Ajker Patrika

আখাউড়ায় রেলওয়ে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি  
অভিযুক্ত মিথুন কুমার দাস
অভিযুক্ত মিথুন কুমার দাস

বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া ইউনিটের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (আইডব্লিউ) মিথুন কুমার দাসের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, সরকারি কোয়ার্টার দখল এবং চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের একাধিক অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আখাউড়ায় যোগদানের পর থেকে মিথুন কুমার দাস নিজের বরাদ্দপ্রাপ্ত কোয়ার্টারে না থেকে রেলওয়ে হাসপাতালের বিপরীতে তিতাস সেতু প্রকল্পের আওতাধীন একটি ভারতীয় ভবনে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে তিনি এসি ও বিদ্যুৎ সুবিধা ব্যবহার করলেও কোনো বিল পরিশোধ করছেন না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মিথুন কুমার দাসের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে রেলওয়ের অভ্যন্তরে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির টাকায় একাধিক গাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, তাঁর নামে নিবন্ধিত কয়েকটি গাড়ি স্থানীয় ‘আখাউড়া রেন্ট এ কার’ সার্ভিসে ভাড়ায় চালানো হচ্ছে।

রেলওয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কোয়ার্টারের জন্য আবেদন করেও বরাদ্দ পাননি। অথচ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাসা নম্বর ই-২৫ (গ)-এর জন্য এক কর্মচারীর আবেদন উপেক্ষা করে সবুজ মিয়া নামে এক বহিরাগতকে মাসিক ৪ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে, যা সরাসরি প্রকৌশলী মিথুন দাস গ্রহণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া, ওই কলোনিতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে অটোরিকশা চার্জ দেওয়ার ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, আরও কয়েকটি কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে সেখানে মাদক (মদ, গাঁজা ও ইয়াবা) কারবার চালানো হচ্ছে। এসব অনিয়মের কেন্দ্রে প্রকৌশলী মিথুন কুমার দাসের নামই বারবার উঠে আসছে।

এদিকে আখাউড়া রেলওয়ের বিভিন্ন গেট ও সেতু প্রকল্পেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। বিশেষ করে ১৭ নম্বর রেলসেতুর নির্মাণকাজের মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। অনেক গেটের পাশে ওয়াশরুম ও টিউবওয়েল স্থাপনের কথা থাকলেও বাস্তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের বড় একটি অংশের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। রেলওয়ে স্টেশনের বিভিন্ন অবকাঠামোর সংস্কারেও রয়েছে চরম অবহেলা। বুকিং রুমের গেট দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা অবস্থায় থাকলেও কোনো সংস্কার হয়নি, এমনকি একাধিকবার লিখিত আবেদন করেও কার্যকর পদক্ষেপ মেলেনি।

অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, বাইপাসসংলগ্ন রেলওয়ের দুটি ভাঙারি দোকান দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভাড়া দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এ কাজে সহায়তা করছেন ওই প্রকৌশলীর অফিসে কর্মরত আল আমিন, যিনি গেটম্যান পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও প্রকৌশলীর ব্যক্তিগত কাজেই নিয়োজিত রয়েছেন এবং তাঁর নানা দুর্নীতির প্রত্যক্ষ সাক্ষী। এ ছাড়া, আখাউড়া আজমপুর রেলস্টেশনের মসজিদের পাশে রেলওয়ের জমিতে রেল কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি ছাড়াই স্থানীয় এক ব্যক্তিকে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে একটি দোকান ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপসহকারী প্রকৌশলী (আইডব্লিউ) মিথুন কুমার দাসের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘অবৈধভাবে রেলের জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কাজ করছে, যা আমাদের সন্তানদের চোখের সামনেই হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যেই এমন অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে আর মানসম্মানের দিকে তাকিয়ে কেউ মুখ খুলছে না।’

তবে উপসহকারী প্রকৌশলী (আইডব্লিউ) মিথুন কুমার দাস সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা চলছে।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া জংশনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘বাসা বরাদ্দ নিয়ে নয়ছয় করার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আখাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হবে। রেলওয়ের জায়গায় কোনো অবৈধ কার্যকলাপের অভিযোগ থাকলে আখাউড়া থানা ও রেলওয়ে থানা যৌথভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

আখাউড়া রেলওয়ে সার্কেলের তদারকি কর্মকর্তা মো. এরশাদুর রহমান বলেন, ‘রেলওয়ের কোনো স্থাপনা বা কোয়ার্টার ভাড়া বা ব্যবহার-সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভালো জানেন। তবে মাদক আর অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত