Ajker Patrika

লোপা মমতাজের দীর্ঘ কবিতা ‘অন্তরালাপ’

লোপা মমতাজ
Thumbnail image

নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মরার চেয়ে আত্মহত্যার আরও কোনো সহজতর উপায় আছে কি না, 
তা জানতে গুগল করেছিল মেয়েটি।
গত রাতে এই রকমের একটা হেডলাইন পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছি ।
ঘুমের ঘোরে যেন জীবনানন্দকে দেখলাম!
শুধু কাঁধটা দেখা যাচ্ছে আর মুখটা আবছা আলোয়।  
ভাঙা ঊরু আর পাঁজরের ব্যথা নিয়ে 
ট্রামের ক্যাচার থেকে শরীরটা টেনে বার করছেন নিজেই।
কি আশ্চর্য, ট্রামটা আবার চলতে শুরু করেছে!
উনিও ভাঙা শরীর নিয়ে
ট্রামের লাইন ধরেই হেঁটে চলেছেন...


যারা
বেঁচে থাকার খড়কুটোও হারিয়ে ফেলেছে 
ভেবে, 
পৃথিবীর 
গভীরতম 
বেদনা বুকে নিয়ে 
মৃত্যুর ঠোঁটে ঠোঁট রাখে,
তাদের সেই ঘোর লাগা বেদনা কি চোখে দেখা যায়! 
বেদনার ভার কত ভারী হলে কেউ নিজেকেই শেষ করে দিতে চায়?


ভেবে দেখেছি
আত্মমগ্ন হয়ে, ট্রাম বা ট্রেনের লাইন ধরে 
কখনোই হাঁটা ঠিক নয়।  
ট্রেনের লাইন বড়ই প্রপঞ্চময়! 
আপনি হয়তো কিছু একটা ভাবছেন, 
এই যে ভেবে ভেবে হাঁটছেন আর ভাবছেন, 
এই ভাবনা আপনাকে নিমগ্নতার আরও গভীরে নিয়ে ফেলবে,
ফলে, আপনি, ট্রামের অবিরাম ঘণ্টা বাজানো  
বা চুনিলালের  বারংবার সতর্ক উচ্চারণের 
কিছুই শুনতে পাবেন না… মাঝেমধ্যে আমিও পাই না…


কী অদ্ভুত এ জীবন!
কী দুঃখময় এ জীবন!


কবি সিলভিয়া প্লাথ
মৃত্যুর আগমুহূর্তে 
বাচ্চাদের খাওয়ার জন্য রুটি, মাখন 
আর দুই মগ দুধ রেখে গিয়েছিল টেবিলে, 
যেন প্রিয় শিশুরা ঘুম থেকে উঠে
কিছু খেতে পারে। 
তারপর রান্নাঘরে ফিরে  
তোয়ালে দিয়ে দরজা আর জানলার ফাঁকগুলো  
বন্ধ করে, চুলার গ্যাসটি চালু করে দিলে
তারপর… তারপর… তারপর আর ভাবতে পারছি না...


প্রিয় শিল্পী
ভিনসেন্ট ভ্যান গগ 
রিভলবারের গুলি চালিয়ে দিয়েছিল নিজের দিকে। 
মৃত্যুর সময় কেবল একটি কথাই লিখেছিলে—‘দুঃখ সব সময়ই টিকে থাকবে!’
ভ্যান গগ! 
আহা প্রিয়, তুমি তবে বুঝেছিলে কি, 
বেঁচে থাকার চেয়ে নির্মম ব্যথা বুঝি পৃথিবীতে নেই!


কথাসাহিত্যিক
অ্যাডেলাইন ভার্জিনিয়া উলফ, 
নিজের ওভারকোটটির পকেটে নুড়িপাথর ভরে 
বাড়ির পাশে ওউজ নদীতে ডুব দিলে, 
আর ফিরে এলে না।
তোমার  নুড়িপকেটে একটা ছোট্ট চিঠি- 
‘প্রিয়তম, আমি বুঝতে পারছি, আমি আবারও পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি এবার হয়তো আমাদের এই কঠিন সময় অতিক্রান্ত হবে না। আমি নানা রকম স্বর শুনতে পাচ্ছি, কিছুতেই মনঃসংযোগ করতে পারছি না। তাই যা সবচেয়ে ভালো মনে হচ্ছে তা-ই করতে যাচ্ছি আমি…’
মাঝে মাঝে আমিও কি শুনতে পাই নানা রকম স্বর! 
ওউজ নদী কি আমাকেও ডাকে!


মিষ্টি মেয়ে 
এভিলিন ম্যাকহেল
বিখ্যাত কোনো ব্যক্তি ছিলে না তুমি।
 ১৯৪৭ সালের পহেলা মে, এভিলিন নিউইয়র্ক শহরের 
এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের 
৮৬তম ফ্লোরে পৌঁছে, ঝাঁপিয়ে পড়লে মাটিতে!
অথচ কী আশ্চর্য! 
মনে হচ্ছে তুমি মৃত নও, মাত্রই ঘুমিয়েছ...


ঔপন্যাসিক
আর্নেস্ট হেমিংওয়ে,
সেদিন ভোরের পৃথিবী দেখে 
তুমি কী ভাবছিলে তা কে জানে! 
নিজের প্রিয় শটগানে
নিজের খুলি উড়িয়ে দিলে...
কোথাও কোনো নোট রেখে যাওনি! 
এখন হরহামেশাই তুমি মগজে ঢুকে
নানা রকমের নোট লিখছ …  
আমি যেন বা তোমার লেখার টেবিলে ফেলে রাখা সাদা খাতা...

১০
মেহেকানন্দার কবি
মুনিরা চৌধুরী।
এই পৃথিবীর মায়া থেকে মুখ ফেরালে! 
সত্য কি?
মায়া কি ছিল না কোথাও! 
‘ক্রমে পালক ঝরছে, পাতা ঝরছে, শিশির ঝরছে…’
‘কতিপয় মানুষ পাখিদের শরীরে প্লাস্টিকের পালক লাগিয়ে দিয়ে যায়’ 
আহ্‌ মুনিরা! তুমি সমুদ্রের ফেনায় ডুবে ডুবে খোঁজো কার মুখ? 
জানি থাকে, ভালোবাসলে থাকে, হারাবার কতশত ভয়!

১১
কেবল ইশ্বরই জানেন,
ভালোবাসা আর ভয় ভুলে
লাশকাটা ঘরে শুয়ে আছে যিনি 
তার চোখে চোখ রেখে 
কেউ কি তাকে বলেছে
এই পৃথিবীতে তুমি ভীষণরকম জরুরি!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত