ড. তাহা ইয়াসিন

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ। তিনি ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চিন্তাকে যুগ-মানসে ধারণ করেছিলেন। সমকালে মানুষের অন্তরের আকৃতিকে তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। সাহিত্যের ক্ষেত্রে ছিলেন গতিময়তার প্রতীক এবং জীবন-যাপনে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাঁর কালে যৌবনদীপ্ত তারুণ্যের এমন নজির আর নেই। স্বদেশের সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় তিনি ছিলেন নির্ভীক। সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন আপসহীন। অধিকাংশ লেখক-বুদ্ধিজীবী শাসনদণ্ডের কাছে যেমন সর্বকালে আত্মসমর্পণ করে থাকেন, নজরুল ছিলেন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে ঘোষণা করেছিলেন ‘উন্নত মম শির’। তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন, সংগ্রামী, গণবাদী ও সাম্যবাদী কবি। তাঁর পূর্বে সাহিত্য-সংস্কৃতি, শাস্ত্র ও সমাজ-সংস্কারমূলক রচনা আর কারও মাধ্যমে ফুটে ওঠেনি। সাহিত্যকে তিনি সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনতা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় সারা দেশে বিশ ও ত্রিশের দশকে রাজনৈতিক যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে সে আন্দোলনের একজন সৈনিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। সরাসরি রাজনৈতিক ফ্রন্টে না থেকে সাহিত্য রচনার মাধ্যমেও যে মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করা যায়, তিনি তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর আগে অনেক সাহিত্যিকের গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে কিন্তু তাদের কাউকে জেল খাটতে হয়নি। নজরুলের অনেক গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়। গ্রন্থ নিষিদ্ধ হওয়া ছাড়াও একটি কবিতার (আনন্দময়ীর আগমনে) জন্য তিনি পুরো এক বছর জেল খাটেন।
নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ বিশ শতকের অসন্তুষ্ট ক্ষুব্ধ বাঙালি মানসের প্রোজ্জ্বল প্রতীক। নতুন আবেগের রূপায়ণে পুরোনো আঙ্গিক ও ভাষার অকিঞ্চিৎকরতা শিল্পীকে দুঃসাহসী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে। বিদ্রোহীর ‘আমি’ কেবল কৰি নিজে নন বরং কোনো উদ্দিষ্ট শ্রোতার আত্মশক্তিই বিদ্রোহীর কেন্দ্রীয় বিষয়। এই উদ্দিষ্ট তাঁর সমকালীন সমাজ। ব্যাপক বিদ্রোহের ভেতরে যার জাগরণ সে জাগরণ তিনি কামনা করেছিলেন। উৎপীড়কের উৎখাত এবং উৎপীড়িতের মুক্তি হলেই সংগ্রাম শেষ হবে, অন্যথায় নয়। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি বিদ্রোহীতে দিয়েছেন।
তিনি ‘নবযুগ’, ‘ধূমকেতু’, ‘লাঙল’ পত্রিকা পরিচালনা করেন। সাংবাদিক হিসেবেও কবিকে দেখা যায় কাব্যিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সাংবাদিক হিসেবে। সংবাদ শিরোনাম, বিজ্ঞাপনের ভাষা, সংবাদ সংক্ষিপ্তকরণ এবং জ্বালাময়ী সম্পাদকীয় লেখার কৌশল তাঁকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। পত্রিকাগুলোর বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলোর মাঝেও তাঁর দেশমাতৃকার নানা সমস্যাবলি উদ্ঘাটিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এগুলোর আবেদন কালোত্তীর্ণ হয়ে আজও সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। নতুন করে জেগে উঠতে চেতনার সঞ্চার করে। বাঙালি পল্টনে থাকার সময় নজরুল রুশ বিপ্লব সম্পর্কে জেনেছিলেন। করাচির সেনা ব্যারাকে তিনি রুশ বিপ্লবের ঘটনাবলিসংবলিত বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা জোগাড় করে গোপনে পড়তেন। সেই প্রভাবও সাহিত্যিক-সাংবাদিক জীবনে পড়ে। তিনি শ্রমিকশ্রেণির শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘দি লেবার স্বরাজ পার্টি অব ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নামে একটি দল গঠন করেন এবং সেটির মুখপাত্র হিসেবে ‘লাঙল’ নামক পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। এই পার্টির স্বার্থে তিনি নিদারুণ আর্থিক দুর্দশাও সহ্য করেন। এই পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেন ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসের অনুবাদ, কার্ল মার্ক্সের জীবনী এবং অনুবাদ করেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল। শুধু দল গঠন, পত্রিকা প্রকাশ করেই তিনি থেমে থাকেননি, ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে পূর্ববঙ্গে কেন্দ্রীয় আইন সভার নির্বাচনও করেন। সমস্ত ঢাকা বিভাগ অর্থাৎ ঢাকা, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার জন্য দুটি মুসলিম আসন সংরক্ষিত ছিল। এই আসনে মুসলমান ভোটাররাই কেবল ভোট দিতে পারতেন। তখন সম্পত্তির ভিত্তিতে ভোটাধিকার দেওয়া হতো। ‘ভোটার ছিলেন মোট ১৮,১১৬ জন।’ ভোটার ছিলেন সম্পদশালী মুসলমানেরা। এরা নজরুলের লেখায় খুশি ছিলেন না বরং তাঁকে কাফের আখ্যা দিয়েছিলেন। ফলে ঘটনা যা হওয়ার তাই হয়। শেষ পর্যন্ত নজরুলের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
মুসলমান সমাজের গোঁড়ামিকে আঘাত করার জন্য গোঁড়া মুসলমানেরা তাঁকে পছন্দ করতেন না। বিত্তশালী ভোটারদের ভোটে তাঁদেরই প্রার্থী বরিশালের জমিদার ইসমাইল চৌধুরী এবং পরবর্তীকালে নাইট উপাধি পাওয়া আবদুল হালিম গজনবি জয়লাভ করেন। এরপর নজরুল কৃষ্ণনগরে ফিরে গিয়ে দেখেন আর্থিক অনটনে স্ত্রী-পুত্রের জীবন ওষ্ঠাগত। সেই পরিস্থিতিকে সর্বংসহা শাশুড়ি প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে সামাল দেন। নজরুল এই দুর্দিনে লেখেন ‘দারিদ্র্য’ কবিতাটি। নিষ্ঠুর বাস্তবের নির্মম কশাঘাত তাঁকে সাহায্য করেছিল মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরতে। সর্বকালেই নিঃসঙ্গ, একলা মানুষ অসহায়। নজরুল লেখনী ধারণ করেছিলেন শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুক্তির এবং জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে। এ জন্য তিনি বসে বসে শুধু লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে রাজনৈতিক দল গঠন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এসব কাজের মাধ্যমে জনমানুষের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে আসেন। চেষ্টা তিনি কোনো দিক থেকে কম করেননি। কিন্তু প্রতিভাবান এবং জনস্বার্থে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ জনগণের কাছে প্রিয় হন খুব কম। এসবের পরেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন মুক্তিকামী মানুষের প্রিয় কবি।
অভাব-অনটন ছিল তাঁর চিরসাথি। কিন্তু মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল প্রগাঢ়। অভাব ছিল সংসারে অথচ হৃদয় ছিল পূর্ণ, মনে ছিলেন ঐশ্বর্যশালী। অর্থকে তিনি গ্রাহ্য করেননি এবং অর্থের প্রতি তাঁর মোহ ছিল না। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধায় তিনি ছিলেন আদর্শ পুরুষ। সাহিত্যিক মহলে তিনি বিদ্রোহী কবি আর সংগীতজগতে ছিলেন সবার কাজীদা বলে পরিচিত। বিশ্বাসে এবং আচরণে তিনি ছিলেন আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষ।
চিন্তায় নজরুল যেমন ছিলেন মুক্ত মানুষ, তেমনি বাস্তবজীবনেও ছিলেন উদার।
সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নজরুলের ঘনিষ্ঠজনদের একজন। তিনি নজরুল সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাও চমৎকার, ‘চোখ দুটি যেন পেয়ালা, কখনো সে পেয়ালা খালি নেই প্রাণের অরুণরসে সদাই ভরপুর। গলাটি সারসের মত পাতলা নয়, পুরুষের গলা যেমন হওয়া উচিত তেমনি সবল, বীর্য-ব্যঞ্জক। গলার স্বরটি ছিল ভারী, গলায় যে সুর খেলত বেশি তা বলতে পারিনে, কিন্তু সেই মোটা গলার সুরে ছিল জাদু।...স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর দেহ, ছন্দোময় পদক্ষেপ, বহুজনের মধ্যে তাঁকে দূর থেকে চেনা যায় যে এ মানুষ সাধারণ মানুষ নয়। হাসির ঝলকে আসর জমিয়ে রাখেন একাই, আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করেন। কেউ তাঁকে কখনো হতাশ, বিপদগ্রস্ত দেখেছেন বলেন না। একমাত্র তাঁরা বলেছেন যাঁরা স্ত্রীর অসুখের সময় চিকিৎসার জন্য উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করতে দেখেছেন, পুত্র বুলবুলের মৃত্যুর পরের দিনগুলোতে দেখেছেন। তা না হলে কাজী নজরুলকে মনে করলে হাসিখুশি, দরদী, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা একজন মানুষের চেহারা স্মৃতিতে ভেসে ওঠে।’
তাঁকে নিয়ে আলোচনার শেষ ছিল না, অনেক রটনাও ছিল। বন্ধুর যেমন শেষ ছিল না, ঈর্ষাকাতর লোকও কম ছিল না। বুদ্ধদেব বসু তাঁর সম্পর্কে ঈর্ষাকাতর মন্তব্য করেছেন, ‘শনিবারের চিঠি’ তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনায় লিখেছেন, কিন্তু তিনি ছিলেন নিশ্চুপ। নজরুলের জীবনবোধ এবং চিন্তাধারার সহজ গতি, আবেগের আগুনভরা কবিতা, মানুষের হৃদয়ভরা গান বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া আর কারও মাঝে দেখা যায় না। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অনেক বড়, মানবতার জয়গান গেয়েছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে সেই আদর্শ বজায় রেখেছিলেন। তাই বাংলা সাহিত্যে নজরুল স্বতন্ত্র ও অনন্য।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ। তিনি ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চিন্তাকে যুগ-মানসে ধারণ করেছিলেন। সমকালে মানুষের অন্তরের আকৃতিকে তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। সাহিত্যের ক্ষেত্রে ছিলেন গতিময়তার প্রতীক এবং জীবন-যাপনে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাঁর কালে যৌবনদীপ্ত তারুণ্যের এমন নজির আর নেই। স্বদেশের সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় তিনি ছিলেন নির্ভীক। সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন আপসহীন। অধিকাংশ লেখক-বুদ্ধিজীবী শাসনদণ্ডের কাছে যেমন সর্বকালে আত্মসমর্পণ করে থাকেন, নজরুল ছিলেন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে ঘোষণা করেছিলেন ‘উন্নত মম শির’। তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন, সংগ্রামী, গণবাদী ও সাম্যবাদী কবি। তাঁর পূর্বে সাহিত্য-সংস্কৃতি, শাস্ত্র ও সমাজ-সংস্কারমূলক রচনা আর কারও মাধ্যমে ফুটে ওঠেনি। সাহিত্যকে তিনি সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনতা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় সারা দেশে বিশ ও ত্রিশের দশকে রাজনৈতিক যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে সে আন্দোলনের একজন সৈনিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। সরাসরি রাজনৈতিক ফ্রন্টে না থেকে সাহিত্য রচনার মাধ্যমেও যে মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করা যায়, তিনি তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর আগে অনেক সাহিত্যিকের গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে কিন্তু তাদের কাউকে জেল খাটতে হয়নি। নজরুলের অনেক গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়। গ্রন্থ নিষিদ্ধ হওয়া ছাড়াও একটি কবিতার (আনন্দময়ীর আগমনে) জন্য তিনি পুরো এক বছর জেল খাটেন।
নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ বিশ শতকের অসন্তুষ্ট ক্ষুব্ধ বাঙালি মানসের প্রোজ্জ্বল প্রতীক। নতুন আবেগের রূপায়ণে পুরোনো আঙ্গিক ও ভাষার অকিঞ্চিৎকরতা শিল্পীকে দুঃসাহসী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে। বিদ্রোহীর ‘আমি’ কেবল কৰি নিজে নন বরং কোনো উদ্দিষ্ট শ্রোতার আত্মশক্তিই বিদ্রোহীর কেন্দ্রীয় বিষয়। এই উদ্দিষ্ট তাঁর সমকালীন সমাজ। ব্যাপক বিদ্রোহের ভেতরে যার জাগরণ সে জাগরণ তিনি কামনা করেছিলেন। উৎপীড়কের উৎখাত এবং উৎপীড়িতের মুক্তি হলেই সংগ্রাম শেষ হবে, অন্যথায় নয়। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি বিদ্রোহীতে দিয়েছেন।
তিনি ‘নবযুগ’, ‘ধূমকেতু’, ‘লাঙল’ পত্রিকা পরিচালনা করেন। সাংবাদিক হিসেবেও কবিকে দেখা যায় কাব্যিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সাংবাদিক হিসেবে। সংবাদ শিরোনাম, বিজ্ঞাপনের ভাষা, সংবাদ সংক্ষিপ্তকরণ এবং জ্বালাময়ী সম্পাদকীয় লেখার কৌশল তাঁকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। পত্রিকাগুলোর বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলোর মাঝেও তাঁর দেশমাতৃকার নানা সমস্যাবলি উদ্ঘাটিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এগুলোর আবেদন কালোত্তীর্ণ হয়ে আজও সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। নতুন করে জেগে উঠতে চেতনার সঞ্চার করে। বাঙালি পল্টনে থাকার সময় নজরুল রুশ বিপ্লব সম্পর্কে জেনেছিলেন। করাচির সেনা ব্যারাকে তিনি রুশ বিপ্লবের ঘটনাবলিসংবলিত বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা জোগাড় করে গোপনে পড়তেন। সেই প্রভাবও সাহিত্যিক-সাংবাদিক জীবনে পড়ে। তিনি শ্রমিকশ্রেণির শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘দি লেবার স্বরাজ পার্টি অব ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নামে একটি দল গঠন করেন এবং সেটির মুখপাত্র হিসেবে ‘লাঙল’ নামক পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। এই পার্টির স্বার্থে তিনি নিদারুণ আর্থিক দুর্দশাও সহ্য করেন। এই পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেন ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসের অনুবাদ, কার্ল মার্ক্সের জীবনী এবং অনুবাদ করেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল। শুধু দল গঠন, পত্রিকা প্রকাশ করেই তিনি থেমে থাকেননি, ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে পূর্ববঙ্গে কেন্দ্রীয় আইন সভার নির্বাচনও করেন। সমস্ত ঢাকা বিভাগ অর্থাৎ ঢাকা, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার জন্য দুটি মুসলিম আসন সংরক্ষিত ছিল। এই আসনে মুসলমান ভোটাররাই কেবল ভোট দিতে পারতেন। তখন সম্পত্তির ভিত্তিতে ভোটাধিকার দেওয়া হতো। ‘ভোটার ছিলেন মোট ১৮,১১৬ জন।’ ভোটার ছিলেন সম্পদশালী মুসলমানেরা। এরা নজরুলের লেখায় খুশি ছিলেন না বরং তাঁকে কাফের আখ্যা দিয়েছিলেন। ফলে ঘটনা যা হওয়ার তাই হয়। শেষ পর্যন্ত নজরুলের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
মুসলমান সমাজের গোঁড়ামিকে আঘাত করার জন্য গোঁড়া মুসলমানেরা তাঁকে পছন্দ করতেন না। বিত্তশালী ভোটারদের ভোটে তাঁদেরই প্রার্থী বরিশালের জমিদার ইসমাইল চৌধুরী এবং পরবর্তীকালে নাইট উপাধি পাওয়া আবদুল হালিম গজনবি জয়লাভ করেন। এরপর নজরুল কৃষ্ণনগরে ফিরে গিয়ে দেখেন আর্থিক অনটনে স্ত্রী-পুত্রের জীবন ওষ্ঠাগত। সেই পরিস্থিতিকে সর্বংসহা শাশুড়ি প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে সামাল দেন। নজরুল এই দুর্দিনে লেখেন ‘দারিদ্র্য’ কবিতাটি। নিষ্ঠুর বাস্তবের নির্মম কশাঘাত তাঁকে সাহায্য করেছিল মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরতে। সর্বকালেই নিঃসঙ্গ, একলা মানুষ অসহায়। নজরুল লেখনী ধারণ করেছিলেন শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুক্তির এবং জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে। এ জন্য তিনি বসে বসে শুধু লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে রাজনৈতিক দল গঠন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এসব কাজের মাধ্যমে জনমানুষের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে আসেন। চেষ্টা তিনি কোনো দিক থেকে কম করেননি। কিন্তু প্রতিভাবান এবং জনস্বার্থে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ জনগণের কাছে প্রিয় হন খুব কম। এসবের পরেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন মুক্তিকামী মানুষের প্রিয় কবি।
অভাব-অনটন ছিল তাঁর চিরসাথি। কিন্তু মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল প্রগাঢ়। অভাব ছিল সংসারে অথচ হৃদয় ছিল পূর্ণ, মনে ছিলেন ঐশ্বর্যশালী। অর্থকে তিনি গ্রাহ্য করেননি এবং অর্থের প্রতি তাঁর মোহ ছিল না। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধায় তিনি ছিলেন আদর্শ পুরুষ। সাহিত্যিক মহলে তিনি বিদ্রোহী কবি আর সংগীতজগতে ছিলেন সবার কাজীদা বলে পরিচিত। বিশ্বাসে এবং আচরণে তিনি ছিলেন আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষ।
চিন্তায় নজরুল যেমন ছিলেন মুক্ত মানুষ, তেমনি বাস্তবজীবনেও ছিলেন উদার।
সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নজরুলের ঘনিষ্ঠজনদের একজন। তিনি নজরুল সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাও চমৎকার, ‘চোখ দুটি যেন পেয়ালা, কখনো সে পেয়ালা খালি নেই প্রাণের অরুণরসে সদাই ভরপুর। গলাটি সারসের মত পাতলা নয়, পুরুষের গলা যেমন হওয়া উচিত তেমনি সবল, বীর্য-ব্যঞ্জক। গলার স্বরটি ছিল ভারী, গলায় যে সুর খেলত বেশি তা বলতে পারিনে, কিন্তু সেই মোটা গলার সুরে ছিল জাদু।...স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর দেহ, ছন্দোময় পদক্ষেপ, বহুজনের মধ্যে তাঁকে দূর থেকে চেনা যায় যে এ মানুষ সাধারণ মানুষ নয়। হাসির ঝলকে আসর জমিয়ে রাখেন একাই, আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করেন। কেউ তাঁকে কখনো হতাশ, বিপদগ্রস্ত দেখেছেন বলেন না। একমাত্র তাঁরা বলেছেন যাঁরা স্ত্রীর অসুখের সময় চিকিৎসার জন্য উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করতে দেখেছেন, পুত্র বুলবুলের মৃত্যুর পরের দিনগুলোতে দেখেছেন। তা না হলে কাজী নজরুলকে মনে করলে হাসিখুশি, দরদী, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা একজন মানুষের চেহারা স্মৃতিতে ভেসে ওঠে।’
তাঁকে নিয়ে আলোচনার শেষ ছিল না, অনেক রটনাও ছিল। বন্ধুর যেমন শেষ ছিল না, ঈর্ষাকাতর লোকও কম ছিল না। বুদ্ধদেব বসু তাঁর সম্পর্কে ঈর্ষাকাতর মন্তব্য করেছেন, ‘শনিবারের চিঠি’ তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনায় লিখেছেন, কিন্তু তিনি ছিলেন নিশ্চুপ। নজরুলের জীবনবোধ এবং চিন্তাধারার সহজ গতি, আবেগের আগুনভরা কবিতা, মানুষের হৃদয়ভরা গান বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া আর কারও মাঝে দেখা যায় না। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অনেক বড়, মানবতার জয়গান গেয়েছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে সেই আদর্শ বজায় রেখেছিলেন। তাই বাংলা সাহিত্যে নজরুল স্বতন্ত্র ও অনন্য।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
ড. তাহা ইয়াসিন

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ। তিনি ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চিন্তাকে যুগ-মানসে ধারণ করেছিলেন। সমকালে মানুষের অন্তরের আকৃতিকে তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। সাহিত্যের ক্ষেত্রে ছিলেন গতিময়তার প্রতীক এবং জীবন-যাপনে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাঁর কালে যৌবনদীপ্ত তারুণ্যের এমন নজির আর নেই। স্বদেশের সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় তিনি ছিলেন নির্ভীক। সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন আপসহীন। অধিকাংশ লেখক-বুদ্ধিজীবী শাসনদণ্ডের কাছে যেমন সর্বকালে আত্মসমর্পণ করে থাকেন, নজরুল ছিলেন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে ঘোষণা করেছিলেন ‘উন্নত মম শির’। তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন, সংগ্রামী, গণবাদী ও সাম্যবাদী কবি। তাঁর পূর্বে সাহিত্য-সংস্কৃতি, শাস্ত্র ও সমাজ-সংস্কারমূলক রচনা আর কারও মাধ্যমে ফুটে ওঠেনি। সাহিত্যকে তিনি সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনতা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় সারা দেশে বিশ ও ত্রিশের দশকে রাজনৈতিক যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে সে আন্দোলনের একজন সৈনিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। সরাসরি রাজনৈতিক ফ্রন্টে না থেকে সাহিত্য রচনার মাধ্যমেও যে মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করা যায়, তিনি তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর আগে অনেক সাহিত্যিকের গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে কিন্তু তাদের কাউকে জেল খাটতে হয়নি। নজরুলের অনেক গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়। গ্রন্থ নিষিদ্ধ হওয়া ছাড়াও একটি কবিতার (আনন্দময়ীর আগমনে) জন্য তিনি পুরো এক বছর জেল খাটেন।
নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ বিশ শতকের অসন্তুষ্ট ক্ষুব্ধ বাঙালি মানসের প্রোজ্জ্বল প্রতীক। নতুন আবেগের রূপায়ণে পুরোনো আঙ্গিক ও ভাষার অকিঞ্চিৎকরতা শিল্পীকে দুঃসাহসী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে। বিদ্রোহীর ‘আমি’ কেবল কৰি নিজে নন বরং কোনো উদ্দিষ্ট শ্রোতার আত্মশক্তিই বিদ্রোহীর কেন্দ্রীয় বিষয়। এই উদ্দিষ্ট তাঁর সমকালীন সমাজ। ব্যাপক বিদ্রোহের ভেতরে যার জাগরণ সে জাগরণ তিনি কামনা করেছিলেন। উৎপীড়কের উৎখাত এবং উৎপীড়িতের মুক্তি হলেই সংগ্রাম শেষ হবে, অন্যথায় নয়। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি বিদ্রোহীতে দিয়েছেন।
তিনি ‘নবযুগ’, ‘ধূমকেতু’, ‘লাঙল’ পত্রিকা পরিচালনা করেন। সাংবাদিক হিসেবেও কবিকে দেখা যায় কাব্যিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সাংবাদিক হিসেবে। সংবাদ শিরোনাম, বিজ্ঞাপনের ভাষা, সংবাদ সংক্ষিপ্তকরণ এবং জ্বালাময়ী সম্পাদকীয় লেখার কৌশল তাঁকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। পত্রিকাগুলোর বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলোর মাঝেও তাঁর দেশমাতৃকার নানা সমস্যাবলি উদ্ঘাটিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এগুলোর আবেদন কালোত্তীর্ণ হয়ে আজও সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। নতুন করে জেগে উঠতে চেতনার সঞ্চার করে। বাঙালি পল্টনে থাকার সময় নজরুল রুশ বিপ্লব সম্পর্কে জেনেছিলেন। করাচির সেনা ব্যারাকে তিনি রুশ বিপ্লবের ঘটনাবলিসংবলিত বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা জোগাড় করে গোপনে পড়তেন। সেই প্রভাবও সাহিত্যিক-সাংবাদিক জীবনে পড়ে। তিনি শ্রমিকশ্রেণির শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘দি লেবার স্বরাজ পার্টি অব ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নামে একটি দল গঠন করেন এবং সেটির মুখপাত্র হিসেবে ‘লাঙল’ নামক পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। এই পার্টির স্বার্থে তিনি নিদারুণ আর্থিক দুর্দশাও সহ্য করেন। এই পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেন ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসের অনুবাদ, কার্ল মার্ক্সের জীবনী এবং অনুবাদ করেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল। শুধু দল গঠন, পত্রিকা প্রকাশ করেই তিনি থেমে থাকেননি, ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে পূর্ববঙ্গে কেন্দ্রীয় আইন সভার নির্বাচনও করেন। সমস্ত ঢাকা বিভাগ অর্থাৎ ঢাকা, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার জন্য দুটি মুসলিম আসন সংরক্ষিত ছিল। এই আসনে মুসলমান ভোটাররাই কেবল ভোট দিতে পারতেন। তখন সম্পত্তির ভিত্তিতে ভোটাধিকার দেওয়া হতো। ‘ভোটার ছিলেন মোট ১৮,১১৬ জন।’ ভোটার ছিলেন সম্পদশালী মুসলমানেরা। এরা নজরুলের লেখায় খুশি ছিলেন না বরং তাঁকে কাফের আখ্যা দিয়েছিলেন। ফলে ঘটনা যা হওয়ার তাই হয়। শেষ পর্যন্ত নজরুলের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
মুসলমান সমাজের গোঁড়ামিকে আঘাত করার জন্য গোঁড়া মুসলমানেরা তাঁকে পছন্দ করতেন না। বিত্তশালী ভোটারদের ভোটে তাঁদেরই প্রার্থী বরিশালের জমিদার ইসমাইল চৌধুরী এবং পরবর্তীকালে নাইট উপাধি পাওয়া আবদুল হালিম গজনবি জয়লাভ করেন। এরপর নজরুল কৃষ্ণনগরে ফিরে গিয়ে দেখেন আর্থিক অনটনে স্ত্রী-পুত্রের জীবন ওষ্ঠাগত। সেই পরিস্থিতিকে সর্বংসহা শাশুড়ি প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে সামাল দেন। নজরুল এই দুর্দিনে লেখেন ‘দারিদ্র্য’ কবিতাটি। নিষ্ঠুর বাস্তবের নির্মম কশাঘাত তাঁকে সাহায্য করেছিল মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরতে। সর্বকালেই নিঃসঙ্গ, একলা মানুষ অসহায়। নজরুল লেখনী ধারণ করেছিলেন শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুক্তির এবং জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে। এ জন্য তিনি বসে বসে শুধু লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে রাজনৈতিক দল গঠন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এসব কাজের মাধ্যমে জনমানুষের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে আসেন। চেষ্টা তিনি কোনো দিক থেকে কম করেননি। কিন্তু প্রতিভাবান এবং জনস্বার্থে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ জনগণের কাছে প্রিয় হন খুব কম। এসবের পরেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন মুক্তিকামী মানুষের প্রিয় কবি।
অভাব-অনটন ছিল তাঁর চিরসাথি। কিন্তু মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল প্রগাঢ়। অভাব ছিল সংসারে অথচ হৃদয় ছিল পূর্ণ, মনে ছিলেন ঐশ্বর্যশালী। অর্থকে তিনি গ্রাহ্য করেননি এবং অর্থের প্রতি তাঁর মোহ ছিল না। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধায় তিনি ছিলেন আদর্শ পুরুষ। সাহিত্যিক মহলে তিনি বিদ্রোহী কবি আর সংগীতজগতে ছিলেন সবার কাজীদা বলে পরিচিত। বিশ্বাসে এবং আচরণে তিনি ছিলেন আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষ।
চিন্তায় নজরুল যেমন ছিলেন মুক্ত মানুষ, তেমনি বাস্তবজীবনেও ছিলেন উদার।
সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নজরুলের ঘনিষ্ঠজনদের একজন। তিনি নজরুল সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাও চমৎকার, ‘চোখ দুটি যেন পেয়ালা, কখনো সে পেয়ালা খালি নেই প্রাণের অরুণরসে সদাই ভরপুর। গলাটি সারসের মত পাতলা নয়, পুরুষের গলা যেমন হওয়া উচিত তেমনি সবল, বীর্য-ব্যঞ্জক। গলার স্বরটি ছিল ভারী, গলায় যে সুর খেলত বেশি তা বলতে পারিনে, কিন্তু সেই মোটা গলার সুরে ছিল জাদু।...স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর দেহ, ছন্দোময় পদক্ষেপ, বহুজনের মধ্যে তাঁকে দূর থেকে চেনা যায় যে এ মানুষ সাধারণ মানুষ নয়। হাসির ঝলকে আসর জমিয়ে রাখেন একাই, আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করেন। কেউ তাঁকে কখনো হতাশ, বিপদগ্রস্ত দেখেছেন বলেন না। একমাত্র তাঁরা বলেছেন যাঁরা স্ত্রীর অসুখের সময় চিকিৎসার জন্য উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করতে দেখেছেন, পুত্র বুলবুলের মৃত্যুর পরের দিনগুলোতে দেখেছেন। তা না হলে কাজী নজরুলকে মনে করলে হাসিখুশি, দরদী, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা একজন মানুষের চেহারা স্মৃতিতে ভেসে ওঠে।’
তাঁকে নিয়ে আলোচনার শেষ ছিল না, অনেক রটনাও ছিল। বন্ধুর যেমন শেষ ছিল না, ঈর্ষাকাতর লোকও কম ছিল না। বুদ্ধদেব বসু তাঁর সম্পর্কে ঈর্ষাকাতর মন্তব্য করেছেন, ‘শনিবারের চিঠি’ তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনায় লিখেছেন, কিন্তু তিনি ছিলেন নিশ্চুপ। নজরুলের জীবনবোধ এবং চিন্তাধারার সহজ গতি, আবেগের আগুনভরা কবিতা, মানুষের হৃদয়ভরা গান বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া আর কারও মাঝে দেখা যায় না। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অনেক বড়, মানবতার জয়গান গেয়েছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে সেই আদর্শ বজায় রেখেছিলেন। তাই বাংলা সাহিত্যে নজরুল স্বতন্ত্র ও অনন্য।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ। তিনি ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চিন্তাকে যুগ-মানসে ধারণ করেছিলেন। সমকালে মানুষের অন্তরের আকৃতিকে তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। সাহিত্যের ক্ষেত্রে ছিলেন গতিময়তার প্রতীক এবং জীবন-যাপনে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাঁর কালে যৌবনদীপ্ত তারুণ্যের এমন নজির আর নেই। স্বদেশের সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় তিনি ছিলেন নির্ভীক। সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন আপসহীন। অধিকাংশ লেখক-বুদ্ধিজীবী শাসনদণ্ডের কাছে যেমন সর্বকালে আত্মসমর্পণ করে থাকেন, নজরুল ছিলেন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে ঘোষণা করেছিলেন ‘উন্নত মম শির’। তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন, সংগ্রামী, গণবাদী ও সাম্যবাদী কবি। তাঁর পূর্বে সাহিত্য-সংস্কৃতি, শাস্ত্র ও সমাজ-সংস্কারমূলক রচনা আর কারও মাধ্যমে ফুটে ওঠেনি। সাহিত্যকে তিনি সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনতা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় সারা দেশে বিশ ও ত্রিশের দশকে রাজনৈতিক যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে সে আন্দোলনের একজন সৈনিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। সরাসরি রাজনৈতিক ফ্রন্টে না থেকে সাহিত্য রচনার মাধ্যমেও যে মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করা যায়, তিনি তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর আগে অনেক সাহিত্যিকের গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে কিন্তু তাদের কাউকে জেল খাটতে হয়নি। নজরুলের অনেক গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়। গ্রন্থ নিষিদ্ধ হওয়া ছাড়াও একটি কবিতার (আনন্দময়ীর আগমনে) জন্য তিনি পুরো এক বছর জেল খাটেন।
নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ বিশ শতকের অসন্তুষ্ট ক্ষুব্ধ বাঙালি মানসের প্রোজ্জ্বল প্রতীক। নতুন আবেগের রূপায়ণে পুরোনো আঙ্গিক ও ভাষার অকিঞ্চিৎকরতা শিল্পীকে দুঃসাহসী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে। বিদ্রোহীর ‘আমি’ কেবল কৰি নিজে নন বরং কোনো উদ্দিষ্ট শ্রোতার আত্মশক্তিই বিদ্রোহীর কেন্দ্রীয় বিষয়। এই উদ্দিষ্ট তাঁর সমকালীন সমাজ। ব্যাপক বিদ্রোহের ভেতরে যার জাগরণ সে জাগরণ তিনি কামনা করেছিলেন। উৎপীড়কের উৎখাত এবং উৎপীড়িতের মুক্তি হলেই সংগ্রাম শেষ হবে, অন্যথায় নয়। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি বিদ্রোহীতে দিয়েছেন।
তিনি ‘নবযুগ’, ‘ধূমকেতু’, ‘লাঙল’ পত্রিকা পরিচালনা করেন। সাংবাদিক হিসেবেও কবিকে দেখা যায় কাব্যিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সাংবাদিক হিসেবে। সংবাদ শিরোনাম, বিজ্ঞাপনের ভাষা, সংবাদ সংক্ষিপ্তকরণ এবং জ্বালাময়ী সম্পাদকীয় লেখার কৌশল তাঁকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। পত্রিকাগুলোর বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলোর মাঝেও তাঁর দেশমাতৃকার নানা সমস্যাবলি উদ্ঘাটিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এগুলোর আবেদন কালোত্তীর্ণ হয়ে আজও সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। নতুন করে জেগে উঠতে চেতনার সঞ্চার করে। বাঙালি পল্টনে থাকার সময় নজরুল রুশ বিপ্লব সম্পর্কে জেনেছিলেন। করাচির সেনা ব্যারাকে তিনি রুশ বিপ্লবের ঘটনাবলিসংবলিত বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা জোগাড় করে গোপনে পড়তেন। সেই প্রভাবও সাহিত্যিক-সাংবাদিক জীবনে পড়ে। তিনি শ্রমিকশ্রেণির শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘দি লেবার স্বরাজ পার্টি অব ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নামে একটি দল গঠন করেন এবং সেটির মুখপাত্র হিসেবে ‘লাঙল’ নামক পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। এই পার্টির স্বার্থে তিনি নিদারুণ আর্থিক দুর্দশাও সহ্য করেন। এই পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেন ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসের অনুবাদ, কার্ল মার্ক্সের জীবনী এবং অনুবাদ করেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল। শুধু দল গঠন, পত্রিকা প্রকাশ করেই তিনি থেমে থাকেননি, ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে পূর্ববঙ্গে কেন্দ্রীয় আইন সভার নির্বাচনও করেন। সমস্ত ঢাকা বিভাগ অর্থাৎ ঢাকা, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার জন্য দুটি মুসলিম আসন সংরক্ষিত ছিল। এই আসনে মুসলমান ভোটাররাই কেবল ভোট দিতে পারতেন। তখন সম্পত্তির ভিত্তিতে ভোটাধিকার দেওয়া হতো। ‘ভোটার ছিলেন মোট ১৮,১১৬ জন।’ ভোটার ছিলেন সম্পদশালী মুসলমানেরা। এরা নজরুলের লেখায় খুশি ছিলেন না বরং তাঁকে কাফের আখ্যা দিয়েছিলেন। ফলে ঘটনা যা হওয়ার তাই হয়। শেষ পর্যন্ত নজরুলের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
মুসলমান সমাজের গোঁড়ামিকে আঘাত করার জন্য গোঁড়া মুসলমানেরা তাঁকে পছন্দ করতেন না। বিত্তশালী ভোটারদের ভোটে তাঁদেরই প্রার্থী বরিশালের জমিদার ইসমাইল চৌধুরী এবং পরবর্তীকালে নাইট উপাধি পাওয়া আবদুল হালিম গজনবি জয়লাভ করেন। এরপর নজরুল কৃষ্ণনগরে ফিরে গিয়ে দেখেন আর্থিক অনটনে স্ত্রী-পুত্রের জীবন ওষ্ঠাগত। সেই পরিস্থিতিকে সর্বংসহা শাশুড়ি প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে সামাল দেন। নজরুল এই দুর্দিনে লেখেন ‘দারিদ্র্য’ কবিতাটি। নিষ্ঠুর বাস্তবের নির্মম কশাঘাত তাঁকে সাহায্য করেছিল মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরতে। সর্বকালেই নিঃসঙ্গ, একলা মানুষ অসহায়। নজরুল লেখনী ধারণ করেছিলেন শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুক্তির এবং জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে। এ জন্য তিনি বসে বসে শুধু লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে রাজনৈতিক দল গঠন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এসব কাজের মাধ্যমে জনমানুষের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে আসেন। চেষ্টা তিনি কোনো দিক থেকে কম করেননি। কিন্তু প্রতিভাবান এবং জনস্বার্থে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ জনগণের কাছে প্রিয় হন খুব কম। এসবের পরেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন মুক্তিকামী মানুষের প্রিয় কবি।
অভাব-অনটন ছিল তাঁর চিরসাথি। কিন্তু মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল প্রগাঢ়। অভাব ছিল সংসারে অথচ হৃদয় ছিল পূর্ণ, মনে ছিলেন ঐশ্বর্যশালী। অর্থকে তিনি গ্রাহ্য করেননি এবং অর্থের প্রতি তাঁর মোহ ছিল না। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধায় তিনি ছিলেন আদর্শ পুরুষ। সাহিত্যিক মহলে তিনি বিদ্রোহী কবি আর সংগীতজগতে ছিলেন সবার কাজীদা বলে পরিচিত। বিশ্বাসে এবং আচরণে তিনি ছিলেন আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষ।
চিন্তায় নজরুল যেমন ছিলেন মুক্ত মানুষ, তেমনি বাস্তবজীবনেও ছিলেন উদার।
সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নজরুলের ঘনিষ্ঠজনদের একজন। তিনি নজরুল সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাও চমৎকার, ‘চোখ দুটি যেন পেয়ালা, কখনো সে পেয়ালা খালি নেই প্রাণের অরুণরসে সদাই ভরপুর। গলাটি সারসের মত পাতলা নয়, পুরুষের গলা যেমন হওয়া উচিত তেমনি সবল, বীর্য-ব্যঞ্জক। গলার স্বরটি ছিল ভারী, গলায় যে সুর খেলত বেশি তা বলতে পারিনে, কিন্তু সেই মোটা গলার সুরে ছিল জাদু।...স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর দেহ, ছন্দোময় পদক্ষেপ, বহুজনের মধ্যে তাঁকে দূর থেকে চেনা যায় যে এ মানুষ সাধারণ মানুষ নয়। হাসির ঝলকে আসর জমিয়ে রাখেন একাই, আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করেন। কেউ তাঁকে কখনো হতাশ, বিপদগ্রস্ত দেখেছেন বলেন না। একমাত্র তাঁরা বলেছেন যাঁরা স্ত্রীর অসুখের সময় চিকিৎসার জন্য উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করতে দেখেছেন, পুত্র বুলবুলের মৃত্যুর পরের দিনগুলোতে দেখেছেন। তা না হলে কাজী নজরুলকে মনে করলে হাসিখুশি, দরদী, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা একজন মানুষের চেহারা স্মৃতিতে ভেসে ওঠে।’
তাঁকে নিয়ে আলোচনার শেষ ছিল না, অনেক রটনাও ছিল। বন্ধুর যেমন শেষ ছিল না, ঈর্ষাকাতর লোকও কম ছিল না। বুদ্ধদেব বসু তাঁর সম্পর্কে ঈর্ষাকাতর মন্তব্য করেছেন, ‘শনিবারের চিঠি’ তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনায় লিখেছেন, কিন্তু তিনি ছিলেন নিশ্চুপ। নজরুলের জীবনবোধ এবং চিন্তাধারার সহজ গতি, আবেগের আগুনভরা কবিতা, মানুষের হৃদয়ভরা গান বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া আর কারও মাঝে দেখা যায় না। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অনেক বড়, মানবতার জয়গান গেয়েছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে সেই আদর্শ বজায় রেখেছিলেন। তাই বাংলা সাহিত্যে নজরুল স্বতন্ত্র ও অনন্য।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৪ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৫ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ...
২৫ মে ২০২৫
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৫ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৫ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ...
২৫ মে ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৪ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৫ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ...
২৫ মে ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৪ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ...
২৫ মে ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৪ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৯ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৫ দিন আগে