Ajker Patrika

ইলিশ আহরণের নিষেধাজ্ঞা কাটছে রাতে, উপকূলে ব্যাপক প্রস্তুতি

প্রতিনিধি, বরিশাল
ইলিশ আহরণের নিষেধাজ্ঞা কাটছে রাতে, উপকূলে ব্যাপক প্রস্তুতি

সরকারঘোষিত ৬৫ দিনের (গত ২০ মে থেকে) সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শুক্রবার (২৩ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টায়। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নদী-সাগরে নির্বিঘ্নে ইলিশ আহরণের সুযোগ পাবেন জেলেরা। সে হিসাবে এ আড়াই মাস হচ্ছে ইলিশের ভরপুর মৌসুম। সীমিত সময়ের এ সুযোগটুকু কাজে লাগাতে উপকূলের জেলে ও মৎস্য মোকামগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

জেলেদের তথ্যমতে, নদ-নদী পানিতে কানায় পরিপূর্ণ এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলে জালে ইলিশ বেশি ধরা পড়ে। ইলিশ আহরণে প্রাকৃতিক এ নিয়মটি এখন মৎস্য বিশেষজ্ঞরাও সায় দিয়েছেন। এমনই এক উপযোগী পরিবেশে ইলিশ ধরা শুরু হলো। তবে উপকূলের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার আরও এক সপ্তাহ আগে বিপুলসংখ্যক জেলে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে অনৈতিক চুক্তির বিনিময়ে ইলিশ নিধনে সাগরে চলে গেছেন।

এ প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, গভীর সমুদ্রে সব ধরনের মাছ আহরণে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা গত ২০ মে শুরু হয়েছিল, শুক্রবার মধ্যরাতে তা শেষ হলো। পরবর্তী নিষেধজ্ঞা দেওয়া হবে-ইলিশের প্রজনন মৌসুম আশ্বিন মাসের পূর্ণিমার আগে ও পরে মোট এক মাস। এর মাঝে আর কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় জেলেরা বাধাহীনভাবে আড়াই মাস ইলিশ ধরতে পারবেন। এ সময়টুকু ইলিশের সবচেয়ে ভরপুর মৌসুম বলে মন্তব্য করেন মো. আনিছুর রহমান। এসব নিষেধাজ্ঞার সুফল এরই মধ্যে পাওয়া গেছে। ইলিশের উৎপাদন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলে জানান তিনি।

মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, বর্ষা মৌসুমে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে পেটে ডিম থাকা ইলিশ ঝাঁকে ঝাঁকে সাগর ছেড়ে নদীর দিকে ছুটে। তখনই জেলেদের জালে ধরা পড়ে। বিগত বছরের চেয়ে এবছর বৃষ্টি কিছুটা বেশি হয়েছে, তবে সাগর ছেড়ে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর দিকে ইলিশের ঝাঁক আসার মতো পর্যাপ্ত বৃষ্টি এখনো হয়নি। যে কারণে নদ-নদীতে এখনো কম পরিমাণ ইলিশ পাচ্ছেন জেলেরা।

তিনি বলেন, শুক্রবার পূর্ণিমা হওয়ায় নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাবে। সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিও হচ্ছে। এ কারণে কয়েক দিন পরে বেশি সংখ্যক ইলিশ ধরার পড়ার সম্ভাবনা আছে।

এদিকে এবারও অভিযোগ উঠেছে, উপকূলীয় প্রভাবশালী মৎস্য আড়তদাররা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই গভীর সাগরে ট্রলার পাঠিয়েছে ইলিশ নিধন করতে।

সাগর মোহনা সংলগ্ন জনপদ পটুয়াখালী কলাপাড়া উপজেলা ফিশিং ট্রলার মাঝি সমিতির সহ সভাপতি নুরু মাঝি এ প্রসঙ্গে বলেন, আলীপুর-মহিপুর বন্দর থেকে কিছু ট্রলার রওনা হলেও বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল হওয়ায় গভীর সাগরে তাঁরা পৌঁছাতে পারেননি। তবে কাছাকাছি অবস্থানে থেকে তাঁরা কয়েক দিন যাবৎ ইলিশ নিধন করছেন। আবহাওয়ার উন্নতি হলে গভীর সাগরে যাওয়ার জন্য কয়েকশত ট্রলার প্রস্তুত রয়েছে আলীপুর-মহিপুর বন্দরে।

জানা গেছে, পাথরঘাটায় এখন একটি ট্রলারও নেই। ১৫ জুলাই এর পর সব ট্রলার গভীর সাগরে চলে গেছে ইলিশ নিধনে। কোস্টগার্ড ১৮ জুলাই সাগরমুখী ৪টি ট্রলার আটক করে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মাঝি বলেন, পাথরঘাটা মোকামের ২৫ ভাগ ট্রলার চুরি করে সাগরে চলে গেছে।

প্রসঙ্গত, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আগে গত ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা নিধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। একই সময়ের মধ্যে ইলিশের ৬টি অভয়াশ্রমে পর্যায়ক্রমে ২ মাস করে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ নিধন নিষিদ্ধ ছিল। এ ছাড়া মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে প্রতিবছর আশ্বিনের পূর্ণিমার আগে ও পরে মোট এক মাস ইলিশ নিধন পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত