Ajker Patrika

রয়টার্সের বিশ্লেষণ: চাল রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় ভুগবে এশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৩, ১০: ০১
রয়টার্সের বিশ্লেষণ: চাল রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় ভুগবে এশিয়া

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত। সম্প্রতি দেশটি চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নয়াদিল্লির এই উদ্যোগের ফলে বিশ্ববাজারে তৈরি হয়েছে প্রায় ১০ মিলিয়ন টনের ঘাটতি। এতে চাল রপ্তানিকারক প্রতিযোগী অন্য দেশগুলো একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।

বিশ্বে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি এখন বেশি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন যদি একের পর এক দেশ চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তবে এই মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা অনেকটা ২০০৭ ও ২০০৮ সালে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার মতোই। বিশ্লেষকদের মতে, ওই সময় স্থানীয় ভোক্তাদের সুরক্ষায় অনেক দেশই রপ্তানি কমাতে বাধ্য হয়েছিল।

এবার বিশ্ববাজারে চালের সরবরাহ ও দামে প্রভাব আরও বেশি পড়তে পারে। এর কারণ বৈশ্বিক চালের বাজারে ভারতের হিস্যা ৪০ শতাংশের বেশি, ১৫ বছর আগে যা ছিল ২২ শতাংশের কাছাকাছি। এ ছাড়া ভারতের দেখাদেখি থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি গ্লোবাল ট্রেড হাউসের সঙ্গে যুক্ত নয়াদিল্লিভিত্তিক খাদ্যশস্যের ডিলার বলেন, ‘২০০৭-০৮ সালের চেয়ে ভারত চালের বাণিজ্যে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের নিষেধাজ্ঞা অন্য রপ্তানিকারককে একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করবে। এমনকি এবার বাজার শক্তির বিপরীতে নিজেদের প্রতিক্রিয়া দেখানো ছাড়া তাদের সুযোগ কম।

ভারতের এই পদক্ষেপে বিশ্বে চালের দামে প্রভাব খুব দ্রুত পড়েছে। ভারত গত মাসে নন-বাসমতী সাদা চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় পণ্যটির দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।

বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সীমিত সরবরাহ চালের দাম এবং বৈশ্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বাড়াবে। এতে সবচেয়ে বেশি ভুগবে এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র ভোক্তারা। রাশিয়া-ইউক্রেনসংলগ্ন কৃষ্ণসাগরে খাদ্যশস্যের জাহাজীকরণ ব্যাহত হওয়া এবং বিরূপ আবহাওয়ার কারণে চাল আমদানিকারকেরা এরই মধ্যে সরবরাহের সংকটে ভুগছে।

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ওলাম অ্যাগ্রি ইন্ডিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিতিন গুপ্ত বলেন, ভারতের নিষেধাজ্ঞায় সৃষ্ট ব্যবধান পূরণে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও অন্য রপ্তানিকারক দেশগুলো তাদের পদক্ষেপ এগিয়ে নিতে প্রস্তুত।

নিতিন আরও বলেন, ‘তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে তাদের উদ্বৃত্ত সক্ষমতার একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সীমাবদ্ধতা অন্যান্য উৎসের মূল্যবৃদ্ধির পথ তৈরি করতে পারে, যা ২০০৭-০৮ সালে দেখা মূল্যবৃদ্ধির কথা মনে করিয়ে দেয়।’

২০০৮ সালে ভারত, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, মিসর, ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশ চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর চালের দাম টনপ্রতি ১ হাজার ডলারের ওপরে উন্নীত হয়েছিল।

তিনটি গ্লোবাল ট্রেড হাউসের সঙ্গে যুক্ত এক ডিলার রয়টার্সকে বলেন, চাল রপ্তানিকারক দেশগুলো এবার এক বছরে ৩ মিলিয়ন টনের বেশি রপ্তানি বাড়াতে পারবে না। এর কারণ সীমিত উদ্বৃত্তের মধ্যে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে চাইবে দেশগুলো।

বিশ্বে চাল রপ্তানিতে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শীর্ষ দেশ থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান বলেছে, ভারতের নিষেধাজ্ঞায় তাদের চালের চাহিদা বেড়েছে। রপ্তানি বাড়াতে আগ্রহী বলে দেশগুলো জানিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় ভোক্তাদের যাতে ভুগতে না হয়, সেটি নিশ্চিত করেই চাল রপ্তানি বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত