Ajker Patrika

নিহত সোহাগের পরিবারে মাতম

বরগুনা প্রতিনিধি
সোহাগের কবরের পাশে বিলাপ করছেন তাঁর স্ত্রী। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর দুই শিশুসন্তান। ছবি: আজকের পত্রিকা
সোহাগের কবরের পাশে বিলাপ করছেন তাঁর স্ত্রী। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর দুই শিশুসন্তান। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘আমাদের এতিম বানাইয়া ফালাইছে। আমরা কোথায় থাকব? আমার বাবাকে কী নিষ্ঠুরভাবে পাথর দিয়া মারছে। এই হত্যার বিচার চাই আমরা।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে ঢাকার মিটফোর্ড নৃশংসভাবে হত্যার শিকার বরগুনার সোহাগের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে সোহান (১১)।

এ সময় তার বড় বোন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া সোহানা (১৪) পিতৃশোক ধরে রাখতে না পেরে বলে, ‘আমাদের এতিম বানিয়ে দিয়েছে। আমরা কোথায় থাকব? আমার বাবাকে পাথর দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে মেরেছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।’

এদিকে স্বামীর কবরের পাশে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী লাকী আক্তার। কবরের মাটি ছুঁয়ে বারবার বলছেন, আমার স্বামীকে কেন এমন নির্মমতার শিকার হতে হলো। আমার ছেলে-মেয়েদের এভাবে এতিম হতে হলো। আমি কীভাবে ওদের মানুষ করব? এই নির্মমতার কি কোনো বিচার করবে এই দেশের মানুষ?

এই নির্মমতার কি কোনো বিচার হবে না?’

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বামীর দোকান থেকে মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা চাইত হত্যাকারীরা। আমার স্বামীর ব্যবসা তারা সহ্য করতে পারছিল না। চাঁদা না দেওয়াতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের কাছে গত বুধবার বিকেলে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর শুক্রবার সকালে তাঁর মরদেহ বরগুনায় নিয়ে আসেন স্বজনেরা। পরে সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকায় মায়ের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।

নিহত সোহাগ তাঁর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকার জিঞ্জিরার কদমতলীতে কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন নামক এলাকায় বসবাস করতেন।

নিহতের স্বজনেরা জানান, সোহাগের বয়স যখন মাত্র সাত মাস, তখন বজ্রপাতে সোহাগের বাবা আইউব আলীর মৃত্যু হয়। এরপর মা আলেয়া বেগম জীবিকার সন্ধানে সোহাগ ও তাঁর দুই মেয়েসন্তান নিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানেই বড় হন সোহাগ। তিনি ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ‘মেসার্স সোহানা মেটাল’ নামে একটি দোকান চালিয়ে আসছিলেন।

স্বজনদের দাবি, ওই দোকান থেকেই মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল কিছু দুর্বৃত্ত। একপর্যায়ে দোকানও তালাবদ্ধ করে দেয় তারা। বুধবার বিকেলে সোহাগকে বাসা থেকে ডেকে নেয় তারা। এরপর আটকে রেখে চাপ প্রয়োগ করা হয় চাঁদা দেওয়ার জন্য। রাজি না হওয়ায় পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তাঁকে।

সোহাগের ভাগনি বীথি আক্তার বলেন, ‘আমার মামা প্রায় ১০-১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছিলেন। প্রতি মাসে তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এ ছাড়া তার ব্যবসাটাও নিয়ে নিতে চেয়েছে অভিযুক্তরা। তবে মামা তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তারা আমার মামাকে ডেকে নিয়ে মারধর করে এবং নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করে।’’

এই হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। সোহাগের নিজ জেলা বরগুনায় চলছে প্রতিবাদ ও শোক।

শুক্রবার বেলা ১১টায় বরগুনা প্রেসক্লাবের আয়োজনে মানববন্ধন করে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান স্থানীয়রা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিদেশ ভ্রমণে ভিসা পাওয়া কঠিন হচ্ছে

সিরিয়াস ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিএনপির ওপর দায় চাপানো অপরাজনীতি: সালাহউদ্দিন

বিমানের কাঠমান্ডু ফ্লাইটে বোমাতঙ্ক: ছেলের পরকীয়া ঠেকাতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন মা, জানাল র‍্যাব

পাইলট ইচ্ছে করে বিধ্বস্ত করান এয়ার ইন্ডিয়ার সেই ড্রিমলাইনার: বিশেষজ্ঞ

দিনাজপুর-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে সংঘর্ষ, আহত অন্তত ২৫

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত