অনলাইন ডেস্ক
আজকের দিনে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা এত স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, যা আগে খুব কমই দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। জবাবে বেইজিং মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। ফলে বিশ্বের বৃহত্তম দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক কার্যত স্থবির হয়ে গেছে।
এর ফলাফল ও প্রভাব এখনো সেভাবে দৃশ্যমান হয়নি। সামনে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা আসতে পারে। এমনকি চীন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ড কেনা বন্ধও করে দিতে পারে। অন্যান্য দেশ নতুন মার্কিন শুল্ক থেকে ৯০ দিনের জন্য ছাড় পেয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। তবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগকারীরা তাঁদের ক্রয় ও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে দ্বিধায় ভুগছেন। ওয়াশিংটনের বারবার নীতি পরিবর্তন নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা ঘুরছে খুব ধীরে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল আমদানি করা সব পণ্যের ওপর নতুন ও কঠোর শুল্ক আরোপের ঘোষণা করার পরই বোঝা গেল, পরিস্থিতি কত দ্রুত খারাপ হতে পারে। কয়েক দিনের মধ্যেই আর্থিক বাজার থেকে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার উধাও হয়ে গেছে।
বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ডলারে আস্থা হারিয়েছেন ও মার্কিন বন্ড বিক্রি করে অর্থ সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। এতে আর্থিক বিপর্যয়ের সংকেত দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প কিংবা চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং কেউই ছাড় দিতে রাজি নন। আর তাই এই সংঘাত বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে রূপ নেওয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাণিজ্য যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির বেশ কিছু নজির রয়েছে। উনিশ শতকের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা বলতে ছয় বা তার বেশি ত্রৈমাসিক পর্যন্ত টানা অর্থনৈতিক সংকোচন বোঝানো হয়। যদিও এর কোনো সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই।
এই ছয়টি মন্দার মধ্যে পাঁচটি সরাসরি শুল্ক এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে হয়েছিল, অথবা এগুলোর কারণে মন্দা পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপের দিকে গিয়েছিল। নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ধ্বংসাত্মক হবে—যদি না কেউ তাঁর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং এটি ঠেকিয়ে দেয়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এক শক্তিশালী চালিকাশক্তি হলো ‘কম্পারেটিভ অ্যাডভান্টেজেস’ বা ‘তুলনামূলক সুবিধা’। এর মাধ্যমে কোনো দেশ গম উৎপাদন, কাপড় তৈরি বা সফটওয়্যার কোডিংয়ের মতো বিশেষায়িত দক্ষতা অর্জন করে লাভবান হতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে এসব পণ্যের ব্যবসার মাধ্যমে প্রতিটি দেশ তাদের সীমিত সম্পদকে সেসব জিনিস উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারে যা তাদের কৃষক, খনি শ্রমিক ও কারিগর সবচেয়ে কম খরচে তৈরি করতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে সবাই উপকৃত হয়।
এই তত্ত্বটি বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। ১৮৪৬ সালে যখন মহাদেশব্যাপী ‘আলুর দুর্ভিক্ষ’ যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রকে খাদ্যপণ্যের অবাধ বাণিজ্য চালু করতে বাধ্য করে, তখন অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যাপক সমৃদ্ধি আসে। এ সময় অবশ্য কিছু গোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউরোপের ভূস্বামীরা অভিযোগ করেন যে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে।
তাদের অভিযোগের ভিত্তি ছিল—রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য পশ্চিমাঞ্চলের উর্বর সমভূমি এত সস্তায় গম উৎপাদন করত যে ইউরোপে কৃষিজমির দামই কমে যায়। ফলে ব্রিটেন ও ইউরোপের গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ শহরের দিকে যাত্রা করে, যা নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ঢেউ সৃষ্টি করে।
অবশ্যই, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বড় এবং শক্তিশালী অর্থনীতি অভিন্ন বাজার মুক্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাতে পারে। তারা মুদ্রা বিনিময় হার নিজেদের রপ্তানির পক্ষে নিতে পারে। আবার বিশেষ কোনো বাণিজ্যকে সুবিধা দিতে ভর্তুকি দিতে পারে। যেমন—গম বাদ দিয়ে ভুট্টা, টেক্সটাইলের চেয়ে কম্পিউটার চিপস অথবা চালের চেয়ে টেক্সটাইলকে তারা সুবিধা দিতে পারে।
পরিবেশ ও শ্রম আইনও বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে, যা অনেক সময় অপ্রত্যাশিত হয়। বড় দেশের মনোপলিস্ট বা একচেটিয়া ব্যবসায়ীরা প্রায়ই বিভিন্ন নিয়মকানুন ও শুল্কের পক্ষে থাকেন। এর মাধ্যমে তারা প্রতিযোগিতা এড়িয়ে নিজেদের মূল্যবান সম্পদ আরও বাড়াতে পারেন।
একসময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাণিজ্য যুদ্ধের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বহু শতাব্দী ধরে ব্রিটেন তার উপনিবেশগুলোর বাণিজ্যকে নিজ দেশের প্রয়োজনে গড়ে তুলেছিল। নিউইয়র্ক, মেরিল্যান্ড ও সাউথ ক্যারোলিনার উপনিবেশগুলো থেকে আশা করা হতো যে, তারা ভার্জিনিয়া এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে দাস-শ্রমিক নির্ভর তামাক ও চিনির খামারগুলোর জন্য আটা ও চাল সরবরাহ করবে।
ব্রিটেন উপনিবেশগুলোকে নিজেদের বস্ত্র, লোহা ও কাগজ তৈরি করতে বাধা দিয়েছে। উপনিবেশগুলোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর ব্রিটেনের ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধ শেষ পর্যন্ত আমেরিকান বিপ্লবের দিকে ধাবিত করে। শুরু থেকেই, ব্রিটিশ কনফেডারেশন আর্টিকেলস এবং পরে দেশটির সংবিধান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দ্রুত বা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে এমন নির্বাহী পদক্ষেপ সীমিত করার চেষ্টা করেছিল। রাজস্ব বিলগুলো হাউসে উত্থাপন করা হতো, সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ভেটোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
আমেরিকার প্রথম অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয় ১৮১৬ সালে। এর কারণ ছিল ব্রিটেন। ব্রিটেন তখন নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধে জিতেছিল। জয়ের পর ব্রিটেন বিপুল পরিমাণে উলের পোশাক বাজারে ছাড়ে। এই কাপড়গুলো মূলত ইউরোপের সৈন্য ও নাবিকদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
এটি ছিল ব্রিটেনের প্রথম সেনা ও নৌবাহিনীর উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রির ঘটনা। আমেরিকার ব্যবসায়ী ও পশম উৎপাদনকারীরা এত সস্তা পশমের কাপড় দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারা এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করতে কংগ্রেসের কাছে অনুরোধ করেন। তাদের অনুরোধে, ১৮১৭ সালের মার্চে কংগ্রেস একটি আইন পাস করে। আইনের নাম ছিল ‘নেভিগেশন অ্যাক্ট’। এই আইন ব্রিটিশ জাহাজ এবং সস্তা পণ্য আসা বন্ধ করে দেয়।
জবাবে, মে মাসে ব্রিটেনও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। তারাও একটি আদেশ জারি করে। এই আদেশের ফলে মার্কিন জাহাজগুলো ব্রিটেনের ক্যারিবিয়ান উপনিবেশে শস্য সরবরাহ করতে পারত না। ফলে, মার্কিন কৃষকেরা গুরুত্বপূর্ণ বাজার হারান। এই বাজারে তারা এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন। ১৮১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গমের দাম ৫০ শতাংশ কমে যায়। কৃষকেরা জমির বন্ধকি ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এই ঋণ তারা ইউএস ল্যান্ড অফিস থেকে নিয়েছিলেন। কৃষকেরা মুদি দোকানগুলোতে দেনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। ফলে গ্রামের দোকানগুলোও সরবরাহকারী বণিকদের পাওনা মেটাতে পারেনি।
১৮১৯ সালে মার্কিন অর্থনীতিতে রীতিমতো আতঙ্ক শুরু হয় এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বাজারকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মার্কিনরা কানাডায় গম চোরাচালান করে নিজেদের রক্ষা করে। সেখানে টরন্টো ও মন্ট্রিয়লের মিল মালিকেরা সেই গম দিয়ে ব্রিটিশদের জন্য আটা তৈরি করত। সেই আটা আবার ক্যারিবীয় এলাকায় বিক্রি করা হতো।
ভার্জিনিয়া, জর্জিয়া ও সাউথ ক্যারোলাইনার মতো অঙ্গরাজ্যগুলো কেবল গম ও ধান উৎপাদন ছেড়ে দাসভিত্তিক তুলা উৎপাদনে যাওয়ার মাধ্যমে উন্নতি লাভ করে। এক দশকের মধ্যে ইঙ্গ-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ ক্যারিবীয় দ্বীপের কৃষি খামারগুলোতে খাদ্য সরবরাহের খরচ এত বাড়িয়ে দেয় যে, সেখানকার দাস মালিকেরা ক্রীতদাসদের ক্ষতিপূরণসহ দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার জন্য ব্রিটেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বিপরীতে, ১৮১৭ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা পাস হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে তুলা উৎপাদন আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর সঙ্গে দাসপ্রথারও বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে এর পরের মন্দা শুরু হয় মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের দ্রুত নির্বাহী পদক্ষেপের কারণে। ১৮১৯ সালের মহামন্দার পর থেকে দীর্ঘ সময়ের ক্রেডিট চেইন বা ঋণ শৃঙ্খল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে তুলার আবাদ সম্প্রসারণে অর্থায়ন করে আসছিল।
সেকেন্ড ব্যাংক অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস এবং ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত সাতটি ব্রিটিশ ব্যাংক ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ধার করত। এরপর তারা ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’ ইস্যু করত। এর মাধ্যমে ছোট, আঞ্চলিক মার্কিন ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেওয়া হতো। এই ব্যাংকগুলো আবার দক্ষিণাঞ্চলের ওপরের অংশের দাস ব্যবসায়ীদের স্বল্পমেয়াদি ঋণ দিত। দাস ব্যবসায়ীরা ভার্জিনিয়া ও সাউথ ক্যারোলাইনা থেকে দাস কিনত এবং জর্জিয়া, মিসিসিপি ও লুইজিয়ানার তুলার খামারে বিক্রি করত। সুদের হার ব্যাংক অব ইংল্যান্ড নির্ধারণ করত। ফলে লন্ডনে সুদের হার সামান্য বৃদ্ধি পেলে নিউ অরলিন্সে দাস মালিকদের জমি বা দাস কেনা অসম্ভব হয়ে পড়ত।
প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসন বিশ্বাস করতেন, সেকেন্ড ব্যাংক এবং সেভেন সিস্টারস তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তিনি ১৮৩৪ ও ১৮৩৬ সালে বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এই আদেশগুলোর লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ ঋণের ওপর থেকে দাস মালিকদের নির্ভরতা কমানো।
এক আদেশে জ্যাকসন যুক্তরাষ্ট্রের সেকেন্ড ব্যাংক থেকে সরকারি আমানত তুলে নেন। সেই অর্থ তাঁর রাজনৈতিক মিত্রদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি পছন্দের ব্যাংকে জমা দেন। অন্য এক আদেশে কৃষকদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাদের বন্ধকি অর্থ ইউএস ল্যান্ড অফিসে পরিশোধ করতে নিষেধ করা হয়। এর ফলে কৃষকদের বাধ্য হয়ে স্বর্ণ ব্যবহার করতে হয়, যা সেই সময়ের মুদ্রা ছিল। এই পদক্ষেপের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের দাস মালিকেরা লাভবান হয়। এসব মালিকদের উত্তর জর্জিয়া ও উত্তর ক্যারোলাইনায় সোনার খনি ছিল। তবে, হঠাৎ করে সোনার চাহিদা বেড়ে গেলেও সরবরাহ অনেক কম ছিল।
এই অবস্থায় ব্যাংক অব ইংল্যান্ড দেখতে পায়, তাদের সোনা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তারা ব্যাংক রেট তথা সুদহার বাড়াল। একই সঙ্গে তারা কিছু সময়ের জন্য ‘সেভেন সিস্টার্সকে’ আন্তর্জাতিক লেনদেন থেকে বিচ্ছিন্ন করল। এর ফলস্বরূপ ১৮৩৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফের মহামন্দা শুরু হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে জমিদারেরা ঋণ পরিশোধ না করে পালিয়ে গেল। তারা চাষের জমি ফেলে ক্রীতদাসদের নিয়ে (তৎকালীন) টেক্সাসের স্বাধীন প্রজাতন্ত্রে চলে গেল। সেখানে তারা ঋণদাতাদের হাত থেকে বেঁচে যায়। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেল। উৎপাদনকারীরা দেউলিয়া হয়ে গেল। পাঁচ বছরের মধ্যে সাতটি মার্কিন অঙ্গরাজ্য আন্তর্জাতিকভাবে ইস্যু করা বন্ডের অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলো।
এর পরের মহামন্দা শুরু হয় ১৮৭৩ সালে। এই অর্থনৈতিক মন্দা আন্তর্জাতিক পণ্যের দামের আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে হয়েছিল। তবে এর জন্য তড়িঘড়ি করে শুল্ক আরোপ করা হয়নি। কিন্তু ১৮৯৩ সালের মন্দার ক্ষেত্রে তেমনটা বলা যাবে না। ১৮৯০ সালে মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস আইন প্রণয়নের নিয়ম সংশোধন করে। এর ফলে কংগ্রেস অপ্রত্যাশিতভাবে কার্যকর ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই সুযোগে রিপাবলিকানরা ১৮৯০ সালের ম্যাককিনলে ট্যারিফ অ্যাক্ট পাস করে।
এই আইনে বিদেশে তৈরি পণ্যের আমদানির ওপর শুল্ক ৩৮ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করে। একই সঙ্গে আধা-পরিশোধিত চিনির ওপর থেকে শুল্ক তুলে নেওয়া হয়। চিনি রপ্তানিকারক দেশগুলোর জন্য এটি বিশাল পার্থক্য তৈরি করে দেয়। কারণ সে সময় আপেল, স্যামন ও গরুর মাংসের মতো খাদ্য সংরক্ষণে চিনি ব্যবহার করা হতো।
তবে, বেশি শুল্ক আরোপের ফলে প্রায়শই যা হয়—তেমনিভাবে মার্কিন রাজস্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। দুই বছরের মধ্যে এটি প্রায় মার্কিন ট্রেজারির সোনা শেষ করে ফেলে। এর ফলে বিদেশি ঋণদাতারা মার্কিন বন্ড বিক্রি করতে শুরু করে, বিশেষ করে রেল কোম্পানিগুলোর বন্ড। ঋণগ্রহীতারা আশঙ্কা করেছিল যে, ট্রেজারিতে সোনা না থাকলে ওয়াশিংটন মুদ্রা হিসেবে স্বর্ণমান ত্যাগ করবে। তখন বন্ডের অর্থ হয়তো দুর্বল মার্কিন মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে।
এরপর, ১৯৩০–এর দশকের মহামন্দায় স্মুট-হাওলি শুল্ক আইন বড় ভূমিকা রেখেছিল। যদিও কিছু অর্থনীতি ঐতিহাসিক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা সরবরাহ, শেয়ারবাজারে তেজ–মন্দা চক্র এবং ইউরোপের অমীমাংসিত যুদ্ধকালীন ঋণ—এর প্রধান কারণ ছিল। উনিশ শতকের একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে শুধু বলব, শুল্কে দ্রুত পরিবর্তন বিশ্বকে বদলে দেয়। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এমন পরিবর্তন আনে, যার প্রভাব মোকাবিলা করতে বহু বছর লেগে যায় এবং এর ফলস্বরূপ অপ্রত্যাশিত ঘটনার একটি দীর্ঘ ধারা তৈরি হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত দুই শতাব্দীর মহামন্দা–মন্দার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু ধারণা পেতে পারি। বর্তমানে ট্রাম্প আরোপিত শুল্ক অনেক কোম্পানিকে তাদের পূর্বনির্ধারিত চুক্তি থেকে সরে আসতে বাধ্য করবে। উনিশ শতকে কৃষক, গ্রামের দোকানদার, বণিক এবং দাস ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা গিয়েছিল।
পিটসবার্গভিত্তিক উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী কোম্পানি হাউমেট এরই মধ্যেই ‘ফোর্স ম্যাজিউর’ বা নিজেদের এমন অবস্থানে ঘোষণা করেছে যেখানে কেউ তাদের জোর করে চুক্তি পরিপালনে বাধ্য করতে পারবে না। তারা শুল্কের কারণে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে।
চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে ব্যবসা করা বিভিন্ন খাতের আরও অনেক কোম্পানি সম্ভবত এখন চুক্তি বাতিল করবে, কারণ শুল্ক কার্যকর হতে শুরু করেছে। এসব কোম্পানির বাতিল করা অনেক লেনদেনই ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়। এই ঋণের বেশির ভাগই ব্যাংক, হেজ ফান্ড, বিমা কোম্পানি এবং অন্যান্য আর্থিক মধ্যস্থতাকারীদের কাছে থাকে। এর কিছু ঋণ আবার অসংখ্য বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করা হয়। শেয়ারবাজার ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে খুব দ্রুত সক্ষম। তবে এর চেয়ে অনেক বড় এবং জটিল ঋণবাজার, এটি দ্রুত ধাক্কা সামলাতে পারে না। যারা ২০০৮ সালের সংকটের কথা মনে রেখেছেন, তারা এটা জানেন। ২০০৮ সালে ফেডারেল রিজার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত বন্ড কিনেছিল। এর মাধ্যমে তারা জমে যাওয়া বাজারে তারল্য ফিরিয়ে এনেছিল।
যদিও আমি কেবলই একজন ইতিহাসবিদ, তবে আমার বিশ্বাস ফেডারেল রিজার্ভ (মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক) এ পর্যন্ত যে বিশৃঙ্খলা দেখেছে তা সামাল দিতে পারবে। তবে চীন–মার্কিন বাণিজ্য স্থগিতের সম্পূর্ণ প্রভাব আমাদের এখনো মোকাবিলা করতে হবে। এ ছাড়া, বিশ্বের বাকি অংশের ওপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের পরে কী হবে তা এখনো অস্পষ্ট।
যদি কংগ্রেস শুল্কের ওপর তার সাংবিধানিক অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে না পারে এবং যদি মার্কিন বাণিজ্যনীতি নির্ধারণের ক্ষমতা একজনের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়—যেমনটা ১৮৩০–এর দশকে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের ক্ষেত্রে ছিল—তাহলে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তর্জাতিক মন্দার ফলে সৃষ্ট তারল্য সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে না, যে মন্দার আশঙ্কা আমি করছি।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার ইতিহাসের অধ্যাপক স্কট রেনল্ডস নেলসন
অনুবাদ করেছেন: আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের দিনে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা এত স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, যা আগে খুব কমই দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। জবাবে বেইজিং মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। ফলে বিশ্বের বৃহত্তম দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক কার্যত স্থবির হয়ে গেছে।
এর ফলাফল ও প্রভাব এখনো সেভাবে দৃশ্যমান হয়নি। সামনে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা আসতে পারে। এমনকি চীন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ড কেনা বন্ধও করে দিতে পারে। অন্যান্য দেশ নতুন মার্কিন শুল্ক থেকে ৯০ দিনের জন্য ছাড় পেয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। তবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগকারীরা তাঁদের ক্রয় ও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে দ্বিধায় ভুগছেন। ওয়াশিংটনের বারবার নীতি পরিবর্তন নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা ঘুরছে খুব ধীরে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল আমদানি করা সব পণ্যের ওপর নতুন ও কঠোর শুল্ক আরোপের ঘোষণা করার পরই বোঝা গেল, পরিস্থিতি কত দ্রুত খারাপ হতে পারে। কয়েক দিনের মধ্যেই আর্থিক বাজার থেকে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার উধাও হয়ে গেছে।
বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ডলারে আস্থা হারিয়েছেন ও মার্কিন বন্ড বিক্রি করে অর্থ সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। এতে আর্থিক বিপর্যয়ের সংকেত দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প কিংবা চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং কেউই ছাড় দিতে রাজি নন। আর তাই এই সংঘাত বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে রূপ নেওয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাণিজ্য যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির বেশ কিছু নজির রয়েছে। উনিশ শতকের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা বলতে ছয় বা তার বেশি ত্রৈমাসিক পর্যন্ত টানা অর্থনৈতিক সংকোচন বোঝানো হয়। যদিও এর কোনো সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই।
এই ছয়টি মন্দার মধ্যে পাঁচটি সরাসরি শুল্ক এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে হয়েছিল, অথবা এগুলোর কারণে মন্দা পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপের দিকে গিয়েছিল। নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ধ্বংসাত্মক হবে—যদি না কেউ তাঁর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং এটি ঠেকিয়ে দেয়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এক শক্তিশালী চালিকাশক্তি হলো ‘কম্পারেটিভ অ্যাডভান্টেজেস’ বা ‘তুলনামূলক সুবিধা’। এর মাধ্যমে কোনো দেশ গম উৎপাদন, কাপড় তৈরি বা সফটওয়্যার কোডিংয়ের মতো বিশেষায়িত দক্ষতা অর্জন করে লাভবান হতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে এসব পণ্যের ব্যবসার মাধ্যমে প্রতিটি দেশ তাদের সীমিত সম্পদকে সেসব জিনিস উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারে যা তাদের কৃষক, খনি শ্রমিক ও কারিগর সবচেয়ে কম খরচে তৈরি করতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে সবাই উপকৃত হয়।
এই তত্ত্বটি বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। ১৮৪৬ সালে যখন মহাদেশব্যাপী ‘আলুর দুর্ভিক্ষ’ যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রকে খাদ্যপণ্যের অবাধ বাণিজ্য চালু করতে বাধ্য করে, তখন অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যাপক সমৃদ্ধি আসে। এ সময় অবশ্য কিছু গোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউরোপের ভূস্বামীরা অভিযোগ করেন যে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে।
তাদের অভিযোগের ভিত্তি ছিল—রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য পশ্চিমাঞ্চলের উর্বর সমভূমি এত সস্তায় গম উৎপাদন করত যে ইউরোপে কৃষিজমির দামই কমে যায়। ফলে ব্রিটেন ও ইউরোপের গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ শহরের দিকে যাত্রা করে, যা নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ঢেউ সৃষ্টি করে।
অবশ্যই, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বড় এবং শক্তিশালী অর্থনীতি অভিন্ন বাজার মুক্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাতে পারে। তারা মুদ্রা বিনিময় হার নিজেদের রপ্তানির পক্ষে নিতে পারে। আবার বিশেষ কোনো বাণিজ্যকে সুবিধা দিতে ভর্তুকি দিতে পারে। যেমন—গম বাদ দিয়ে ভুট্টা, টেক্সটাইলের চেয়ে কম্পিউটার চিপস অথবা চালের চেয়ে টেক্সটাইলকে তারা সুবিধা দিতে পারে।
পরিবেশ ও শ্রম আইনও বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে, যা অনেক সময় অপ্রত্যাশিত হয়। বড় দেশের মনোপলিস্ট বা একচেটিয়া ব্যবসায়ীরা প্রায়ই বিভিন্ন নিয়মকানুন ও শুল্কের পক্ষে থাকেন। এর মাধ্যমে তারা প্রতিযোগিতা এড়িয়ে নিজেদের মূল্যবান সম্পদ আরও বাড়াতে পারেন।
একসময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাণিজ্য যুদ্ধের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বহু শতাব্দী ধরে ব্রিটেন তার উপনিবেশগুলোর বাণিজ্যকে নিজ দেশের প্রয়োজনে গড়ে তুলেছিল। নিউইয়র্ক, মেরিল্যান্ড ও সাউথ ক্যারোলিনার উপনিবেশগুলো থেকে আশা করা হতো যে, তারা ভার্জিনিয়া এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে দাস-শ্রমিক নির্ভর তামাক ও চিনির খামারগুলোর জন্য আটা ও চাল সরবরাহ করবে।
ব্রিটেন উপনিবেশগুলোকে নিজেদের বস্ত্র, লোহা ও কাগজ তৈরি করতে বাধা দিয়েছে। উপনিবেশগুলোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর ব্রিটেনের ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধ শেষ পর্যন্ত আমেরিকান বিপ্লবের দিকে ধাবিত করে। শুরু থেকেই, ব্রিটিশ কনফেডারেশন আর্টিকেলস এবং পরে দেশটির সংবিধান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দ্রুত বা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে এমন নির্বাহী পদক্ষেপ সীমিত করার চেষ্টা করেছিল। রাজস্ব বিলগুলো হাউসে উত্থাপন করা হতো, সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ভেটোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
আমেরিকার প্রথম অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয় ১৮১৬ সালে। এর কারণ ছিল ব্রিটেন। ব্রিটেন তখন নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধে জিতেছিল। জয়ের পর ব্রিটেন বিপুল পরিমাণে উলের পোশাক বাজারে ছাড়ে। এই কাপড়গুলো মূলত ইউরোপের সৈন্য ও নাবিকদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
এটি ছিল ব্রিটেনের প্রথম সেনা ও নৌবাহিনীর উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রির ঘটনা। আমেরিকার ব্যবসায়ী ও পশম উৎপাদনকারীরা এত সস্তা পশমের কাপড় দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারা এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করতে কংগ্রেসের কাছে অনুরোধ করেন। তাদের অনুরোধে, ১৮১৭ সালের মার্চে কংগ্রেস একটি আইন পাস করে। আইনের নাম ছিল ‘নেভিগেশন অ্যাক্ট’। এই আইন ব্রিটিশ জাহাজ এবং সস্তা পণ্য আসা বন্ধ করে দেয়।
জবাবে, মে মাসে ব্রিটেনও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। তারাও একটি আদেশ জারি করে। এই আদেশের ফলে মার্কিন জাহাজগুলো ব্রিটেনের ক্যারিবিয়ান উপনিবেশে শস্য সরবরাহ করতে পারত না। ফলে, মার্কিন কৃষকেরা গুরুত্বপূর্ণ বাজার হারান। এই বাজারে তারা এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন। ১৮১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গমের দাম ৫০ শতাংশ কমে যায়। কৃষকেরা জমির বন্ধকি ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এই ঋণ তারা ইউএস ল্যান্ড অফিস থেকে নিয়েছিলেন। কৃষকেরা মুদি দোকানগুলোতে দেনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। ফলে গ্রামের দোকানগুলোও সরবরাহকারী বণিকদের পাওনা মেটাতে পারেনি।
১৮১৯ সালে মার্কিন অর্থনীতিতে রীতিমতো আতঙ্ক শুরু হয় এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বাজারকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মার্কিনরা কানাডায় গম চোরাচালান করে নিজেদের রক্ষা করে। সেখানে টরন্টো ও মন্ট্রিয়লের মিল মালিকেরা সেই গম দিয়ে ব্রিটিশদের জন্য আটা তৈরি করত। সেই আটা আবার ক্যারিবীয় এলাকায় বিক্রি করা হতো।
ভার্জিনিয়া, জর্জিয়া ও সাউথ ক্যারোলাইনার মতো অঙ্গরাজ্যগুলো কেবল গম ও ধান উৎপাদন ছেড়ে দাসভিত্তিক তুলা উৎপাদনে যাওয়ার মাধ্যমে উন্নতি লাভ করে। এক দশকের মধ্যে ইঙ্গ-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ ক্যারিবীয় দ্বীপের কৃষি খামারগুলোতে খাদ্য সরবরাহের খরচ এত বাড়িয়ে দেয় যে, সেখানকার দাস মালিকেরা ক্রীতদাসদের ক্ষতিপূরণসহ দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার জন্য ব্রিটেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বিপরীতে, ১৮১৭ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা পাস হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে তুলা উৎপাদন আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর সঙ্গে দাসপ্রথারও বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে এর পরের মন্দা শুরু হয় মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের দ্রুত নির্বাহী পদক্ষেপের কারণে। ১৮১৯ সালের মহামন্দার পর থেকে দীর্ঘ সময়ের ক্রেডিট চেইন বা ঋণ শৃঙ্খল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে তুলার আবাদ সম্প্রসারণে অর্থায়ন করে আসছিল।
সেকেন্ড ব্যাংক অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস এবং ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত সাতটি ব্রিটিশ ব্যাংক ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ধার করত। এরপর তারা ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’ ইস্যু করত। এর মাধ্যমে ছোট, আঞ্চলিক মার্কিন ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেওয়া হতো। এই ব্যাংকগুলো আবার দক্ষিণাঞ্চলের ওপরের অংশের দাস ব্যবসায়ীদের স্বল্পমেয়াদি ঋণ দিত। দাস ব্যবসায়ীরা ভার্জিনিয়া ও সাউথ ক্যারোলাইনা থেকে দাস কিনত এবং জর্জিয়া, মিসিসিপি ও লুইজিয়ানার তুলার খামারে বিক্রি করত। সুদের হার ব্যাংক অব ইংল্যান্ড নির্ধারণ করত। ফলে লন্ডনে সুদের হার সামান্য বৃদ্ধি পেলে নিউ অরলিন্সে দাস মালিকদের জমি বা দাস কেনা অসম্ভব হয়ে পড়ত।
প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসন বিশ্বাস করতেন, সেকেন্ড ব্যাংক এবং সেভেন সিস্টারস তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তিনি ১৮৩৪ ও ১৮৩৬ সালে বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এই আদেশগুলোর লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ ঋণের ওপর থেকে দাস মালিকদের নির্ভরতা কমানো।
এক আদেশে জ্যাকসন যুক্তরাষ্ট্রের সেকেন্ড ব্যাংক থেকে সরকারি আমানত তুলে নেন। সেই অর্থ তাঁর রাজনৈতিক মিত্রদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি পছন্দের ব্যাংকে জমা দেন। অন্য এক আদেশে কৃষকদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাদের বন্ধকি অর্থ ইউএস ল্যান্ড অফিসে পরিশোধ করতে নিষেধ করা হয়। এর ফলে কৃষকদের বাধ্য হয়ে স্বর্ণ ব্যবহার করতে হয়, যা সেই সময়ের মুদ্রা ছিল। এই পদক্ষেপের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের দাস মালিকেরা লাভবান হয়। এসব মালিকদের উত্তর জর্জিয়া ও উত্তর ক্যারোলাইনায় সোনার খনি ছিল। তবে, হঠাৎ করে সোনার চাহিদা বেড়ে গেলেও সরবরাহ অনেক কম ছিল।
এই অবস্থায় ব্যাংক অব ইংল্যান্ড দেখতে পায়, তাদের সোনা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তারা ব্যাংক রেট তথা সুদহার বাড়াল। একই সঙ্গে তারা কিছু সময়ের জন্য ‘সেভেন সিস্টার্সকে’ আন্তর্জাতিক লেনদেন থেকে বিচ্ছিন্ন করল। এর ফলস্বরূপ ১৮৩৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফের মহামন্দা শুরু হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে জমিদারেরা ঋণ পরিশোধ না করে পালিয়ে গেল। তারা চাষের জমি ফেলে ক্রীতদাসদের নিয়ে (তৎকালীন) টেক্সাসের স্বাধীন প্রজাতন্ত্রে চলে গেল। সেখানে তারা ঋণদাতাদের হাত থেকে বেঁচে যায়। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেল। উৎপাদনকারীরা দেউলিয়া হয়ে গেল। পাঁচ বছরের মধ্যে সাতটি মার্কিন অঙ্গরাজ্য আন্তর্জাতিকভাবে ইস্যু করা বন্ডের অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলো।
এর পরের মহামন্দা শুরু হয় ১৮৭৩ সালে। এই অর্থনৈতিক মন্দা আন্তর্জাতিক পণ্যের দামের আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে হয়েছিল। তবে এর জন্য তড়িঘড়ি করে শুল্ক আরোপ করা হয়নি। কিন্তু ১৮৯৩ সালের মন্দার ক্ষেত্রে তেমনটা বলা যাবে না। ১৮৯০ সালে মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস আইন প্রণয়নের নিয়ম সংশোধন করে। এর ফলে কংগ্রেস অপ্রত্যাশিতভাবে কার্যকর ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই সুযোগে রিপাবলিকানরা ১৮৯০ সালের ম্যাককিনলে ট্যারিফ অ্যাক্ট পাস করে।
এই আইনে বিদেশে তৈরি পণ্যের আমদানির ওপর শুল্ক ৩৮ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করে। একই সঙ্গে আধা-পরিশোধিত চিনির ওপর থেকে শুল্ক তুলে নেওয়া হয়। চিনি রপ্তানিকারক দেশগুলোর জন্য এটি বিশাল পার্থক্য তৈরি করে দেয়। কারণ সে সময় আপেল, স্যামন ও গরুর মাংসের মতো খাদ্য সংরক্ষণে চিনি ব্যবহার করা হতো।
তবে, বেশি শুল্ক আরোপের ফলে প্রায়শই যা হয়—তেমনিভাবে মার্কিন রাজস্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। দুই বছরের মধ্যে এটি প্রায় মার্কিন ট্রেজারির সোনা শেষ করে ফেলে। এর ফলে বিদেশি ঋণদাতারা মার্কিন বন্ড বিক্রি করতে শুরু করে, বিশেষ করে রেল কোম্পানিগুলোর বন্ড। ঋণগ্রহীতারা আশঙ্কা করেছিল যে, ট্রেজারিতে সোনা না থাকলে ওয়াশিংটন মুদ্রা হিসেবে স্বর্ণমান ত্যাগ করবে। তখন বন্ডের অর্থ হয়তো দুর্বল মার্কিন মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে।
এরপর, ১৯৩০–এর দশকের মহামন্দায় স্মুট-হাওলি শুল্ক আইন বড় ভূমিকা রেখেছিল। যদিও কিছু অর্থনীতি ঐতিহাসিক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা সরবরাহ, শেয়ারবাজারে তেজ–মন্দা চক্র এবং ইউরোপের অমীমাংসিত যুদ্ধকালীন ঋণ—এর প্রধান কারণ ছিল। উনিশ শতকের একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে শুধু বলব, শুল্কে দ্রুত পরিবর্তন বিশ্বকে বদলে দেয়। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এমন পরিবর্তন আনে, যার প্রভাব মোকাবিলা করতে বহু বছর লেগে যায় এবং এর ফলস্বরূপ অপ্রত্যাশিত ঘটনার একটি দীর্ঘ ধারা তৈরি হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত দুই শতাব্দীর মহামন্দা–মন্দার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু ধারণা পেতে পারি। বর্তমানে ট্রাম্প আরোপিত শুল্ক অনেক কোম্পানিকে তাদের পূর্বনির্ধারিত চুক্তি থেকে সরে আসতে বাধ্য করবে। উনিশ শতকে কৃষক, গ্রামের দোকানদার, বণিক এবং দাস ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা গিয়েছিল।
পিটসবার্গভিত্তিক উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী কোম্পানি হাউমেট এরই মধ্যেই ‘ফোর্স ম্যাজিউর’ বা নিজেদের এমন অবস্থানে ঘোষণা করেছে যেখানে কেউ তাদের জোর করে চুক্তি পরিপালনে বাধ্য করতে পারবে না। তারা শুল্কের কারণে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে।
চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে ব্যবসা করা বিভিন্ন খাতের আরও অনেক কোম্পানি সম্ভবত এখন চুক্তি বাতিল করবে, কারণ শুল্ক কার্যকর হতে শুরু করেছে। এসব কোম্পানির বাতিল করা অনেক লেনদেনই ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়। এই ঋণের বেশির ভাগই ব্যাংক, হেজ ফান্ড, বিমা কোম্পানি এবং অন্যান্য আর্থিক মধ্যস্থতাকারীদের কাছে থাকে। এর কিছু ঋণ আবার অসংখ্য বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করা হয়। শেয়ারবাজার ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে খুব দ্রুত সক্ষম। তবে এর চেয়ে অনেক বড় এবং জটিল ঋণবাজার, এটি দ্রুত ধাক্কা সামলাতে পারে না। যারা ২০০৮ সালের সংকটের কথা মনে রেখেছেন, তারা এটা জানেন। ২০০৮ সালে ফেডারেল রিজার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত বন্ড কিনেছিল। এর মাধ্যমে তারা জমে যাওয়া বাজারে তারল্য ফিরিয়ে এনেছিল।
যদিও আমি কেবলই একজন ইতিহাসবিদ, তবে আমার বিশ্বাস ফেডারেল রিজার্ভ (মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক) এ পর্যন্ত যে বিশৃঙ্খলা দেখেছে তা সামাল দিতে পারবে। তবে চীন–মার্কিন বাণিজ্য স্থগিতের সম্পূর্ণ প্রভাব আমাদের এখনো মোকাবিলা করতে হবে। এ ছাড়া, বিশ্বের বাকি অংশের ওপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের পরে কী হবে তা এখনো অস্পষ্ট।
যদি কংগ্রেস শুল্কের ওপর তার সাংবিধানিক অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে না পারে এবং যদি মার্কিন বাণিজ্যনীতি নির্ধারণের ক্ষমতা একজনের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়—যেমনটা ১৮৩০–এর দশকে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের ক্ষেত্রে ছিল—তাহলে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তর্জাতিক মন্দার ফলে সৃষ্ট তারল্য সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে না, যে মন্দার আশঙ্কা আমি করছি।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার ইতিহাসের অধ্যাপক স্কট রেনল্ডস নেলসন
অনুবাদ করেছেন: আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক আব্দুর রহমান
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি দ্রুত অগ্রগতির কোনো ইঙ্গিত না পান, তাহলে কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াবেন। ট্রাম্পের এমন মনোভাব নিয়ে এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
২ দিন আগেট্রাম্পের শুল্ক ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে জড়িত। তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে। যেখানে চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
২ দিন আগেআজ ১৭ এপ্রিল। প্রতি বছর এই দিনটিতে পালিত হয় ‘ফিলিস্তিনি বন্দী দিবস’। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রাম ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ১৯৭৪ সালে বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া প্রথম ফিলিস্তিনি মাহমুদ বাকর হিজ
৩ দিন আগেচীন ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করছে। এই অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ ক্রমশ বাড়ছে। তবে চীন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শুল্ক চাপিয়েই চীনের প্রতিশোধ নেওয়ায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। বেইজিং এখন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিরল মৃত্তিকা খনিজ ও চুম্বক রপ্তানির রাশ টেনেছে।
৩ দিন আগে