Ajker Patrika

ভাতার টাকা প্রতারকের ফোনে

এম নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম)
ভাতার টাকা প্রতারকের ফোনে

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সামাজিক সুরক্ষা ভাতাভোগীদের ভাতার টাকা চলে যাচ্ছে প্রতারকদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্টে। এক হাজারের বেশি ভাতাভোগীর অসচেতনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা সরকারি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ আগস্ট উপজেলার অনুষ্ঠিত মাসিক সভায় এমন অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। পরে সভায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের টেক অফিসারদের বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৪ হাজার ৫০০ জন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার সুবিধা পেয়ে থাকেন। এসব সুবিধাভোগীদের ইতিপূর্বে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হতো। পরে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে তাঁদের ডিজিটাল (অনলাইন) পদ্ধতির আওতায় আনা হয়। এতে ব্যাংকের পরিবর্তে নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভাতা দেওয়া শুরু হয়।

আর এটি চালু করতে গিয়ে অজ্ঞতাবশত ভুল নম্বর এন্ট্রি করেন অনেক ভাতাভোগী। অনেকের নিজস্ব মোবাইল ফোনের অভাবে ও মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বিপাকে পড়েন। এ সুযোগে প্রতারকেরা সাহায্যের নামে নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নম্বরটি এন্ট্রি ফরমে লিখে দেন। সেই থেকে ভাতাভোগীদের টাকা চলে যাচ্ছে প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে। আর এটি বুঝতেও কয়েক মাস পার হয়ে যায়।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সারা দেশের মতো আনোয়ারাতেও ১১ ইউনিয়নে সব ভাতাভোগীকে নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরাসরি ভাতা পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ভাতাভোগীদের মধ্যে এক হাজারের বেশি উপকারভোগীর তিন মাস বা তার অধিক মাসের ভাতা নানা কারণে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার ঘটনা তাঁরা জানতে পেরেছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পারি, উপকারভোগী কিছু ব্যক্তির নিজস্ব মোবাইল না থাকা, ভুল মোবাইল নম্বর এন্ট্রি হওয়া, মোবাইলের ব্যবহার না জানায় প্রতারিত হন। এ ছাড়া কিছু ব্যক্তি পরিবারের লোকদের দ্বারাও প্রতারণার শিকার হয়ে এ সমস্যায় পড়েছেন।’

এমনই একজন ভাতাভোগী রায়পুর ইউনিয়নের আবু ছৈয়দ। তিনি বলেন, ভাতাভোগী হিসেবে নিবন্ধিত হলেও তাঁর মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে ভাতার টাকা আসছে না। এ ব্যাপারে তিনি সমাজসেবা অফিসে গিয়ে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এখনো টাকা পাচ্ছেন না।

আনোয়ারা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে আনোয়ারার ১১ ইউনিয়নে ৮ হাজার ৯০০ ব্যক্তি বয়স্ক, ২ হাজার ৫৫০ নারী ও বিধবা ভাতা পান। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ভাতা পান ৩ হাজার ৫০ জন। এর মধ্যে এক হাজারের বেশি উপকারভোগীর কয়েক মাসের ভাতা তাঁদের মোবাইলে না গিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির মোবাইলে চলে গেছে। উপকারভোগীরা জানেন না কে বা কারা তাঁদের টাকা পাচ্ছে।

বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, ‘ভাতাভোগীদের অনেকের নিজস্ব মোবাইল না থাকা, ভুল মোবাইল নম্বর তালিকা ভুক্ত করা আবার অনেকে মোবাইলের ব্যবহার না জানার কারণে এ সমস্যা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমদ বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা যাতে আর ঘটতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের টেক অফিসারদের ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্তের পর ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগের গাফিলতি আছে কিনা বা এ কাজে জড়িত কারা তাঁদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত