মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের খ্যাপাটে সিদ্ধান্তের পর বিশ্বজুড়েই এই আলোচনা বেশ জোরেশোরেই চলছে যে, তাহলে কি আরেকটি মহামন্দা আসন্ন? এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ক্যাপিটাল ফরমেশন অ্যান্ড গ্রোথের অধ্যাপক জেফরি ফ্র্যাঙ্কেল জানাচ্ছেন, মন্দা বোঝার ক্ষেত্রে কোন কোন শর্তগুলো আমলে নেওয়া যেতে পারে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্দায় পড়ার আশঙ্কা কতটা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজারসের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের গবেষণা সহযোগী। প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে তাঁর লিখিত নিবন্ধ অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান।
অনলাইন ডেস্ক
গভীর কুয়াশার মধ্য দিয়ে জাহাজ চালানোর সময় নাবিক যেমন তীরের খোঁজ করেন, তেমনি আমরা এখন মার্কিন মন্দার পূর্বাভাস বোঝার চেষ্টা করছি। উপকূল কাছাকাছি চলে এলে সাধারণত ডাঙার পাখিগুলোকে সমুদ্রের উপর উড়তে দেখা যায়। আর এটি দেখেই নাবিক অনুমান করতে পারেন, ডাঙা খুব কাছেই। তবে উপকূল চোখে না পড়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। এর অনুকরণে যদি মার্কিন মন্দাকে ডাঙা হিসেবে ধরা হয়, তাহলে সেই ‘পাখি’ তথা লক্ষণগুলো এরই মধ্যে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। কিন্তু এই ইঙ্গিতগুলো আসলে নিশ্চিত করে কিছু বলছে না; কেবল সম্ভাবনা/আশঙ্কার কথাই বলছে।
অর্থনীতিতে যখন দীর্ঘমেয়াদি সুদহার স্বল্পমেয়াদি হারের চেয়ে কমে যায় বা সমান হয়ে যায়, তখন সেটিকে ইনভার্টেড বা উল্টে থাকা ইল্ড কার্ভ (inverted yield curve) বলা হয়। একে সাধারণত মন্দার পূর্বাভাস হিসেবে ধরা হয়। গত মার্চ মাসে দশ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ৩ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহারের নিচে নেমে গিয়েছিল। তবে সেই রেখা এখন প্রায় একই জায়গায় আছে। অর্থাৎ, সমান সমান আছে।
তবে এই ইল্ড কার্ভ আসলে খুব বেশি কিছুর পূর্বাভাস দেয় না। এটি কেবল আর্থিক বাজারের সেই প্রত্যাশাকে তুলে ধরে যে, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ভবিষ্যতে স্বল্পমেয়াদি সুদহার কমাতে পারে। আর এটি আবার এই আশঙ্কাকেই প্রতিফলিত করে যে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়তো মন্থর হয়ে পড়বে।
মন্দার আগমন বোঝার ক্ষেত্রে ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস এক সরাসরি সূচক, বিশেষ করে গৃহস্থালির চাহিদার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। দুটি সুপরিচিত ভোক্তা আত্মবিশ্বাস পরিমাপক জরিপ—ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান এবং দ্য কনফারেন্স বোর্ডের—মার্চ মাসে উল্লেখযোগ্য পতন দেখিয়েছিল। অর্থাৎ, ভোক্তারা বাজারের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়েছিলেন।
কারণ, সে সময়ই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করে। মিশিগান জরিপের ভোক্তা অনুভূতি সূচক বছরের শুরু থেকেই কমছিল, যা গত ১১ এপ্রিল আরও ১১ শতাংশ কমে যায়। এটি অতীতের মন্দাগুলোর গড় হারের চেয়েও অনেক নিচে এবং ১৯৫২ সালে রেকর্ড রাখা শুরুর পর থেকে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্তর।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের ভোক্তা প্রত্যাশা জরিপও একই কথা বলছে। এই জরিপ অনুসারে, মার্চে গৃহস্থালি বা পরিবারগুলোর আগামী এক বছরের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রত্যাশা নেতিবাচক হয়েছে। একইভাবে, ব্যবসার আত্মবিশ্বাস—যা কোম্পানিগুলোর কর্মী নিয়োগ এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে—গত ৪ এপ্রিল ‘ধসে পড়েছে।’ এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বজুড়েই ঘটেছে। ট্রাম্পের রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টাপাল্টি শুল্কনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণেই এমনটা হয়েছে।
মন্দা আসন্ন কিনা তা নির্ধারণ করতে পেশাদার পূর্বাভাসগুলোর দিকেও নজর দেওয়া যেতে পারে। ব্লু চিপ ফাইন্যান্সিয়াল ফোরকাস্টস প্রায় ৫০টি এমন পূর্বাভাস সংগ্রহ করে। পূর্বাভাস সংগ্রহকারী আরও দুটি উৎস হলো সার্ভে অব প্রফেশনাল ফোরকাস্টার্স এবং ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। গত ১৭ এপ্রিল ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল মার্কিন অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের জন্য মন্দার আশঙ্কা দশমিক ৪৪ শতাংশ বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল এবং বছরের শুরুর তুলনায় মন্দার আশঙ্কা অনেক বেশি ছিল। তবে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল ও সার্ভে অব প্রফেশনাল ফোরকাস্টার্সের জরিপগুলো ত্রৈমাসিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং খুব দ্রুতই পুরোনো হয়ে যায়।
যাই হোক, মন্দার আশঙ্কা বোঝা ক্ষেত্রে মানুষ কী বলছে, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—তারা কোথায় অর্থ বিনিয়োগ করছে। গত ৩ মার্চ ট্রাম্প যখন কানাডা এবং মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন এবং ২ এপ্রিল যখন তিনি তাঁর তথাকথিত পাল্টাপাল্টি শুল্ক ঘোষণা করেন, তখন থেকেই মন্দার আশঙ্কার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যদ্বাণী বাজারগুলোতে বাজি ধরার পরিমাণ তিনগুণ বেড়ে যায়। ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভবিষ্যদ্বাণী বাজার ‘পলিমার্কেট’ আগামী এক বছরের জন্য মন্দার আশঙ্কা ৫৭ শতাংশ বলে উল্লেখ করে দেখাচ্ছে এবং আরেক ভবিষ্যদ্বাণী বাজার ‘কালশি’ ৫৯ শতাংশ বলে উল্লেখ করে। উভয় সংখ্যাই স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় (১৫ শতাংশ) তুলনায় প্রায় ৪ গুণ বেশি।
সম্ভাব্য মন্দার পূর্বাভাস দেওয়া এক জিনিস, আর কখন মন্দা শুরু হয়ে গেছে তা চিহ্নিত করা আরেক বিষয়। মন্দা আসার আগেই আভাস দেওয়ার বদলে, ‘সাহম রুল রিসেশন ইন্ডিকেটর’ বলছে যে, যদি বেকারত্বের তিন মাসের ‘মুভিং এভারেজ’ তার আগের ১২ মাসের সর্বনিম্ন স্তর থেকে অন্তত দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়, তাহলে অর্থনীতি মন্দার মধ্যে রয়েছে। আপাতত, এই সূচকটি মন্দার সংকেত দিচ্ছে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্ব ঐতিহাসিক মানদণ্ডে এখনো কম আছে। কিন্তু চাহিদা কমে যাওয়া সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো কখনো কখনো কর্মী ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে। বিশেষ করে এখনকার মতো তীব্র অনিশ্চয়তার সময়ে। তারা হয়তো কিছু অবিক্রীত পণ্য জমা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে এবং/অথবা তাদের উৎপাদন ও কর্মীদের সাপ্তাহিক কাজের সময় কমিয়ে দেয়।
প্রকৃত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বেশ কয়েকটি প্রাথমিক পরিমাপ মন্দা চিহ্নিত করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) ব্যক্তিগত খাতের কোম্পানিগুলোর ওপর জরিপ চালিয়ে জানতে চায়—আগের মাসে তাদের নতুন অর্ডার বেড়েছে না কমেছে। মার্চ মাসে ইনস্টিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্টে হিসাবে মার্কিন উৎপাদনের পিএমআই ৪৯-এ নেমে এসেছিল। ৫০-এর নিচে থাকা স্কোর বাজারের সংকোচন নির্দেশ করে।
ব্যক্তিগত ভোগ মার্কিন জিডিপির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হওয়ায় সেন্সাস ব্যুরোর খুচরা বিক্রয় উপাত্ত—যা গৃহস্থালির ভোগ সম্পর্কে সবচেয়ে আগে তথ্য দেয়—সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। মার্চ মাসের প্রতিবেদনে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যদিও এটি মূলত আসন্ন শুল্কের আগেই গাড়ি কিনে ফেলা ভোক্তাদের কারণে হয়েছে।
অবশ্যই, মন্দাকে সংজ্ঞায়িত করার সবচেয়ে কাছাকাছি যে মাপকাঠিটি সেটি হলো নেতিবাচক জিডিপি প্রবৃদ্ধির সময়কাল (বেশির ভাগ দেশে যা পরপর দুই প্রান্তিক ধরে চলে)। কিন্তু জিডিপির তথ্য ত্রৈমাসিকভাবে এবং দেরিতে প্রকাশ করা হয় (এবং প্রায়শই পরে এটি সংশোধনও করা হয়)। তাই, রিয়েল টাইমে জিডিপির অনুমান দেওয়ার জন্য ‘নাওকাস্ট’ তৈরি হয়েছে। এগুলো সবচেয়ে হালনাগাদ প্রাসঙ্গিক সূচকগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, যেমন—পিএমআই, শিল্প উৎপাদন এবং খুচরা বিক্রয়।
সবচেয়ে পরিচিত মার্কিন নাওকাস্ট, আটলান্টা ফেডের জিডিপিনাও—এর ফেব্রুয়ারির শেষে প্রথম প্রান্তিকের জিডিপি প্রবৃদ্ধির অনুমান হুট করে কমে গিয়েছিল। এটি +২ শতাংশের উপরে থেকে-২ শতাংশের এর নিচে নেমে আসে। এমনকি সোনার আমদানিতে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সমন্বয় করার পরেও এপ্রিল মাসে জিডিপিনাও প্রবৃদ্ধি শূন্যের সামান্য নিচে দেখাচ্ছে।
মন্দার ইঙ্গিত দেওয়া লক্ষণগুলো যেমন কোনো নিশ্চয়তা দেয় না, তেমনি নাওকাস্ট সূচকগুলোও কেবল এটাই বোঝাতে পারে যে, আমরা হয়তো কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। আসলে, মন্দা যখন চলছে, তখনো আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না যে আমরা ঠিক এটাই অনুভব করছি কিনা।
মার্কিন মন্দার সরকারি নির্ধারক হলো ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের বিজনেস সাইকেল ডেটিং কমিটি। তারা মোট দেশজ উৎপাদন, প্রকৃত ব্যক্তিগত আয় (সামাজিক স্থানান্তর বাদ দিয়ে), ননফার্ম পে-রোল কর্মসংস্থান, প্রকৃত ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয়, উৎপাদন ও বাণিজ্য বিক্রয় (মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করা) এবং শিল্প উৎপাদনের মতো চলকগুলো দেখে। সব উপাত্ত হাতে আসার পরেই—সাধারণত ঘটনা ঘটার এক বছর বা তারও বেশি সময় পরে—কমিটি একটি বাঁক বদল ঘোষণা করে।
এই অবস্থায় বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে, আগামী এক বছরের জন্য মার্কিন মন্দার আশঙ্কা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত রাখা যেতে পারে এবং পরবর্তী চার বছরের জন্য এটি আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও কিছুই নিশ্চিত নয়, তবে আমরা যদি ‘ডাঙায় আটকে পড়ি’ অর্থাৎ মন্দার মধ্যে পড়েই যাই, তবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
গভীর কুয়াশার মধ্য দিয়ে জাহাজ চালানোর সময় নাবিক যেমন তীরের খোঁজ করেন, তেমনি আমরা এখন মার্কিন মন্দার পূর্বাভাস বোঝার চেষ্টা করছি। উপকূল কাছাকাছি চলে এলে সাধারণত ডাঙার পাখিগুলোকে সমুদ্রের উপর উড়তে দেখা যায়। আর এটি দেখেই নাবিক অনুমান করতে পারেন, ডাঙা খুব কাছেই। তবে উপকূল চোখে না পড়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। এর অনুকরণে যদি মার্কিন মন্দাকে ডাঙা হিসেবে ধরা হয়, তাহলে সেই ‘পাখি’ তথা লক্ষণগুলো এরই মধ্যে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। কিন্তু এই ইঙ্গিতগুলো আসলে নিশ্চিত করে কিছু বলছে না; কেবল সম্ভাবনা/আশঙ্কার কথাই বলছে।
অর্থনীতিতে যখন দীর্ঘমেয়াদি সুদহার স্বল্পমেয়াদি হারের চেয়ে কমে যায় বা সমান হয়ে যায়, তখন সেটিকে ইনভার্টেড বা উল্টে থাকা ইল্ড কার্ভ (inverted yield curve) বলা হয়। একে সাধারণত মন্দার পূর্বাভাস হিসেবে ধরা হয়। গত মার্চ মাসে দশ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ৩ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহারের নিচে নেমে গিয়েছিল। তবে সেই রেখা এখন প্রায় একই জায়গায় আছে। অর্থাৎ, সমান সমান আছে।
তবে এই ইল্ড কার্ভ আসলে খুব বেশি কিছুর পূর্বাভাস দেয় না। এটি কেবল আর্থিক বাজারের সেই প্রত্যাশাকে তুলে ধরে যে, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ভবিষ্যতে স্বল্পমেয়াদি সুদহার কমাতে পারে। আর এটি আবার এই আশঙ্কাকেই প্রতিফলিত করে যে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়তো মন্থর হয়ে পড়বে।
মন্দার আগমন বোঝার ক্ষেত্রে ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস এক সরাসরি সূচক, বিশেষ করে গৃহস্থালির চাহিদার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। দুটি সুপরিচিত ভোক্তা আত্মবিশ্বাস পরিমাপক জরিপ—ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান এবং দ্য কনফারেন্স বোর্ডের—মার্চ মাসে উল্লেখযোগ্য পতন দেখিয়েছিল। অর্থাৎ, ভোক্তারা বাজারের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়েছিলেন।
কারণ, সে সময়ই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করে। মিশিগান জরিপের ভোক্তা অনুভূতি সূচক বছরের শুরু থেকেই কমছিল, যা গত ১১ এপ্রিল আরও ১১ শতাংশ কমে যায়। এটি অতীতের মন্দাগুলোর গড় হারের চেয়েও অনেক নিচে এবং ১৯৫২ সালে রেকর্ড রাখা শুরুর পর থেকে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্তর।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের ভোক্তা প্রত্যাশা জরিপও একই কথা বলছে। এই জরিপ অনুসারে, মার্চে গৃহস্থালি বা পরিবারগুলোর আগামী এক বছরের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রত্যাশা নেতিবাচক হয়েছে। একইভাবে, ব্যবসার আত্মবিশ্বাস—যা কোম্পানিগুলোর কর্মী নিয়োগ এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে—গত ৪ এপ্রিল ‘ধসে পড়েছে।’ এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বজুড়েই ঘটেছে। ট্রাম্পের রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টাপাল্টি শুল্কনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণেই এমনটা হয়েছে।
মন্দা আসন্ন কিনা তা নির্ধারণ করতে পেশাদার পূর্বাভাসগুলোর দিকেও নজর দেওয়া যেতে পারে। ব্লু চিপ ফাইন্যান্সিয়াল ফোরকাস্টস প্রায় ৫০টি এমন পূর্বাভাস সংগ্রহ করে। পূর্বাভাস সংগ্রহকারী আরও দুটি উৎস হলো সার্ভে অব প্রফেশনাল ফোরকাস্টার্স এবং ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। গত ১৭ এপ্রিল ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল মার্কিন অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের জন্য মন্দার আশঙ্কা দশমিক ৪৪ শতাংশ বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল এবং বছরের শুরুর তুলনায় মন্দার আশঙ্কা অনেক বেশি ছিল। তবে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল ও সার্ভে অব প্রফেশনাল ফোরকাস্টার্সের জরিপগুলো ত্রৈমাসিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং খুব দ্রুতই পুরোনো হয়ে যায়।
যাই হোক, মন্দার আশঙ্কা বোঝা ক্ষেত্রে মানুষ কী বলছে, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—তারা কোথায় অর্থ বিনিয়োগ করছে। গত ৩ মার্চ ট্রাম্প যখন কানাডা এবং মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন এবং ২ এপ্রিল যখন তিনি তাঁর তথাকথিত পাল্টাপাল্টি শুল্ক ঘোষণা করেন, তখন থেকেই মন্দার আশঙ্কার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যদ্বাণী বাজারগুলোতে বাজি ধরার পরিমাণ তিনগুণ বেড়ে যায়। ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভবিষ্যদ্বাণী বাজার ‘পলিমার্কেট’ আগামী এক বছরের জন্য মন্দার আশঙ্কা ৫৭ শতাংশ বলে উল্লেখ করে দেখাচ্ছে এবং আরেক ভবিষ্যদ্বাণী বাজার ‘কালশি’ ৫৯ শতাংশ বলে উল্লেখ করে। উভয় সংখ্যাই স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় (১৫ শতাংশ) তুলনায় প্রায় ৪ গুণ বেশি।
সম্ভাব্য মন্দার পূর্বাভাস দেওয়া এক জিনিস, আর কখন মন্দা শুরু হয়ে গেছে তা চিহ্নিত করা আরেক বিষয়। মন্দা আসার আগেই আভাস দেওয়ার বদলে, ‘সাহম রুল রিসেশন ইন্ডিকেটর’ বলছে যে, যদি বেকারত্বের তিন মাসের ‘মুভিং এভারেজ’ তার আগের ১২ মাসের সর্বনিম্ন স্তর থেকে অন্তত দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়, তাহলে অর্থনীতি মন্দার মধ্যে রয়েছে। আপাতত, এই সূচকটি মন্দার সংকেত দিচ্ছে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্ব ঐতিহাসিক মানদণ্ডে এখনো কম আছে। কিন্তু চাহিদা কমে যাওয়া সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো কখনো কখনো কর্মী ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে। বিশেষ করে এখনকার মতো তীব্র অনিশ্চয়তার সময়ে। তারা হয়তো কিছু অবিক্রীত পণ্য জমা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে এবং/অথবা তাদের উৎপাদন ও কর্মীদের সাপ্তাহিক কাজের সময় কমিয়ে দেয়।
প্রকৃত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বেশ কয়েকটি প্রাথমিক পরিমাপ মন্দা চিহ্নিত করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) ব্যক্তিগত খাতের কোম্পানিগুলোর ওপর জরিপ চালিয়ে জানতে চায়—আগের মাসে তাদের নতুন অর্ডার বেড়েছে না কমেছে। মার্চ মাসে ইনস্টিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্টে হিসাবে মার্কিন উৎপাদনের পিএমআই ৪৯-এ নেমে এসেছিল। ৫০-এর নিচে থাকা স্কোর বাজারের সংকোচন নির্দেশ করে।
ব্যক্তিগত ভোগ মার্কিন জিডিপির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হওয়ায় সেন্সাস ব্যুরোর খুচরা বিক্রয় উপাত্ত—যা গৃহস্থালির ভোগ সম্পর্কে সবচেয়ে আগে তথ্য দেয়—সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। মার্চ মাসের প্রতিবেদনে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যদিও এটি মূলত আসন্ন শুল্কের আগেই গাড়ি কিনে ফেলা ভোক্তাদের কারণে হয়েছে।
অবশ্যই, মন্দাকে সংজ্ঞায়িত করার সবচেয়ে কাছাকাছি যে মাপকাঠিটি সেটি হলো নেতিবাচক জিডিপি প্রবৃদ্ধির সময়কাল (বেশির ভাগ দেশে যা পরপর দুই প্রান্তিক ধরে চলে)। কিন্তু জিডিপির তথ্য ত্রৈমাসিকভাবে এবং দেরিতে প্রকাশ করা হয় (এবং প্রায়শই পরে এটি সংশোধনও করা হয়)। তাই, রিয়েল টাইমে জিডিপির অনুমান দেওয়ার জন্য ‘নাওকাস্ট’ তৈরি হয়েছে। এগুলো সবচেয়ে হালনাগাদ প্রাসঙ্গিক সূচকগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, যেমন—পিএমআই, শিল্প উৎপাদন এবং খুচরা বিক্রয়।
সবচেয়ে পরিচিত মার্কিন নাওকাস্ট, আটলান্টা ফেডের জিডিপিনাও—এর ফেব্রুয়ারির শেষে প্রথম প্রান্তিকের জিডিপি প্রবৃদ্ধির অনুমান হুট করে কমে গিয়েছিল। এটি +২ শতাংশের উপরে থেকে-২ শতাংশের এর নিচে নেমে আসে। এমনকি সোনার আমদানিতে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সমন্বয় করার পরেও এপ্রিল মাসে জিডিপিনাও প্রবৃদ্ধি শূন্যের সামান্য নিচে দেখাচ্ছে।
মন্দার ইঙ্গিত দেওয়া লক্ষণগুলো যেমন কোনো নিশ্চয়তা দেয় না, তেমনি নাওকাস্ট সূচকগুলোও কেবল এটাই বোঝাতে পারে যে, আমরা হয়তো কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। আসলে, মন্দা যখন চলছে, তখনো আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না যে আমরা ঠিক এটাই অনুভব করছি কিনা।
মার্কিন মন্দার সরকারি নির্ধারক হলো ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের বিজনেস সাইকেল ডেটিং কমিটি। তারা মোট দেশজ উৎপাদন, প্রকৃত ব্যক্তিগত আয় (সামাজিক স্থানান্তর বাদ দিয়ে), ননফার্ম পে-রোল কর্মসংস্থান, প্রকৃত ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয়, উৎপাদন ও বাণিজ্য বিক্রয় (মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করা) এবং শিল্প উৎপাদনের মতো চলকগুলো দেখে। সব উপাত্ত হাতে আসার পরেই—সাধারণত ঘটনা ঘটার এক বছর বা তারও বেশি সময় পরে—কমিটি একটি বাঁক বদল ঘোষণা করে।
এই অবস্থায় বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে, আগামী এক বছরের জন্য মার্কিন মন্দার আশঙ্কা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত রাখা যেতে পারে এবং পরবর্তী চার বছরের জন্য এটি আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও কিছুই নিশ্চিত নয়, তবে আমরা যদি ‘ডাঙায় আটকে পড়ি’ অর্থাৎ মন্দার মধ্যে পড়েই যাই, তবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সাম্প্রতিক বেলুচ বিদ্রোহীদের প্রতি হুঁশিয়ারি অনেকের কাছে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি মনে হচ্ছে—ঠিক যেমনটা করেছিলেন ইয়াহিয়া খান, ১৯৭১ সালে। বিভাজন, দমন ও অস্বীকারের সেই পুরোনো কৌশলই যেন ফিরে এসেছে নতুন ইউনিফর্মে। ইতিহাস আবার প্রশ্ন করছে—পাকিস্তান কি কিছুই শিখল না?
১ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাণিজ্য যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির বেশ কিছু নজির রয়েছে। উনিশ শতকের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা বলতে ছয় বা তার বেশি ত্রৈমাসিক পর্যন্ত টানা অর্থনৈতিক সংকোচন বোঝানো হয়। যদিও এর কোনো সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই।
২ দিন আগেমার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি দ্রুত অগ্রগতির কোনো ইঙ্গিত না পান, তাহলে কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াবেন। ট্রাম্পের এমন মনোভাব নিয়ে এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
৩ দিন আগেট্রাম্পের শুল্ক ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে জড়িত। তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে। যেখানে চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
৪ দিন আগে