Ajker Patrika

পাকিস্তানের এখন বন্ধুও নাই, টাকাও নাই

পাকিস্তানের এখন বন্ধুও নাই, টাকাও নাই

গত কয়েক দশক ধরেই সেনাবাহিনীর জেনারেলরা পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানকে সরাসরি কিংবা নেপথ্যে থেকে একটি লোক দেখানো গণতন্ত্রের মাধ্যমে শাসন করছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতায় ঘুরে-ফিরেই আসছে কতগুলো দুর্নীতিগ্রস্ত পারিবারিক বংশ পরম্পরার দল। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর দেশটি একটি ক্রমবর্ধমান আর্থিক সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

তবে দেশের এমন পরিস্থিতিই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পছন্দ। এই বাহিনী মনে করে—রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিলে তারা তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা হারাবে এবং দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে। এর ফলে দেশ অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে অরক্ষিত হয়ে পড়বে। তবে এখনকার পরিস্থিতিও দেশটিকে একই ধরনের পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

দেশটির এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই বিতর্কিত হয়ে পড়েছিল। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ও সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক ইমরান খানকে ভোটের আগেই সেনাবাহিনীর নির্দেশে জালিয়াতির অভিযোগে বন্দী করা হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে দূরে রাখা হয় তাঁর দলকেও। তারপরও গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ইমরান খানের দলের সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নেয় এবং অন্য দলগুলোর তুলনায় সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩৫ শতাংশ আসনে তারা বিজয়ী হয়েছে। বিষয়টি চিত্তাকর্ষক হলেও এককভাবে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়নি দলটি।

এ অবস্থায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নওয়াজ শরীফ ও বিলাওয়াল ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন দুটি দলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সম্মিলিতভাবে এই দুটি দল ৪৯ শতাংশ আসনে জয় লাভ করেছে। নওয়াজের দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী শেহবাজ শরীফ দেশকে ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে দেশকে বাঁচানোর’ ঘোষণা এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কিন্তু এটা কি সম্ভব হবে? কারাবন্দী ইমরান খানের বেশির ভাগ সমর্থকই বয়সে তরুণ এবং শহুরে। নেতা ও দলকে বঞ্চিত করার জেরে প্রায় সময়ই তারা রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। ২০২৩ সালের মে মাসে ইমরান খানকে প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর ক্ষুব্ধ সমর্থকেরা দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি লাহোরে সামরিক স্থাপনায়ও হামলা চালায়। এ ধরনের পরিস্থিতির সুযোগ নেয় দেশটির তালেবান গোষ্ঠীও। তারাও সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে সেনাবাহিনীর সমর্থিত সরকার দেশটির রাস্তার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলেও আর্থিক বিশৃঙ্খলা তাদের বড় চিন্তার কারণ হবে।

বাণিজ্য ঘাটতি পুনরুদ্ধার এবং বিদেশিদের ঋণ পরিশোধের জন্য পাকিস্তানকে প্রতি বছর ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার সংস্থান করতে হবে। বর্তমানে দেশটির রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারেরও কম রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে আইএমএফ থেকে আরও একটি স্বল্প মেয়াদি ঋণ নিয়ে লাইফলাইন টিকিয়ে রাখাই একমাত্র বিকল্প মনে হচ্ছে। 

এক সময় পাকিস্তান নগদ অর্থের জন্য বাইরের বন্ধু দেশগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা পেত। কিন্তু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে আসার পর যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। চীন পাকিস্তানের ‘চিরন্তন বন্ধু’ হিসেবে রয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু পাকিস্তানে বিনিয়োগ করে লোকসান দিতে দিতে এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে অসংখ্য চীনা পুঁজিপতি। সৌদি আরবও দেশটির আরেকটি মিত্র। কিন্তু সেই দেশটিও অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের পাশাপাশি এখন মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের দিকেই বেশি মনোনিবেশ করছে। দীর্ঘ মেয়াদে পাকিস্তান একটি আধা-ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হলে, এটি ভারতের জন্যও সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু ভারতের বর্তমান নরেন্দ্র মোদির সরকার তাদের নিজস্ব জাতীয় বিষয়াবলি নিয়ে কাজ করতেই বেশি পছন্দ করছে।

একটি বিপ্লবের অংশ হিসেবে শুধুমাত্র সেনাবাহিনী এবং অভিজাতেরাই পাকিস্তানের পথ পরিবর্তন করতে পারে। দেশটির সামরিক কর্মকর্তারা মর্যাদার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও বিপুল সুযোগ উপভোগ করেন। আবার বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে নিজেদেরকে নীতিগত অভিভাবক হিসেবেও তারা বিবেচনা করেন। কিন্তু আসলে তাঁদের জন্যই পাকিস্তানের আজকের করুণ দশা। ২০ বছর আগে আগে পাকিস্তানের অর্থনীতি ভারতের আয়তনের ১৮ শতাংশ ছিল। এখন মাত্র ৯ শতাংশ। বর্তমানে ভারতের শেয়ারবাজার পাকিস্তানের চেয়ে ১৩৭ গুণ বড়। গড় বার্ষিক আয়েও পাকিস্তানের তুলনায় ভারত ও বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে।

অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এই মুহূর্তে পাকিস্তানে একটি গভীর রাজনৈতিক পুনঃস্থাপন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এমনকি সেনাবাহিনীর নীতি নির্ধারকদেরও বোঝা উচিত যে—বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ভবিষ্যতে সেনাদের বেতন কিংবা অস্ত্রের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিতেও টান পড়বে। বলা যায়—চুরি করার মতো অর্থও আর থাকবে না তাদের।

পাকিস্তানের যে পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে, সেটি এতটাই গভীর যে, এর জন্য দেশটিতে একটি নতুন জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক সংস্কারকে ত্বরান্বিত করাই হবে এর উদ্দেশ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত