Ajker Patrika

এক ঠিকানায় ৪৫ ঠিকাদার

মো. আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
এক ঠিকানায় ৪৫ ঠিকাদার

চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি খাদ্যশস্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ৪৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় নগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার এক ঠিকানায়। আবার এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় ৫২ জন নারীর নাম পাওয়া গেছে, যাঁরা খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার স্ত্রী, কন্যা, শাশুড়ি কিংবা স্বজন। অভিযোগ আছে, এসব বেনামি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে খাদ্যশস্য পরিবহনের কাজটিও নিয়ন্ত্রণ করছেন মূলত খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারাই। বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি-ফুড) মো. জহিরুল ইসলাম খান। 
আজকের পত্রিকাকে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘এক হোল্ডিংয়ে এত লাইসেন্স ইস্যু কী করে হয়! আমার আগে যিনি ছিলেন, সম্ভবত তিনি এটি করতে পারেন। তবে আমি বিষয়টির বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছি।’

খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে দেশে আমদানি করা খাদ্যশস্যের বেশির ভাগই আসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এ ছাড়া হালিশহরের কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম এবং পতেঙ্গার সাইলোতেও মজুত থাকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য। সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের চাল, গম এবং সরকারি খাদ্যবান্ধব প্রকল্পের খাদ্যসহায়তা চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার বিভিন্ন খাদ্যগুদামে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিয়োগ করা হয় এসব ঠিকাদার। এ জন্য দূরত্ব আর যোগাযোগব্যবস্থা বিবেচনা করে ঠিকাদারদের মাইলপ্রতি পরিবহন ভাড়া দেয় খাদ্য বিভাগ। এ কাজে প্রতিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বছরে আয় ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা।

নিয়ম অনুযায়ী এই ধরনের পরিবহন ঠিকাদারি কাজের জন্য লাইসেন্স নিতে হয় স্থানীয় খাদ্য বিভাগ থেকে। দুই বছর পরপর প্রকাশ্য দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কর্মদক্ষতা ও অন্যান্য শর্ত বিবেচনায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগ এবং লাইসেন্স ইস্যুর বিধান আছে। ২০১৮ সালে ইস্যু করা ৪৬৯টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত বছরের জুন মাসে। অভিযোগ আছে, নতুন কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের লাইসেন্স ইস্যুর উদ্যোগ নিচ্ছেন না খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বরং আগে নিয়োগ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স তিন মাস অন্তর সাময়িক নবায়ন দেখিয়ে খাদ্যশস্য পরিবহনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

সরেজমিন: নগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার ৩১৪ শেখ মুজিব হোল্ডিং ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, এই হোল্ডিংয়ে পুরোনো ধরনের দোতলা একটি ভবন আছে। এই ভবনে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় নেই, আছে সেলিম মোটরস, এইচএফ মোটরসসহ কয়েকটি মোটর পার্টস আর মোবাইল ফোন বিক্রির শোরুম। অথচ এই ঠিকানাতেই খাদ্যশস্য পরিবহনের মোট ৩৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ইস্যু করেছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক।

একইভাবে ওই এলাকার মধ্যেই ৩০৯ শেখ মুজিব রোড হোল্ডিংয়ে খাদ্য বিভাগ লাইসেন্স দিয়েছে ৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, ভান্ডার মার্কেট নামের নয়তলা ভবনটির কোনো তলায়ই পরিবহন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় নেই। তৃতীয় তলায় গিয়ে পাওয়া গেল চট্টগ্রাম খাদ্য পরিবহন ঠিকাদারি সমিতির কার্যালয়। এই কার্যালয়ও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে বলে জানিয়েছেন ওই ভবনের একাধিক ব্যবসায়ী।

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এই দুই হোল্ডিংয়ের ৫০ গজের মধ্যে খাদ্য বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় চলাচল ও সংরক্ষকের কার্যালয়। এই কার্যালয় থেকে বরাদ্দপত্র নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেয়।

জানতে চাইলে খাদ্য বিভাগের চট্টগ্রাম চলাচল ও সংরক্ষকের ডেপুটি নিয়ন্ত্রক সুনীল দত্ত বলেন, পরিবহন ঠিকাদারের বেশির ভাগই প্রতিনিধি দিয়ে কাজ চালান। ঠিকাদারের প্রতিনিধিরাই আমাদের সঙ্গে কাজ করেন। কাজেই লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মালিক কারা, সেটা দেখা সম্ভব হয় না।

বহু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা কীভাবে এক জায়গায় হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের পরিবহন ঠিকাদার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হাই বলেন, পরিবহন ঠিকাদারি ব্যবসা ছোট বলে অনেকের পক্ষে আলাদা কার্যালয় নেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে একসঙ্গে কয়েকজনে মিলে একটি অফিস নেন, সে ক্ষেত্রে একই হোল্ডিংয়ে একাধিক লাইসেন্স থাকা অস্বাভাবিক নয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বছরে ৪ থেকে ৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য পরিবহন করা হয় ঠিকাদারের মাধ্যমে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেঘালয়ে হানিমুনের সময় ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্বামীকে হত্যা, উত্তর প্রদেশে নববধূর আত্মসমর্পণ

ভিকারুননিসার ছাত্রী মেয়েকে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবা, ডুবে প্রাণ গেল দুজনেরই

মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমায় খুন—কীভাবে এক নববধূ হয়ে উঠলেন হত্যাকারী

কানাডার লেকে বোট উল্টে বাংলাদেশের পাইলট ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

এআই যুগে চাকরি পেতে যে দক্ষতা লাগবেই, জানালেন মাইক্রোসফটের সিইও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত