Ajker Patrika

স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তার পদত্যাগে স্পষ্ট হলো গাজা নিয়ে মার্কিন নীতিতে ফাটল

আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৬: ৫৩
স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তার পদত্যাগে স্পষ্ট হলো গাজা নিয়ে মার্কিন নীতিতে ফাটল

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছেন মানবাধিকার কর্মী অ্যানেল শেলাইন। বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে অস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইন লঙ্ঘন করছে—এমন অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন এই কর্মকর্তা। ইসরায়েল কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছু প্রমাণ গোপন করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছেন অ্যানেলের। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।

অ্যানেল শেলাইন বলেছেন, তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রম ব্যুরোয় তাঁর পদে থেকে মার্কিন নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারবেন বলে আশা করেছিলেন। আলোচনায় অংশ নেওয়া, ভিন্নমত অনুমোদন এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে তাঁর উদ্বেগ তুলে ধরে এই প্রভাব রাখবেন বলে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু এখন সে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্রের সরবরাহ বন্ধে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবেন বলেও আর মনে করছেন না অ্যানেল।

দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগের প্রধান কারণ হচ্ছে—আমি আর এই প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাই না। আমার ছোট্ট একটি মেয়ে আছে। ওর বয়স এখনো দুই হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতে সে যখন সবকিছু (গাজায় হত্যাকাণ্ড) বুঝবে এবং জানবে যে আমি স্টেট ডিপার্টমেন্টে ছিলাম, তখন আমি তাকে বলতে চাই যে—আমি যা করতে পারতাম তাই করেছি।’

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় মার্কিন নীতির বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে পদত্যাগ করা দ্বিতীয় কর্মকর্তা হলেন অ্যানেল শেলাইন। তিনি বলেন, চাকরি হারানোর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য থাকলে আরও অনেক সহকর্মীও পদত্যাগ করতে চান বলে জানিয়েছেন তাঁকে। সহকর্মীরা অ্যানেলকে আরও বলেছেন, তিনি যেন চুপচাপ পদত্যাগ না করে এর কারণ প্রকাশ করেন।

৩৮ বছর বয়সী অ্যানেল আরব সরকারের বৈদেশিক নীতি বিষয়ে ডক্টরেট করেছেন। সদ্য সাবেক এই কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েল যে গাজার যুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে এবং তাদের অস্ত্র সরবরাহ করে মার্কিন নীতি লঙ্ঘন করছে বাইডেন প্রশাসন—সেসবের প্রচুর প্রমাণ রয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্টের হাতে।

মার্কিন মানবাধিকার বিষয়ক লেইহি আইনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন অ্যানেল শেলাইন। লেইহি আইনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং প্রতিরক্ষা বিভাগ এমন কোনো বিদেশি নিরাপত্তা বাহিনীকে সামরিক সহায়তা দিতে পারবে না যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে।

গত সোমবার স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, তারা ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন না করার আশ্বাস পেয়েছে এবং ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু অ্যানেল শেলাইন বলেন, ‘আইন এখানে পরিষ্কার এবং আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। কিন্তু সেসবের কিছুই সুনির্দিষ্টভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না।’

স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে, গত বছর বাইডেন প্রশাসনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যবস্থার অধীনে বেসামরিক ক্ষতির প্রমাণ পর্যালোচনা করছে তারা। তবে শেলাইনের মতে, সেই তদন্ত প্রতিবেদন কেবল তখনই প্রকাশ করা হবে যখন হোয়াইট হাউস চাইবে।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু সরকারি নীতি সেটাই হবে যেখানে হোয়াইট হাউস স্বাক্ষর করবে। তাই হোয়াইট হাউস যদি পরিবর্তন না চায় তবে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক কিছু ঘটে গেলেও তাতে ফল আসবে না।’

শেলাইন বলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্বারা চালিত হয় প্রশাসনের নীতি। কিন্তু এই ইস্যুতে (গাজা-ইসরায়েল) পাল্টে যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়নের জন্য ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি নির্বাচনে ব্যাপক হারে ‘অনিচ্ছুক’ ভোটের দিকে ইঙ্গিত করে অ্যানেল শেলাইন বলেন, হিসেবে ভুল করছে বাইডেন প্রশাসন।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ইসরায়েল সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রজন্মগত বিভাজনের গভীর প্রভাব আছে। বাইডেন প্রশাসনের এটা বুঝতে অনেক সময় লেগেছে যে, দাতা গোষ্ঠী এবং ইসরায়েলের লবির পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে আগের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে পরিবর্তন এসেছে।’

গতকাল বুধবার গবেষণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ একটি নতুন জরিপের ফল প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ চালানোর ব্যাপারে আমেরিকানদের সমর্থন অনেকটাই কমেছে। গত নভেম্বরে ৫০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক ইসরায়েলের পক্ষে থাকলেও তা কমে এখন ৩৬ শতাংশে নেমেছে। ইসরায়েলের পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট ৫৫ শতাংশ আমেরিকান।

গত সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আর ভেটো দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন নীতির এই পরিবর্তনের পেছনে জনসমর্থনের এই পরিবর্তনকে কৃতিত্ব দেন অ্যানেল শেলাইন। তিনি বলেন, ‘এই পরিবর্তনে আমি খুশি। তবে এতেও গাজাবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ, অনেক দেরি হয়ে গেছে।’

অ্যানেল শেলাইন আরও বলেন, ‘এই নীতিগুলো কেবল গাজার জনগণকে ধ্বংস করছে না বরং, বিশ্বে মার্কিন ভাবমূর্তিও ধ্বংস করছে। ট্রাম্প প্রশাসনের পর মার্কিন কূটনীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক নেতৃত্ব পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এই প্রশাসন। মানবাধিকারসহ অনেক কিছুকেই তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এই প্রশাসনের কাছে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের সম্পর্কের চেয়ে বাকি সবকিছুই কম গুরুত্বপূর্ণ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত