আব্দুর রহমান
তাইওয়ানকে ঐতিহাসিক ভূখণ্ড দাবি করে চীন। চীনের পাশে অরক্ষিত তাইওয়ান হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনীতির ঘুঁটি। সেই তাইওয়ানে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি কক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফর নিয়ে এক জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। এ নিয়ে সিনো-মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।
কিউবার মিসাইল সংকটের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘একটি রশির উভয় প্রান্ত ধরে সজোরে টানতে থাকলে দড়ির মাঝ বরাবর থাকা গিঁট কেবলই শক্ত হতে থাকবে।’ তাইওয়ানে পেলোসির সফর নিয়েও এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। পেলোসির সফর নিয়ে রাখঢাক থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিরোধ প্রকাশ্য হয়েছে।
পেলোসিকে বহনকারী একটি উড়োজাহাজ দুদিন আগে হাওয়াই থেকে উড্ডয়ন করেছিল তাইওয়ানের উদ্দেশে। জবাবে চীনা নৌবাহিনী মুহুর্মুহু গুলি ও রকেট ছুড়তে থাকে তাইওয়ান প্রণালিতে। পরে পেলোসি তাঁর উড়োজাহাজ ঘুরিয়ে চলে যান অন্য দিকে। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত পেলোসি তাঁর এশিয়া সফর শুরু করেছেন। তবে সফর তালিকায় তাইওয়ানের নাম রয়েছে কি না জানা যায়নি। সফরে প্রথম দেশ হিসেবে পেলোসি সিঙ্গাপুরে পৌঁছেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত আরও আগে। গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপকালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পেলোসির তাইওয়ান সফরের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, ‘আগুন নিয়ে খেললে পুড়তে হবে।’ এর একদিন পর, জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা উপ–রাষ্ট্রদূত গেং শুয়াংও প্রেসিডেন্টের সতর্কবার্তার পুনরাবৃত্তি করেন। এরপরও পেলোসি তাইওয়ান সফর করবেন কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে ১ আগস্ট মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, পেলোসির তাইওয়ান সফরের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
এখানেই মূলত সংকট এবং এই সংকট দেশ দুটিকে একটি স্নায়ুযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক রাজেশ রাজা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টে এক নিবন্ধে লিখেছেন, চীন–যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান একটি দ্বিমুখী স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দিতে পারে। তবে তাঁর মতে, এই দ্বন্দ্ব কোনোভাবেই রাশিয়া–যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধের মতো নয়, অনেক আলাদা।
এ প্রসঙ্গে সিএনএনের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জাখারি বি. উলফ বলেন, এই সংকটের ফলে বরং যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চীনের কালো ছায়া পড়তে যাচ্ছে।’ কারণ, চীন পেলোসির তাইওয়ান সফরকে ভালো চোখে দেখবে না তা সেটা স্পষ্ট। বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রও দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের নৌবাহিনী মোতায়েন করেছে। ফলে, সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। জাখারি দুই দেশের মধ্যকার সংকট যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর (চিপ) সংকট তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
পেলোসির সম্ভাব্য তাইওয়ান সফর নিয়ে হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের সাবেক এডিটর ইন চিফ ওয়াং শেংওয়েই পত্রিকাটিতে লিখিত এক নিবন্ধে বলেছেন, চীনা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে যেভাবে সতর্ক করেছেন তা থেকে এটি বিষয়টি স্পষ্ট যে, চীনের যা লক্ষ্য–উদ্দেশ্য তা যুক্তরাষ্ট্র আর কোনোভাবেই হালকাভাবে নিতে পারবে না।
সব মিলিয়ে, কোভিড মহামারি, রাশিয়া–ইউক্রেন সংকট এবং অন্যান্য কারণে বিশ্বজুড়েই যখন মন্দার আভাস তখন চীন–যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব যে বিশ্বব্যাপীই অস্বস্তি তৈরি করবে তা সহজেই অনুমেয়।
একই সঙ্গে, পেলোসির সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান ধরে রাখতে না পারা, চীনা প্রেসিডেন্ট এবং রাষ্ট্রদূতের সতর্কবার্তার জবাবে ওয়াশিংটনের আপাত নীরবতা থেকেও অনেক কিছু আন্দাজ করা যায়।
তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কি খর্বশক্তি হয়ে পড়ছে। কিংবা ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর কি পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষয়িষ্ণু প্রভাবের আরেকটি নমুনা হতে যাচ্ছে? এর জবাব পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, সিএনএন, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, দ্য প্রিন্ট
তাইওয়ানকে ঐতিহাসিক ভূখণ্ড দাবি করে চীন। চীনের পাশে অরক্ষিত তাইওয়ান হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনীতির ঘুঁটি। সেই তাইওয়ানে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি কক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফর নিয়ে এক জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। এ নিয়ে সিনো-মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।
কিউবার মিসাইল সংকটের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘একটি রশির উভয় প্রান্ত ধরে সজোরে টানতে থাকলে দড়ির মাঝ বরাবর থাকা গিঁট কেবলই শক্ত হতে থাকবে।’ তাইওয়ানে পেলোসির সফর নিয়েও এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। পেলোসির সফর নিয়ে রাখঢাক থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিরোধ প্রকাশ্য হয়েছে।
পেলোসিকে বহনকারী একটি উড়োজাহাজ দুদিন আগে হাওয়াই থেকে উড্ডয়ন করেছিল তাইওয়ানের উদ্দেশে। জবাবে চীনা নৌবাহিনী মুহুর্মুহু গুলি ও রকেট ছুড়তে থাকে তাইওয়ান প্রণালিতে। পরে পেলোসি তাঁর উড়োজাহাজ ঘুরিয়ে চলে যান অন্য দিকে। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত পেলোসি তাঁর এশিয়া সফর শুরু করেছেন। তবে সফর তালিকায় তাইওয়ানের নাম রয়েছে কি না জানা যায়নি। সফরে প্রথম দেশ হিসেবে পেলোসি সিঙ্গাপুরে পৌঁছেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত আরও আগে। গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপকালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পেলোসির তাইওয়ান সফরের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, ‘আগুন নিয়ে খেললে পুড়তে হবে।’ এর একদিন পর, জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা উপ–রাষ্ট্রদূত গেং শুয়াংও প্রেসিডেন্টের সতর্কবার্তার পুনরাবৃত্তি করেন। এরপরও পেলোসি তাইওয়ান সফর করবেন কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে ১ আগস্ট মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, পেলোসির তাইওয়ান সফরের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
এখানেই মূলত সংকট এবং এই সংকট দেশ দুটিকে একটি স্নায়ুযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক রাজেশ রাজা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টে এক নিবন্ধে লিখেছেন, চীন–যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান একটি দ্বিমুখী স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দিতে পারে। তবে তাঁর মতে, এই দ্বন্দ্ব কোনোভাবেই রাশিয়া–যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধের মতো নয়, অনেক আলাদা।
এ প্রসঙ্গে সিএনএনের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জাখারি বি. উলফ বলেন, এই সংকটের ফলে বরং যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চীনের কালো ছায়া পড়তে যাচ্ছে।’ কারণ, চীন পেলোসির তাইওয়ান সফরকে ভালো চোখে দেখবে না তা সেটা স্পষ্ট। বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রও দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের নৌবাহিনী মোতায়েন করেছে। ফলে, সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। জাখারি দুই দেশের মধ্যকার সংকট যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর (চিপ) সংকট তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
পেলোসির সম্ভাব্য তাইওয়ান সফর নিয়ে হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের সাবেক এডিটর ইন চিফ ওয়াং শেংওয়েই পত্রিকাটিতে লিখিত এক নিবন্ধে বলেছেন, চীনা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে যেভাবে সতর্ক করেছেন তা থেকে এটি বিষয়টি স্পষ্ট যে, চীনের যা লক্ষ্য–উদ্দেশ্য তা যুক্তরাষ্ট্র আর কোনোভাবেই হালকাভাবে নিতে পারবে না।
সব মিলিয়ে, কোভিড মহামারি, রাশিয়া–ইউক্রেন সংকট এবং অন্যান্য কারণে বিশ্বজুড়েই যখন মন্দার আভাস তখন চীন–যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব যে বিশ্বব্যাপীই অস্বস্তি তৈরি করবে তা সহজেই অনুমেয়।
একই সঙ্গে, পেলোসির সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান ধরে রাখতে না পারা, চীনা প্রেসিডেন্ট এবং রাষ্ট্রদূতের সতর্কবার্তার জবাবে ওয়াশিংটনের আপাত নীরবতা থেকেও অনেক কিছু আন্দাজ করা যায়।
তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কি খর্বশক্তি হয়ে পড়ছে। কিংবা ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর কি পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষয়িষ্ণু প্রভাবের আরেকটি নমুনা হতে যাচ্ছে? এর জবাব পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, সিএনএন, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, দ্য প্রিন্ট
যুক্তরাষ্ট্র কেন আগে এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিল? ভারতের মতো একটি সার্বভৌম দেশ কেন তৃতীয় পক্ষকে নিজের পক্ষ থেকে কথা বলার সুযোগ দিল?
১৩ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত সপ্তাহে পাকিস্তানকে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা অনুমোদন করেছে। এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে ভারত। কারণ, সে সময় দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সামরিক সংঘাত চলছিল। পরে হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।
২১ ঘণ্টা আগেরাশিয়ার দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলের স্টানিৎসিয়া শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে ট্রান্সফরমার গত ২৬ এপ্রিল উড়িয়ে দিয়েছে একদল গোপন প্রতিরোধকারী। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল মেলিতোপোলে রেল অবকাঠামোয় আগুন লাগানো হয়।
২ দিন আগেভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা তাঁদের আগেভাগে জানানো হয়নি। এতে ভারত প্রথমে যুদ্ধবিরতির বিষয়টিকে ‘পাকিস্তানের অনুরোধে হওয়া’ বলে উপস্থাপন করতে পারছে না। যাহোক, যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার পর ট্রাম্প ১১ মে কাশ্মীর ইস্যুতেও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ভারত কাশ্মীর ইস্যুতে বহুদিন
২ দিন আগে