Ajker Patrika

১৪ মাস ধরে কলকাতায় নদীবন্দরে আটকা বাংলাদেশি ২ নাবিক 

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

জাহাজ কাত হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জি নদী বন্দরে ১৪ মাস ধরে আটকা রয়েছেন বাংলাদেশি দুই নাবিক। মাসের পর মাস তাঁরা আটকা থাকায় পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

এদিকে দুই নাবিককে ঈদের আগে মুক্তি চেয়ে নাবিকদের পরিবারের পক্ষে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ মার্চ বাংলাদেশের নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ভারতের নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে কলকাতার মেরিন ক্লাবে তাঁদেরকে মুক্তি দিতে অনুরোধ জানান। এতেও দুই নাবিকের মুক্তি মেলেনি।

আটকা থাকা দুই নাবিক হলেন ক্যাপ্টেন এ কে এম মুছা এবং চিফ ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম ফয়সাল। তাঁরা হলেন কলকাতার শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জি নদী বন্দরে দুর্ঘটনায় পড়া বাংলাদেশি জাহাজ মেরিন ট্রাস্ট-১ এর নাবিক।

জানা গেছে, গত বছরের ২৪ মার্চ কন্টেইনার বোঝাই করার সময় কলকাতার শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জি বন্দরে কাত হয়ে পড়ে মেরিন ট্রাস্ট-১। এ সময় জাহাজটিতে ১৫ জন নাবিক ছিলেন। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, দুর্ঘটনার কারণে বাংলাদেশি জাহাজের ওপর চার্জ আরোপ ও তদন্তের স্বার্থে সেখানে নাবিকদের আটকে রাখা হয়েছে। গত বছরের ২৯ আগস্ট আটকা থাকা নাবিকদের মধ্যে ৯ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে আরও চারজনসহ মোট ১৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে বাকি দুই নাবিক কলকাতা বন্দরের মেরিন ক্লাবে আটকা রয়েছেন।

দুর্ঘটনায় কবলিত জাহাজ মেসার্স মেরিন ট্রাস্ট-১ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মো. সাইকুল ইসলাম বলেন, ‘কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে আমাদের কাছে ৩৪ কোটি রুপি ক্ষতি পূরণ হিসাবে দাবি করেছে। এ বিষয়ে আমরা কলকাতার উচ্চ আদালতে মামলা করেছি। আগামী ১৭ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দফায় দফায় চিঠি চালাচালি হলেও নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।’

কলকাতার মেরিন ক্লাবে আটকা ক্যাপ্টেন এ কে এম মুছা হোয়াটসঅ্যাপে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর থেকে প্রায় ১৪ মাসের বেশি সময় এখানে আটকে রাখা হয়েছে। এখানে একই ধরনের খাবারে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। পরিবার পরিজনের কাছে যেতে পারছি না, এটা অনেক কষ্টের। ঈদের সময়ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারিনি।’

চিফ ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম ফয়সালের বাবা মীর মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘১৪ মাস ধরে কলকাতা বন্দরে আমার সন্তানকে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। ছেলেসহ আরেক নাবিককে উদ্ধারে সরকারের কাছে আবেদন জানাই।’

গত বছরের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশের নৌ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভারতের নৌ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরাবর দেওয়া এক চিঠিতে বাংলাদেশি নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অনুরোধ করা হয়। ওই বছর ১১ মে কলকাতার শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জি নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশি ডেপুটি হাইকমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়।

ওই তিন পৃষ্ঠার চিঠিতে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, জাহাজটির দুর্ঘটনার কারণে তাঁদের প্রতিদিন ৪৬ লাখ রুপি ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া জাহাজটি থেকে নিঃসরিত তেলে সেখানকার পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। জাহাজটির বাংলাদেশি মালিকপক্ষ বিনা পয়সায় বন্দর থেকে সার্ভিস চাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। ওই চিঠিতে জাহাজটি সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত