Ajker Patrika

উপদেষ্টার প্রতিশ্রুত দুই দিন শেষ, কাটেনি তেলের সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম 
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১০: ৩৬
উপদেষ্টার প্রতিশ্রুত দুই দিন শেষ, কাটেনি তেলের সংকট

দুই দিনের মধ্যে ভোজ্যতেলের সংকট কেটে যাবে—এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। উপদেষ্টার দেওয়া দুই দিন কেটে গেছে, কিন্তু কাটেনি বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট। গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও সুপারশপগুলো ঘুরে অধিকাংশ জায়গায় বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি।

ঢাকার মোহাম্মদপুর, সেগুনবাগিচা, মগবাজার, বনশ্রী, মিরপুর, মানিকনগর, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে এবং সেসব এলাকার স্থানীয় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে ভোজ্যতেলের সংকটের এ চিত্র উঠে এসেছে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, অনেক দোকানদার বড় কোনো বাজারের ডিলারের কাছ থেকে নিজ উদ্যোগে কিছু তেল এনে নিয়মিত ক্রেতা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে কোম্পানির সরবরাহকারী বা ডিলার তেল দিতে বা ক্রয় আদেশ নিতে (অর্ডার কাটতে) দোকানে আসেননি।

দেশে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট শুরু হয় গত নভেম্বর মাস থেকেই। তেলের সংকট দেখা দিলে বাজারে স্বস্তি ফেরাতে গত ৯ ডিসেম্বর মিলমালিকদের দাবি অনুযায়ী সরকার সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ায়। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা করা হয়, যা আগে ছিল ১৬৭ টাকা। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৫৭ টাকা হয়। খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়।

মূল্যবৃদ্ধির পর কিছুদিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। তবে ফেব্রুয়ারির আগেই আবার সংকট প্রকট হয়। চলতি মাসে রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে বাজার থেকে বোতলজাত তেল একেবারেই উধাও হয়ে যায়। খুচরা দোকানে পাওয়াটা তো পরের ব্যাপার, সুপারশপগুলোতেও বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। সেই সংকট এখনো কাটেনি।

গত সোমবার সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকটের কথা স্বীকার করে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন দুই দিনের মধ্যে বাজারে সংকট কেটে যাবে বলে জানিয়েছিলেন। ওই দিন মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজার পরিদর্শন শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘সয়াবিন তেলের সরবরাহ কিছুটা কম আছে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। আশা করছি আজ (সোমবার) থেকেই সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

গতকাল বুধবার রাজধানীর মানিকনগর বাজারে গিয়ে বোতলজাত তেল পাওয়া যায়নি। বোতলজাত সয়াবিন তেল না থাকায় খোলা সয়াবিন তেলের চাহিদা বেড়ে গেছে। এই বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে, ১৯০-২০০ টাকা লিটারে। পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকা লিটার।

একই বাজারের সুপারশপ স্বপ্নের আউটলেটে গিয়েও সয়াবিন তেলের কোনো বোতল পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে আউটলেটের বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, দু-তিন দিন পরপর কিছু তেল আসে। সেগুলো বিক্রি শেষ হলে আবার অপেক্ষা করতে হয়। এখন সেই অপেক্ষাতে রয়েছেন বিক্রেতারা।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারে গিয়ে ছয়টি দোকানের মধ্যে দুটিতে একটি ব্র্যান্ডের আধা লিটারের কিছু বোতল পাওয়া যায়। ১ লিটার, ২ লিটার কিংবা ৫ লিটারের তেল নেই।

জানতে চাইলে বাজারের দোকানদার সিফাত বলেন, ‘এক দুই মাস ধরে কোনো কোম্পানিই তেল দিচ্ছে না। আমার পরিচিত কাস্টমার বারবার তেলের জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে আজ (বুধবার) কারওয়ান বাজারের এক ডিলারের কাছ থেকে আধা লিটারের দুই কার্টন তেল কিনে এনেছি। নিজে দোকানের বিক্রি বন্ধ করে রিকশায় করে এই তেল আনতে হয়েছে। এতে গায়ের মূল্যের চেয়ে বেশি খরচ হয়ে গেছে আমার। তারপরও বাধ্য হয়ে আনতে হয়েছে।’ বাজারের সুপারশপ আগোরাতে গিয়ে দেখা যায়, তীর ও স্টারশিপ ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের কয়েক বোতল তেল আছে। অন্য কোনো তেল নেই।

রাজধানীর বনশ্রী এলাকার ৫টি দোকান ঘুরে একটিতে প্যাকেটজাত কিছু সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। এলাকার স্বপ্নের আউটলেটেও সয়াবিন তেলের কোনো বোতল নেই। কবে আসবে, তা-ও বলতে পারেননি বিক্রয়কর্মীরা। এলাকার মুদিদোকান শুভেচ্ছা জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা বলেন, অনেক দিন পরপর কোনো একটা কোম্পানির ডিলার এসে দু-এক কার্টন তেল দিয়ে যায়। এটাও আমাদের অর্ডারের ভিত্তিতে নয়, তাদের ইচ্ছেমতো বা সুবিধামতো। যে পরিমাণ তেল দিয়ে যায়, তা আমাদের এক ঘণ্টার চাহিদার সমানও নয়।’

চট্টগ্রামে বোতলজাত সয়াবিনের দেখা মিললেও দাম বাড়তি প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযানের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর চট্টগ্রাম নগরীর দু-একটি বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দেখা মিলেছে। তবে এখনো খোলা সয়াবিন তেল নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না পাইকারি বাজারে। তাই খুচরাতেও কমেনি দাম।

বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে নির্ধারিত দাম মানা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি আবার দিয়েছেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন। পাশাপাশি জনগণকেও প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজার তদারকিতে যান মেয়র। অভিজাত হিসেবে পরিচিত এই বাজারের দোকানগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দেখা মিললেও ছিল না খোলা সয়াবিন তেল।

পরিদর্শন শেষে মেয়র শাহাদাত বলেন, ‘গতকাল আমরা জেলা প্রশাসনসহ মিটিং করেছি। সেখানে দাম নির্ধারণ করেছি আমদানিকারক ১৫৩ টাকা, ডিলার পর্যায়ে ১৫৫ টাকা এবং খুচরায় সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা প্রতি লিটার বিক্রি করবে। আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আগে বোতলগুলো উধাও হয়ে গিয়েছিল এবং ১৯৫ টাকা দরে লিটার বিক্রি করছিল। আজকে দেখছি এমআরপিতে যে রেট আছে, সেই রেটে তারা বিক্রি করছে। কাজীর দেউড়ি বাজারে খোলা তেল নেই। তাই দোকানিদের বলেছি খোলা তেল আনতে।’

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জেলা প্রশাসক আমদানিকারকদের মিল পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা দামে বিক্রির নির্দেশ দিলেও আজ বিক্রি হয়েছে ১৬৫ টাকা দামে। একইভাবে পাইকারি পর্যায়ে ১৫৫ টাকা দরে বিক্রির কথা বলা হলে তা বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকা দামে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত