Ajker Patrika

ভয় দেখাচ্ছে কুশিয়ারার ভাঙন

  • পাউবো বলছে, উজানের ঢল ও বৃষ্টির কারণে বাঁধ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
  • কোথাও কোথাও ৫০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে।
  • জেলায় জেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ০৭: ৩৬
পাহাড়ি ঢলে ধসে গেছে সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাহাড়ি ঢলে ধসে গেছে সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকা

উজানের ঢল নেমে আসছে সিলেট অঞ্চলে। এতে অঞ্চলের কুশিয়ারা নদীতে পানি বাড়ছে। নদীটির ডাইকে (নদী রক্ষা বাঁধ) ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি ঢুকে পড়ছে গ্রামগুলোয়। এর ফলে প্রায় ১০০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে মৌলভীবাজারে মনু নদের পানি বাঁধ উপচে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। আর উজানের ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

টানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে গতকাল সোমবার কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়েছে। এতে উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর, খানপুর, আলীপুর, নতুন কসবা, কাতিয়া, পাইলগাঁও, আলাগদি, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রানীগঞ্জ বাজার, কদরপাড়াসহ প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে রানীগঞ্জ বাজারে ঢুকেছে। এই বাজারের ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বলেন, বাজারে এখন হাঁটুসমান পানি। অনেকের দোকানে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরকত উল্লাহ বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি রয়েছে। তবে এখনো কোনো পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি।’

সিলেটের জকিগঞ্জে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি এবং ভারতের বরাক নদী দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর ডাইকের তিনটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত রোববার রাত আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউপির রারাই গ্রামের ডাইক ও ভোররাতের দিকে একই ইউনিয়নের বাখরশাল গ্রামের ডাইক এবং গতকাল সকাল ৮টার দিকে খলাছড়া ইউপির লোহারমহল গ্রামের ডাইক ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে আশপাশের ২৫ থেকে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া পৌর শহরের নিকটবর্তী কেছরী গ্রামের ডাইকের ওপর দিয়ে শহরে ঢুকছে কুশিয়ারার পানি। মাইজকান্দী গ্রামের ডাইকের অংশ ধসে পড়েছে নদীতে। জকিগঞ্জ ইউনিয়নের ছবড়িয়া, সেনাপতির চক, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, খলাছড়া ইউনিয়নের একাধিক স্থান, বারঠাকুরী ইউনিয়নের পিল্লাকান্দী, আমলশীদসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক জায়গায় ডাইকের ওপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের প্রায় ১০০ ফুট বাঁধ, বাখরশাল গ্রামে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ফুট বাঁধ এবং খলাছড়া ইউপির লোহারমহল এলাকায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট বাঁধ ভেঙে গেছে।

এ বিষয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন ধীরে ধীরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। জকিগঞ্জ বাজারেও পানি প্রবেশ করেছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট জানায়, সিলেটের তিনটি নদীর ৫ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ পয়েন্টে ১৮৫ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার এবং লোভা নদীর লোভাছড়ায় ১১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

একই সময়ে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার শেরপুর পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার, ডাউকির জাফলং পয়েন্টে ২৯৬ সেন্টিমিটার, সারি-গোয়াইনের গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১০৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই দিন ধরেই কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন প্রায় ২ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার কারণে ৮ কিলোমিটারের এই বাঁধ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

এদিকে মৌলভীবাজারে গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে মনু নদের পানি বাঁধের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাউবো সূত্র জানিয়েছে, বৃষ্টির কারণে মনু নদের পানি বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার রাজনগর ও সদর উপজেলা অংশে বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় নতুন করে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মৌলভীবাজার-শমশেরনগর সড়কের শিমুলতলা অংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

টানা বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিকাপুর, আব্দুল্লাহপুর, রহিমপুর, বঙ্গেরচর, বীরচন্দ্রপুর, সাহেবনগর এবং মোগড়া ইউনিয়নের আওড়ারচর, সেনারবাদী, ধাতুরপহেলা, বাউতলা, উমেদপুর, আদমপুর, রাজেন্দ্রপুর, ছয়গড়িয়া, জয়নগর, খলাপাড়া এবং মনিয়ন্দ ইউনিয়নের ইটনা, আইড়লসহ অন্তত ১৯টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া আখাউড়া স্থলবন্দরের আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের প্রায় ১০০ মিটারজুড়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত