Ajker Patrika

জ্বালানি তেলের সঙ্গে ভাড়া না বাড়ানোয় চট্টগ্রামে বাস চলাচল বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২২, ২০: ৫৮
জ্বালানি তেলের সঙ্গে ভাড়া না বাড়ানোয় চট্টগ্রামে বাস চলাচল বন্ধ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে আজ শনিবার সকাল ৮টায় বহদ্দারহাটের বাসা থেকে বের হন ইউসুফ আলী। সড়কে এসে দেখেন কোনো গণপরিবহনই চলছে না। পরে অনেক চেষ্টার পর একটি রিকশা জোগাড় করেন তিনি। কিন্তু ৫০ টাকা ভাড়ার জায়গায় তাঁকে গুনতে হয় ৭০ টাকা। 

ইউসুফ আলী বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেও গণপরিবহন কম না থাকায় অনেককে হেঁটে যেতে হয়েছে অফিস, স্কুল–কলেজে। কাউকে পৌঁছাতে হয়েছে বাস-টেম্পোতে বাদুড়ঝোলা হয়ে। চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে সড়কে এমন ভোগান্তির খণ্ড খণ্ড চিত্র দেখা গেছে দিনভর। 

সরেজমিনে দেখা যায়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর রাতেই বাস মালিকদের একটি সংগঠন ভাড়া না বাড়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধের ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার সকাল থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে কিছু গণপরিবহন সড়কে বের হলেও সেসব গাড়ি পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে। 

পর্যাপ্ত পরিবহন চলাচল না করায় জনগণকে ভোগান্তি পড়তে হয়।মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ডাকেই চালকেরা গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এই সমিতির অধীনে নগরীতে ৬০০ টির মতো বাস-মিনিবাস ও হিউম্যান হলার চলাচল করে। সব মিলিয়ে নগরীতে ৭ টির মত মালিক সংগঠন আছে। এসব সংগঠনের অধীনে প্রায় ৩৫০০ গণপরিবহন চলাচল করে। 

চট্টগ্রাম মহানগর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মধ্যরাতে হঠাৎ তেলের দাম বাড়াবে, কিন্তু বাস ভাড়া বাড়াবে না, তা কীভাবে সম্ভব।’ 

তবে দুপুরে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে আমরা চট্টগ্রামের সকল বাস চালকদের অনুরোধ করেছি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে।’ তবে এই সিদ্ধান্তের পরও অন্যান্য দিনের তুলনায় সড়কে গাড়ি চলাচল কম ছিল। 

পথে পথে বাধা: 
শুক্রবার রাতে গাড়ি চলাচল বন্ধের ঘোষণার পরও বেশ কিছু গাড়ি সকালে সড়কে নেমেছিল। কিন্তু সেই গাড়িগুলোর চালকেরাই অন্য পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়েন। 

শনিবার সকাল থেকে নগরীর জিইসি, ইপিজেড, টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, এ কে খান মোড়সহ বিভিন্ন মোড়ে শ্রমিকেরা অবস্থান নেন। কোনো গাড়ি গেলেই তাঁরা বাঁধা দিতে থাকেন। সকাল ১০টার দিকে এ কে খান মোড়ে শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমে লাঠিসোঁটা নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। একইভাবে শ্রমিকদের বাধার মুখে ইপিজেড এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পর্যাপ্ত পরিবহন চলাচল না করায় জনগণের ভোগান্তি ও বিভিন্নখানে পরিবহনকে বাধার মুখে পড়তে হয়।সকাল পৌনে আটটায় আগ্রাবাদের বাদামতল মোড়ে শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) কয়েকটি ডাবল ডেকার বাস। বাসগুলো শিক্ষার্থীদের নিয়ে নগরী থেকে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় অবস্থিত ওই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাচ্ছিল। সকাল ১০টা পর্যন্ত বাসগুলোকে সড়কের মাঝখানে আটকিয়ে রেখে দুই পাশের যানচলাচল বন্ধ রাখেন শ্রমিকেরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

ভোগান্তি: 
সড়কে পরিবহন কিছু পরিবহন চলাচল করলেও বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়া হচ্ছে, এমন খবরে সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা আরও কমে যায়। এ কারণে অফিস ও কলকারখানাগামী মানুষকে চরম বিপাকে পড়তে হয়েছেন। কিছু কিছু সিএনজিচালিত গণপরিবহন চললেও ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গুনতে হয়েছে। একইভাবে বেশি ভাড়া দাবি করেছেন রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশার চালকেরাও। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে শ্রমিকদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয় বিভিন্ন স্থানে। অনেক জায়গায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিকের দাবিতে যাত্রীরা আন্দোলনও করেন। 

শনিবার সকাল ৮টায় বহদ্দারহাট মোড়ে দেখা যায় গাড়ির অপেক্ষায় কয়েকশ মানুষ। কোনো টেম্পো আসতেই দৌড়ে সবাই সেটি ধরতে যান। একই দৃশ্য দেখা গেছে আগ্রাবাদ, একে খানসহ নগরীর প্রায় সব মোড়েই। 

লালখানবাজার মোড়ে রিকশাচালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা করতে দেখা যায় মোহাম্মদ নাসিম নামের এক তরুণকে। কাছে গিয়ে কারণ জানতে চাইলে নাসিম বলেন, ‘সড়কে কোনো গণপরিবহন নেই। বাধ্য হয়ে তাই রিকশায় লালখানবাজার থেকে মুরাদপুর যেতে চাইছিলাম। কিন্তু ভাড়া বলছে ১২০ টাকা। অথচ এই পথের নিয়মিত ভাড়া ৬০–৭০ টাকা। কোন দেশে বাস করি। কোথাও যেন কোনো নিয়ম নেই।’

 ইপিজেডের একটি কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মুজিবুল করিম ভোগান্তির কথা বলতে গিয়ে যেন আঁতকে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘বাধার কারণে বহদ্দারহাটের বাসা ইপিজেডের অফিসে যেতে পাঁচবার গাড়ি বদলাতে হয়েছে। রিকশা, টেম্পো, বাস–সবগুলোতেই চড়া হয়ে গেছে। এতটা ভোগান্তিতে কখনো পড়তে হয়নি।’ 

ফিলিং স্টেশন কোথাও বন্ধ, কোথাও খোলা: 
গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পরই চট্টগ্রামে অনেক ফিলিং স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। যেগুলো খোলা ছিল সেগুলোতে ভিড় জমান অনেকেই। গতকাল সকালেও অনেক ফিলিং স্টেশন বন্ধ দেখা গেছে। সকাল সাড়ে নয়টায় পাঁচলাইশ এলাকায় অবস্থিত হাজি এমডি ইউনুস অ্যান্ড কোম্পানি–এ গিয়ে দেখা যায় সেটি বন্ধ। একইভাবে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি ফিলিং স্টেশন বন্ধ দেখা গেছে। তবে দিনভর গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় যেগুলো খোলা ছিল সেগুলোতেও তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি। কোথাও চাহিদামতো জ্বালানি চেয়ে পাননি–এমন অভিযোগও পাওয়া যায়নি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত