Ajker Patrika

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা যেভাবে কাটিয়ে উঠছে রাশিয়ার অর্থনীতি 

আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৫: ৩৫
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা যেভাবে কাটিয়ে উঠছে রাশিয়ার অর্থনীতি 

রাশিয়ার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো কোনো না কোনোভাবে পশ্চিমা বিশ্বের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে হয় খাপ খাইয়ে নিয়েছে, আর না হয় নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেছে। পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় রাশিয়ার সরকার ব্যাপক ধৈর্য ও সফলতার পরিচয় দিয়েছে। গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার ব্যাংকিং খাত থেকে শুরু করে রাশিয়ার উৎপাদন খাত যেমন বিভিন্ন ধরনের শিল্প, বিমান পরিবহন খাত অবনতির মুখে থাকলেও কোনো না কোনো উপায়ে ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে। বিশেষ করে জাতীয় পর্যায়ে ভোক্তা বৃদ্ধি ও সরকারের সহযোগিতার কারণে এই ধাক্কা কাটানো সহজ হয়েছে। 

গত বছরের শুরুর দিকে রাশিয়া ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সেই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি তৎপরতা দেখিয়েছে রাশিয়ার ব্যাংকিং খাত। নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি অন্যান্য দেশের ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রেও বাধা দেওয়া হয়েছে রুশ ব্যাংকগুলোকে। 
 
কিন্তু তারপরও রাশিয়ার সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সেবেরসহ অন্যান্য বড় ব্যাংকগুলো চলতি বছরে রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেছে। সেবের ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হেরমান গ্রেফ বলেছেন, ‘সম্ভবত, আমাদের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে সফল বছর।’ উল্লেখ্য, হেরমানকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্বের সবগুলো বড় দেশই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। 

অর্থনৈতিক সক্ষমতা যাচাই করা রুশ প্রতিষ্ঠান অ্যানালিটিক্যাল ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির (এসিআরএ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভ্যালেরি পিভেন জানান, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাশিয়ার ব্যাংকিং খাতের মুনাফা ছাড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি রুবল। যা বিগত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের পুরো বছরের মুনাফার চেয়েও বেশি। তিনি আরও জানান, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্ভাব্য মুনাফার যে প্রাক্কলন দিয়েছিল তার চেয়ে এই পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেশি। 

কেবল ব্যাংকিং খাত নয়, রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি খাতও ফিরে এসেছে দারুণভাবে। বিগত মাস অর্থাৎ গত অক্টোবরে রাশিয়া প্রায় ১৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি বিক্রি করেছে। যা বিগত ১৮ মাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। রাশিয়া মূলত পূর্ব এশিয়াকেন্দ্রীক বিকিকিনি বাড়ানোর ফলে এমনটা হয়েছে বলে মত প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকেরা।

ব্লুমবার্গের মতে, পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো রাশিয়া থেকে ব্যাপকভাবে সরে যাওয়ার পর দেশটির নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি গাড়ির বাজার ‘আপাতদৃষ্টিতে মৃত’ ছিল। কিন্তু সেই বাজারও ক্রমেই নিষেধাজ্ঞা পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসছে। কারণ রাশিয়া তাদের নিজস্ব গাড়ি আমদানির নতুন উৎস খুঁজে পেয়েছে এবং দেশের বাজারেও বিদেশি গাড়ির চাহিদা নিজেরাই এখন সম্পূর্ণরূপে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।

রাশিয়া প্রচলিত নয়, বরং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপ কাটিয়ে উঠতে অপ্রচলিত কৌশল অনুসরণ করেছে। এমনটাই জানালেন দেশটির অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক রেইফেইজেন ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ স্তানিস্লাভ মুরাশভ। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে খুবই অপ্রচলিত সমাধান খুঁজে বের করেছে। আমরা এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ঘাঁটতি দেখছি না।’ 

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাড়িয়েছে ব্যাপকভাবে এবং এই বিষয়টি বিমান পরিবহন খাতকে ব্যাপকভাবে ফিরে আসতে সহায়তা করেছে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে রাশিয়ার বিমান পরিবহন খাতে যাত্রীর পরিমাণ ৩০ শতাংশ বেড়েছে। রাশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মতে, আন্তর্জাতিক পরিবহনও নিষেধাজ্ঞার শুরুর তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে বর্তমানে ৩৭টি দেশের বিমান যোগাযোগ রয়েছে এবং ৫৯টি আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা রাশিয়ায় যাত্রী পরিবহন করছে। 

ব্লুমবার্গের বিশ্লেষক অ্যালেক্স আইজ্যাকভ রাশিয়ার অর্থনীতির সামগ্রিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘চলতি বছরে চতুর্থ প্রান্তিক নাগাদ দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার অর্থনীতি সম্ভব আবারও প্রাক যুদ্ধ অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশটির অর্থনীতি আগের সব পূর্বাভাসকেই থোড়াই কেয়ার করেছে।’ 

অ্যালেক্স আইজ্যাকভ আরও বলেন, ‘রাশিয়ার অর্থনীতির এই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে মূলত কাঙ্ক্ষিত জ্বালানি মূল্যের কারণে। যার ফলে দেশটি তেল ও গ্যাস খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করেছে। সহজ শর্তে বিনিয়োগের ঋণে পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ এবং সামরিক খাতের মাধ্যমে কোভিড সময়ের অর্থনৈতিক প্রণোদনা ইত্যাদি কারণে দেশটির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। 

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ কিন্তু তৃতীয় প্রান্তিকে সেটি ছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধির গতি রাশিয়ার বিগত এ দশকের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত গতির। 

ব্লুমবার্গ থেকে সংক্ষেপিত। অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত