Ajker Patrika

চাঁদপুরে দুগ্ধ সমিতির ঋণে, ষাঁড় কিনে ফাঁকি

  • ঋণের টাকায় গাভি না কিনে কোরবানিতে বিক্রির জন্য ষাঁড় কিনেছেন অনেকে।
  • কেউ টাকা বিনিয়োগ করেছেন অন্য ব্যবসায়।
মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর
অনেকে ঋণের টাকায় দুধ উৎপাদনের গাভি না কিনে কোরবানিতে বিক্রির জন্য ষাঁড় কিনেছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
অনেকে ঋণের টাকায় দুধ উৎপাদনের গাভি না কিনে কোরবানিতে বিক্রির জন্য ষাঁড় কিনেছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে দুই দুগ্ধ সমিতির সদস্যদের মধ্যে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকে ঋণের টাকায় দুধ উৎপাদনের গাভি না কিনে কোরবানিতে বিক্রির জন্য ষাঁড় কিনেছেন। কেউ অন্য ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কেউ আবার অন্যের গোয়ালঘর দেখিয়ে ঋণ নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় দুগ্ধ সমবায়ের কার্যক্রম সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের আওতায় ফরিদগঞ্জের দুটি সমিতির ১০০ সদস্যের মধ্যে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সংগঠন দুটি হলো বালিথুবা ইউনিয়নের চান্দ্রা দুগ্ধ সমবায় সমিতি এবং সুবিদপুর ও পাইকপাড়া ইউনিয়ন মিলিয়ে গাজীপুর দুগ্ধ সমবায় সমিতি। ২০২৩ সালে গঠিত প্রতিটি সমিতিতে ৫০ জন সদস্য আছেন। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি চান্দ্রা বাজারে ১০০ জনকে উন্নত জাতের গাভি কেনার জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে ঋণের চেক দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো বেশির ভাগ উপকারভোগী গাভি কেনেননি।

চান্দ্রা সমিতির ২৯ সদস্যদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, ১৭ জন গাভি কেনেননি। ঋণের টাকা বিনিয়োগ করেছেন অন্য খাতে। তাঁদের একজন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের আওতায় একটি প্রকল্পে চাকরি করা জহিরুল হক। তাঁর মা ফয়েজুন্নেছা জানান, ঋণের টাকায় কোরবানিতে বিক্রির জন্য তাঁরা একটি ষাঁড় কিনেছেন। আরেক সদস্য ইসমাইল নিজে এবং তাঁর বোনের নামে ঋণ নিয়ে অন্য কাজে বিনিয়োগ করেছেন। ওয়াসিম হোসেন ঋণের টাকায় নিম্নমানের ওষুধ কিনে স্থানীয় ফার্মেসিতে বিক্রি করছেন।

সমিতির সমন্বয়ক মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, তাঁর স্ত্রী ফাতেমা বেগম এবং আরও দুই সদস্য নুরুন্নাহার আক্তার লাকী ও মো. নাছির উদ্দিন নতুন ঋণের টাকা বিনিয়োগ করেছেন পুরোনো গরুর খামারে। এতে ২৮টি ষাঁড় আছে। এগুলো বিক্রি করা হবে কোরবানির পশুর হাটে। এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন ঋণগ্রহীতা শাহাবুদ্দিন।

অন্যদিকে গাজীপুর সমিতির ৩৩ জনের বিষয়ে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, ১৪ জন গাভি কেনেননি। তাঁদের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেন জুতা ব্যবসায়ী, রাজু হোসেন বাড়িতে থাকেন না ও মো. কাইয়ুম বালু ব্যবসায়ী। তাঁরা অন্যের গোয়ালঘর দেখিয়ে ঋণের টাকা নিয়েছেন। জানতে চাইলে কাইয়ুম বলেন, তিনি গোয়ালঘর ঠিক করে গরু কিনবেন।

জানতে চাইলে সমিতির সমন্বয়ক জসিম উদ্দিন মিন্টু বলেন, ‘এই ঋণ বিতরণের জন্য সমিতিতে যাঁদের নাম ছিল, চূড়ান্ত করার দিন তা পাওয়া যায়নি। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। ওই দিন আমি উপস্থিত হয়ে দেখলাম, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি। তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সামনে সাহস করে কোনো কথা বলতে পারিনি। যে কারণে ঋণের টাকা বিতরণে অনিয়ম হয়েছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সদস্য যখন চূড়ান্ত হয়, তখন আমি এই উপজেলায় ছিলাম না। তবে ঋণ বিতরণ হয়েছে, আমি দায়িত্বরত অবস্থায়। যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, তাঁদের বিষয়ে আমরাও তদন্ত করে দেখছি। কেউ কেউ কোরবানিতে বিক্রির জন্য ষাঁড় কিনেছেন। তদন্তে যাঁদের অনিয়ম পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এই ঋণ বিতরণ সম্পর্কে আমি অবগত না। তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। এই ধরনের অনিয়ম হয়ে থাকলে প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

আদালতের বিচারকাজে বাধা দেওয়ায় আইনজীবীর দণ্ড, ক্ষমা চেয়ে পার

‘ফের ধর্ষণচেষ্টার ক্ষোভে’ বাবাকে খুন, ৯৯৯-এ কল দিয়ে আটকের অনুরোধ মেয়ের

আ. লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের বিএনপির সদস্য হতে বাধা নেই: রিজভী

১৫ স্থাপনায় পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আকাশেই ধ্বংসের দাবি ভারতের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত