নজরুলজয়ন্তী
আহমেদ ইবনে আরিফ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আমরা যেভাবে কবি হিসেবে মূল্যায়ন করেছি, তা নিঃসন্দেহে যথার্থ ও গভীর। তাঁর বিদ্রোহী কণ্ঠ, মানবিক বোধ এবং সাম্যবাদী অবস্থান তাঁকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কণ্ঠ করে তুলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই একই নজরুল, যিনি সংগীতে এক বিপ্লব এনেছিলেন, তাঁকে কি সংগীতচর্চার প্রেক্ষাপটে আমরা সমান গুরুত্বে দেখেছি?
উত্তরটা হলো, খুব একটা নয়।
নজরুল বাংলা গানকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে পৌঁছানো তখনকার বাংলা সংগীতের জন্য অভাবনীয়। তিনি শুধু বাংলা গানে ইসলামি গজল বা দেশাত্মবোধক চেতনা আনেননি। বরং রাগাশ্রয়ী সংগীতকে বাংলা ভাষায় জনমানুষের বোধে প্রবেশ করিয়ে দেন। নজরুল প্রায় ১ হাজার ৬০০ গানে সুর দিয়েছেন এবং তাঁর সুরে প্রায় ৩৫টির মতো রাগের ব্যবহার দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,
⦁ রাগ বাগেশ্রীতে বাঁধা ‘মোর প্রাণ ভরি’য়ে বাজে মধুর কেমন সুর’, একটি প্রেম ও বিভোরতার কণ্ঠস্বর।
⦁ দেশ রাগের প্রয়োগ দেখা যায় ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায়’ গানে। এটি দেশভক্তি ও মাতৃমূর্তিকে উদ্যাপন করে এক উজ্জ্বল আবেগে।
⦁ রাগ কাফি ও পিলুতে গাঁথা তাঁর বহু গজল ও প্রেমের গান, যেমন ‘না মানি আর বেদ-পুরান’, সাম্যের বার্তা দেয়।
নজরুল সম্ভবত আধুনিক বাংলা গানের সেই পথিকৃৎ যিনি গানের অনুভবকে সম-অনুভূতি প্রকাশের রাগগুলোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিলেন। নিজের গানে শুধু রাগের প্রয়োগ নয়, নজরুলের ছন্দচর্চাও ছিল বিস্ময়কর। দাদরা, কাহারবা, ঝুমরা, ত্রিতাল, ধামার ইত্যাদি ছন্দে তাঁর গানগুলো বাঁধা, যা তাঁর সংগীত শিক্ষার গভীরতা এবং একাধিক ধারায় পারদর্শিতার প্রমাণ।
নজরুলের গানকে শুধু দেশাত্মবোধক কিংবা ইসলামিক ভাবনার মোড়কে দেখলে এই রাগাশ্রয়ী, ছন্দনির্ভর সাংগীতিক উৎকর্ষের দিকটি আমরা অবহেলা করব।
গানের ধর্ম নয়, মানুষের ভাষা
নজরুলের সংগীতচর্চার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তাঁর ধারামুক্ত, সমন্বয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি গজল রচনা করেছেন, লিখেছেন কীর্তন ও শ্যামাসংগীত। একাধারে তিনি যেমন ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে’ রচনা করেছেন। তেমনি লিখেছেন ‘আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশী শ্যামা কালি’, ‘আমার হাতে কালি মুখে কালি’ কিংবা ‘কালি কালি মন্ত্র জপি ব’সে লোকের শ্মশানে’ ইত্যাদির মতো প্রচুর জনপ্রিয় শ্যামা সংগীত। তাঁর গানে ইসলামি ভাবধারা যেমন আছে, তেমনি হিন্দু ধর্মের দেবদেবী সম্পর্কিত গানের সংখ্যাও শতাধিক।
এই বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি নজরুলকে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় ছাঁচে ফেলাকে অসম্ভব করে তোলে। কিন্তু তবুও আমরা দেখতে পাই, নজরুলকে অনেক সময় শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা হয়েছে, যা একদিকে যেমন সাংস্কৃতিক সংকীর্ণতা তৈরি করে, অন্যদিকে নজরুলের মৌলিক স্বরকেও বিকৃত করে।
তাঁর গানের ভাষা ছিল মানুষের ভাষা। ধর্ম, জাতি বা শ্রেণির ভাষা নয়। তাঁর সংগীতে আমরা পাই কৃষকের কণ্ঠ, দরিদ্র মজুরের কান্না, বিপ্লবীর উল্লাস এবং প্রেমিকের আকুতি। তিনি গানের মাধ্যমে একটি পরিপূর্ণ মানবিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন, যা বাংলা গানের ইতিহাসে অতুলনীয়।
নজরুল বনাম রবীন্দ্রনাথ, একটি ভুল ফ্রেমিংয়ের চর্চা
নজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক পরিচয়ের রাজনীতিতে তাঁকে একটি ‘ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি’র খোলসে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। যেখানে রবীন্দ্রনাথ ‘সেক্যুলার বাঙালি জাতিসত্তা’র মুখপাত্র, সেখানে নজরুল হয়ে ওঠেন মুসলিম বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার দূত।
এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে। নজরুল নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি হিন্দু-মুসলমানের মিলনের কবি। আমি বৈরিতার নয়, মিলনের কথা বলি।’ তাঁর ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান।…’ এর মতো লাইন কি তার প্রমাণ বহন করে না?
সাংস্কৃতিক ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের অবস্থান একে অপরের বিপরীত নয়, বরং পরিপূরক। একজন বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের ভুবনে তুলে ধরেছেন, অন্যজন বাংলা ভাষার সাংস্কৃতিক পরিচয়ে গণমানুষের কণ্ঠস্বর যুক্ত করেছেন। একজনের সৃষ্টিতে আত্মজিজ্ঞাসা, অন্যজনের সৃষ্টিতে সামাজিক বিস্ফোরণ।
নজরুল কখনোই রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে দাঁড়াননি। বরং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন একাধিকবার। আবার রবীন্দ্রনাথও নজরুলের প্রতিভা ও অবস্থানকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ফলে তাঁদের মধ্যে বিভেদ নয়, ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা।
এই দুই কবিকে সাংস্কৃতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফ্রেমে ফেলাটা শুধু ইতিহাসের বিকৃতি নয়, আমাদের সাহিত্য-সংগীতচর্চারও সংকোচন।
নজরুল—সাম্য, সংগীত ও সংহতির কবি
নজরুল ইসলামকে আমরা যদি শুধুই কবি হিসেবে দেখি কিংবা শুধুই মুসলিম বাঙালির প্রতিনিধি হিসেবে দেখি, তাহলে আমরা তাঁকে পুরোপুরি পড়তে পারি না। নজরুল ছিলেন একাধারে সুরকার, গীতিকার, কণ্ঠশিল্পী, সাংবাদিক, রাজনীতিক এবং সর্বোপরি একজন মানবিক দার্শনিক। তাঁর গান শুধু কণ্ঠে গাইবার বিষয় নয়। তা বাংলা জাতিসত্তার অন্তর্গত ছন্দের একটা প্রতিফলন। তাঁর সুর আমাদের শিকড়ের সঙ্গে যেমন সংযোগ ঘটায়, তেমনি আমাদের ইতিহাস, সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের পথও চিনিয়ে দেয়।
নজরুলের গানে যেমন রাগসংগীতের শাস্ত্রীয় কাঠামো রয়েছে, তেমনি রয়েছে চারণকবির চিৎকার, সুফির ধ্যান ও বাউলের ভাব। আর এই মিলনের মধ্য দিয়েই নজরুল হয়ে উঠেছেন বাঙালির এক অনন্য সুর পুরুষ।
তাঁকে যতটা কবি হিসেবে পড়া হয়, ততটা সংগীতজ্ঞ হিসেবেও পড়া উচিত। তাঁর গানকে যতটা ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, ততটাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা জরুরি।
এই পুনঃপাঠ আমাদের নিজেদের সাংস্কৃতিক আত্মচিন্তাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আমরা যেভাবে কবি হিসেবে মূল্যায়ন করেছি, তা নিঃসন্দেহে যথার্থ ও গভীর। তাঁর বিদ্রোহী কণ্ঠ, মানবিক বোধ এবং সাম্যবাদী অবস্থান তাঁকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কণ্ঠ করে তুলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই একই নজরুল, যিনি সংগীতে এক বিপ্লব এনেছিলেন, তাঁকে কি সংগীতচর্চার প্রেক্ষাপটে আমরা সমান গুরুত্বে দেখেছি?
উত্তরটা হলো, খুব একটা নয়।
নজরুল বাংলা গানকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে পৌঁছানো তখনকার বাংলা সংগীতের জন্য অভাবনীয়। তিনি শুধু বাংলা গানে ইসলামি গজল বা দেশাত্মবোধক চেতনা আনেননি। বরং রাগাশ্রয়ী সংগীতকে বাংলা ভাষায় জনমানুষের বোধে প্রবেশ করিয়ে দেন। নজরুল প্রায় ১ হাজার ৬০০ গানে সুর দিয়েছেন এবং তাঁর সুরে প্রায় ৩৫টির মতো রাগের ব্যবহার দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,
⦁ রাগ বাগেশ্রীতে বাঁধা ‘মোর প্রাণ ভরি’য়ে বাজে মধুর কেমন সুর’, একটি প্রেম ও বিভোরতার কণ্ঠস্বর।
⦁ দেশ রাগের প্রয়োগ দেখা যায় ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায়’ গানে। এটি দেশভক্তি ও মাতৃমূর্তিকে উদ্যাপন করে এক উজ্জ্বল আবেগে।
⦁ রাগ কাফি ও পিলুতে গাঁথা তাঁর বহু গজল ও প্রেমের গান, যেমন ‘না মানি আর বেদ-পুরান’, সাম্যের বার্তা দেয়।
নজরুল সম্ভবত আধুনিক বাংলা গানের সেই পথিকৃৎ যিনি গানের অনুভবকে সম-অনুভূতি প্রকাশের রাগগুলোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিলেন। নিজের গানে শুধু রাগের প্রয়োগ নয়, নজরুলের ছন্দচর্চাও ছিল বিস্ময়কর। দাদরা, কাহারবা, ঝুমরা, ত্রিতাল, ধামার ইত্যাদি ছন্দে তাঁর গানগুলো বাঁধা, যা তাঁর সংগীত শিক্ষার গভীরতা এবং একাধিক ধারায় পারদর্শিতার প্রমাণ।
নজরুলের গানকে শুধু দেশাত্মবোধক কিংবা ইসলামিক ভাবনার মোড়কে দেখলে এই রাগাশ্রয়ী, ছন্দনির্ভর সাংগীতিক উৎকর্ষের দিকটি আমরা অবহেলা করব।
গানের ধর্ম নয়, মানুষের ভাষা
নজরুলের সংগীতচর্চার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তাঁর ধারামুক্ত, সমন্বয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি গজল রচনা করেছেন, লিখেছেন কীর্তন ও শ্যামাসংগীত। একাধারে তিনি যেমন ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে’ রচনা করেছেন। তেমনি লিখেছেন ‘আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশী শ্যামা কালি’, ‘আমার হাতে কালি মুখে কালি’ কিংবা ‘কালি কালি মন্ত্র জপি ব’সে লোকের শ্মশানে’ ইত্যাদির মতো প্রচুর জনপ্রিয় শ্যামা সংগীত। তাঁর গানে ইসলামি ভাবধারা যেমন আছে, তেমনি হিন্দু ধর্মের দেবদেবী সম্পর্কিত গানের সংখ্যাও শতাধিক।
এই বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি নজরুলকে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় ছাঁচে ফেলাকে অসম্ভব করে তোলে। কিন্তু তবুও আমরা দেখতে পাই, নজরুলকে অনেক সময় শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা হয়েছে, যা একদিকে যেমন সাংস্কৃতিক সংকীর্ণতা তৈরি করে, অন্যদিকে নজরুলের মৌলিক স্বরকেও বিকৃত করে।
তাঁর গানের ভাষা ছিল মানুষের ভাষা। ধর্ম, জাতি বা শ্রেণির ভাষা নয়। তাঁর সংগীতে আমরা পাই কৃষকের কণ্ঠ, দরিদ্র মজুরের কান্না, বিপ্লবীর উল্লাস এবং প্রেমিকের আকুতি। তিনি গানের মাধ্যমে একটি পরিপূর্ণ মানবিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন, যা বাংলা গানের ইতিহাসে অতুলনীয়।
নজরুল বনাম রবীন্দ্রনাথ, একটি ভুল ফ্রেমিংয়ের চর্চা
নজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক পরিচয়ের রাজনীতিতে তাঁকে একটি ‘ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি’র খোলসে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। যেখানে রবীন্দ্রনাথ ‘সেক্যুলার বাঙালি জাতিসত্তা’র মুখপাত্র, সেখানে নজরুল হয়ে ওঠেন মুসলিম বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার দূত।
এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে। নজরুল নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি হিন্দু-মুসলমানের মিলনের কবি। আমি বৈরিতার নয়, মিলনের কথা বলি।’ তাঁর ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান।…’ এর মতো লাইন কি তার প্রমাণ বহন করে না?
সাংস্কৃতিক ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের অবস্থান একে অপরের বিপরীত নয়, বরং পরিপূরক। একজন বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের ভুবনে তুলে ধরেছেন, অন্যজন বাংলা ভাষার সাংস্কৃতিক পরিচয়ে গণমানুষের কণ্ঠস্বর যুক্ত করেছেন। একজনের সৃষ্টিতে আত্মজিজ্ঞাসা, অন্যজনের সৃষ্টিতে সামাজিক বিস্ফোরণ।
নজরুল কখনোই রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে দাঁড়াননি। বরং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন একাধিকবার। আবার রবীন্দ্রনাথও নজরুলের প্রতিভা ও অবস্থানকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ফলে তাঁদের মধ্যে বিভেদ নয়, ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা।
এই দুই কবিকে সাংস্কৃতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফ্রেমে ফেলাটা শুধু ইতিহাসের বিকৃতি নয়, আমাদের সাহিত্য-সংগীতচর্চারও সংকোচন।
নজরুল—সাম্য, সংগীত ও সংহতির কবি
নজরুল ইসলামকে আমরা যদি শুধুই কবি হিসেবে দেখি কিংবা শুধুই মুসলিম বাঙালির প্রতিনিধি হিসেবে দেখি, তাহলে আমরা তাঁকে পুরোপুরি পড়তে পারি না। নজরুল ছিলেন একাধারে সুরকার, গীতিকার, কণ্ঠশিল্পী, সাংবাদিক, রাজনীতিক এবং সর্বোপরি একজন মানবিক দার্শনিক। তাঁর গান শুধু কণ্ঠে গাইবার বিষয় নয়। তা বাংলা জাতিসত্তার অন্তর্গত ছন্দের একটা প্রতিফলন। তাঁর সুর আমাদের শিকড়ের সঙ্গে যেমন সংযোগ ঘটায়, তেমনি আমাদের ইতিহাস, সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের পথও চিনিয়ে দেয়।
নজরুলের গানে যেমন রাগসংগীতের শাস্ত্রীয় কাঠামো রয়েছে, তেমনি রয়েছে চারণকবির চিৎকার, সুফির ধ্যান ও বাউলের ভাব। আর এই মিলনের মধ্য দিয়েই নজরুল হয়ে উঠেছেন বাঙালির এক অনন্য সুর পুরুষ।
তাঁকে যতটা কবি হিসেবে পড়া হয়, ততটা সংগীতজ্ঞ হিসেবেও পড়া উচিত। তাঁর গানকে যতটা ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, ততটাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা জরুরি।
এই পুনঃপাঠ আমাদের নিজেদের সাংস্কৃতিক আত্মচিন্তাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
গতবছরের আন্দোলন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। প্রবাসীরা নানা জায়গা থেকে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন, কেউ সরাসরি আন্দোলনে যোগ দিতে দেশে এসেছিলেন, কেউ বা বিদেশ থেকেই আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহায়তা দিয়ে আন্দোলনকে শক্তিশালী করেছিলেন। প্রবাসীদের এমন ভূমিকা
১৮ ঘণ্টা আগেচোখ মেলে দেখি সাদা পরী আকাশি রঙের খাম হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে বিস্তীর্ণ জলরাশি। সমুদ্র পাড়ের বেঞ্চে শরীর এলিয়ে শুয়ে আছি। হাতে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর “সাঁতারু ও জলকন্যা”। সমুদ্রের ঢেউ এর আছড়ে পড়ার শব্দ আর ঝিরি ঝিরি বাতাসে খুব বেশিক্ষণ বইটার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারিনি।
৯ দিন আগেবাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে গুলশানে নির্মিত ‘কবি আল মাহমুদ পাঠাগার’ উদ্বোধন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। আজ মঙ্গলবার বিকেলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ পার্কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পাঠাগারটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
১৫ দিন আগেকাচের আচ্ছাদনের ভেতর অনেক পুরোনো একটা ডায়েরি। তার একটি পাতা মেলে ধরা। পাতাটিতে লেখা রয়েছে এস এম সুলতানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, নাম-ঠিকানা। সে পাতারই নিচের দিকে লেখা—‘আপনি কেন ছবি আঁকেন? বিশ্ব প্রকৃতিকে ভালোবাসি বলে’। নিচে শিল্পীর নাম লেখা।
১৮ দিন আগে