Ajker Patrika

স্বপ্না চাকমার একার লড়াই

প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ মে ২০২১, ১৬: ২৬
স্বপ্না চাকমার একার লড়াই

কাপ্তাই (রাঙামাটি): ১৯৯৮ সালের মে মাসে কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি হন চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলাধীন নোয়াপাড়া মাস্টার দা সূর্যসেন পল্লির স্বপ্না দাশ। সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন আরেক কুষ্ঠরোগী জ্যোতিষ চাকমা। সেখানেই পরস্পরকে পছন্দ করে ফেলেন তারা। ১৯৯৯ সালে বিয়ে করেন। স্বপ্না দাস হয়ে যান স্বপ্না চাকমা।

হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসা, হাসপাতালের কোয়ার্টারে সম্পূর্ণ বিনা ভাড়ায় থাকার সুযোগ পেয়ে বেশ সুখেই কাটছিল তাঁদের দিন। তাঁদের ঘর আলো করে আসে আকাশ চাকমা ও পূর্ণিমা চাকমা। কিন্তু ২০০৪ সালে ঘটে যায় বড় বিপর্যয়। কুষ্ঠ রোগে দুই পায়ের ক্ষত নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়। চিকিৎসকদের পরামর্শে সে বছরই স্বপ্নার দুই পা কেটে ফেলা হয়। সেই থেকে হুইলচেয়ারে বন্দী স্বপ্নার জীবন।

চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টান হাসপাতাল ও কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্রের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং জানান, তাঁদের কুষ্ঠ হাসপাতালের কোয়ার্টারে সম্পূর্ণ বিনা ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। বিনা মূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধ দিয়েছি। অনেক কষ্টেই চলছে তাদের সংসার।

এদিকে অভাবের কারণে স্বপ্না–জ্যোতিষ দম্পতির প্রথম সন্তান আকাশ চাকমা অষ্টম শ্রেণির পর আর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেনি। এখন সে বাসের হেলপার। পূর্ণিমা চাকমা চন্দ্রঘোনা বি এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। কাপ্তাই সড়কের বনগ্রাম এলাকায় শাকসবজি বিক্রি করে চলতো স্বপ্নাদের সংসার। দুজনে মিলে ব্যবসাটি করতেন তাঁরা। কিন্তু সে সুখও বেশি দিন সইল না!

২০২০ সালের ১১ এপ্রিল মারা যান জ্যোতিষ চাকমা। মুষড়ে পড়েন স্বপ্না। কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে। তাই শাকসবজি ব্যবসাটা কোনোরকম চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচণ্ড রোদের মধ্যেও আজ সোমবার স্বপ্নাকে সবজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। স্বপ্না বলেন, প্রতিদিন রোদ–বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাপ্তাই সড়কের লিচুবাগান বনগ্রাম মূল রাস্তার পাশে সবজি বিক্রি করতে বসেন। ২০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। এদিকে মহমারিতে ছেলে হয়ে পড়েছে কর্মহীন। বাজারে আগের মতো ক্রেতা নেই। এভাবে খুব অর্থকষ্টে দুই ছেলে–মেয়েকে নিয়ে দিন কাটছে স্বপ্নার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত