Ajker Patrika

বিষমুক্ত বেগুন চাষে মুরাদের বাজিমাত

ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি 
বেগুন চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন কৃষক মুরাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বেগুন চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন কৃষক মুরাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কৃষক মুরাদ হালদার। এই বছর অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে অরগানিক বেগুন চাষ করেছেন তিনি। আর প্রথমবার বেগুন চাষ করেই সাফল্যের মুখ দেখেছেন তিনি।

মুরাদ উপজেলার নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নের মৌভোগ গ্রামের একজন যুবক। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনটি প্লটের ৫৫ কাঠা জমিতে চার জাতের বেগুন চাষ করেছেন তিনি। এতে মোট উৎপাদন খরচ পড়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে ১৮ কাঠার খেত থেকে তিনি ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে গেলে তিনটি প্লট থেকে সাত-আট লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

মুরাদ হালদার বলেন, ‘বেগুন চাষ করে এত লাভ হবে, কখনো ভাবিনি। আগামীতে দুই বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করব। সবচেয়ে বড় কথা, এই বেগুন অরগানিক ও বিষমুক্ত। কারণ, বেগুনের জমিতে কোনো কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়নি।’

গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার মৌভোগ গ্রামে মুরাদের একটি ১৮ কাঠার বেগুন খেতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মণ বেগুন খেত থেকে তোলা হয়েছে। ৯ জন শ্রমিক বেগুনগুলো আকার অনুযায়ী গ্রেডিং করে বস্তায় ভরছেন। ঢাকা ও মাদারীপুর থেকে ট্রাকে পাইকারেরা এসেছেন বেগুন কিনতে। আশপাশের খেতে প্রতি কেজি বেগুনের পাইকারি দাম ৫০ টাকা হলেও মুরাদের খেতের বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। বিষমুক্ত অর্গানিক ফসল হওয়ায় এই বেগুন সুস্বাদু এবং এর চাহিদা ও দাম বেশি বলে জানান পাইকার ইব্রাহীম শেখ। প্রতি পাঁচ থেকে সাত দিন পর এই খেত থেকে ২৫ থেকে ৩০ মণ বেগুন তোলেন মুরাদ। বাকি দুটি খেতের উৎপাদন শুরু হলে সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ মণ বেগুণ পাবেন বলে জানান তিনি।

মুরাদের চাষকৃত বেগুন খেতগুলো পাশে ও ওপর থেকে জাল দিয়ে ঘেরা রয়েছে, যাতে সহজে পোকামাকড় ঢুকতে না পারে। তা ছাড়া পোকামাকড়ের প্রাকৃতিক বালাইনাশক হিসেবে কিউট্রাক ফাঁদ, ট্রাইকোডার্মা, স্টিকি ইয়োলো কার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করেছেন। রাসায়নিক সারের বদলে জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করেছেন। মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে ও আগাছার প্রকোপ কমাতে মাটিতে মালচিং পেপার ব্যবহার করেছেন। ফলে সেচ খরচ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানান মুরাদ।

মুরাদ তার তিনটি খেতে ভারতের উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ‘চক্র বিএন ৪২২’ জাত, হায়দরাবাদের ‘নবকিরণ’ জাত, উচ্চ মূল্যের ‘ভিএনআর ২১২’ জাত এবং গ্রিনবল জাতের বেগুন চাষ করেছেন। অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে এই জাতের বেগুন চারা রোপণ করেছিলেন। এসব জাতের বেগুন আগাম ফসল ফলে এবং প্রতিটি গাছে দীর্ঘদিন বেগুন হয়। তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এসব জাত নির্বাচন করেছেন।

মুরাদের সাফল্য দেখে আশপাশের অনেক কৃষক তাঁর বেগুনখেত দেখতে আসছেন এবং তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। আগামী মৌসুমে একই পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করবেন বলে জানান স্থানীয় চাষি রবিন হালদার, শাহজাহান শেখসহ অনেকে।

উপজেলার নলধা-মৌভোগ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দাস বলেন, ‘প্রথমবার মুরাদ হালদার বেগুন চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন। তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শে সনাতন পদ্ধতির বদলে আধুনিক ও আর্গানিক চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করায় এ সাফল্য পেয়েছেন। কৃষি অফিস থেকে কারিগরি সহযোগিতা ও নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকর ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ ঠেকাতে চাষিরা সবচেয়ে বেশি বিষ প্রয়োগ করে, যা স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু মুরাদ রাসায়নিক বিষ ছাড়া বেগুন উৎপাদন করেছেন। চাষি মুরাদ হালদারের সাফল্য দেখে অনেকেই বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদিত বেগুন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

পূর্বাঞ্চলে ট্রেনের ভাড়া বাড়ল সর্বোচ্চ ২১৪ টাকা

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন এনায়েত হোসেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ