মহিউদ্দীন আহমেদ
মহিউদ্দীন আহমেদের গল্প ‘ট্রিপল নাইন’
দরজা কিঞ্চিৎ খুলে পাঁচ টাকার একটি কয়েন ভিক্ষুকের উদ্দেশে বাড়িয়ে ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন লামিসার হাত টেনে ধরে। প্রচণ্ড ভয় ও ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে লামিসা। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বটে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। তখন বাইরে থেকে ভিক্ষুকরূপী আগন্তুক ধাক্কা মেরে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
আকিব! লামিসা বিস্ফারিত চোখে আকিবের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তুমি!’
আকিব বলে, ‘হ্যাঁ আমি। দেখতে এলাম তুমি কেমন সুখে আছ।’
লামিসা বলে, ‘তুমি কেন এসেছ? কেউ দেখে ফেললে আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে। প্লিজ তুমি চলে যাও।’
আকিব বলে, ‘যাব তো অবশ্যই। তার আগে তোমার সুখের সংসারে আগুন জ্বালিয়ে যাব।’
লামিসা অসহায় দৃষ্টিতে আকিবের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আকিব বলে, ‘কী হলো? থামলে কেন? জানতে চাও, কেন তোমার সংসারে আগুন জ্বালাব?’
লামিসা বলে, ‘এসব করে তোমার লাভ কী?’
‘আমি লাভ-ক্ষতির ঊর্ধ্বে আছি। এসব হিসাব করা তোমাদের মতো লোভী মেয়েদের কাজ। আমার সাথে এসব যায় না।’
‘আমি কীভাবে লোভী হলাম?’
‘সে ব্যাখ্যাও দিতে হবে? ঠিক আছে দিচ্ছি।’ দেয়ালে টানানো লামিসা-অন্তুর যুগল ছবির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে আকিব বলে, ‘আমার সঙ্গে রিলেশন থাকা অবস্থায় তুমি এই অন্তু ভদ্রলোককে বিয়ে করেছ। কারণ, আমার চাকরি-বাকরি নেই। কিন্তু এই ভদ্রলোক বুয়েটের শিক্ষক। লোভী না হলে এমন কাজ কেউ করে?’
‘ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছ আকিব। আমি বিয়ে করিনি। আমার মা-বাবা আমাকে বিয়ে দিয়েছে।’
‘বাহ! কি সহজ উত্তর! তুমি বিয়ে করোনি। তোমার মা-বাবা তোমাকে জোর করে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে, এটাও বলো?’
‘যতটুকু সত্যি ততটুকুই বলেছি। আর মনে করে দেখ, বিয়ের আগে আমি তোমাকে সব বলেছিলাম। আমার বাবার কাছে প্রস্তাব পাঠাতে বলেছিলাম।’
‘প্রস্তাব কি পাঠাইনি? তোমার বাবা আমার বাবাকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। ভুলে গেছ?’
‘না। সব মনে আছে। কিন্তু তখন আমার কী করার ছিল?’
‘তোমাকে আমি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে বলেছিলাম।’
‘হ্যাঁ বলেছিলে। তখন আমি কী বলেছিলাম? বলেছিলাম, পালিয়ে বিয়ে করার মতো সাহস আমার নেই।’
‘তা থাকবে কেন? পালিয়ে গেলে কি এখন এমন সুন্দর বাসায় থাকতে পারতে? না। থাকতে হতো ভাঙা ঘরে। এক বেলা খাবার জুটত। অন্য বেলা জুটত না। এসব ভেবেই কবুল বলেছ। তোমার মতো লোভী আর স্বার্থপর মেয়েরাই কেবল এমনটা করতে পারে। কিন্তু যাদের মনে প্রেম আছে, যারা সত্যিকারে কাউকে ভালোবাসে, তারা এমনটা করতে পারে না।’
‘ঠিক আছে। আমি লোভী। আমি স্বার্থপর। আর কী বলবে, বলো?’
‘না। আর কিছু বলব না। অনেক বলেছি। এখন কিছু করব। তুমি চেয়ে চেয়ে দেখবে।’
দেয়ালে টানানো লামিসা-অন্তুর ছবিটা খুলে ছুড়ে মারে আকিব। প্রচণ্ড শব্দে সেটি ভেঙে খান খান হয়ে যায়। ফটোফ্রেম থেকে খুলে ছবিটা হাতে নেয় আকিব। পকেট থেকে গ্যাস লাইটার বের করে। আগুন ধরিয়ে দেয় ছবিটার এক কোনায়। ছবিটা পুড়ে ছাই হয়ে ঝরে পড়ে ফ্লোরে।
কাঁদতে থাকে লামিসা। থরথর করে কাঁপতে থাকে। নিজের অজান্তে ঝরা ফুলের মতো চুপটি করে বসে পড়ে সোফায়।
আকিব তেড়ে যায় লামিসার দিকে। তার কাঁধে দুহাত দিয়ে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে বলে, ‘আমি একটা ছবি পোড়ালাম মাত্র। আর তুমি কী করেছ? আমার হৃদয় পুড়িয়েছ। আমি প্রতিদিন জ্বলছি। সারা জীবন জ্বলব।’
লামিসা ভয়ার্ত চোখে আকিবের দিকে তাকিয়ে থাকে।
‘কথা বলো। আমার হৃদয়ে তুমি আগুন জ্বালিয়ে দাওনি? উত্তর দাও?’
লামিসা আকিবের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলতে পারে না।
আকিব বলে, ‘আমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছি। আমি খেতে পারি না, ঘুমাতে পারি না। চিন্তা করতে পারি না। আমার রাত-দিন সমান হয়ে গেছে। তুমি কি বুঝতে পারো, আমি কতটা যন্ত্রণার মধ্যে আছি? অথচ দাখো, তুমি দিব্বি সুখের জীবন কাটাচ্ছ।’
লামিসা উঠে দাঁড়ায়। আকিবের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে। বলে, ‘না আকিব। তুমি যা ভাবছ, তা নয়। আমি সুখে নেই। বিশ্বাস করো, প্রতিটা মুহূর্ত তোমার কথা আমার মনে পড়ে। প্রতিটা মুহূর্ত আমি তোমার কথা ভাবি। হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। আমি স্বার্থপর। স্বার্থপর বলেই তো বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু রাজি হওয়ার আগে কী হয়েছিল তা কি জানো? জানো না। আমি আমার বাবার মুখের ওপর কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম এ বিয়েতে আমি রাজি নই। তখন আমার বাবার হার্ট স্ট্রোক হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। তুমিই বলো, এই পরিস্থিতিতে আমি আর কী করতে পারতাম?’
‘এসব ফিল্মি কাহিনি শুনে আমার লাভ নেই। যদি সত্যিই আমার কথা তোমার মনে পড়ে, যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো তাহলে এক্ষুনি চলো আমার সাথে। আমরা এই শহর ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাব। কেউ আমাদের খুঁজে পাবে না।’
‘না। সেটা আর সম্ভব নয়।’
‘প্রমাণ হলো তো তুমি স্বার্থপর? আসলে তুমি এই সুখের সংসার রেখে কোথাও যাবে না।’
‘তুমি বুঝতে পারছ না আকিব। তোমার মাথা ঠিক নেই।’
‘হ্যাঁ, আমার মাথা ঠিক নেই। তুমি আমার মাথা ঠিক থাকতে দাওনি। তুমি প্রতিদিন ঘুমাও। আমি কি ঘুমাই? তুমি প্রতিদিন স্বামীর সাথে বসে চা খাও। আমি কি চা খাই?’
‘আমি সবকিছুর জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাই আকিব। তুমি এখন যাও। দোহাই তোমার। একটু পরেই ও চলে আসবে। এসে যদি তোমাকে দেখে তাহলে খুব কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’
‘সে জন্যই তো আমি অপেক্ষা করছি। তোমার জামাইয়ের সাথে দেখা না করে যাব মনে করেছ? তোমাদের ছবিতে আগুন দিয়েছি সেটা তুমি অনায়াসে গোপন করে ফেলতে পারবে। কিন্তু তোমার জামাইয়ের সাথে দেখা হলে সব প্রকাশ পেয়ে যাবে। কিছুই আর গোপন থাকবে না।’
‘কেমন কথা বলছ তুমি? যাকে তুমি ভালোবাস তাকেই বিপদে ফেলতে চাইছ, এই নাকি তোমার ভালোবাসার নমুনা? এটা তো ভালোবাসা নয়। এটা হলো প্রতিশোধ।’
‘প্রতিশোধ হলে প্রতিশোধ।’—বলে সোফায় বসে পড়ে আকিব। তারপর বলে, ‘পানি খাব। পানি দাও।’
লামিসা এক গ্লাস পানি এনে দেয়।
আকিব ঢকঢক করে পানি খেয়ে গ্লাস ফেরত দেয়।
লামিসা বলে, ‘ফ্রিজে পায়েস আছে। খাবে?’
‘ওগুলো অন্তুদের খাবার। আকিবদের খাবার নয়।’—বলে রিমোট টিপে টিভি অন করে।
লামিসা বলে, ‘আহ কী করছ তুমি? টিভি ছাড়ছ কেন? অনেক হয়েছে। তুমি এখন যাও!’
‘বললাম না তোমার অন্তু জামাইয়ের সাথে দেখা না করে আমি যাব না।’
লামিসা আকিবের পাশে গিয়ে বসে। টিভি বন্ধ করে দেয়। তারপর বলে, ‘বুঝলাম, অন্তু তোমাকে দেখলে সত্যি সত্যি আমার সংসারে আগুন লাগবে। আমার সংসার পুড়ে যাবে। তাতে তোমার কী লাভটা হবে, বলো?’
‘আমার অনেক লাভ হবে। যা আমার ছিল আমি তা আবার ফিরে পাব। তুমি আমার হবে। একটুও কি বুঝতে পারছ না তোমাকে ছাড়া আমি কেমন আছি?’
‘মনে মনে আমি এখনো তোমারই আছি।’
‘মনে মনে থাকার কোনো বেইল নেই। তুমি যে আমার আছ সেটা আমি বাস্তবে দেখতে চাই।’
‘ঠিক আছে। আমাকে এক দিন সময় দাও।’
‘সময় দেওয়া যাবে না। সময় দিলে তুমি সাবধান হয়ে যাবে। আমি তোমার টিকিটিরও নাগাল পাব না।’—আকিব হঠাৎ উঠে লামিসার বেডরুমের দিকে যেতে থাকে।
বেডরুমে যাওয়ার পথে লম্বা প্যাসেজ। একপাশে ফ্রিজ। অন্য পাশে জুতোর বাক্স। দুপাশের দেয়ালে সুদৃশ্য পেইন্টিং।
আকিব একটি পেইন্টিং ভাঙে। জুতার বাক্সটি লাথি মেরে ফেলে দেয়।
বেলি ফুলের সুগন্ধ ভরা লামিসার আলো-আঁধারি শোবার ঘর। আকিব আলো জ্বালে। বিছানার দিকে তাকায়। আকাশি রঙের বেডশিটের ওপর দুটি বালিশ পাশাপাশি শুয়ে আছে। যেন তারা ফিসফিস করে কথা বলছে। আকিবের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। সে অন্তু আর লামিসাকে দেখতে পায়। অন্তু রোমান্টিক ভঙ্গিতে কী যেন বলছে। লামিসা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
আকিব সহ্য করতে পারে না। সে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে একটা শোপিস ছুড়ে মারে অন্তুর দিকে। কাচের শোপিস। সেটি ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে সারা ঘরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়।
কাচ ভাঙার শব্দে লামিসা দৌড়ে আসে। এসে দেখে আকিব একটার পর একটা জিনিসপত্র ভেঙে চলেছে। লামিসা চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘এসব কী করছ আকিব? তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?’
আকিব বলে, ‘হ্যাঁ। আমি পাগল হয়ে গেছি। আমি উন্মাদ হয়ে গেছি।’
‘না আকিব, এসব বন্ধ করো। সবকিছুর একটা লিমিট থাকে। তুমি অলরেডি লিমিট ক্রস করে ফেলেছ। ইটস নট ফেয়ার।’
‘আরে কেবল তো শুরু। আরো অনেক কিছু বাকি আছে। আস্তে আস্তে সব দেখতে পাবে।’
‘তুমি এক্ষুনি আমার ঘর থেকে বেরোও।’
লামিসা ঘরে ঢুকতে গেলে আকিব তাকে বাধা দিয়ে বলে, ‘না। তুমি আসবে না।’
লামিসা বলে, ‘এটা আমার ঘর। আমি আসব না তো কে আসবে?’
‘বাড়াবাড়ি করো না লামিসা। বাড়াবাড়ি করলে তুমি কিন্তু খুন হয়ে যাবে।’
লামিসা থমকে যায়। দাঁড়িয়ে পড়ে।
আকিব বালিশ ছুড়ে মারে। বেডশিট তুলে তোশক ফেলে দেয়। পর্দা ধরে টানাটানি করে।
লামিসা ঘরে ঢোকার সাহস পায় না। সরে যায়।
যেকোনো সময় অন্তু চলে আসবে। সবকিছু জেনে যাবে। অবশ্য আকিবের ব্যাপারটা অন্তু জানে। লামিসা তাকে বলেছে। এটুকুই রক্ষা।
তাই বলে বাসার বর্তমান পরিস্থিতি কি অন্তু মেনে নিতে পারবে? কেউ পারে? এসব ভাবতে ভাবতে লামিসা মোবাইল তুলে নেয়। ৯৯৯ নাম্বারে কল করে।
মহিউদ্দীন আহমেদের গল্প ‘ট্রিপল নাইন’
দরজা কিঞ্চিৎ খুলে পাঁচ টাকার একটি কয়েন ভিক্ষুকের উদ্দেশে বাড়িয়ে ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন লামিসার হাত টেনে ধরে। প্রচণ্ড ভয় ও ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে লামিসা। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বটে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। তখন বাইরে থেকে ভিক্ষুকরূপী আগন্তুক ধাক্কা মেরে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
আকিব! লামিসা বিস্ফারিত চোখে আকিবের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তুমি!’
আকিব বলে, ‘হ্যাঁ আমি। দেখতে এলাম তুমি কেমন সুখে আছ।’
লামিসা বলে, ‘তুমি কেন এসেছ? কেউ দেখে ফেললে আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে। প্লিজ তুমি চলে যাও।’
আকিব বলে, ‘যাব তো অবশ্যই। তার আগে তোমার সুখের সংসারে আগুন জ্বালিয়ে যাব।’
লামিসা অসহায় দৃষ্টিতে আকিবের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আকিব বলে, ‘কী হলো? থামলে কেন? জানতে চাও, কেন তোমার সংসারে আগুন জ্বালাব?’
লামিসা বলে, ‘এসব করে তোমার লাভ কী?’
‘আমি লাভ-ক্ষতির ঊর্ধ্বে আছি। এসব হিসাব করা তোমাদের মতো লোভী মেয়েদের কাজ। আমার সাথে এসব যায় না।’
‘আমি কীভাবে লোভী হলাম?’
‘সে ব্যাখ্যাও দিতে হবে? ঠিক আছে দিচ্ছি।’ দেয়ালে টানানো লামিসা-অন্তুর যুগল ছবির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে আকিব বলে, ‘আমার সঙ্গে রিলেশন থাকা অবস্থায় তুমি এই অন্তু ভদ্রলোককে বিয়ে করেছ। কারণ, আমার চাকরি-বাকরি নেই। কিন্তু এই ভদ্রলোক বুয়েটের শিক্ষক। লোভী না হলে এমন কাজ কেউ করে?’
‘ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছ আকিব। আমি বিয়ে করিনি। আমার মা-বাবা আমাকে বিয়ে দিয়েছে।’
‘বাহ! কি সহজ উত্তর! তুমি বিয়ে করোনি। তোমার মা-বাবা তোমাকে জোর করে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে, এটাও বলো?’
‘যতটুকু সত্যি ততটুকুই বলেছি। আর মনে করে দেখ, বিয়ের আগে আমি তোমাকে সব বলেছিলাম। আমার বাবার কাছে প্রস্তাব পাঠাতে বলেছিলাম।’
‘প্রস্তাব কি পাঠাইনি? তোমার বাবা আমার বাবাকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। ভুলে গেছ?’
‘না। সব মনে আছে। কিন্তু তখন আমার কী করার ছিল?’
‘তোমাকে আমি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে বলেছিলাম।’
‘হ্যাঁ বলেছিলে। তখন আমি কী বলেছিলাম? বলেছিলাম, পালিয়ে বিয়ে করার মতো সাহস আমার নেই।’
‘তা থাকবে কেন? পালিয়ে গেলে কি এখন এমন সুন্দর বাসায় থাকতে পারতে? না। থাকতে হতো ভাঙা ঘরে। এক বেলা খাবার জুটত। অন্য বেলা জুটত না। এসব ভেবেই কবুল বলেছ। তোমার মতো লোভী আর স্বার্থপর মেয়েরাই কেবল এমনটা করতে পারে। কিন্তু যাদের মনে প্রেম আছে, যারা সত্যিকারে কাউকে ভালোবাসে, তারা এমনটা করতে পারে না।’
‘ঠিক আছে। আমি লোভী। আমি স্বার্থপর। আর কী বলবে, বলো?’
‘না। আর কিছু বলব না। অনেক বলেছি। এখন কিছু করব। তুমি চেয়ে চেয়ে দেখবে।’
দেয়ালে টানানো লামিসা-অন্তুর ছবিটা খুলে ছুড়ে মারে আকিব। প্রচণ্ড শব্দে সেটি ভেঙে খান খান হয়ে যায়। ফটোফ্রেম থেকে খুলে ছবিটা হাতে নেয় আকিব। পকেট থেকে গ্যাস লাইটার বের করে। আগুন ধরিয়ে দেয় ছবিটার এক কোনায়। ছবিটা পুড়ে ছাই হয়ে ঝরে পড়ে ফ্লোরে।
কাঁদতে থাকে লামিসা। থরথর করে কাঁপতে থাকে। নিজের অজান্তে ঝরা ফুলের মতো চুপটি করে বসে পড়ে সোফায়।
আকিব তেড়ে যায় লামিসার দিকে। তার কাঁধে দুহাত দিয়ে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে বলে, ‘আমি একটা ছবি পোড়ালাম মাত্র। আর তুমি কী করেছ? আমার হৃদয় পুড়িয়েছ। আমি প্রতিদিন জ্বলছি। সারা জীবন জ্বলব।’
লামিসা ভয়ার্ত চোখে আকিবের দিকে তাকিয়ে থাকে।
‘কথা বলো। আমার হৃদয়ে তুমি আগুন জ্বালিয়ে দাওনি? উত্তর দাও?’
লামিসা আকিবের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলতে পারে না।
আকিব বলে, ‘আমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছি। আমি খেতে পারি না, ঘুমাতে পারি না। চিন্তা করতে পারি না। আমার রাত-দিন সমান হয়ে গেছে। তুমি কি বুঝতে পারো, আমি কতটা যন্ত্রণার মধ্যে আছি? অথচ দাখো, তুমি দিব্বি সুখের জীবন কাটাচ্ছ।’
লামিসা উঠে দাঁড়ায়। আকিবের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে। বলে, ‘না আকিব। তুমি যা ভাবছ, তা নয়। আমি সুখে নেই। বিশ্বাস করো, প্রতিটা মুহূর্ত তোমার কথা আমার মনে পড়ে। প্রতিটা মুহূর্ত আমি তোমার কথা ভাবি। হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। আমি স্বার্থপর। স্বার্থপর বলেই তো বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু রাজি হওয়ার আগে কী হয়েছিল তা কি জানো? জানো না। আমি আমার বাবার মুখের ওপর কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম এ বিয়েতে আমি রাজি নই। তখন আমার বাবার হার্ট স্ট্রোক হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। তুমিই বলো, এই পরিস্থিতিতে আমি আর কী করতে পারতাম?’
‘এসব ফিল্মি কাহিনি শুনে আমার লাভ নেই। যদি সত্যিই আমার কথা তোমার মনে পড়ে, যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো তাহলে এক্ষুনি চলো আমার সাথে। আমরা এই শহর ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাব। কেউ আমাদের খুঁজে পাবে না।’
‘না। সেটা আর সম্ভব নয়।’
‘প্রমাণ হলো তো তুমি স্বার্থপর? আসলে তুমি এই সুখের সংসার রেখে কোথাও যাবে না।’
‘তুমি বুঝতে পারছ না আকিব। তোমার মাথা ঠিক নেই।’
‘হ্যাঁ, আমার মাথা ঠিক নেই। তুমি আমার মাথা ঠিক থাকতে দাওনি। তুমি প্রতিদিন ঘুমাও। আমি কি ঘুমাই? তুমি প্রতিদিন স্বামীর সাথে বসে চা খাও। আমি কি চা খাই?’
‘আমি সবকিছুর জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাই আকিব। তুমি এখন যাও। দোহাই তোমার। একটু পরেই ও চলে আসবে। এসে যদি তোমাকে দেখে তাহলে খুব কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’
‘সে জন্যই তো আমি অপেক্ষা করছি। তোমার জামাইয়ের সাথে দেখা না করে যাব মনে করেছ? তোমাদের ছবিতে আগুন দিয়েছি সেটা তুমি অনায়াসে গোপন করে ফেলতে পারবে। কিন্তু তোমার জামাইয়ের সাথে দেখা হলে সব প্রকাশ পেয়ে যাবে। কিছুই আর গোপন থাকবে না।’
‘কেমন কথা বলছ তুমি? যাকে তুমি ভালোবাস তাকেই বিপদে ফেলতে চাইছ, এই নাকি তোমার ভালোবাসার নমুনা? এটা তো ভালোবাসা নয়। এটা হলো প্রতিশোধ।’
‘প্রতিশোধ হলে প্রতিশোধ।’—বলে সোফায় বসে পড়ে আকিব। তারপর বলে, ‘পানি খাব। পানি দাও।’
লামিসা এক গ্লাস পানি এনে দেয়।
আকিব ঢকঢক করে পানি খেয়ে গ্লাস ফেরত দেয়।
লামিসা বলে, ‘ফ্রিজে পায়েস আছে। খাবে?’
‘ওগুলো অন্তুদের খাবার। আকিবদের খাবার নয়।’—বলে রিমোট টিপে টিভি অন করে।
লামিসা বলে, ‘আহ কী করছ তুমি? টিভি ছাড়ছ কেন? অনেক হয়েছে। তুমি এখন যাও!’
‘বললাম না তোমার অন্তু জামাইয়ের সাথে দেখা না করে আমি যাব না।’
লামিসা আকিবের পাশে গিয়ে বসে। টিভি বন্ধ করে দেয়। তারপর বলে, ‘বুঝলাম, অন্তু তোমাকে দেখলে সত্যি সত্যি আমার সংসারে আগুন লাগবে। আমার সংসার পুড়ে যাবে। তাতে তোমার কী লাভটা হবে, বলো?’
‘আমার অনেক লাভ হবে। যা আমার ছিল আমি তা আবার ফিরে পাব। তুমি আমার হবে। একটুও কি বুঝতে পারছ না তোমাকে ছাড়া আমি কেমন আছি?’
‘মনে মনে আমি এখনো তোমারই আছি।’
‘মনে মনে থাকার কোনো বেইল নেই। তুমি যে আমার আছ সেটা আমি বাস্তবে দেখতে চাই।’
‘ঠিক আছে। আমাকে এক দিন সময় দাও।’
‘সময় দেওয়া যাবে না। সময় দিলে তুমি সাবধান হয়ে যাবে। আমি তোমার টিকিটিরও নাগাল পাব না।’—আকিব হঠাৎ উঠে লামিসার বেডরুমের দিকে যেতে থাকে।
বেডরুমে যাওয়ার পথে লম্বা প্যাসেজ। একপাশে ফ্রিজ। অন্য পাশে জুতোর বাক্স। দুপাশের দেয়ালে সুদৃশ্য পেইন্টিং।
আকিব একটি পেইন্টিং ভাঙে। জুতার বাক্সটি লাথি মেরে ফেলে দেয়।
বেলি ফুলের সুগন্ধ ভরা লামিসার আলো-আঁধারি শোবার ঘর। আকিব আলো জ্বালে। বিছানার দিকে তাকায়। আকাশি রঙের বেডশিটের ওপর দুটি বালিশ পাশাপাশি শুয়ে আছে। যেন তারা ফিসফিস করে কথা বলছে। আকিবের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। সে অন্তু আর লামিসাকে দেখতে পায়। অন্তু রোমান্টিক ভঙ্গিতে কী যেন বলছে। লামিসা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
আকিব সহ্য করতে পারে না। সে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে একটা শোপিস ছুড়ে মারে অন্তুর দিকে। কাচের শোপিস। সেটি ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে সারা ঘরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়।
কাচ ভাঙার শব্দে লামিসা দৌড়ে আসে। এসে দেখে আকিব একটার পর একটা জিনিসপত্র ভেঙে চলেছে। লামিসা চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘এসব কী করছ আকিব? তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?’
আকিব বলে, ‘হ্যাঁ। আমি পাগল হয়ে গেছি। আমি উন্মাদ হয়ে গেছি।’
‘না আকিব, এসব বন্ধ করো। সবকিছুর একটা লিমিট থাকে। তুমি অলরেডি লিমিট ক্রস করে ফেলেছ। ইটস নট ফেয়ার।’
‘আরে কেবল তো শুরু। আরো অনেক কিছু বাকি আছে। আস্তে আস্তে সব দেখতে পাবে।’
‘তুমি এক্ষুনি আমার ঘর থেকে বেরোও।’
লামিসা ঘরে ঢুকতে গেলে আকিব তাকে বাধা দিয়ে বলে, ‘না। তুমি আসবে না।’
লামিসা বলে, ‘এটা আমার ঘর। আমি আসব না তো কে আসবে?’
‘বাড়াবাড়ি করো না লামিসা। বাড়াবাড়ি করলে তুমি কিন্তু খুন হয়ে যাবে।’
লামিসা থমকে যায়। দাঁড়িয়ে পড়ে।
আকিব বালিশ ছুড়ে মারে। বেডশিট তুলে তোশক ফেলে দেয়। পর্দা ধরে টানাটানি করে।
লামিসা ঘরে ঢোকার সাহস পায় না। সরে যায়।
যেকোনো সময় অন্তু চলে আসবে। সবকিছু জেনে যাবে। অবশ্য আকিবের ব্যাপারটা অন্তু জানে। লামিসা তাকে বলেছে। এটুকুই রক্ষা।
তাই বলে বাসার বর্তমান পরিস্থিতি কি অন্তু মেনে নিতে পারবে? কেউ পারে? এসব ভাবতে ভাবতে লামিসা মোবাইল তুলে নেয়। ৯৯৯ নাম্বারে কল করে।
হিমালয় পাই এর নতুন বই’ ডিটাচমেন্ট টু ডিপার্চার’ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি বাজারে এনেছে জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থা আদর্শ প্রকাশনী। বইটিতে মূলত উত্তর ভারতের বিভিন্ন শহর পরিভ্রমণের প্রেক্ষিতে লেখকের সোশিওলজিকাল, পলিটিক্যাল কালচারাল, হিস্টরিকাল, এনথ্রোপলজিকাল যেসব পর্যবেক্ষণ তৈরি হয়েছে সেগুলোকেই সোশ্যাল থিসিসরূ
১৪ দিন আগে‘স্বাধীনতা সাম্য সম্প্রীতির জন্য কবিতা’ স্লোগান নিয়ে শুরু হচ্ছে জাতীয় কবিতা উৎসব ২০২৫। আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কবিতার এই আসর। আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এটি জানানো হয়েছে...
২১ দিন আগেবাংলা একাডেমি ২০২৪ সালের ষাণ্মাসিক ফেলোশিপ এবং ছয়টি পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেছে। মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, বিজ্ঞান, শিল্পকলা এবং ভাষা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ফেলোশিপ পাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, নাটক এবং কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য মোট ছয়টি পুরস্কার দেওয়া হচ্
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪সূক্ষ্মচিন্তার খসড়াকে ধারণ করে শিল্প-সাহিত্য ভিত্তিক ছোটকাগজ ‘বামিহাল’। বগুড়ার সবুজ শ্যামল মায়াময় ‘বামিহাল’ গ্রামের নাম থেকেই এর নাম। ‘বামিহাল’ বিশ্বাস করে বাংলার আবহমান জীবন, মানুষ-প্রকৃতি কিংবা সুচিন্তার বিশ্বমুখী সূক্ষ্ম ভাবনার প্রকাশই আগামীর সবুজ-শ্যামল মানববসতি বিনির্মাণ করতে পারে...
২১ ডিসেম্বর ২০২৪