Ajker Patrika

বিসিসি-টিসিবি ঠেলাঠেলি ভুগছে অসহায় মানুষ

  • ফ্যামিলি কার্ড বাতিল হওয়ায় নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
  • ফ্যামিলি কার্ড বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাড়ে ৫৮ হাজার মানুষ।
খান রফিক, বরিশাল 
টিসিবির স্মার্ট কার্ড নিতে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ভিড় সুবিধাভোগীদের। সম্প্রতি বরিশাল নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: আজকের পত্রিকা
টিসিবির স্মার্ট কার্ড নিতে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ভিড় সুবিধাভোগীদের। সম্প্রতি বরিশাল নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাফেজা বেগমের নামে বরাদ্দ দেওয়া ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ড বাতিল হয়ে গেছে। এখন আর তেল, চিনি পাবেন কি না, সেই চিন্তায় দিশেহারা তিনি। আসন্ন রোজায় কীভাবে চলবে সংসার—এটাই এখন হাফেজার বড় চিন্তা। হাফেজার মতো বরিশাল নগরের প্রায় সাড়ে ৫৮ হাজার দরিদ্র মানুষের ফ্যামিলি কার্ড বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।

কিন্তু কার্ড বাতিলের দায় নিতে চাইছে না টিসিবি কিংবা বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। টিসিবি দাবি করেছে, সিটি করপোরেশন ভুল তথ্য দেওয়ায় ৯০ হাজার কার্ডের মধ্যে সাড়ে ৫৮ হাজার বাতিল হয়েছে। অপরদিকে বিসিসি বলেছে, কার্ড বাতিল করেছে টিসিবি।

এদিকে ফ্যামিলি কার্ড বাতিল হওয়ায় নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অস্থায়ী কাউন্সিলর কার্যালয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকেরা। নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৭৫০ জন টিসিবি কার্ডের আওতায়। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে অর্ধেকের বেশি। আবার যাঁদের নাম তালিকায় আছে তাঁদের স্মার্ট কার্ড নিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী স্মার্ট কার্ডপ্রাপ্তদের মোবাইল ফোনে কল করে এনে কার্ড দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানছেন না এখানকার সচিব সেন্টু। সব গ্রাহককে একত্র করে গভীর রাত পর্যন্ত কার্ড বিতরণ করছেন তিনি। ফরেস্টার বাড়ি পুল এলাকার কাউন্সিলর কার্যালয়টি মূলত একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকান। গত রোববার সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা দুই নারীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, সচিবকে খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। অপর একজন বলেন, তাঁর নাগরিক সনদ দরকার, কিন্তু সচিবের সঙ্গে কথা বলার সুযোগই পাচ্ছেন না।

নগরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিরাজ হোসাইন বলেন, ‘আমাকে ফোন দিয়ে ওয়ার্ড সচিব অনেকটা থ্রেট (হুমকি) দিয়েছেন। বলেছেন, কার্ড বাতিল করে দেবেন। পরে কাউন্সিলর কার্যালয়ে গিয়ে এর কারণ জানতে চেয়েছি।’ নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের আনিছুর রহমান জানান, তিনি একটি কার্ড পেয়েছিলেন, কিন্তু তা-ও বাতিল করা হয়েছে।

জানতে চাইলে টিসিবির বরিশালের সহকারী পরিচালক শতদল মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেন বরিশাল নগরীতে প্রায় সাড়ে ৫৮ হাজার কার্ড বাতিল হলো, তা সিটি করপোরেশন জানে। আমরা তথ্য দিইনি। জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন তথ্য দিয়েছে।’ শতদল মণ্ডল আরও বলেন, ‘বাতিল তো টিসিবিই করেছে। তবে কেন বাতিল হলো, তথ্যে কী ত্রুটি ছিল, তা দেখবে সিটি করপোরেশন। তথ্যে যদি ভুল থাকে তাহলে টিসিবির কী করার আছে।’

তবে যাঁদের কার্ড বাতিল হয়েছে, তাঁরা নতুন করে তথ্য সাবমিট করলে যে শূন্য স্থান আছে, সেখানে নতুন করে উপকারভোগী নেওয়া হবে বলে জানান টিসিবি কর্মকর্তা শতদল।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বরিশালের সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ দত্ত আজকের পত্রিকাকে বলেন, টিসিবির কার্ড বাতিল করায় বাজারের ওপর চাপ পড়বে। কেননা তেল, চিনি, ডাল—এই পণ্যগুলো মানুষ পেত। এতে বাজারদরে ভারসাম্য সৃষ্টি হতো। সেই জায়গায় এখন ঘাটতি সৃষ্টি হবে। আসন্ন রোজায় এর প্রভাব পড়তে পারে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী বলেন, নগরীতে ৯০ হাজার কার্ডের মধ্যে এ পর্যন্ত তাঁরা স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড হাতে পেয়েছেন ৩১ হাজার ৪৭৩টি। বাতিল হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫৮ হাজার। রেজাউল বারীর দাবি, কার্ড বাতিলের বিষয়ে করপোরেশনের কোনো দায় নেই। এটা টিসিবির বিষয়। তবে পরবর্তী সময়ে যখন নতুন করে উপকারভোগীদের জন্য কার্ড প্রদান করা হবে, তখন বাতিল হওয়ারা আবেদন করতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত