নজরুলজয়ন্তী
আহমেদ ইবনে আরিফ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আমরা যেভাবে কবি হিসেবে মূল্যায়ন করেছি, তা নিঃসন্দেহে যথার্থ ও গভীর। তাঁর বিদ্রোহী কণ্ঠ, মানবিক বোধ এবং সাম্যবাদী অবস্থান তাঁকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কণ্ঠ করে তুলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই একই নজরুল, যিনি সংগীতে এক বিপ্লব এনেছিলেন, তাঁকে কি সংগীতচর্চার প্রেক্ষাপটে আমরা সমান গুরুত্বে দেখেছি?
উত্তরটা হলো, খুব একটা নয়।
নজরুল বাংলা গানকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে পৌঁছানো তখনকার বাংলা সংগীতের জন্য অভাবনীয়। তিনি শুধু বাংলা গানে ইসলামি গজল বা দেশাত্মবোধক চেতনা আনেননি। বরং রাগাশ্রয়ী সংগীতকে বাংলা ভাষায় জনমানুষের বোধে প্রবেশ করিয়ে দেন। নজরুল প্রায় ১ হাজার ৬০০ গানে সুর দিয়েছেন এবং তাঁর সুরে প্রায় ৩৫টির মতো রাগের ব্যবহার দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,
⦁ রাগ বাগেশ্রীতে বাঁধা ‘মোর প্রাণ ভরি’য়ে বাজে মধুর কেমন সুর’, একটি প্রেম ও বিভোরতার কণ্ঠস্বর।
⦁ দেশ রাগের প্রয়োগ দেখা যায় ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায়’ গানে। এটি দেশভক্তি ও মাতৃমূর্তিকে উদ্যাপন করে এক উজ্জ্বল আবেগে।
⦁ রাগ কাফি ও পিলুতে গাঁথা তাঁর বহু গজল ও প্রেমের গান, যেমন ‘না মানি আর বেদ-পুরান’, সাম্যের বার্তা দেয়।
নজরুল সম্ভবত আধুনিক বাংলা গানের সেই পথিকৃৎ যিনি গানের অনুভবকে সম-অনুভূতি প্রকাশের রাগগুলোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিলেন। নিজের গানে শুধু রাগের প্রয়োগ নয়, নজরুলের ছন্দচর্চাও ছিল বিস্ময়কর। দাদরা, কাহারবা, ঝুমরা, ত্রিতাল, ধামার ইত্যাদি ছন্দে তাঁর গানগুলো বাঁধা, যা তাঁর সংগীত শিক্ষার গভীরতা এবং একাধিক ধারায় পারদর্শিতার প্রমাণ।
নজরুলের গানকে শুধু দেশাত্মবোধক কিংবা ইসলামিক ভাবনার মোড়কে দেখলে এই রাগাশ্রয়ী, ছন্দনির্ভর সাংগীতিক উৎকর্ষের দিকটি আমরা অবহেলা করব।
গানের ধর্ম নয়, মানুষের ভাষা
নজরুলের সংগীতচর্চার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তাঁর ধারামুক্ত, সমন্বয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি গজল রচনা করেছেন, লিখেছেন কীর্তন ও শ্যামাসংগীত। একাধারে তিনি যেমন ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে’ রচনা করেছেন। তেমনি লিখেছেন ‘আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশী শ্যামা কালি’, ‘আমার হাতে কালি মুখে কালি’ কিংবা ‘কালি কালি মন্ত্র জপি ব’সে লোকের শ্মশানে’ ইত্যাদির মতো প্রচুর জনপ্রিয় শ্যামা সংগীত। তাঁর গানে ইসলামি ভাবধারা যেমন আছে, তেমনি হিন্দু ধর্মের দেবদেবী সম্পর্কিত গানের সংখ্যাও শতাধিক।
এই বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি নজরুলকে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় ছাঁচে ফেলাকে অসম্ভব করে তোলে। কিন্তু তবুও আমরা দেখতে পাই, নজরুলকে অনেক সময় শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা হয়েছে, যা একদিকে যেমন সাংস্কৃতিক সংকীর্ণতা তৈরি করে, অন্যদিকে নজরুলের মৌলিক স্বরকেও বিকৃত করে।
তাঁর গানের ভাষা ছিল মানুষের ভাষা। ধর্ম, জাতি বা শ্রেণির ভাষা নয়। তাঁর সংগীতে আমরা পাই কৃষকের কণ্ঠ, দরিদ্র মজুরের কান্না, বিপ্লবীর উল্লাস এবং প্রেমিকের আকুতি। তিনি গানের মাধ্যমে একটি পরিপূর্ণ মানবিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন, যা বাংলা গানের ইতিহাসে অতুলনীয়।

নজরুল বনাম রবীন্দ্রনাথ, একটি ভুল ফ্রেমিংয়ের চর্চা
নজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক পরিচয়ের রাজনীতিতে তাঁকে একটি ‘ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি’র খোলসে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। যেখানে রবীন্দ্রনাথ ‘সেক্যুলার বাঙালি জাতিসত্তা’র মুখপাত্র, সেখানে নজরুল হয়ে ওঠেন মুসলিম বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার দূত।
এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে। নজরুল নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি হিন্দু-মুসলমানের মিলনের কবি। আমি বৈরিতার নয়, মিলনের কথা বলি।’ তাঁর ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান।…’ এর মতো লাইন কি তার প্রমাণ বহন করে না?
সাংস্কৃতিক ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের অবস্থান একে অপরের বিপরীত নয়, বরং পরিপূরক। একজন বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের ভুবনে তুলে ধরেছেন, অন্যজন বাংলা ভাষার সাংস্কৃতিক পরিচয়ে গণমানুষের কণ্ঠস্বর যুক্ত করেছেন। একজনের সৃষ্টিতে আত্মজিজ্ঞাসা, অন্যজনের সৃষ্টিতে সামাজিক বিস্ফোরণ।
নজরুল কখনোই রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে দাঁড়াননি। বরং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন একাধিকবার। আবার রবীন্দ্রনাথও নজরুলের প্রতিভা ও অবস্থানকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ফলে তাঁদের মধ্যে বিভেদ নয়, ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা।
এই দুই কবিকে সাংস্কৃতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফ্রেমে ফেলাটা শুধু ইতিহাসের বিকৃতি নয়, আমাদের সাহিত্য-সংগীতচর্চারও সংকোচন।
নজরুল—সাম্য, সংগীত ও সংহতির কবি
নজরুল ইসলামকে আমরা যদি শুধুই কবি হিসেবে দেখি কিংবা শুধুই মুসলিম বাঙালির প্রতিনিধি হিসেবে দেখি, তাহলে আমরা তাঁকে পুরোপুরি পড়তে পারি না। নজরুল ছিলেন একাধারে সুরকার, গীতিকার, কণ্ঠশিল্পী, সাংবাদিক, রাজনীতিক এবং সর্বোপরি একজন মানবিক দার্শনিক। তাঁর গান শুধু কণ্ঠে গাইবার বিষয় নয়। তা বাংলা জাতিসত্তার অন্তর্গত ছন্দের একটা প্রতিফলন। তাঁর সুর আমাদের শিকড়ের সঙ্গে যেমন সংযোগ ঘটায়, তেমনি আমাদের ইতিহাস, সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের পথও চিনিয়ে দেয়।
নজরুলের গানে যেমন রাগসংগীতের শাস্ত্রীয় কাঠামো রয়েছে, তেমনি রয়েছে চারণকবির চিৎকার, সুফির ধ্যান ও বাউলের ভাব। আর এই মিলনের মধ্য দিয়েই নজরুল হয়ে উঠেছেন বাঙালির এক অনন্য সুর পুরুষ।
তাঁকে যতটা কবি হিসেবে পড়া হয়, ততটা সংগীতজ্ঞ হিসেবেও পড়া উচিত। তাঁর গানকে যতটা ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, ততটাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা জরুরি।
এই পুনঃপাঠ আমাদের নিজেদের সাংস্কৃতিক আত্মচিন্তাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আমরা যেভাবে কবি হিসেবে মূল্যায়ন করেছি, তা নিঃসন্দেহে যথার্থ ও গভীর। তাঁর বিদ্রোহী কণ্ঠ, মানবিক বোধ এবং সাম্যবাদী অবস্থান তাঁকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কণ্ঠ করে তুলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই একই নজরুল, যিনি সংগীতে এক বিপ্লব এনেছিলেন, তাঁকে কি সংগীতচর্চার প্রেক্ষাপটে আমরা সমান গুরুত্বে দেখেছি?
উত্তরটা হলো, খুব একটা নয়।
নজরুল বাংলা গানকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে পৌঁছানো তখনকার বাংলা সংগীতের জন্য অভাবনীয়। তিনি শুধু বাংলা গানে ইসলামি গজল বা দেশাত্মবোধক চেতনা আনেননি। বরং রাগাশ্রয়ী সংগীতকে বাংলা ভাষায় জনমানুষের বোধে প্রবেশ করিয়ে দেন। নজরুল প্রায় ১ হাজার ৬০০ গানে সুর দিয়েছেন এবং তাঁর সুরে প্রায় ৩৫টির মতো রাগের ব্যবহার দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,
⦁ রাগ বাগেশ্রীতে বাঁধা ‘মোর প্রাণ ভরি’য়ে বাজে মধুর কেমন সুর’, একটি প্রেম ও বিভোরতার কণ্ঠস্বর।
⦁ দেশ রাগের প্রয়োগ দেখা যায় ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায়’ গানে। এটি দেশভক্তি ও মাতৃমূর্তিকে উদ্যাপন করে এক উজ্জ্বল আবেগে।
⦁ রাগ কাফি ও পিলুতে গাঁথা তাঁর বহু গজল ও প্রেমের গান, যেমন ‘না মানি আর বেদ-পুরান’, সাম্যের বার্তা দেয়।
নজরুল সম্ভবত আধুনিক বাংলা গানের সেই পথিকৃৎ যিনি গানের অনুভবকে সম-অনুভূতি প্রকাশের রাগগুলোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিলেন। নিজের গানে শুধু রাগের প্রয়োগ নয়, নজরুলের ছন্দচর্চাও ছিল বিস্ময়কর। দাদরা, কাহারবা, ঝুমরা, ত্রিতাল, ধামার ইত্যাদি ছন্দে তাঁর গানগুলো বাঁধা, যা তাঁর সংগীত শিক্ষার গভীরতা এবং একাধিক ধারায় পারদর্শিতার প্রমাণ।
নজরুলের গানকে শুধু দেশাত্মবোধক কিংবা ইসলামিক ভাবনার মোড়কে দেখলে এই রাগাশ্রয়ী, ছন্দনির্ভর সাংগীতিক উৎকর্ষের দিকটি আমরা অবহেলা করব।
গানের ধর্ম নয়, মানুষের ভাষা
নজরুলের সংগীতচর্চার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তাঁর ধারামুক্ত, সমন্বয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি গজল রচনা করেছেন, লিখেছেন কীর্তন ও শ্যামাসংগীত। একাধারে তিনি যেমন ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে’ রচনা করেছেন। তেমনি লিখেছেন ‘আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশী শ্যামা কালি’, ‘আমার হাতে কালি মুখে কালি’ কিংবা ‘কালি কালি মন্ত্র জপি ব’সে লোকের শ্মশানে’ ইত্যাদির মতো প্রচুর জনপ্রিয় শ্যামা সংগীত। তাঁর গানে ইসলামি ভাবধারা যেমন আছে, তেমনি হিন্দু ধর্মের দেবদেবী সম্পর্কিত গানের সংখ্যাও শতাধিক।
এই বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি নজরুলকে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় ছাঁচে ফেলাকে অসম্ভব করে তোলে। কিন্তু তবুও আমরা দেখতে পাই, নজরুলকে অনেক সময় শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা হয়েছে, যা একদিকে যেমন সাংস্কৃতিক সংকীর্ণতা তৈরি করে, অন্যদিকে নজরুলের মৌলিক স্বরকেও বিকৃত করে।
তাঁর গানের ভাষা ছিল মানুষের ভাষা। ধর্ম, জাতি বা শ্রেণির ভাষা নয়। তাঁর সংগীতে আমরা পাই কৃষকের কণ্ঠ, দরিদ্র মজুরের কান্না, বিপ্লবীর উল্লাস এবং প্রেমিকের আকুতি। তিনি গানের মাধ্যমে একটি পরিপূর্ণ মানবিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন, যা বাংলা গানের ইতিহাসে অতুলনীয়।

নজরুল বনাম রবীন্দ্রনাথ, একটি ভুল ফ্রেমিংয়ের চর্চা
নজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক পরিচয়ের রাজনীতিতে তাঁকে একটি ‘ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি’র খোলসে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। যেখানে রবীন্দ্রনাথ ‘সেক্যুলার বাঙালি জাতিসত্তা’র মুখপাত্র, সেখানে নজরুল হয়ে ওঠেন মুসলিম বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার দূত।
এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে। নজরুল নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি হিন্দু-মুসলমানের মিলনের কবি। আমি বৈরিতার নয়, মিলনের কথা বলি।’ তাঁর ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান।…’ এর মতো লাইন কি তার প্রমাণ বহন করে না?
সাংস্কৃতিক ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের অবস্থান একে অপরের বিপরীত নয়, বরং পরিপূরক। একজন বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের ভুবনে তুলে ধরেছেন, অন্যজন বাংলা ভাষার সাংস্কৃতিক পরিচয়ে গণমানুষের কণ্ঠস্বর যুক্ত করেছেন। একজনের সৃষ্টিতে আত্মজিজ্ঞাসা, অন্যজনের সৃষ্টিতে সামাজিক বিস্ফোরণ।
নজরুল কখনোই রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে দাঁড়াননি। বরং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন একাধিকবার। আবার রবীন্দ্রনাথও নজরুলের প্রতিভা ও অবস্থানকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ফলে তাঁদের মধ্যে বিভেদ নয়, ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা।
এই দুই কবিকে সাংস্কৃতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফ্রেমে ফেলাটা শুধু ইতিহাসের বিকৃতি নয়, আমাদের সাহিত্য-সংগীতচর্চারও সংকোচন।
নজরুল—সাম্য, সংগীত ও সংহতির কবি
নজরুল ইসলামকে আমরা যদি শুধুই কবি হিসেবে দেখি কিংবা শুধুই মুসলিম বাঙালির প্রতিনিধি হিসেবে দেখি, তাহলে আমরা তাঁকে পুরোপুরি পড়তে পারি না। নজরুল ছিলেন একাধারে সুরকার, গীতিকার, কণ্ঠশিল্পী, সাংবাদিক, রাজনীতিক এবং সর্বোপরি একজন মানবিক দার্শনিক। তাঁর গান শুধু কণ্ঠে গাইবার বিষয় নয়। তা বাংলা জাতিসত্তার অন্তর্গত ছন্দের একটা প্রতিফলন। তাঁর সুর আমাদের শিকড়ের সঙ্গে যেমন সংযোগ ঘটায়, তেমনি আমাদের ইতিহাস, সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের পথও চিনিয়ে দেয়।
নজরুলের গানে যেমন রাগসংগীতের শাস্ত্রীয় কাঠামো রয়েছে, তেমনি রয়েছে চারণকবির চিৎকার, সুফির ধ্যান ও বাউলের ভাব। আর এই মিলনের মধ্য দিয়েই নজরুল হয়ে উঠেছেন বাঙালির এক অনন্য সুর পুরুষ।
তাঁকে যতটা কবি হিসেবে পড়া হয়, ততটা সংগীতজ্ঞ হিসেবেও পড়া উচিত। তাঁর গানকে যতটা ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, ততটাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা জরুরি।
এই পুনঃপাঠ আমাদের নিজেদের সাংস্কৃতিক আত্মচিন্তাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
নজরুলজয়ন্তী
আহমেদ ইবনে আরিফ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আমরা যেভাবে কবি হিসেবে মূল্যায়ন করেছি, তা নিঃসন্দেহে যথার্থ ও গভীর। তাঁর বিদ্রোহী কণ্ঠ, মানবিক বোধ এবং সাম্যবাদী অবস্থান তাঁকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কণ্ঠ করে তুলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই একই নজরুল, যিনি সংগীতে এক বিপ্লব এনেছিলেন, তাঁকে কি সংগীতচর্চার প্রেক্ষাপটে আমরা সমান গুরুত্বে দেখেছি?
উত্তরটা হলো, খুব একটা নয়।
নজরুল বাংলা গানকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে পৌঁছানো তখনকার বাংলা সংগীতের জন্য অভাবনীয়। তিনি শুধু বাংলা গানে ইসলামি গজল বা দেশাত্মবোধক চেতনা আনেননি। বরং রাগাশ্রয়ী সংগীতকে বাংলা ভাষায় জনমানুষের বোধে প্রবেশ করিয়ে দেন। নজরুল প্রায় ১ হাজার ৬০০ গানে সুর দিয়েছেন এবং তাঁর সুরে প্রায় ৩৫টির মতো রাগের ব্যবহার দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,
⦁ রাগ বাগেশ্রীতে বাঁধা ‘মোর প্রাণ ভরি’য়ে বাজে মধুর কেমন সুর’, একটি প্রেম ও বিভোরতার কণ্ঠস্বর।
⦁ দেশ রাগের প্রয়োগ দেখা যায় ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায়’ গানে। এটি দেশভক্তি ও মাতৃমূর্তিকে উদ্যাপন করে এক উজ্জ্বল আবেগে।
⦁ রাগ কাফি ও পিলুতে গাঁথা তাঁর বহু গজল ও প্রেমের গান, যেমন ‘না মানি আর বেদ-পুরান’, সাম্যের বার্তা দেয়।
নজরুল সম্ভবত আধুনিক বাংলা গানের সেই পথিকৃৎ যিনি গানের অনুভবকে সম-অনুভূতি প্রকাশের রাগগুলোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিলেন। নিজের গানে শুধু রাগের প্রয়োগ নয়, নজরুলের ছন্দচর্চাও ছিল বিস্ময়কর। দাদরা, কাহারবা, ঝুমরা, ত্রিতাল, ধামার ইত্যাদি ছন্দে তাঁর গানগুলো বাঁধা, যা তাঁর সংগীত শিক্ষার গভীরতা এবং একাধিক ধারায় পারদর্শিতার প্রমাণ।
নজরুলের গানকে শুধু দেশাত্মবোধক কিংবা ইসলামিক ভাবনার মোড়কে দেখলে এই রাগাশ্রয়ী, ছন্দনির্ভর সাংগীতিক উৎকর্ষের দিকটি আমরা অবহেলা করব।
গানের ধর্ম নয়, মানুষের ভাষা
নজরুলের সংগীতচর্চার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তাঁর ধারামুক্ত, সমন্বয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি গজল রচনা করেছেন, লিখেছেন কীর্তন ও শ্যামাসংগীত। একাধারে তিনি যেমন ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে’ রচনা করেছেন। তেমনি লিখেছেন ‘আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশী শ্যামা কালি’, ‘আমার হাতে কালি মুখে কালি’ কিংবা ‘কালি কালি মন্ত্র জপি ব’সে লোকের শ্মশানে’ ইত্যাদির মতো প্রচুর জনপ্রিয় শ্যামা সংগীত। তাঁর গানে ইসলামি ভাবধারা যেমন আছে, তেমনি হিন্দু ধর্মের দেবদেবী সম্পর্কিত গানের সংখ্যাও শতাধিক।
এই বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি নজরুলকে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় ছাঁচে ফেলাকে অসম্ভব করে তোলে। কিন্তু তবুও আমরা দেখতে পাই, নজরুলকে অনেক সময় শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা হয়েছে, যা একদিকে যেমন সাংস্কৃতিক সংকীর্ণতা তৈরি করে, অন্যদিকে নজরুলের মৌলিক স্বরকেও বিকৃত করে।
তাঁর গানের ভাষা ছিল মানুষের ভাষা। ধর্ম, জাতি বা শ্রেণির ভাষা নয়। তাঁর সংগীতে আমরা পাই কৃষকের কণ্ঠ, দরিদ্র মজুরের কান্না, বিপ্লবীর উল্লাস এবং প্রেমিকের আকুতি। তিনি গানের মাধ্যমে একটি পরিপূর্ণ মানবিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন, যা বাংলা গানের ইতিহাসে অতুলনীয়।

নজরুল বনাম রবীন্দ্রনাথ, একটি ভুল ফ্রেমিংয়ের চর্চা
নজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক পরিচয়ের রাজনীতিতে তাঁকে একটি ‘ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি’র খোলসে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। যেখানে রবীন্দ্রনাথ ‘সেক্যুলার বাঙালি জাতিসত্তা’র মুখপাত্র, সেখানে নজরুল হয়ে ওঠেন মুসলিম বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার দূত।
এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে। নজরুল নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি হিন্দু-মুসলমানের মিলনের কবি। আমি বৈরিতার নয়, মিলনের কথা বলি।’ তাঁর ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান।…’ এর মতো লাইন কি তার প্রমাণ বহন করে না?
সাংস্কৃতিক ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের অবস্থান একে অপরের বিপরীত নয়, বরং পরিপূরক। একজন বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের ভুবনে তুলে ধরেছেন, অন্যজন বাংলা ভাষার সাংস্কৃতিক পরিচয়ে গণমানুষের কণ্ঠস্বর যুক্ত করেছেন। একজনের সৃষ্টিতে আত্মজিজ্ঞাসা, অন্যজনের সৃষ্টিতে সামাজিক বিস্ফোরণ।
নজরুল কখনোই রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে দাঁড়াননি। বরং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন একাধিকবার। আবার রবীন্দ্রনাথও নজরুলের প্রতিভা ও অবস্থানকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ফলে তাঁদের মধ্যে বিভেদ নয়, ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা।
এই দুই কবিকে সাংস্কৃতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফ্রেমে ফেলাটা শুধু ইতিহাসের বিকৃতি নয়, আমাদের সাহিত্য-সংগীতচর্চারও সংকোচন।
নজরুল—সাম্য, সংগীত ও সংহতির কবি
নজরুল ইসলামকে আমরা যদি শুধুই কবি হিসেবে দেখি কিংবা শুধুই মুসলিম বাঙালির প্রতিনিধি হিসেবে দেখি, তাহলে আমরা তাঁকে পুরোপুরি পড়তে পারি না। নজরুল ছিলেন একাধারে সুরকার, গীতিকার, কণ্ঠশিল্পী, সাংবাদিক, রাজনীতিক এবং সর্বোপরি একজন মানবিক দার্শনিক। তাঁর গান শুধু কণ্ঠে গাইবার বিষয় নয়। তা বাংলা জাতিসত্তার অন্তর্গত ছন্দের একটা প্রতিফলন। তাঁর সুর আমাদের শিকড়ের সঙ্গে যেমন সংযোগ ঘটায়, তেমনি আমাদের ইতিহাস, সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের পথও চিনিয়ে দেয়।
নজরুলের গানে যেমন রাগসংগীতের শাস্ত্রীয় কাঠামো রয়েছে, তেমনি রয়েছে চারণকবির চিৎকার, সুফির ধ্যান ও বাউলের ভাব। আর এই মিলনের মধ্য দিয়েই নজরুল হয়ে উঠেছেন বাঙালির এক অনন্য সুর পুরুষ।
তাঁকে যতটা কবি হিসেবে পড়া হয়, ততটা সংগীতজ্ঞ হিসেবেও পড়া উচিত। তাঁর গানকে যতটা ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, ততটাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা জরুরি।
এই পুনঃপাঠ আমাদের নিজেদের সাংস্কৃতিক আত্মচিন্তাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আমরা যেভাবে কবি হিসেবে মূল্যায়ন করেছি, তা নিঃসন্দেহে যথার্থ ও গভীর। তাঁর বিদ্রোহী কণ্ঠ, মানবিক বোধ এবং সাম্যবাদী অবস্থান তাঁকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কণ্ঠ করে তুলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই একই নজরুল, যিনি সংগীতে এক বিপ্লব এনেছিলেন, তাঁকে কি সংগীতচর্চার প্রেক্ষাপটে আমরা সমান গুরুত্বে দেখেছি?
উত্তরটা হলো, খুব একটা নয়।
নজরুল বাংলা গানকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে পৌঁছানো তখনকার বাংলা সংগীতের জন্য অভাবনীয়। তিনি শুধু বাংলা গানে ইসলামি গজল বা দেশাত্মবোধক চেতনা আনেননি। বরং রাগাশ্রয়ী সংগীতকে বাংলা ভাষায় জনমানুষের বোধে প্রবেশ করিয়ে দেন। নজরুল প্রায় ১ হাজার ৬০০ গানে সুর দিয়েছেন এবং তাঁর সুরে প্রায় ৩৫টির মতো রাগের ব্যবহার দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,
⦁ রাগ বাগেশ্রীতে বাঁধা ‘মোর প্রাণ ভরি’য়ে বাজে মধুর কেমন সুর’, একটি প্রেম ও বিভোরতার কণ্ঠস্বর।
⦁ দেশ রাগের প্রয়োগ দেখা যায় ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায়’ গানে। এটি দেশভক্তি ও মাতৃমূর্তিকে উদ্যাপন করে এক উজ্জ্বল আবেগে।
⦁ রাগ কাফি ও পিলুতে গাঁথা তাঁর বহু গজল ও প্রেমের গান, যেমন ‘না মানি আর বেদ-পুরান’, সাম্যের বার্তা দেয়।
নজরুল সম্ভবত আধুনিক বাংলা গানের সেই পথিকৃৎ যিনি গানের অনুভবকে সম-অনুভূতি প্রকাশের রাগগুলোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিলেন। নিজের গানে শুধু রাগের প্রয়োগ নয়, নজরুলের ছন্দচর্চাও ছিল বিস্ময়কর। দাদরা, কাহারবা, ঝুমরা, ত্রিতাল, ধামার ইত্যাদি ছন্দে তাঁর গানগুলো বাঁধা, যা তাঁর সংগীত শিক্ষার গভীরতা এবং একাধিক ধারায় পারদর্শিতার প্রমাণ।
নজরুলের গানকে শুধু দেশাত্মবোধক কিংবা ইসলামিক ভাবনার মোড়কে দেখলে এই রাগাশ্রয়ী, ছন্দনির্ভর সাংগীতিক উৎকর্ষের দিকটি আমরা অবহেলা করব।
গানের ধর্ম নয়, মানুষের ভাষা
নজরুলের সংগীতচর্চার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তাঁর ধারামুক্ত, সমন্বয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি গজল রচনা করেছেন, লিখেছেন কীর্তন ও শ্যামাসংগীত। একাধারে তিনি যেমন ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে’ রচনা করেছেন। তেমনি লিখেছেন ‘আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশী শ্যামা কালি’, ‘আমার হাতে কালি মুখে কালি’ কিংবা ‘কালি কালি মন্ত্র জপি ব’সে লোকের শ্মশানে’ ইত্যাদির মতো প্রচুর জনপ্রিয় শ্যামা সংগীত। তাঁর গানে ইসলামি ভাবধারা যেমন আছে, তেমনি হিন্দু ধর্মের দেবদেবী সম্পর্কিত গানের সংখ্যাও শতাধিক।
এই বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি নজরুলকে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় ছাঁচে ফেলাকে অসম্ভব করে তোলে। কিন্তু তবুও আমরা দেখতে পাই, নজরুলকে অনেক সময় শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা হয়েছে, যা একদিকে যেমন সাংস্কৃতিক সংকীর্ণতা তৈরি করে, অন্যদিকে নজরুলের মৌলিক স্বরকেও বিকৃত করে।
তাঁর গানের ভাষা ছিল মানুষের ভাষা। ধর্ম, জাতি বা শ্রেণির ভাষা নয়। তাঁর সংগীতে আমরা পাই কৃষকের কণ্ঠ, দরিদ্র মজুরের কান্না, বিপ্লবীর উল্লাস এবং প্রেমিকের আকুতি। তিনি গানের মাধ্যমে একটি পরিপূর্ণ মানবিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন, যা বাংলা গানের ইতিহাসে অতুলনীয়।

নজরুল বনাম রবীন্দ্রনাথ, একটি ভুল ফ্রেমিংয়ের চর্চা
নজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক পরিচয়ের রাজনীতিতে তাঁকে একটি ‘ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি’র খোলসে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। যেখানে রবীন্দ্রনাথ ‘সেক্যুলার বাঙালি জাতিসত্তা’র মুখপাত্র, সেখানে নজরুল হয়ে ওঠেন মুসলিম বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার দূত।
এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে। নজরুল নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি হিন্দু-মুসলমানের মিলনের কবি। আমি বৈরিতার নয়, মিলনের কথা বলি।’ তাঁর ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান।…’ এর মতো লাইন কি তার প্রমাণ বহন করে না?
সাংস্কৃতিক ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের অবস্থান একে অপরের বিপরীত নয়, বরং পরিপূরক। একজন বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের ভুবনে তুলে ধরেছেন, অন্যজন বাংলা ভাষার সাংস্কৃতিক পরিচয়ে গণমানুষের কণ্ঠস্বর যুক্ত করেছেন। একজনের সৃষ্টিতে আত্মজিজ্ঞাসা, অন্যজনের সৃষ্টিতে সামাজিক বিস্ফোরণ।
নজরুল কখনোই রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে দাঁড়াননি। বরং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন একাধিকবার। আবার রবীন্দ্রনাথও নজরুলের প্রতিভা ও অবস্থানকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ফলে তাঁদের মধ্যে বিভেদ নয়, ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা।
এই দুই কবিকে সাংস্কৃতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফ্রেমে ফেলাটা শুধু ইতিহাসের বিকৃতি নয়, আমাদের সাহিত্য-সংগীতচর্চারও সংকোচন।
নজরুল—সাম্য, সংগীত ও সংহতির কবি
নজরুল ইসলামকে আমরা যদি শুধুই কবি হিসেবে দেখি কিংবা শুধুই মুসলিম বাঙালির প্রতিনিধি হিসেবে দেখি, তাহলে আমরা তাঁকে পুরোপুরি পড়তে পারি না। নজরুল ছিলেন একাধারে সুরকার, গীতিকার, কণ্ঠশিল্পী, সাংবাদিক, রাজনীতিক এবং সর্বোপরি একজন মানবিক দার্শনিক। তাঁর গান শুধু কণ্ঠে গাইবার বিষয় নয়। তা বাংলা জাতিসত্তার অন্তর্গত ছন্দের একটা প্রতিফলন। তাঁর সুর আমাদের শিকড়ের সঙ্গে যেমন সংযোগ ঘটায়, তেমনি আমাদের ইতিহাস, সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের পথও চিনিয়ে দেয়।
নজরুলের গানে যেমন রাগসংগীতের শাস্ত্রীয় কাঠামো রয়েছে, তেমনি রয়েছে চারণকবির চিৎকার, সুফির ধ্যান ও বাউলের ভাব। আর এই মিলনের মধ্য দিয়েই নজরুল হয়ে উঠেছেন বাঙালির এক অনন্য সুর পুরুষ।
তাঁকে যতটা কবি হিসেবে পড়া হয়, ততটা সংগীতজ্ঞ হিসেবেও পড়া উচিত। তাঁর গানকে যতটা ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, ততটাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা জরুরি।
এই পুনঃপাঠ আমাদের নিজেদের সাংস্কৃতিক আত্মচিন্তাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৫ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১০ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

নজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে।
২৪ মে ২০২৫
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১০ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৬ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

নজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে।
২৪ মে ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৫ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

নজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে।
২৪ মে ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৫ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১০ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

নজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে।
২৪ মে ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৫ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১০ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে