Ajker Patrika

বাছার লাশ কিংবা হাড় পাওয়ার অপেক্ষায় আছি, সালেহ আহমেদের মা

কাউছার আলম, পটিয়া (চট্টগ্রাম) 
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯: ১০
বাছার লাশ কিংবা হাড় পাওয়ার অপেক্ষায় আছি, সালেহ আহমেদের মা

‘ছেলে আমার মাইজভান্ডারে জেয়ারতে যাবে। এ জন্য আমার সঙ্গে দেখা করতে আইছিল। কিন্তু পরদিন শুনি বাছা আমার পানিতে পড়ে নিখোঁজ হয়ে গেছে। এখন বাছার লাশ কিংবা হাড় পাবার অপেক্ষায় আছি।’ কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলছিলেন নিখোঁজ সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদের মা। 

গতকাল বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের মনসা গ্রামে সালেহ আহমেদের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়। মা জাহানারা বেগম  বিলাপ করে বলেন, ছেলে ১৫ দিন আগে নিখোঁজ হয়ে গেছেন। এখনো সিডিএ কর্তৃপক্ষ তাঁদের কোনো ধরনের খোঁজখবর নেননি। অথচ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম তাঁদের নিয়মিত খোঁজ খবর নিয়েছেন। সালেহ আহমেদের ছেলেকে সিটি করপোরেশনে চাকরি দেবেন বলে জানিয়েছেন মেয়র। 

নিখোঁজ সালেহ আহমেদের ছেলে সাদেকুল্লাহ মাহিন বলেন, আব্বাকে তো আর জীবিত ফেরত পাব না। ঘটনার দিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান টিমের সঙ্গে ছিলাম। তখন মনে করতাম আব্বাকে তো জীবিত না পেলেও অন্তত লাশটা পাব। কিন্তু দিনের পর দিন যায়, সপ্তাহ যায় কোথাও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। 

মানিহ আরও বলেন, উদ্ধার কাজ ছিল ধীর গতি। যেভাবে তন্নতন্ন করে খোঁজার কথা সেভাবে কেউ খোঁজেনি। মুরাদপুর হয়ে বহদ্দারহাট, শমসের পাড়া, মির্জার খাল পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে। আমার আব্বা নিখোঁজের পর সিটি করপোরেশনের মেয়র নিজ উদ্যোগে আমার নানুর শহরের বাসায় এসে আমাদের সান্ত্বনা দিয়ে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু সিডিএ কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত কোনো সান্ত্বনা কিংবা সহায়তাও করেনি। 

মানিহ আক্ষেপ করে বলেন, আমার আব্বা নিখোঁজ হওয়ার দায় এড়াতে পারে না সিডিএ কর্তৃপক্ষ। আমাকে অনেকেই বলেছেন সরাসরি গিয়ে সিডিএ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু আমি যাইনি। 

সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি মেয়রকে আমার সিভি জমা দিয়েছি। আমি এখন বিভিন্ন মিডিয়ার নিউজের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমাকে চাকরি দেবে। 

গত ২০ আগস্ট শহরের একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে বাবা সঙ্গে শেষ দেখা হয় সালেহ আহমেদের মেয়ে মিতুর। তিনি বলেন, আমার আব্বাই আমাদের সংসারে একমাত্র উপার্জন করার লোক ছিলেন। এখন কী হবে জানি না। আমার লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমাদের ভাইবোনের পড়াশোনার জন্য আব্বা সব সময় উৎসাহ দিতেন। 
 
২৫ আগস্ট খালে পড়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমেদসালেহ আহমেদ সেদিন স্ত্রী ফেরদৌস বেগমকে মাজার জেয়ারতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ফেরদৌস বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বলেছিল, আমি মাজার জেয়ারত করতে যাচ্ছি। এ যাওয়া যে তাঁর শেষ যাওয়া হবে তা কল্পনাও করিনি। আমি এখন আমার দুই সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এখন তাদের কীভাবে পড়াশোনা করাব বুঝতে পারছি না।

সালেহ আহমেদ মাইজভাণ্ডার শরিফের ভক্ত ছিলেন বলে জানান ছোট ভাই মনির আহমেদ। আমার বড় ভাই। ঘটনার দিন সকালে তিনি দোকান থেকে বেরিয়ে মুরাদপুর দিয়ে ফটিকছড়িতে মাইজভান্ডারির মাজারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। প্রথমে আমরা অন্তত তাঁর লাশটা পাব-সে আশা করছিলাম। কিন্তু এখন সেই আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। অন্তত তাঁর লাশটা পাওয়া গেলেও মনকে বুঝ দিতে পারতাম।

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট সকালে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে নগরীর মুরাদপুরে সড়ক ও ফুটপাতের সঙ্গে লাগোয়া একটি নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমেদ। ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তাঁর সন্ধানে মুরাদপুর থেকে কর্ণফুলী নদীর উজানের দিকে মির্জা খালের নালা পর্যন্ত তল্লাশি চালায়। কিন্তু ১৫ দিন পরও তাঁর কোনো সন্ধান মেলেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত