Ajker Patrika

দালাই লামার উত্তরসূরি নিয়ে দিল্লি-বেইজিং উত্তেজনা, ভারতকে শব্দচয়নে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১৮: ০৫
তিব্বতিদের আধ্যাত্মিক গুরু দালাই লামা। ছবি: এএফপি
তিব্বতিদের আধ্যাত্মিক গুরু দালাই লামা। ছবি: এএফপি

দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে চীনের কঠোর হুঁশিয়ারি দিল্লি-বেইজিং সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। একজন ভারতীয় মন্ত্রী দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনের বিষয়টি শুধু ‘দালাই লামা এবং তিব্বতের ঐতিহ্যই নির্ধারণ করবে’ বলে মন্তব্য করার পর চীন সতর্কবার্তা দিয়েছে। বেইজিং বলেছেন, তিব্বত ইস্যুতে কথায় ও কাজে নয়াদিল্লির সতর্ক থাকতে হবে।

দালাই লামা তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকতা নিয়ে স্পষ্টীকরণের পরই এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। যেখানে ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে নেমেছিল, যা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

গতকাল শুক্রবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘আমরা আশা করি, ভারত তিব্বত ইস্যুটির উচ্চ সংবেদনশীলতা পুরোপুরি উপলব্ধি করবে, দালাই লামার চীনবিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী চরিত্রকে স্বীকার করবে এবং তিব্বত ইস্যুতে দিল্লি তার প্রতিশ্রুতি মেনে চলবে।’

নয়াদিল্লি অবশ্য তিব্বতকে চীনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবু ১৯৫৯ সাল থেকে ভারত তিব্বতের বৌদ্ধধর্মীয় নেতা দালাই লামাকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। চীনা কমিউনিস্ট কর্তৃপক্ষ হিমালয় মালভূমির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর দালাই লামা ভারতে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে আসেন।

তিব্বতের একটি স্বতন্ত্র জাতিগত পরিচয়, ভাষা এবং সংস্কৃতি রয়েছে, যা চীনের অন্যান্য অংশ থেকে ভিন্ন। ভারতের হিমালয়ের পাদদেশে দালাই লামা একটি প্রবাসী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন।

বেইজিং দালাই লামাকে তিব্বতকে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দেখে। কমিউনিস্ট পার্টি দাবি করে, তিব্বত ঐতিহাসিকভাবে চীনের অংশ, দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনে বেইজিংয়ের অনুমোদন লাগবে বলে দাবি করে। এর ফলে ভবিষ্যতে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী দালাই লামা থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

দালাই লামা, আগামীকাল রোববার ৯০ বছরে পা দেবেন। সম্প্রতি একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, মৃত্যুর পরেও পুনর্জন্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। তিনি গত বুধবার আরও বলেন, তাঁর কার্যালয়, গাডেন ফোড্রাং ট্রাস্ট, তাঁর পুনর্জন্ম শনাক্ত করার দায়িত্বে থাকবে এবং অন্য কারও এতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। দালাই লামা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, তিব্বতিদের চীনের নির্বাচিত কোনো প্রার্থীকে মেনে নেওয়া উচিত হবে না।

ভারতের সংসদবিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু, আগামীকাল দালাই লামার জন্মদিন উদ্‌যাপনে তাঁর বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দালাই লামার এই অবস্থানের প্রতি তিনি সমর্থন জানিয়েছেন। ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে তিনি দালাই লামার ভূমিকাকে ‘বৌদ্ধদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ন্যায্য প্রতিষ্ঠান’ বলে অভিহিত করেন।

অবশ্য রিজিজু পরে স্পষ্ট করেন, তিনি একজন বৌদ্ধধর্মাবলম্বী এবং দালাই লামার অনুসারী হিসেবে কথা বলেছেন, ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নয়।

গতকাল শুক্রবার ভারত সরকার একটি বিবৃতি জারি করে জানায়, দালাই লামার পুনর্জন্ম নিয়ে সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক অবস্থান নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, কয়েক দশক ধরে দিল্লি ও বেইজিং দালাই লামার ভারতে উপস্থিতির মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো সামলে চলছে। তবে পরবর্তী দালাই লামা কে হবেন, তা নিয়ে তিব্বতিদের সঙ্গে বেইজিংয়ের বিরোধ শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে।

কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের এক বিশ্লেষণে চীনে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত বিজয় গোখলে বলেন, ‘৬৫ বছর ধরে ভারত ও চীনের মধ্যে একটি অস্বস্তিকর সহাবস্থান বিরাজ করছে। কারণ, উভয়ই একই ব্যক্তিকে দালাই লামা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর এটি না-ও হতে পারে। কারণ, ভূখণ্ডের বাইরে প্রাপ্ত দালাই লামার পুনর্জন্মকে চীন গ্রহণ করবে না।’

সম্প্রতি ভারত ও চীন তাদের সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করছে। গত বছর দুই দেশ সীমান্ত সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে উত্তেজনা কমানোর একটি চুক্তিতে পৌঁছে। এ বছর কূটনৈতিক বরফ গলার ফলে ভারতীয় তীর্থযাত্রীরা তিব্বতের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বত ও হ্রদে তীর্থযাত্রা পুনরায় শুরু করতে পেরেছেন।

তবে চীন সতর্ক করেছে, তিব্বত ইস্যুতে ভারত যদি আরও সতর্ক না হয়, তবে সম্পর্কের উন্নতি অব্যাহত না-ও থাকতে পারে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘ভারতের কথায় ও কাজে সতর্ক থাকতে হবে এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য তিব্বত ইস্যু ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে, যাতে চীন-ভারত সম্পর্কের উন্নতি ও অগ্রগতি প্রভাবিত না হয়।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত