Ajker Patrika

রাশিয়াকে শস্য চুক্তিতে ফেরাতে পারবে পুতিন-এরদোয়ান বৈঠক? 

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর কৃষ্ণসাগর দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া শস্য সরবরাহ আবার শুরু হওয়ার আশার কথা শুনিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তবে বৈঠক থেকে বিষয়ে স্পষ্ট আলামত মেলেনি। বরং, পুতিন উল্টো মস্কোর চুক্তি থেকে সরে দেওয়ার পেছনে পশ্চিমাদের দায়ী করেছেন। 

কৃষ্ণসাগর দিয়ে অবাধে শস্য পরিবহনে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের চুক্তির দুই মাস না পেরোতেই তা থেকে গত জুলাই মাসে সরে যায় রাশিয়া। চুক্তিতে ফেরাতে পুতিনকে রাজি করার জন্য রাশিয়ার দক্ষিণ উপকূলীয় শহর সোচিতে গতকাল সোমবার বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে আশাবাদও দেখিয়েছেন এরদোয়ান। 

কেন শস্যচুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় রাশিয়া? 
ছয় সপ্তাহ আগে কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তি নবায়ন করার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানায় ক্রেমলিন। কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য পরিবহণের জন্য জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্ততায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চুক্তিটি হয়। এ চুক্তির আওতায় রুশ আগ্রাসন সত্ত্বেও প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ টন শস্যসহ অন্যান্য পণ্য নিজেদের তিনটি বন্দর থেকে নিরাপদে রপ্তানি করতে পেরেছে ইউক্রেন। 

তবে, এই চুক্তি থেকে বের হয়ে গেছে রাশিয়া। ক্রেমলিন দাবি করেছে, রাশিয়ার খাদ্য ও সার রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করার যে শর্তের উল্লেখ ছিল চুক্তিতে, তা মানা হয়নি। অভিযোগে আরও বলা হয়, শিপিং ও বিমার ওপর বিধিনিষেধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাশিয়ার কৃষিবাণিজ্য। যদিও গত বছর রেকর্ড পরিমাণ গম রপ্তানি করেছিল রাশিয়া। 

তুরস্ক কেন মধ্যস্থতায়? 
এই চুক্তি থেকে রাশিয়া বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই তা নবায়নের ব্যাপারে পুতিনকে বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন এরদোয়ান। কারণ এ চুক্তির প্রকৃতিই এমন যে, এটি আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কিছু অংশে খাদ্যসংকট এড়াতে সাহায্য করেছে। তাই চুক্তিটি আবারও ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা চালিয়ে আসছে তুরস্ক। তারই অংশ হিসেবে গত শুক্রবার মস্কোয় রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সাথে বৈঠক করে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান জানান, চুক্তিটি সমগ্র বিশ্বের প্রেক্ষিতেই গুরুত্বপূর্ণ। 

গম, যব, সূর্যমুখী তেলসহ নানা পণ্যের শীর্ষস্থানীয় সরবরাহকারী দেশ ইউক্রেন ও রাশিয়া। বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশই এসব পণ্য রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ১৮ মাস ধরেই পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এরদোয়ান। এমনকি, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রেও পশ্চিমা বিশ্বের সাথে তাল মেলায়নি তুরস্ক। বরং, এই সময়ে রাশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান অংশীদার এবং রসদসামগ্রীর কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে তুরস্ক। ন্যাটোর সদস্য দেশ তুরস্ক এ সময় অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকেও সাহায্য করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এরদোয়ান। সে সঙ্গে ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের চেষ্টাকে তুরস্ক সমর্থন করছে। 

রাশিয়ার দাবি কী? 
সোচিতে পুতিন-এরদোয়ানের বৈঠকের আগে গত বৃহস্পতিবার দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা হয়। কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তিকে ফের পুনরুজ্জীবিত করতে পশ্চিমাদের করণীয় কী কী, তার একটি তালিকা ইতোমধ্যে তুরস্কের কাছে দিয়েছে রাশিয়া। সেই আলোচনায় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য যে নিশ্চয়তা দরকার, তার কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছে না মস্কো। এ মন্তব্যের পরদিনই গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম বেড়ে যায়। 

পুতিনের অবস্থানের ব্যাপারে বরাবরই সহানুভূতি জানিয়ে আসছেন এরদোয়ান। গত জুলাইয়ে এরদোয়ান বলেছিলেন, চুক্তিটির বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে পুতিনের কিছু প্রত্যাশা আছে। তাই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তি পুনরুজ্জীবিত করা এবং বিশ্ববাজারে রুশ পণ্যের রপ্তানি আবার চালু করার লক্ষ্যে লাভরভকে ‘সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব’ দিয়েছেন। কিন্তু লাভরভ জানিয়েছেন, এই চিঠিতে সন্তুষ্ট নয় মস্কো। 

বৈঠকে পর যা বললেন দুই নেতা
এদিকে বৈঠকের পর শস্য চুক্তিতে রাশিয়ার ফেরার আশা ব্যক্ত করে এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা তুরস্ক মনে করি, শিগগরিই আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব।’ 

আর তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে পুতিন আগের অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেন। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, রাশিয়ার কৃষি পণ্য বিশ্ব বাজারে অবাধে প্রবেশ করতে দিলেই কেবল দ্রুত শস্য চুক্তির পুনরুজ্জীবন সম্ভব। তবে এবিষয়ে জাতিসংঘের ‘প্রস্তাব’ এর মধ্যে নাচক করে দিয়েছে রাশিয়া। 

পুতিন আরও বলেন, শস্য চুক্তি থেকে সরে গিয়ে রাশিয়া খাদ্য সংকট তৈরি করছে বলে পশ্চিমাদের দাবি সঠিক নয়। কেননা এই কারণে শস্যের দাম বাড়েনি। তিনি আরো বলেন, ‘খাদ্যের কোনো সংকট নেই।’ 

তাই এই বৈঠক থেকে যে কোনো সফলতা আপাতত আসছে না, তা মোটামুটি স্পষ্ট। এদিক থেকে কোনো স্পষ্ট আলামত মেলেনি। উল্টো পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ করেছেন। মস্কোর চুক্তি থেকে সরে দেওয়ার পেছনেও তিনি পশ্চিমাদের দায়ী করেন। 


তথ্যসূত্র: রয়টার্স ও আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত