Ajker Patrika

সোহা-সারার চোখে বিশ্বকাপের আনন্দ

ফারুক মেহেদী, কাতার থেকে
Thumbnail image

সোহা আর সারা দুই বোন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মা-বাবার সঙ্গে ওরা থাকে কাতারের মাইজার এলাকায়। ওদের জন্ম, বেড়ে ওঠাও কাতারেই। বড় বোন সোহার পুরো নাম সোহা বিনতে সোহেল আর ছোট বোন সারার পুরো নাম সারা বিনতে সোহেল। কাতারের ডিপিএস মনার্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের গ্রেড ওয়ানে পড়ে সোহা আর সারা পড়ে কেজি টুতে। ওরা দুজনেই ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে। তবে তারা ফ্রেঞ্চ আর বাংলা ভাষাটাও জানে।

বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা ঘিরে কাতার এখন উৎসবের নগর। মেসি, নেইমার, রোনালদোদের সেরা এই উৎসবে বড়দের পাশাপাশি যাতে শিশুরাও অংশ নিতে পারে, সে জন্য কাতারের সব স্কুল দেড় মাসের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে কাতার সরকার। তাতে সোহা-সারাদের আনন্দের আর সীমা নেই! মা-বাবার হাত ধরে তারা প্রিয় দলের সমর্থক হয়ে মাঠে গিয়ে নিজ চোখে মেসি, নেইমার, এমবাপ্পেদের খেলা দেখবে—এর চেয়ে আনন্দ আর কী হতে পারে!

ওদের বাবা স্থানীয় ব্যবসায়ী সোহেল আহমেদ খেলা শুরুর কয়েক মাস আগে থেকেই সবার জন্য অনলাইনে আবেদন করে টিকিট ও হায়া কার্ড করে রেখেছেন, যাতে মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারেন। তাদের বাবার কাছ থেকে তারা জেনেছে যে এই কার্ড দিয়ে খেলা দেখা থেকে শুরু করে ফ্রিতে বাসে-মেট্রোট্রেনে চড়ে ঘুরে বেড়াতে পারবে, শপিং মলসহ যেখানে ইচ্ছা যেতে পারবে। এ কথা ভেবে কী যে আনন্দ সোহা-সারার! তারা আরও জেনেছে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ থেকে অন্তত ১৫ লাখ বিদেশি পর্যটক কাতারে আসবেন খেলা দেখার জন্য। অনেক শিশুও আসবে তাদের মা-বাবার সঙ্গে।

ওদের বাবা বলেছেন, খেলার দিন সবাই নানান সাজে, গায়ে জার্সি আর হাতে পছন্দের পতাকা নিয়ে মাঠে যাবে। এসব গল্প শুনে খেলা দেখার স্বপ্নে বিভোর দুই বোন! কখন মাঠে গিয়ে খেলা দেখবে—এই ভাবনায় ওদের চোখে যেন ঘুম নেই! এরপর থেকেই বসে বসে টিভিতে খেলার যত খবর আছে, দেখতে থাকে দুই বোন। তারা জানতে পারে, বিশ্বের সেরা এ আসর আয়োজন করতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করেছে কাতার। নতুন নতুন সড়ক, মহাসড়ক, হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট বানিয়েছে। মাটির নিচ দিয়ে আধুনিক পাতালরেল, ডজন ডজন ফ্লাইওভার আর সুদৃশ্য আটটি বিশাল স্টেডিয়াম তৈরি করেছে। খবরে বলা হয়েছে, এতে নাকি ২২৯ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে! এই টাকার অঙ্ক সম্পর্কে ধারণা নেই সোহাদের। ওদের বাবাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৩ লাখ কোটি টাকা। এ হিসাবও মাথায় ঢোকেনি তাদের। পরে বাবা বুঝিয়ে বলেছেন যে এ টাকা দিয়ে বাংলাদেশের অন্তত ৭৬টি পদ্মা সেতু বানানো যেত! পদ্মা সেতুর কথা তারা আগে শুনেছে, ছবিও দেখেছে। তাই 
কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে যে অনেক খরচের পর এত বড় আয়োজনটি হতে যাচ্ছে। এসব জেনে সোহা-সারার আর তর সইছে না যেন!

অবশেষে এল সেই সুন্দর দিন। উদ্বোধন হলো মহা আয়োজনের উৎসবটি। বিশ্বের সেরা এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন বিরল রোগে আক্রান্ত শারীরিক প্রতিবন্ধী অথচ জীবনসংগ্রামে সফল গানিম আল মুফতা নামের একজন কাতারি নাগরিক। সোহারা টিভিতে এ অনুষ্ঠান দেখে খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছে।

এরপর অনুষ্ঠানের মূল আসর শুরু। চারদিকে আনন্দ-উল্লাস, হইহুল্লোড়। পথে পথে উৎসবের রং। বিশ্বকাপে যেহেতু বাংলাদেশ নেই, তাই তাদের প্রথম পছন্দ কাতার। যেদিন কাতারের খেলা নেই, ওই দিন তারা দ্বিতীয় দল হিসেবে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থন করে। সোহা আর্জেন্টিনার সমর্থক, আর সারা ব্রাজিলের। দুজন ভিন্ন ভিন্ন দলের সমর্থক হলেও সোহা-সারা বাবার হাত ধরে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পাশাপাশি অন্য কয়েকটি দলের খেলাও দেখেছে। তাদের বাসার কাছাকাছি কাতারের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, আল-থুমামা স্টেডিয়ামের পাশাপাশি মল অব কাতারের শপিং মলের বড় স্ক্রিনেও খেলা দেখেছে। তবে স্টেডিয়ামের খেলায় মজা হয়েছে বেশি।

সোহা-সারা জানান, স্টেডিয়ামে বিভিন্ন দেশের শিশুরাও নানান সাজে তাদের মা-বাবার সঙ্গে খেলা দেখেছেন। কেউ কেউ নিজ দলের জার্সি পরে, কেউ বা নানান মাস্ক পরে, বাঁশি বাজিয়ে আনন্দ করেছে। স্টেডিয়ামে আর্জেন্টাইন, ব্রাজিল, কাতার, সৌদি, তিউনিসিয়া, জার্মানি, বাংলাদেশসহ বহু দেশের শিশুদের সঙ্গে কথা হয়েছে। খেলা শেষে তারা বাবার সঙ্গে পাশের ভিলাজিও শপিং মলে কেনাকাটা করে আর রেস্টুরেন্টে খেয়ে বাসায় ফেরে।

এভাবেই কাতারে তাদের এখন সময় কাটছে। পড়াশোনার চাপ নেই; তবে স্কুল থেকে টিচাররা তাদের দেড় মাসের একটি পড়াশোনার রুটিন করে দিয়েছে, যাতে খেলা দেখার পাশাপাশি পড়াশোনাটাও চালু রাখা যায়। বাংলাদেশে ঈদের সময় যেমন লম্বা ছুটি থাকে; এ সময় বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে, মামার বাড়ি বেড়িয়ে আরাম-আয়েশে সময় কাটে, তেমনই তাদেরও এখন মজায় মজায় কেটে যাচ্ছে। শুধু সোহা-সারাই নয়; কাতারে এখন তাদের বয়সী সব শিশুরই এভাবে দিন কাটছে। সীমাহীন আনন্দ! তাদের অনেক আত্মীয়স্বজনের ছেলেমেয়েরাও মা-বাবার সঙ্গে হায়া কার্ড দিয়ে কাতারে এসে খেলা দেখছে। সোহারা আরও জানায়, এ খেলার আনন্দ তাদের স্মৃতিতে অনেক দিন মনে থাকবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব শিশুকে তারা শুভেচ্ছা জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত