুহিন, চবি
আপডেট : ০৫ জুন ২০২২, ১১: ৪৪
অগ্নিদগ্ধদের রক্ত দিতে মধ্যরাতে হাসপাতালে ছুটলেন চবির শত শত শিক্ষার্থী

শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। রাত সাড়ে ৯টার ট্রেন শহরের উদ্দেশে ছেড়ে গেলে শহর থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এই ক্যাম্পাস। রাত বাড়ার সাথে শহরে যাওয়ার কষ্টের পাল্লাও বাড়তে থাকে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মধ্যরাতে কেউ শহরে যান না।

তবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধদের রক্তের প্রয়োজনের কথা শুনে যাতায়াতের এই দুর্ভোগের কথা যেন নিমেষেই ভুলে গেলেন চবির শিক্ষার্থীরা। দগ্ধদের রক্তের জোগান দিতে এবং আহতদের সাহায্য করতে মধ্যরাতে ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে গেলেন শত শত শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পর্যাপ্ত বাস না পেয়ে কেউ ছুটে গেছেন ট্রাকে, আবার কেউ ছুটেছেন মোটরবাইকে। এভাবে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে ছুটেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বিভিন্ন হল ও আশপাশের মেসগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হন কয়েক শ শিক্ষার্থী, যাঁদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তবে অন্যান্য ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এতে যোগ দেন। তবে রাস্তায় কোনো গাড়ি না থাকায় বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য একটা বাস ও একটা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে ৷ এ ছাড়া স্থানীয় পরিবহন মালিকদের সংগঠন আরও দুটি বাসের ব্যবস্থা করে। এসব বাসে কয়েক শ শিক্ষার্থী রক্ত দিতে ছুটে যান। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে রক্ত দিতে যাওয়া সাবিল আহমেদ খান নামের এক শিক্ষার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা রাতে খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আনুমানিক ২টা থেকে ২টা ১০ মিনিটের মধ্যেই এফ রহমান ও আলাওল হল থেকে বের হয়েই পরিবহন দপ্তরে যাই। সেখান থেকে অনেক কষ্টে একটা বাসের ব্যবস্থা করি। মুহূর্তেই বাসটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পরে আমরা সিএমসিতে নেগেটিভ গ্রুপের অনেককেই নামিয়ে দিয়ে পার্ক ভিউ আর সিএমএইচে যাই।’ 

ট্রাকে করে আহতদের রক্ত দিতে যান চবি শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকাঅনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস পাননি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নুর নবী রবিন। পরে তিনি ট্রাকে করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে যান। 

রবিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রক্তের জন্য আহ্বান করার সাথে সাথে জিরো পয়েন্টে আমরা শতাধিক শিক্ষার্থী জমায়েত হই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো বাস পাইনি। এমন অবস্থায় কেবল নেগেটিভ ব্লাড ডোনারদের নিয়ে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অগ্নিদগ্ধদের রক্ত দিতে শহরে যাওয়ার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা বাস ও একটা অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছি।’ 

চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘মানবিক বিপর্যয়ে যে যার জায়গা থেকে এগিয়ে এসেছে। আমরাও আমাদের জায়গা থেকে এগিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। আমরা রক্ত দিতে শহরে যাওয়ার সুবিধার্থে শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি দ্রুতযান বিশেষ বাস সার্ভিস দিয়েছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত