Ajker Patrika

সম্পদ নিয়ে সন্তানদের ঝগড়া: দুই দিন পর হলো বাবার দাফন

কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
সম্পদ নিয়ে সন্তানদের ঝগড়া: দুই দিন পর হলো বাবার দাফন

চাকরি থেকে অবসরের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই দিন ধরে বাড়ির সড়কে বাবার লাশ ফেলে রাখেন সন্তানেরা। মৃত্যুর দুই দিন পর আজ সোমবার সকাল ১০টায় জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মনির আহমদ (৬৫) নামে পদ্মা অয়েল কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তার মরদেহ। তবে দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন না তিন মেয়ের কেউই।

গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মনির আহমদ। এরপর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ এনে রেখে দেওয়া হয় বাড়ির পাশের সড়কে। এরপর অবসরে টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। 

ঘটনাটি কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের কেরানী বাপের বাড়িতে ঘটে। এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র নিন্দার ঝড় ওঠে। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন মনির আহমদের মরদেহ দাফনের তাগাদা দেন। 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মনির আহমদের সংসারে স্ত্রী,২ ছেলে ও ৩ মেয়ে। তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ৫০ লাখ টাকা পেনশন পান। সেই টাকা ব্যাংকে তাঁর নামের অ্যাকাউন্টেই ছিল।

স্ত্রী দিলোয়ারা বেগম (৫৫) ও বড় ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগ, মনিরের মেয়ে বেবি আকতার বাবাকে থেরাপি দেওয়ার কথা বলে চাতরী চৌমুহনী শাখার এবি ব্যাংকে নিয়ে ৩০ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলেন। 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় আজ মরদেহ দাফন করা হয়। এ সময় স্ত্রী ও বড় ছেলে উপস্থিত ছিলেন। তবে ছোট ছেলে মো. আলমগীর সৌদি আরবে থাকায় আসতে পারেননি। তিন মেয়ের কেউই মরদেহ দাফনের সময় ছিলেন না। গতকাল রাতেই তাঁরা শ্বশুরবাড়ি চলে গেছেন। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়ে লিপি আকতার অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে মরদেহ বাড়ি নেওয়ার পর থেকে ভাই জাহাঙ্গীর আলম তাঁদের তিন বোনকে একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করেন। এ কারণে বিকেলে তিনি শ্বশুরবাড়ি চলে যান। গতকাল রোববার রাতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় অপর দুই বোন উদ্ধার হওয়ার পর তাঁরাও শ্বশুরবাড়ি চলে যান। আর বাবার দাফনের নির্ধারিত সময় না জানার কারণে তিনি ওই সময় উপস্থিত থাকতে পারেননি। 

স্থানীয় বড়উঠান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘সত্যি দুঃখজনক ঘটনা আমার ইউনিয়নের মধ্যে। এ ঘটনায় আমরা জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। মনির আহমদের অসুস্থতার কারণে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে, সেগুলো বাদ দিয়ে তাঁর অ্যাকাউন্টে যে টাকা আছে সেগুলো সন্তানদের মধ্যে ভাগ হবে। সে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আজ সকালে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।’ 

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘গতকাল বাবার অবসরের টাকার ভাগ নিয়ে বিরোধের জেরে দুই বোনকে আটকে মারধরের বিষয়টি জানানোর পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আমি ইউপি সদস্যকে পাঠাই এবং দুই মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া মরদেহ বহনের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ১৭ হাজার ৫০০ টাকা আমি নিজ থেকে দিয়ে দিয়েছি।’ 

টাকার অংশীদারের বিষয়ে জানতে চাইলে এবি ব্যাংক চাতরী চৌমুহনী শাখার ব্যবস্থাপক ফরহান জামান বলেন, ‘ব্যাংক থেকে নিয়ম মেনে লেনদেন করেছেন প্রয়াত মনির আহমদ। এ ক্ষেত্রে নিয়মের কোনো হেরফের ঘটেনি।’ 

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, ‘স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মৃতের স্বজনদের উপস্থিতিতে সমঝোতার মাধ্যমে আজ সকালে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাতের আঁধারে পুড়ল আটটি দোকান

তালা (সাতক্ষীরা)  প্রতিনিধি
অগ্নিকাণ্ডে আটটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
অগ্নিকাণ্ডে আটটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের হাজরাকাটি বাজারে গতকাল বুধবার (২৯ অক্টোবর) দিবাগত গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আটটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকান, বিচালির (খড়) দোকানসহ আটটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে বাজারে আগুন লাগে। খবর পেয়ে তালা ও ডুমুরিয়া ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। টিনের ছাউনি ও কাঠের বেড়ায় তৈরি দোকানগুলো মুহূর্তেই আগুনে পুড়ে যায়।

নৈশপ্রহরী কেরামত শেখ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমরা রাতে ডিউটি করছিলাম। উত্তর দিক থেকে কুকুর ডাকাডাকি করায় আমি সেদিকে যাই। ফিরে এসে দেখি সুরমানের (মিষ্টির দোকানদার) দোকানের পেছন থেকে আগুন জ্বলছে। চিৎকার দিলে লোকজন ছুটে আসে এবং ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়।’

অগ্নিকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মিষ্টির দোকানের মালিক সুরমান গাজী। তিনি বলেন, ‘আমার দোকানের সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি পথে বসে গেলাম।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার, তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইনউদ্দিন এবং জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. মাহমুদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেন।

তালা থানার ওসি মো. মাইনউদ্দিন বলেন, সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিরল টিউমারে মুখ ঢেকেছে মা-ছেলের, অসহায় পরিবার

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
বিরল রোগী কাজল ও তাঁর মা শাহানা খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিরল রোগী কাজল ও তাঁর মা শাহানা খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার অতিথপুর গ্রামের এককোণে জরাজীর্ণ একটি কুঁড়েঘরে বাস করেন কাজল মিয়া (২২) ও তাঁর মা শাহানা খাতুন (৪৫)। মা-ছেলে দুজনই আক্রান্ত এক বিরল ও ভয়াবহ টিউমারে, যা ধীরে ধীরে কেড়ে নিচ্ছে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষমতা। সুন্দরের প্রতিচ্ছবি যে মুখ, সেই মুখই এখন কাজলের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জন্মের সময় কাজলের মুখে ছিল ছোট একটি টিউমার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি এখন বড় হয়ে তাঁর এক চোখ ও মুখ পুরোপুরি ঢেকে ফেলেছে। মুখের নিচে ঝুলে পড়েছে বিশাল মাংসপিণ্ড। খাওয়াদাওয়া করতে কষ্ট হয়, এক চোখে দেখতে পান না। বিকৃত চেহারার কারণে এখন গ্রামের লোকেরা তাঁর সঙ্গে মিশতে চায় না, একাকিত্ব যেন তাঁর নিত্যসঙ্গী।

শুধু কাজল নন, তাঁর মা শাহানা খাতুনও একই রোগে ভুগছেন। গালের পাশ থেকে ঝুলে পড়েছে টিউমার, যা বুক পর্যন্ত বিস্তৃত। শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গুটি।

দুজনকে নিয়ে দিশেহারা দিনমজুর বাবা মিরাজ আলী। সামান্য মজুরির টাকায় সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে এই ভয়াবহ রোগের চিকিৎসা করানো তাঁর পক্ষে কল্পনাতীত। দারিদ্র্য আর সমাজের অবহেলায় আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মিরাজ আলীর স্ত্রী শাহানার মুখে বিয়ের আগে থেকেই ছোট টিউমার ছিল। শরীরে ছিল ছোট ছোট গুটি টিউমার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই টিউমার বড় হয়ে ঝুলে পড়েছে। শরীরজুড়ে দেখা দিয়েছে অসংখ্য টিউমার। দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে মেজ ছেলে কাজলের মুখে শুধু এমন টিউমার দেখা দিয়েছে। অন্যদের শরীরে কোনো টিউমার নেই।

বিরল রোগে আক্রান্ত কাজল মিয়া বলেন, ‘ছোটবেলায় কপালের কাছে ছোট একটা টিউমার হয়েছিল। সেটা বড় হতে হতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এক চোখ টিউমারে ঢেকে যাওয়ায় সেই চোখে আর দেখতে পাই না। মুখ ঢেকে যাওয়ায় কথা বলতে ও খাবার খেতে কষ্ট হয়। এই অবস্থায় কোনো কাজকর্ম করতে পারি না। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই, তা দিয়ে চলি। টিউমার ভালো হলে কাজ করেই খেতে পারতাম। আমার খুব ইচ্ছা হয় স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে। এমন জটিল রোগ হওয়ায় এলাকার কোনো মানুষ আমার সঙ্গে মেশে না। একাই চলতে হয়।’

কাজলের মা শাহানা খাতুন বলেন, ‘আমার দিন তো শেষের দিকে। ছেলেটার তো সামনে সারাজীবন পড়ে রয়েছে। এমন রোগ নিয়ে বাকি জীবন কেমনে কাটাবে। এভাবে টিউমার বাড়তে থাকলে কী করব! জটিল রোগের চিকিৎসা করানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই। সরকারি সহায়তায় চিকিৎসা পেলে সে হয়তো স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেত।’

দিনমজুর মিরাজ আলী বলেন, ‘ছেলে আর স্ত্রী দুজনেই অসুস্থ। আমি গরিব মানুষ, কেমন করে ওদের চিকিৎসা করাব বুঝি না। মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে যা পাই তা দিই খেতে। তাদের নিয়ে কী করব একমাত্র আল্লাই জানেন।’

প্রতিবেশীরা জানালেন, সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা তাঁরা এখনো পাননি।

প্রতিবেশী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ওদের অবস্থা খুব খারাপ। সরকারি সাহায্য পেলে হয়তো চিকিৎসা সম্ভব হতো। আমাদের সবার উচিত ওদের পাশে দাঁড়ানো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শচীন দেববর্মনের জন্মভিটায় দুই দিনের মেলা, দাবি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্সের

দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ, কুমিল্লা 
কুমিল্লায় শচীন কর্তার জন্মভিটা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
কুমিল্লায় শচীন কর্তার জন্মভিটা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

কুমিল্লার দক্ষিণ চর্থা এলাকায় অবস্থিত বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের কালজয়ী সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী শচীন দেববর্মনের জন্মভিটায় আজ (৩০ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘শচীন মেলা’। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলায় অংশ নিচ্ছেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা। শচীনের জন্ম (১ অক্টোবর) ও প্রয়াণ (৩১ অক্টোবর) দিবসকে কেন্দ্র করে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এই আয়োজনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ত্রিপুরার রাজবংশের নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মনের ঘরে ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন শচীন দেববর্মন। রাজপরিবারের উত্তরাধিকারের বিরোধ ও রাজনৈতিক কারণে তাঁর বাবা কুমিল্লায় স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। চর্থার দক্ষিণে প্রায় ৬০ একর জমির ওপর নির্মিত প্রাসাদটিই তাঁর জন্মভিটা হিসেবে পরিচিত। শচীন দেববর্মন ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর ভারতে মারা যান।

কুমিল্লার গ্রামীণ পরিবেশ, নদীর ঢেউ, ভাটিয়ালি এবং স্থানীয় লোকসংগীতের সঙ্গে তাঁর শৈশবের পরিচয়ই সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি স্থাপন করে। ছোটবেলায় স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে সময় কাটানো, লোকসংগীত সংগ্রহ এবং সাংস্কৃতিক উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হওয়া তাঁর সংগীত প্রতিভাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যায়।

কুমিল্লা জিলা স্কুল ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতায় যান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আনুষ্ঠানিক সংগীত শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে খ্যাতি অর্জন করেন।

১৯২৩ সালে কলকাতা বেতারে তার প্রথম গান রেকর্ড হয়, আর ১৯৩২ সালে প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এরপর বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্য সংগীত পরিচালনায় নাম লেখান।

শচীন দেবের সংগীতজীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায় শুরু হয় ১৯৪৪ সালে মুম্বাইয়ে স্থায়ী বসতি গড়ে। হিন্দি চলচ্চিত্রে তাঁর সংগীত পরিচালনা এবং কণ্ঠে অমর গান আজও শ্রোতাদের হৃদয় স্পর্শ করে। ‘শিকারি’, ‘দেবদাস’, ‘সুজাতা’, ‘আরাধনা’, ‘গাইড’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে তাঁর সংগীত পরিচালনা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমার, গীতা দত্তসহ বহু কিংবদন্তি তাঁর সুরে গান গেয়েছেন।

১৯৩৭ সালে তিনি গায়িকা মীরা দেবীকে বিয়ে করেন। তাঁদের সন্তান রাহুল দেববর্মনও ভারতীয় চলচ্চিত্রে খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক হন।

দীর্ঘদিন ধরে শচীনের জন্মভিটা ছিল পরিত্যক্ত। পাকিস্তান আমলে এর একটি অংশ সরকারি খামার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। স্বাধীন বাংলাদেশে ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাড়ির একটি অংশ উদ্ধার করা হলেও পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ আজও হয়নি।

বাড়ির স্থাপত্যগত অবস্থা নাজুক। সদর দরজার সঙ্গে ঘরের বারান্দা আকৃতির তিনটি কক্ষ, পূর্ব ও পশ্চিমাংশে আরও ছয়টি কক্ষ এবং পূজার ঘর রয়েছে। তবে পলেস্তারা খসে পড়ছে, দেয়াল ও প্রাচীরে অঙ্কিত আলপনা মুছে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ও ওয়াশব্লকের সমস্যার কারণে সংস্কারহীন ভিটা রাত্রে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।

বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এই বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেছে, ঘরের দরজা ভাঙাচোরা এবং বিদ্যুৎ নেই। অন্ধকার ও ভগ্নদশার কারণে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। আমি একা বাধা দিতে গেলে হুমকির মুখে পড়ি।’

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, বাড়িটি সন্ধ্যার পর মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়। যদি বাড়ি সংস্কার ও নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিক থাকে, তাহলে শচীন মেলার আয়োজন আরও সফল হবে এবং এখানে বখাটেদের আনাগোনা কমবে।

দুই দিনব্যাপী শচীন মেলায় আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং দেশীয় ঐতিহ্যবাহী ১৫টি স্টল থাকবে। অনুষ্ঠানে শচীনভক্ত, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেবেন এবং তাঁর সুরের মাধ্যমে আবেগময় পরিবেশ তৈরি হবে।

সামাজিক সংগঠন ‘ঐতিহ্য কুমিল্লা’র সভাপতি ও শচীন গবেষক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, ‘উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী শচীন দেববর্মন, যিনি শচীন কর্তা এবং এস ডি বর্মন নামে পরিচিত। তাঁর অবদান আজও বাঙালির হৃদয়ে জীবন্ত। শচীনের বাড়ি পরিত্যক্ত না রেখে দেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলে কুমিল্লা সংগীত ও সংস্কৃতির একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাবে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। জাতীয় জাদুঘরের প্রতিনিধিদল বাড়িটি পরিদর্শন করেছে। পরিকল্পনা রয়েছে পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর, মুক্তমঞ্চ, গবেষণার কক্ষ ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের। এটি বাস্তবায়িত হলে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লরির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী তরুণী নিহত

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তেলবাহী লরির ধাক্কায় আয়েশা আক্তার (২২) নামের এক তরুণী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় তাঁর সঙ্গে থাকা মো. খালেদ হোসেন (২৮) নামের এক যুবক আহত হন। গতকাল বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতে মহাসড়কের দশতলা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত তরুণী পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উত্তর তাপালবাড়িয়া গ্রামের মো. জাকির হোসেনের মেয়ে এবং আহত যুবক নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) ১ নম্বর ওয়ার্ডের মুজিববাগ এলাকার হাসান আলীর ছেলে।

জানা গেছে, মহাসড়কের ঢাকামুখী লেন দিয়ে নিহত ও আহত হওয়া ব্যক্তিরা মোটরসাইকেলযোগে যাওয়ার পথে দশতলা-সংলগ্ন বেঙ্গল প্লাস্টিক কারখানার সামনে একটি তেলের লরি সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে মুহূর্তেই মোটরসাইকেল আরোহীরা সড়কে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা আহত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক সাইনবোর্ডের প্রো অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকেরা নিহত তরুণীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর ঢামেক হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তরুণীর মৃত্যু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘একটি ট্যাংক লরি পেছন দিক থেকে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে আরোহী তরুণী গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল ও ট্যাংক লরিটি জব্দ করি। তবে ঘাতক লরিচালক দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে যান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত